‘মৃত্যু যখন আকাশ
থেকে আপনাকে তাড়া করে ফেরে, তখন আপনি পালিয়ে আর যাবেন কোথায়?’,
উক্তিটি বোমা হামলার আক্রোশ থেকে পালিয়ে বেড়ানো গাজার নাদিয়া নামক এক বাসিন্দার।
বাঁচার আশায় যে নিজ বাড়িঘর ফেলে ছুটে বেড়াচ্ছে।
ইসরায়েলি বাহিনীর
সিরিজ বিমান হামলায় গাজা এক ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। যেদিকে তাকানো যায় শুধু ছাই আর
ছাই। গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে লাখ লাখ মানুষের আবাসস্থল। বহু মানুষ হয়েছে স্বজনহারা। উদ্বেগ
আর আতঙ্ককে সঙ্গী করে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুরা। তারা কোথায় যাবেন
কিভাবে, কোথায় গেলে একটু বেঁচে থাকবেন সে ঠিকানা তাদের জানা নেই।
দিনরাত নির্বিচারে
চলছে বোমাবর্ষণ। ধসে পড়েছে শত শত বাড়ি ও ভবন। ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে অগুনতি মানুষ।
হাসপাতালে লাশের সারি। এত এত লাশ যে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে। আশ্রয় নেই, থাকা খাওয়া বিহীন
মানবেতর এক দিনযাপন করছে গাজার দুর্ভাগা নিপীড়িত মানুষগুলো। চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র
সংকট। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ, ফুরিয়ে আসছে খাবার। ২২ লাখ মানুষের নগরী ফিলিস্তিনের গাজা
উপত্যকার বর্তমান পরিস্থিতি যে কারোর চোখে পানি নিয়ে আসতে বাধ্য। টানা পাঁচ দিন ধরে
ক্রমাধারে সেখানে অবিরাম বোমাবর্ষণ করে এসেছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী। যেন মনুষ্যত্ব
বিবেক খুঁইয়ে এসেছে তারা।
এরই মধ্যে হামাস সদস্যদের বিরুদ্ধে স্থল অভিযান চালানোর প্রস্তুতিও নিয়েছে ইসরায়েল। জানা গেছে সীমান্তে তিন লাখেরও বেশি সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে তারা। যেকোনো মুহূর্তে এ অভিযান শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বিরোধীদলীয় নেতা বেনি গানৎসকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের এ অভিযানে
সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র ও গোলাবারুদ দেশটিতে পৌঁছেছে। যুক্তরাষ্ট্রের
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলে হামাসের হামলাকে ‘সম্পূর্ণভাবে শয়তানের কাজ’ আখ্যায়িত করে ইহুদি রাষ্ট্রটির পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
অপর দিকে গাজায় ইসরায়েলের
চলমান হামলার কঠোর সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। ইসরায়েলের
হামলাকে যুদ্ধ নয়, বেপরোয়া হত্যাকাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করেছেন তিনি।
এরদোগান বলেন, ‘আমরা
প্রকাশ্যে ইসরায়েলে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার বিরোধিতা করি। একইভাবে আমরা কখনো গাজায়
নির্বিচার অব্যাহত বোমা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মানুষকে বেপরোয়াভাবে হত্যা করা মেনে নিতে
পারি না।’এদিকে রক্তপাত এড়াতে ইসরায়েল
ও ফিলিস্তিনের বাহিনীগুলোর প্রতি সমঝোতা আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিন।
উল্লেখ্য, গত শনিবার
গাজার স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এর পর পরই
গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তাদের বোমাবর্ষণে গাজা এক মৃত্যুপুরীতে রূপ নিয়েছে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল বুধবার জানায়, ইসরায়েলি বাহিনীর পাঁচ দিনের
বোমাবর্ষণে ১ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন পাঁচ হাজারের বেশি।
অপর দিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে বলে দেশটির কর্মকর্তারা
জানিয়েছেন।
জ্বালানির অভাবে গাজার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও গতকাল বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে গত সোমবার সেখানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয় ইসরায়েল। এখন শুধু জেনারেটর চালিয়ে আলো পেতে পারেন গাজাবাসী। তবে সে জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানিও তাঁদের ফুরিয়ে এসেছে। পাশাপাশি খাবার, ওষুধ ও সুপেয় পানি ফুরিয়ে আসায় আরও এক মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
