যুক্তরাজ্যের
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ঋষি
সুনাক। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা পার্টির নেতৃত্বের দৌড় থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায়
তার জন্য ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের দরজা খুলে যায়।
ভারতীয়
বংশোদ্ভূত ঋষি এমন এক কঠিন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে চলেছেন যখন নিজেদের রাজনৈতিক
ইতিহাসের অন্যতম এক অস্থিতিশীল সময় পার করছে ব্রিটেন। আর সুনাকও সেই ব্যক্তি, যিনি
কয়েক মাস আগেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের অধীনে ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের
দায়িত্বে ছিলেন।
কার্যত
গোটা ব্রিটেনকে সামলাতে হবে তাকে। সাথে অস্থিতিশীল অর্থনীতিকেও। আর এতেই একটি প্রশ্ন
ঘুরে-ফিরে সামনে আসছে; - যুক্তরাজ্যকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ঋষি সুনাক কি
সঠিক ব্যক্তি?
মাত্র
দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে ব্রিটেনের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হলেন ৪২ বছর বয়সী ঋষি সুনাক।
একইসঙ্গে এই পদে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রথম অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিও তিনি। নতুন নেতা হিসাবে নিজের
প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে সুনাক বলেন: ‘আমি যে দলটিকে ভালোবাসি তাকে সেবা করতে পারা
এবং যে দেশটির কাছে আমি অনেক ঋণী; এখন সেই দেশকে বিনিময়ে কিছু ফিরিয়ে দিতে পারা আমার
জীবনের সবচেয়ে বড় সৌভাগ্য।’
যুক্তরাজ্যের
দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সাউদাম্পটনে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক যুক্তরাজ্যের অন্যতম ধনী
একজন রাজনীতিবিদ। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো আইনপ্রণেতা নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে
প্রবেশের আগে গোল্ডম্যান শ্যাক্স নামে একটি বিনিয়োগ ব্যাংক এবং হেজ ফান্ডে কাজ করতেন
সুনাক।
ওয়েস্টমিনস্টারের
বাইরে খুব কম লোকই তার কথা শুনেছিল, কিন্তু ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ রাজকোষের
চ্যান্সেলর অর্থাৎ অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হলে সুনাক জনসাধারণের কাছে ব্যাপকভাবে পরিচিত
হয়ে ওঠেন।
অর্থ
মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে আসার পর নিজের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসাবে করোনাভাইরাস
মহামারির বিশাল প্রভাবের মুখোমুখি হন ঋষি সুনাক। তবে কোভিড-১৯ লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত
ব্যবসা এবং কর্মীদের আর্থিক সহায়তা প্যাকেজগুলোর কারণে ব্রিটেনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে
ওঠেন তিনি।
ইয়র্ক
বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির অধ্যাপক নীল কার্টার আল জাজিরাকে বলছেন, ‘সুনাক এমন একজন
প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কাজ করেছেন যিনি অর্থ খরচ করতে আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে অবকাঠামো
প্রকল্পগুলোতে... এবং আরও সাধারণভাবে বললে, জনসন কীভাবে মানুষের জন্য অর্থ প্রদান করবেন
তা বিবেচনা না করেই ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।’
তিনি
বলছেন, ‘কিন্তু কিছু কর্মকাণ্ডে উল্টো ফল দেখা দেয়। সুনাকের ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’
উদ্যোগটি করোনা মহামারিতে ব্রিটেনের রেস্তোরাঁ সেক্টরকে বাঁচাতে সক্ষম হলেও তা ২০২০
সালের শরতে দেখা দেওয়া করোনার বিধ্বংসী দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রায় নিশ্চিতভাবেই অবদান রেখেছিল।’
ব্রিটিশ
রাজনীতির গবেষক স্টিফেন এলস্টুব আল জাজিরাকে বলেন, ‘জনসন আপাতদৃষ্টিতে সুনাককে কাজটি
করতে দিতে আগ্রহী ছিলেন।’
তিনি
বলছেন, ‘মহামারি চলাকালীন এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নিয়মিত টেলিভিশন ব্রিফিংয়ের সময়ও
চ্যান্সেলর (ঋষি সুনাক) সরকারি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ তৎকালীণ
প্রধানমন্ত্রী (বরিস জনসন) আমাদের যখন বলছেন- (করোনায়) কতজন লোক মারা গেছে এবং আমাদের
সকলকে বাড়িতে থাকতে হবে তখনও সুনাক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা অব্যাহত রেখেছিলেন।’
