হামাস ও ইসরায়েলের
চলমান সংঘাত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সকল রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে দিয়েছে। শুধু ফিলিস্তিন
ও ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ নয় বরং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ পরিকল্পনাও
ভেস্তে গিয়েছে এ সংঘাতকে কেন্দ্র করে। মধ্যপ্রাচ্যকে হাত করে চীন এবং রাশিয়ার ক্ষমতার
জোর কমিয়ে আনার যে প্রচেষ্টা তা প্রায় হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
তিন বছর ধরে বাইডেন
প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে তাদের কর্মকাণ্ড কমিয়ে চীনের দিকে নজর দিতে চাইছিল। পররাষ্ট্রনীতির
অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে তাদের
সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে। সে প্রেক্ষিতে তারা উদ্যোগও নিয়েছিল। একই সঙ্গে ইরানেও উত্তেজনা
কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছিল পদক্ষেপ, কিন্তু সব হিসাবই ইসরায়েল ও হামাসের সংঘাতের
কারণে বদলে গিয়েছে। তাদের যে প্রত্যাশা ছিল চীনের প্রভাব কমিয়ে এই অঞ্চলে মধ্যপ্রাচ্য
ও ইউরোপের সঙ্গে ভারতের একটি অর্থনৈতিক করিডর স্থাপিত হবে তা আজ অনেকটাই হুমকির মুখে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পের
দুটি অংশ ছিল, একটি পূর্ব দিককার করিডর। এর মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে আরব ও উপসাগরীয় অঞ্চলের
একটি নিবিড় যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার কথা ছিল। আর অন্যটি ছিল জর্ডান ও ইসরায়েল হয়ে ইউরোপের
সঙ্গে উপসাগরীয় অঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপন। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের বিপরীতে
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা জবাব ছিল এই।
হামাসের আচমকা হামলা সব পরিকল্পনাই ভেস্তে দিয়েছে। প্রথম দফাতেই স্থগিত হয়ে গেছে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের চলমান প্রক্রিয়া।
দ্বিতীয়ত, এই হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক স্থাপনার বড় সমাবেশ ঘটিয়েছে। বলা হচ্ছে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পর এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সামরিক আয়োজন। পেন্টাগন একটি রণতরি পাঠিয়েছে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে, অন্যটি পাঠিয়েছে উপসাগরীয় অঞ্চলে।
এই দুটি রণতরি থেকে
হামলা চালাতে সক্ষম এমন ১০০টির বেশি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে। পাশাপাশি এখান
থেকে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া সম্ভব। ওয়াশিংটন বলছে, চলমান যুদ্ধে তৃতীয় কোনো পক্ষ
যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্যই এই ব্যবস্থা।
কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনিদের
হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের এহেন সমর্থনের কারণে মুসলিম বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান
হয়ে পড়েছে অনেক দুর্বল। উল্টো শক্তিশালী হয়েছে রাশিয়া ও চীনের অবস্থান।
রাশিয়া ও চীন গাজায়
তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বন্ধের কথা বলেছে। কিন্তু অপরদিকে ধ্বংসাত্মক এই যুদ্ধে সমর্থন জানিয়ে
যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এতে নিজের পায়ে নিজেই গুলি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
তৃতীয়ত, ইরানের সঙ্গে
যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনা প্রশমনের যে উদ্যোগ, তা–ও এখন নেই বললেই চলে। মাত্র এক মাস আগে দুই দেশ বন্দিবিনিময়ে ঐকমত্যে পৌঁছায়।
বন্দিমুক্তি সম্ভব করতে যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জব্দকৃত ছয় বিলিয়ন ডলারও ছাড় করে।
আশা করা হচ্ছিল এই
চুক্তির ফলে সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন সেনাদের ওপর মিলিশিয়াদের হামলার রাশ টেনে ধরতে
সহায়তা করবে ইরান। কিন্তু সে আশায়ও এখন গুড়েবালি।
গেল কয়েক সপ্তাহের পরিস্থিতিতে এটা পরিষ্কার যে উদ্যোগগুলো আর এগোচ্ছে না। ইরানপন্থী সিরিয়া ও ইরাকের সশস্ত্র দলগুলো মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন সেনাসদস্য আহত হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা
আরও দাবি করেছেন যে উত্তর লোহিত সাগরে মার্কিন বাহিনীর দিকে ছোড়া ড্রোন তাঁরা প্রতিহত
করেছেন। ইয়েমেনের হুতিরা এই ড্রোন তাঁদের দিকে ছুড়েছিল। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
মধ্যপ্রাচ্যের সাথেই নতুন এক যুদ্ধে জড়ানোর ঝুঁকিতে আছে।
হামাসের এই হামলা
এবং গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ আঞ্চলিক সরকারগুলোকেও বেকায়দায় ফেলেছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র
তার আরব মিত্রদের ওপর চাপ দিচ্ছে তারা যেন হামাসের হামলার নিন্দা জানায়। সংযুক্ত আরব
আমিরাত ও বাহরাইন তেমন একটি বিবৃতিও দিয়েছে।
কিন্তু অন্যদিকে,
ইসরায়েলের নির্বিচার হামলার প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আরব সরকারগুলোর ওপর একজোট
হওয়ার চাপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে যে জনদাবি উঠেছে, তাতে আরব
সরকারগুলোর কোনো কোনোটি ইতিমধ্যে তাদের অবস্থান বদলেছে।
১৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের
আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে হামলার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ একযোগে আরব
রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলি হামলার ব্যাপক নিন্দা জানায়। এর দিন কয়েক পর ২১ অক্টোবর কায়রোর
পিস সামিটে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ ইসরায়েলি নীতির কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে এই জর্ডানই ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছিল। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্র
ক্রমেই সকল মিত্রশক্তি হারাচ্ছে।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা
পরিষদে ২৪ অক্টোবর গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বহু বিতর্ক হয়। ওই বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র
মিসর, জর্ডান, সৌদি আরবও ইসরায়েলের কঠোর সমালোচনা করে এবং তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির পক্ষে
মত দেয়।
এর এক দিন পর চীন
ও রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত মার্কিন অবস্থানে ভেটো দেয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র
তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব তোলেনি।
আপাতত মার্কিনপন্থী
আরব সরকারগুলো জনরোষ ঠেকাতে ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষার ব্যবহার করছে।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে,
ইসরায়েল যদি গাজার ওপর হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে আর কথার কথায় কোনো কাজ হবে না। ইসরায়েলের
সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে যে সম্মতি তারা দিয়েছে, সেখান থেকে দেশগুলোর বেরিয়ে আসতে
হবে। কারণ, ইসরায়েলিরা আত্মপক্ষ সমর্থনের নামে ভয়ংকর গণহত্যা চালাচ্ছে।
ফিলিস্তিনিদের সুরক্ষায় যথেষ্ট তৎপরতার অভাব থাকলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাও বিনষ্ট করবে। আরব জনগোষ্ঠী এমনিতেই তাদের ব্যর্থ অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। এর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্বিচার হামলা তাদের আরও ক্ষুব্ধ করবে। আবার গাজার ওপর ইসরায়েলি বর্বরতায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা আরব সরকারগুলোর গ্রহণযোগ্যতা কমাবে।
প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলে উত্তর অঞ্চলের জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ একটি হুমকি, যা এখন ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- উভয়কেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
ইরান সমর্থিত এই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি এখন হামাসের চেয়েও বড় হুমকি। এদের কাছে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার রকেট বোমা রয়েছে, যা হামাসের ব্যবহৃত রকেট বোমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী এবং নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। সশস্ত্র গোষ্ঠীটি ইতিমধ্যেই ইসরায়েলের সাথে গোলাগুলিও করেছে। ইসরায়েল যখন “গাজা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং যুদ্ধে ক্লান্ত” হয়ে পড়বে, হিজবুল্লাহ তখন সুযোগ বুঝে তাদের ওপর হামলা চালাতে পারে এমনটাই আশঙ্কা করছে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