এদিকে ইসরায়েলের
হামলার মুখে গৃহহীন হওয়া আরও ৪৫ জনের সঙ্গে একটি ভবনের মাটির নিচের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন
গাজার বাসিন্দা কামাল মাশাহারাবি। তিনি বলেন, ‘খুবই কঠিন একসময় পার করছি আমরা। পানি
নেই, বিদ্যুৎ, ইন্টারনে্ ঘর-বাড়ি কিছুই নেই। সাধারণ মানুষের এভাবে মৃত্যু হতে পারে
না। তাদের এই সংঘাতের বাইরে রাখা উচিত।’
আগে থেকেই গাজার প্রায় ৮০ শতাংশ বাসিন্দা ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল। জাতিসংঘ গতকাল জানায়, শনিবার হামলা শুরুর পর পর প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের কাছে তারা ত্রাণসহায়তা পৌঁছাতে পারছে না। জাতিসংঘের হিসাবে, ইসরায়েলের হামলার মধ্যে গাজায় আড়াই লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক সংস্থা গতকাল জানায়, গাজায় তাঁদের খাবার ও পানির যে মজুত আছে, তা দিয়ে ১২ দিনের মতো ১ লাখ ৮০ হাজার মানুষের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে অবিলম্বে গাজায় মানবিক ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি গতকাল বলেছেন, ‘গাজায় অবশ্যই খাবার, পানি, জ্বালানিসহ জরুরি জীবনরক্ষাকারী পণ্য যেতে দিতে হবে। আমাদের এখন দ্রুত ও নির্বিঘ্ন মানবিক সহায়তা প্রদানের সুযোগ পেতে হবে।’ গাজায় ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে মিসর। এ জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও হামাস নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
স্বাস্থ্যসেবার ভয়াবহ
দশা:
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মাই আল-কাইলা গতকাল বলেন, গাজায় স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জেনারেটরের মাধ্যমে
উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জ্বালানির যে
মজুত আছে, তা দিয়ে আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত চলা সম্ভব। এর পর থেকে পরিস্থিতি
কোথায় যাবে কি হবে তা নিয়ে চিন্তাও করা যাচ্ছে না।
গাজার বাসিন্দাদের
জন্য জরুরি স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন
সেখানকার চিকিৎসকেরা। তাঁরা বলেছেন, দ্রুত ওষুধসহ চিকিৎসাসামগ্রী না পেলে শত শত মানুষের
প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে না।
এদিকে গাজা সিটির
আল-ওয়াফা হাসপাতালের চিকিৎসক হাসান খালাফ বললেন, হতাহত ব্যক্তি ছাড়াও হাসপাতালটিতে
এখন শতাধিক নবজাতক রয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে এসব শিশুকে বাঁচানো সম্ভব হবে
না। কারণ, তাদের জীবন এখন পুরোটাই নির্ভর করছে বিদ্যুৎ আর চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর।
পরিবারের কেউ বেঁচে নেই:
গাজার বাসিন্দা আলা
আল-কাফারনেহ। ইসরায়েলে হামলায় ভাগ্যক্রমে তিনি প্রাণে বেঁচে গেছেন। তবে পরিবারের আট
সদস্যের সবাইকেই হারিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীও আছেন।
গাজার উত্তর-পূর্ব দিকের ছোট্ট শহর বেইত হানুনের বাসিন্দা কাফারনেহ বলেন, ‘ভোররাত চারটার দিকে আমরা যেখানে থাকি, সেই ভবনে বোমা হামলা হয়। আমরা জানি না কেন আমাদের ওপর হামলা হয়েছে। আমরা তো কিছুই করিনি।’
হামাস ফিলিস্তিন রক্তাক্ত ফিলিস্তিন ইসরায়েল হাসপাতাল লাশ গাজা
মন্তব্য করুন
স্লোভাকিয়া প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো
মন্তব্য করুন
ইরানের অস্ত্র চোরাচালান আটকে দেওয়ার দাবি করছে জর্ডান। দেশটির দাবি, এসব অস্ত্র জর্ডানের ক্ষমতাসীন রাজতন্ত্রের বিরোধীদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য আনার চেষ্টা করছিল ইরান।