অধ্যাপক
নীল কার্টার বলছেন, ‘কর্পোরেশন ট্যাক্স এবং জাতীয় বীমায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির বিষয়ে
সুনাকের সিদ্ধান্ত ব্যবসার ক্ষতি করেছে বলে ব্রিটেনের সকল রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থেকে
আক্রমণ করা হয়। আর জাতীয় বীমা যেহেতু শ্রমিকদের ওপর একটি কর, তাই এটি অল্পবয়সী লোকদের
ওপর অসামঞ্জস্যভাবে প্রভাব ফেলে।’
অন্যদিকে
ব্রিটিশ অর্থনীতিকে বিশৃঙ্খলার মধ্যে নিমজ্জিত করার জন্য নিজের পূর্বসূরির অর্থবিহীন
ট্যাক্স কমানোর গভীর সমালোচনাকারী সুনাক অবশ্য প্রচার করেন, অর্থনীতি পরিচালনা করার
জন্য তিনিই সঠিক ব্যক্তি।
সমালোচকরা
অবশ্য এটাকে অন্য বিষয় হিসেবে দেখেন এবং সুনাকের শাসন করার কোনো ম্যান্ডেট বা অধিকার
নেই বলেও তারা নিশ্চিতভাবেই বলবেন।
জনমত
জরিপে ব্যাপক ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ব্রিটেনের প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা
কেয়ার স্টারমার গত সপ্তাহে বলেন, তিনি সরকার গঠনের জন্য প্রস্তুত। টুইটারে দেওয়া এক
বার্তায় তিনি বলেন, ‘টোরিদের ব্যর্থতার ১২ বছর পরে, ব্রিটিশ জনগণ বিশৃঙ্খলার এই ঘূর্ণায়মান
অবস্থা থেকে আরও ভালো কিছু পাওয়ার অধিকার রাখে।’
বিশ্লেষকরা
বলছেন, ঋষি সুনাকের ম্যান্ডেটের অভাব মানে তাকে অবিলম্বে অর্থনীতির জন্য ভালো এমন বাস্তব
ফলাফল আনতে হবে। নটিংহাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটির রাজনীতির প্রভাষক টম কেগিল বলেছেন,
‘সুনাকের ডেস্কে বেশ কয়েকটি বিষয়’ তার জন্য অপেক্ষা করছে।
আল
জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘প্রথমত: মিনি-বাজেট নিয়ে ট্রাস যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন
তা এখনও সমাধান হয়নি। এছাড়া আর্থিক বাজারগুলো এখনও স্থিতিশীলতা এবং আত্মবিশ্বাসের সন্ধান
করে চলেছে। তারা কিছুটা আর্থিক বিধিনিষেধও আশা করছে। প্রথম দু’টি জিনিসের চেয়ে পরেরটি
কঠিন হতে পারে। কারণ বাজার এটিই চায় এবং এর জন্য সম্ভবত ব্যয় হ্রাস বা ট্যাক্স বৃদ্ধির
প্রয়োজন হবে। আর এর কোনোটিই জনপ্রিয় হবে না।’
টম
কেগিলের মতে, ‘দ্বিতীয়ত: সুনাককে তিক্তভাবে বিভক্ত একটি দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এতে
সময় লাগবে এবং দলের মধ্যে এখন যে ক্ষত আর বিভক্তি রয়েছে তা দ্রুত নিরাময়ও হবে না।’
বরিস
জনসনের পদত্যাগের পর কনজারভেটিভ পার্টির অনেক সদস্য সুনাককে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে দেখে
থাকেন। কারণ সুনাকের পদত্যাগের সিদ্ধান্তই জনসনকে গত জুলাইয়ে ব্রিটেনের ক্ষমতা থেকে
নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল।
তবে
জনসনের পদত্যাগের পর ঋষি সুনাক কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার
প্রতিযোগিতায় প্রার্থী হয়েছিলেন এবং কনজারভেটিভ এমপিদের সর্বাধিক সমর্থন পেয়ে লিজ
ট্রাসের পাশাপাশি চূড়ান্ত দু’জন প্রার্থীর একজন হিসাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন। নেতৃত্ব
বাছাইয়ের চূড়ান্ত পর্বে সুনাককে ২১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন লিজ ট্রাস।
অন্যদিকে
ব্রিটেনে আগাম সাধারণ নির্বাচনের জন্য বিরোধীদের ক্রমাগত দাবি সত্ত্বেও সোমবার আগাম
ভোটের বিষয়টি সুনাককে বাতিল করতে দেখা গেছে। এদিন অর্থনৈতিক অস্থিরতার এই সময়ে ‘স্থিতিশীলতা
ও ঐক্য’ নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সুনাক বলেন, ‘যুক্তরাজ্য একটি বড় (অর্থনীতির)
দেশ। কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই যে, আমরা বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি
হয়েছি।’
টম
কেগিল বলছেন, ব্রিটেনে তিনি আগাম নির্বাচন আশা করেননি। তার ভাষায়, ‘২০২৪ সালের ডিসেম্বর
পর্যন্ত খুব বেশি সময় বাকি নেই এবং এই মুহূর্তে ভোটের অবস্থা বিবেচনা করলে এটি খুবই
অসম্ভব যে, কনজারভেটিভ পার্টি এই মুহূর্তে আগাম নির্বাচন দিয়ে হারবে এবং খুবই খারাপভাবে
হেরে যাবে।’
স্ট্র্যাথক্লাইড
ইউনিভার্সিটির রাজনীতির সিনিয়র লেকচারার মার্ক শেফার্ড অবশ্য বলছেন, ব্রিটেনে আগাম
নির্বাচনের সম্ভাবনা নির্ভর করবে সুনাক নিজের দলের সমর্থন জোগাড়ে কতটা সক্ষম হলেন তার
ওপর।
শেফার্ড
বলেন, ‘দল ঐক্যবদ্ধ না হলে, সরকার পরিচালনা কার্যত অসম্ভব করে তোলার জন্য কনজারভেটিভ
পার্টির মধ্যে যথেষ্ট অন্তর্দলীয় মতবিরোধ রয়েছে এবং সেই পরিস্থিতিতে সংকট থেকে বের
হওয়ার উপায় হিসেবে নির্বাচনকে দেখা হতে পারে।’
তার
ভাষায়, ‘তবে, এই ধরনের পরিস্থিতিতে দলটি নির্বাচনে বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আর তাই
ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং মতবিরোধ রোধ করে তিনি যদি স্থির থাকতে পারেন, তবে তার (টিকে যাওয়ার)
সম্ভাবনা বেশি হতে পারে।’
এছাড়া
নেতৃত্বে জয়ী হতে সুনাককে যে বিষয়টি সহায়তা করেছে তা হলো- জনসনের পদত্যাগের পর নেতৃত্ব
বাছাইয়ের আগের প্রচারণার সময় সুনাকের সতর্কবাণী। সুনাক সেসময় সতর্ক করেছিলেন, তার
প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ ট্রাসের ট্যাক্স পরিকল্পনা অর্থনীতির ক্ষতি করবে। নির্বাচিত হওয়ার
পর ট্রাসের নীতি বাজারে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে এবং এই বিষয়টিই সুনাকের সমর্থকরা জোর
দিয়ে সামনে আনছেন।
শেফার্ড
বলছেন, ‘(বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজের জন্য সুনাক সঠিক ব্যক্তি কিনা) তা কেবল সময়ই বলতে
পারবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে বিকল্প অন্যদের চেয়ে বাজার সুনাককে বেশি পছন্দ করেছে বলে মনে
হচ্ছে।’
সংবাদমাধ্যম
বলছে, পরবর্তী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী পদে ঋষি সুনাকের জয় নিশ্চিত হওয়ার পর মার্কিন
ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য ০.১৫ শতাংশ বেড়েছে।
সুনাককে
‘ব্রেক্সিটপন্থি এবং অভিবাসন বিরোধী’ উল্লেখ করে ব্রিটিশ রাজনীতির গবেষক স্টিফেন এলস্টুব
বলছেন, নতুন এই টোরি নেতা ‘নিজেকে একজন ‘ফিসকাল কনজারভেটিভ’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন।
যিনি ছোট দেশ এবং কম করের পক্ষকে সমর্থন করেন। আর এই সবই সুনাককে দলের কর্তৃত্বে রাখবে।
এছাড়া স্পষ্টতই, তিনি একজন বাস্তববাদীও।’
বিশ্লেষকরা
বলছেন, সুনাককে তার দলকে একত্রিত করার জন্য প্রকৃতপক্ষে বাস্তব পদক্ষেপ প্রদর্শন করতে
হবে এবং এমন একটি দেশকে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্থিতিশীলতা প্রদান করতে হবে যা সাম্প্রতিক
বছরগুলোতে অনেক বেশি রাজনৈতিক নাটক এবং অর্থনৈতিক অস্থিরতার সাক্ষী হয়েছে।
আর
সেটি না হলে, ঋষি সুনাকের প্রধানমন্ত্রীত্বের মেয়াদও সীমিত হতে পারে।
ব্রিটেন ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সঙ্কট
মন্তব্য করুন
আফ্রিকার দেশ নাইজারের একটি মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী বলে জানিয়েছেন একজন সিনিয়র মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা।
শুক্রবার (৩ মে) মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন সেনাদের সঙ্গে মেলা-মেশা করছেন না রুশ সেনারা। তবে নাইজারের রাজধানী নিয়ামে ডিওরি হামানি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এয়ারবেস ১০১ এর একটি পৃথক হ্যাঙ্গার ব্যবহার করছেন তারা।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, নাইজারের কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছে ৬০ জনের মতো রুশ সেনা নাইজারে থাকবেন। তবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেননি তিনি।
আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে আল-কায়েদা ও আইএসআইএল প্রভাবিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ১০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি ব্যয়ে নাইজারের মরুভূমির শহর আগাদেজে এই বিমান ঘাঁটি নির্মাণ করেছিল। রাজধানী নিয়ামে থেকে প্রায় ৯২০ কিলোমিটার দূরের এ বিমানঘাঁটিটি মনুষ্যবাহী এবং মনুষ্যবিহীন নজরদারি ফ্লাইট এবং অন্যান্য অপারেশনের জন্য এতদিন ব্যবহার করে আসছিল মার্কিন সেনারা।
২০২৩ সালের ২৬ জুলাই এক অভ্যুত্থানে নাইজারের পশ্চিমাপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক বাহিনী। তারপর একের পর এক পশ্চিমবিরোধী পদক্ষেপ নিতে থাকে জান্তা সরকার। সামরিক সরকারের সঙ্গে জনগণ যোগ দিলে সেপ্টম্বরে নাইজার থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করে মার্কিন মিত্র ও নাইজারের সাবেক উপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্স।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্ট ক্যাম্পবেল এবং নাইজেরিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলি মহামান লামিন জেইনের মধ্যকার আলোচনার পর নাইজার থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের পরিকল্পনা শুরু করার প্রতিশ্রুতি দেয় ওয়াশিংটন। নাইজারে এক হাজারের মতো মার্কিন সেনা রয়েছে। এসব সেনাকে জার্মানি পাঠানোর চিন্তা-ভাবনা করছে বাইডেন প্রশাসন।