বুধবার (১৫ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিষয়টি অবগত এমন দুটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অস্ত্র পাচারে সন্দেহভাজন ইরানি নেতৃত্বাধীন চক্রান্তকে জর্ডান ব্যর্থ করে দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ত্রগুলো সিরিয়ার ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়ারা জর্ডানের মুসলিম ব্রাদারহুডের একটি সেলের কাছে পাঠিয়েছিল। এ সেলের সঙ্গে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের সংগঠন হামাসের সামরিক শাখার সম্পর্ক রয়েছে। মার্চের শেষের দিকে ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত জর্ডানিয়ান সেলের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর অস্ত্রের চালানও জব্দ করা হয়।
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার মধ্যে প্রথমবারের মতো জর্ডানে অস্ত্রের চালান জব্দের খবর সামনে এসেছে। নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জর্ডানের দুটি সূত্র চলমান তদন্ত এবং গোপন অভিযানের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। তবে অস্ত্র দিয়ে কি ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা ছিল তা তারা জানাননি। এছাড়া কি ধরনের অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে তাও তারা জানাননি।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জর্ডানের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো ইরান এবং তার মিত্রদের কয়েকটি অস্ত্র চালান আটকে দিয়েছে। এসব চালানে ক্লেমোর মাইন, সি৪ এবং সেমটেক্স বিস্ফোরক, কালাশনিকভ রাইফেল এবং ১০৭ মিমি কাতিউশা রকেট ছিল।
জর্ডানের সূত্র অনুসারে, এ সব অস্ত্রের বেশিরভাগ ইসরায়েলের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জন্য নির্ধারিত ছিল। এছাড়া মার্চে জব্দ করা অস্ত্র জর্ডানে ব্যবহারের জন্য আনা হয়েছিল।
জর্ডানের মুসলিম ব্রাদারহুড জানিয়েছে, অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে তাদের কয়েকজন কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে এর সঙ্গে দলের কোনো নীতিগত সমর্থন নেই বলে জানিয়েছে তারা।
মন্তব্য করুন
ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের খারকিভে শুক্রবার ভোরে হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে রাশিয়ার সেনারা। এরপর সেখান দিয়ে একের পর এক অঞ্চল দখল করে সামনের দিকে এগিয়ে আসছে তারা।
এরমধ্যেই নিজের সব আন্তর্জাতিক সফর স্থগিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
বুধবার (১৫ মে) তার দপ্তর থেকে একটি বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, 'আগামী কয়েকদিনে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ অন্যান্যদের যেসব আন্তর্জাতিক সফর ছিল সেগুলো স্থগিত এবং সফরগুলোর সময় পুনরায় নির্ধারিত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'
ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান কায়রাইলো বুদানোভ সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে জানান, খারকিভের সম্মুখভাগের পরিস্থিতি খারাপ হয়ে পড়েছে। এরপরই জেলেনস্কির পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, রুশ সেনাদের হামলার তীব্রতায় টিকতে না পেরে খারকিভের রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে সেনাদের সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন।
দেশটির সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেছেন, 'সেনারা তীব্র হামলার মুখে পড়েছে এবং তাদের আরও সুবিধাজনক স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।'
ইউক্রেন সাধারণত সেনাদের প্রত্যাহার করার সরাসরি ঘোষণা দেয় না। এর বদলে তারা প্রত্যাহারের বিষয়টিকে 'সেনাদের সুবিধাজনক স্থানে' নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে।
সেনাবাহিনীর এ মুখপাত্র আরও বলেছেন, সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে তিনি দাবি করেছেন রুশ সেনাদের তারা শক্ত অবস্থান নিতে দিচ্ছেন না।
এদিকে ইউক্রেনের পুলিশ প্রধান খারকিভের ভোভচানস্ক এবং লুকিয়ান্তসি থেকে সব মানুষকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। তার এমন আহ্বানের মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, সেদিকটায় তড়িৎ গতিতে এগিয়ে আসছে রাশিয়ার সেনারা।