মন্তব্য করুন
দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এতে ছয়জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন।
শহরের আল-জুহুর আশপাশে আঘাত হানা হামলায় আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াফা নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাফাহ শহরের পশ্চিমে তাল আল সুলতানপাড়ায় একটি বাড়িতে ইসরাইলি বোমা হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া মধ্য গাজার বুরেজ ক্যাম্প লক্ষ্য করে বোমা হামলায় আরও ৯ জন আহত হয়েছেন।
এর আগে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চললেও গাজার দক্ষিণাঞ্চলে রাফাহ নগরীতে অভিযান চালানো হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির জন্য একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা চলার মাঝে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসনে নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪ হাজার ৫৯৬ জনে। এ ছাড়া ইসরাইলি বর্বর আক্রমণে আরও ৭৭ হাজার ৮১৬ জন আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি হামলায় অন্তত ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ৫১ জন আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন এবং উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না।
মন্তব্য করুন
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছেন এক নারী। নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মচারী বলে দাবি করেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই নারী হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ জানান। যদিও এ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
তবে নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত।
এদিকে এই মুহূর্তে কলকতায় অবস্থান করছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বৃহস্পতিবার রাত তিনি রাজভবনেই কাটিয়েছেন। মোদী কলকাতায় আসার আগেই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন ওই নারী।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারী হেয়ার স্ট্রিট থানায় এসেছে। লালবাজারের উচ্চপদস্থ কর্তারাও রয়েছেন থানায়। রয়েছেন ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।
এ প্রসঙ্গে ত্রিপুরার সাবেক রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে রাজ্যপালের। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনো দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে।
তথাগত আরও বলেন, এই ধরনের অভিযোগ অতীতে উঠেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ফলে আদালতে বিষয়টি গেলে কী হবে, তা আমার জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট একে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবে, তা তো বোঝা সম্ভব নয়।
ওই নারীর অভিযোগ নিয়ে শোরগোল শুরু হতেই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের রাজ্যসভার সদস্য সাগরিকা ঘোষ এরই মধ্যে এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে বিষয়টি নিয়ে পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি ভয়াবহ! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় যাচ্ছেন। রাজভবনে তার রাত্রিবাস করার কথা।
তবে গোটা ঘটনার নেপথ্যে চক্রান্ত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তথাগত। তিনি বলেন, আমি আনন্দ বোসকে অনেক দিন ধরে চিনি। দক্ষ আইএএস অফিসার ছিলেন। তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগের পিছনে কোনো চক্রান্ত আছে বলেই মনে হয়। বিভিন্ন দুর্নীতি ও সন্দেশখালিকাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরাতেও এ রকম অভিযোগ তোলা হয়ে থাকতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যপাল যৌন হয়রানি
মন্তব্য করুন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক
রেজ্যুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ১১২টি দেশ এই রেজ্যুলেশনটিতে কো-স্পন্সর
করেছে।
বৃহস্পতিবার (২ মে) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের
স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের পক্ষে রেজ্যুলেশনটি
উত্থাপন করেন।
স্থায়ী মিশন বলছে, এ বছর আলোচ্য রেজ্যুলেশনটি একটি বিশেষ তাৎপর্য
বহন করে। কেননা এ বছরে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচি ২৫তম বর্ষে পদার্পণ
করেছে । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদে সরকার পরিচালনার সময় ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের
মতো জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচি গৃহীত হয়।
এরপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশনটি জাতিসংঘ
সাধারণ পরিষদে উপস্থাপন করে আসছে, যা শান্তি ও অহিংসার সংস্কৃতিকে উন্নীত করার জন্য
৮টি বিশেষ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানিয়েছে।
এছাড়া সাধারণ পরিষদের সভাপতির নেতৃত্বে ২০১২ সাল থেকে ‘শান্তির
সংস্কৃতি’ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘে একটি উচ্চ পর্যায়ের ফোরামের আয়োজন করে আসছে।
প্রস্তাবটি উপস্থাপনের সময় রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বিভিন্ন
বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে শান্তির সংস্কৃতির অব্যাহত প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আজ বিশ্ব ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব এবং মানবিক মর্যাদা অবজ্ঞার মুখোমুখি। এই
ক্রমবর্ধমান সংঘাত ও সহিংসতা উত্তরণে মানবমনে সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার ভাবকে পুনরুজ্জীবিত
করতে হবে, সমতা ও সব মানুষের সমমর্যাদার চেতনাকে সমুন্নত করতে হবে এবং সর্বোপরি যুদ্ধের
চেয়ে শান্তিকে অনেক বেশি লাভজনক করে তুলতে হবে।
এবারের রেজ্যুলেশনটিতে শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচির
২৫তম বার্ষিকী যথাযথভাবে পালন ও উদযাপনের জন্য সাধারণ পরিষদের সভাপতিকে দিনব্যাপী একটি
উচ্চ পর্যায়ের ফোরাম আহ্বান করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এছাড়া এ রেজ্যুলেশনে সাধারণ পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক
ও আঞ্চলিক সংস্থা, নাগরিক সমাজ, বেসরকারি খাত, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মিডিয়াসহ
অন্যান্য অংশীজনদের শিক্ষা ও জনসচেতনতা সম্প্রসারণসহ অন্যান্য আয়োজনের মাধ্যমে যথাযথভাবে
এই বার্ষিকীটি পালনের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
যুদ্ধ ও ধ্বংসযজ্ঞে বাংলাদেশের নিজস্ব অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণা প্রবর্তনের বাংলাদেশের উদ্যোগটি
আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনুপ্রাণিত।
তিনি আরও বলেন, বৈষম্য, বর্ণগত অসহিষ্ণুতা এবং পরাধীনতা আমাদের
একটি ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য করে। এ কারণেই আমরা শান্তির প্রসারকে আমাদের
পররাষ্ট্রনীতির একটি মৌলিক নীতিতে পরিণত করেছি।
রেজ্যুলেশনটির বিবেচনার পূর্বে শান্তির সংস্কৃতির উপর সাধারণ পরিষদে
একটি সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বহুসংখ্যক সদস্য রাষ্ট্র বক্তব্য প্রদান করে ।
এ সময় তারা শান্তির সংস্কৃতির ঘোষণা এবং এ বিষয়ক কর্মসূচি বাস্তবায়নে তাদের প্রতিশ্রুতির
কথা পুনর্ব্যক্ত করে। প্রতিনিধি দলগুলো জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতির ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত
করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
১১২টি দেশ এ বছর বাংলাদেশের এই রেজুল্যুশনটিকে কো-স্পন্সর করেছে,
যা ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনটির প্রতি জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অব্যাহত
সমর্থনের সাক্ষ্য বহন করে।
জাতিসংঘ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ রেজ্যুলেশন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ উত্থাপিত ‘শান্তির সংস্কৃতি’ শীর্ষক রেজ্যুলেশনটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে। ১১২টি দেশ এই রেজ্যুলেশনটিতে কো-স্পন্সর করেছে। বৃহস্পতিবার (২ মে) নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বাংলাদেশের পক্ষে রেজ্যুলেশনটি উত্থাপন করেন।