রুশ বাহিনী খারকিভে কী লক্ষ্য নিয়ে প্রবেশ করছে এ বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। তবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কয়েকদিন আগে বলেছিলেন তারা রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তে একটি বাফার জোন তৈরি করতে চান। যেন ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতর কোনো ধরনের হামলা না চালাতে পারে।
মন্তব্য করুন
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং।
টানা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তার এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে আক্ষরিক অর্থে শেষ হতে চলেছে 'লি সেইন যুগ'।
বুধবার রাতে সব ঠিক থাকলে, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওয়ংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকারপ্রধানের পদ থেকে বিদায় নেবেন তিনি।
১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র তিনজন প্রধানমন্ত্রী দেখেছে সিঙ্গাপুর। এরা সবাই দেশটির ক্ষমতাসীন দল পিপল'স অ্যাকশন পার্টির (পিএপি) সদস্য। প্রথমজন লি কিউয়ান ইয়িউকে বলা হয় সিঙ্গাপুরের স্থপতি। বর্তমান বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুংয়ের পিতা লি কিউয়ান ইয়িউ টানা ২৫ বছর দেশটির সরকারপ্রধান ছিলেন। সিঙ্গাপুরের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম গোহ চোক তং।
৭২ বছর বয়সী লি সেইন লুং অবশ্য এখনই রাজনীতি পুরোপুরি বিদায় নিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতির পর একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীর পদমর্যাদায় মন্ত্রিসভার সদস্য থাকবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে গত শনিবার সিঙ্গাপুরের সাংবাদিকদের শেষ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন লি সেইন। সেই সাক্ষাৎকারে এত বছর ধরে তাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য সিঙ্গাপুরের জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কখনও অন্যদের চেয়ে বেশি গতিতে দৌড়ানোর চেষ্টা করিনি; বরং চেষ্টা করেছি, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে একসাথে চলতে।’
‘এবং আমি মনে করি, গত ২০ বছরে জাতিগতভাবে আমরা কিছু সাফল্য অর্জন করেছি। তবে এটা আমি স্বীকার করব যে, দুই পূর্বসূরি প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে আমার কাজের ধরন কিছুটা ভিন্ন ছিল।’
১৯৮৪ সালে তরুণ বয়সে সাধারণ কর্মী হিসেবে পিএপিতে যোগ দেন তিনি। সে সময় তার বাবা লি কিউয়ান ইয়িউ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে বাবা প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকলেও সে সময় দল থেকে তেমন কোনো আনুকূল্য পাননি তিনি। আর দশজন সাধারণ কর্মীর মতোই ছিলেন।
লি সেইনের উত্থান ঘটা শুরু হয় দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী গোহ চোক তং’য়ের সময়। গোহ চোক তং’য়ের একজন বিশ্বস্ত অনুসারী হিসেবে নিজেকে দলের ভেতর প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন তিনি এবং তার ধারবাহিকতাতেই ২০০৪ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হন।
প্রথম দিকে অবশ্য লি সেইনকে ব্যাপক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। এসব সমালোচনার প্রায় সবই ছিল স্বজনপ্রীতিমূলক (নেপোটিজম)। বলা হতো, সিঙ্গাপুর লি পরিবারের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে আর সেই পরিবারের সংরক্ষক হলেন গোহ চোক তং।
তবে পরবর্তী ২০ বছরে বহুবার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করেছেন তিনি। তার নেতৃত্ব সিঙ্গাপুরের অর্থনীতি বহুমুখী এবং বিকশিত হয়েছে, একটি সাধারণ দ্বীপরাষ্ট্র থেকে দেশটি পরিণত হয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র এবং ট্যুরিস্টদের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে; মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এছাড়া তার শাসনামলের ২০ বছরে কখনও মূল্যস্ফীতি বা অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয়নি শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে। এমনকি করোনা মহামারির মধ্যেও নয়।
ভূরাজনীতিতেও সাফল্য দেখিয়েছেন লি সেইন। পরস্পরের প্রতি বৈরীভাবাপন্ন দুই শক্তিমান দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের সঙ্গে সবসময় ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে গেছেন। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতেও নিজ দেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করেছেন তিনি।
তবে অন্য সব রাজনীতিবিদের মতো লি সেইনও সমালোচনার ঊর্ধে নন। বিভিন্ন আইনী প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের বাক স্বাধীনতা সীমিত রাখার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া দেশের শ্রমিক সংকট লাঘবের জন্য বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে বসবাসের অনুমতি দিয়েছেন তিনি। এ কারণেও তিনি বিরোধীদের চক্ষুশূল। মূলত তার শাসনামলেই ২০১১ এবং ২০২০ সালের ভোটে নিজেদের ইতিহাসের সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছিল পিএপি।
সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সুশাসন বিশেষজ্ঞ ডোনাল্ড ল’ বিবিসিকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কিছু সমস্যা থাকলেও লি সেইনই আসলে সিঙ্গাপুরের জনগণের প্রকৃত নেতা। তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো এই দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।’
ক্ষমতা সিঙ্গাপুর প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
ইন্দোনেশিয়ায় সপ্তাহব্যাপী চলা ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলে একটি আগ্নেয়গিরির শীতল লাভা এবং আকস্মিক বন্যার কারণে এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। উদ্ধার অভিযান এখনও চলমান। বন্যার কারণে রাস্তা-ঘাট, বাড়ি-ঘর, মসজিদ প্লাবিত হয়েছে। খবর এএফপির।
স্থানীয় সময় শনিবার মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে সক্রিয় আগ্নেয়গিরিগুলোর একটি থেকে শীতল লাভা নির্গত হয়েছে। ফলে এর কাছাকাছি অবস্থিত বিভিন্ন জেলার বাড়ি-ঘর, রাস্তা এবং মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আগ্নেয়গিরির শীতল লাভা লাহার নামেও পরিচিত। আগ্নেয়গিরির প্রধান উপাদান যেমন ছাই, বালি এবং নুড়ি পাথর বৃষ্টির কারণে আগ্নেয়গিরির ঢালে নেমে আসে। তখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে।
বুধবার এক বিবৃতিতে জাতীয় দুর্যোগ সংস্থার প্রধান সুহরিয়ানতো বলেন, সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে মৃতের সংখ্যা ৫৮ জন। তিনি জানিয়েছেন, এখনো ৩৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়া আরও ৩৩ জন বিভিন্ন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
এদিকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকার ধ্বংসস্তুপ পরিষ্কার করতে ইতোমধ্যেই ভারী সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন
ইরানের অস্ত্র চোরাচালান আটকে দেওয়ার দাবি করছে জর্ডান। দেশটির দাবি, এসব অস্ত্র জর্ডানের ক্ষমতাসীন রাজতন্ত্রের বিরোধীদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে সহায়তার জন্য আনার চেষ্টা করছিল ইরান। বুধবার (১৫ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিষয়টি অবগত এমন দুটি সূত্রের বরাতে সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অস্ত্র পাচারে সন্দেহভাজন ইরানি নেতৃত্বাধীন চক্রান্তকে জর্ডান ব্যর্থ করে দিয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং। টানা ২০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তার এই সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রে আক্ষরিক অর্থে শেষ হতে চলেছে 'লি সেইন যুগ'। বুধবার রাতে সব ঠিক থাকলে, উপপ্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী লরেন্স ওয়ংয়ের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরকারপ্রধানের পদ থেকে বিদায় নেবেন তিনি।