ইরানও খুব স্বস্তিতে
নেই। তবে তার অস্বস্তির কারণ আলাদা। ইরানের নেতৃত্বে হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার প্রশংসা
করে। একই সঙ্গে ওই হামলায় নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে।
হামাসকে সমর্থন দিলেও ইসরায়েল বা তার মিত্র কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে চায় না তেহরান। তারা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাডিজের ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির পরিচালক সেথ জি জোনস মনে করেন, গাজায় সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব একটা আগ্রহ দেখাবে না।
তবে ওই অঞ্চলে যে সামরিক বহর পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে “একটি গুলি না চালিয়েও” অন্যভাবেও লাভবান হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। সেটি হোক তথ্য সংগ্রহ কিংবা আকাশসীমা প্রতিরক্ষা। কাজেই একেবারে দেয়ালে পিঠ ঠেকে না গেলে তারা যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না। সরাসরি যুদ্ধ জড়ানোটা হবে তাদের “শেষ পদক্ষেপ”।
এদিকে ইসরায়েল বলেছে, গাজায় তাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া এবং গাজায় নতুন সরকারকে বসানো। এর অর্থ তেহরান এই অঞ্চলে তাদের একটি মিত্রকে হারাবে।
এখন বিকল্প হচ্ছে
চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকা অথবা হামাসকে ইসরায়েলের হামলায় দুর্বল বা নির্মূল হতে দেখা অথবা
লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহর আবির্ভাব এবং উত্তর সীমান্ত থেকে ইসরায়েলের ওপর হিজবুল্লাহকে
চাপ দিতে দেখা। যা–ই ঘটুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের
মিত্রদের ওপর এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে।
তবে ইসরায়েল এবং
যুক্তরাষ্ট্র সতর্কতা দিয়ে রেখেছে যে ইসরায়েলের ওপর হামলা হলে হিজবুল্লাহকে কঠোর শাস্তি
পেতে হবে। পুরোদমে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পেয়ে ইসরায়েল হয়তো লেবাননের এই গোষ্ঠীর ওপর
হামলা চালাবে। এতে করে লেবাননে আবার অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে। আর এই অস্থিতিশীলতা ইরানের
পছন্দ নয়।
অন্যদিকে দুই সপ্তাহ ধরে বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের এই রক্তপাতমূলক সংঘাতে জড়ানোয় রাশিয়া ও চীনের লাভ হয়েছে। ‘সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের’ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এমনিতেই এই অঞ্চলে খারাপ। স্বাভাবিকভাবেই মুসলিমদের মধ্যে রাশিয়া ও চীন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা আছে।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের
সামরিক তৎপরতা, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর জন্য অতিরিক্ত রসদের জোগান, মার্কিন কূটনীতিকদের
ইসরায়েলের প্রতি বাড়তি মনোযোগের অর্থ হলো ইউক্রেন ও এশিয়ার যে দেশগুলো চীনা প্রভাব
থেকে উঠে দাঁড়াতে চাইছে, তাদের কাছ থেকে মার্কিনিদের দূরে সরে আসা।
উপরন্তু, গাজায় ফিলিস্তিনিদের
হত্যায় সমর্থনের কারণে মুসলিম বিশ্বের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান দুর্বল হয়েছে। আর
শক্তিশালী হয়েছে রাশিয়া ও চীনের অবস্থান। দেশ দুটি গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধ বন্ধের কথা
বলেছে। মনে হচ্ছে ধ্বংসাত্মক এই যুদ্ধে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিজের পায়ে নিজেই
গুলি করছে। মধ্যপ্রাচ্যে চীন ও রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখার বদলে যুক্তরাষ্ট্র পরোক্ষভাবে
তাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করছে।
প্রকৃতপক্ষে, ৭ অক্টোবর
হামাসের হামলাকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের হিসাব-নিকাশ বদলে গেছে। মধ্যপ্রাচ্য তাদের
নীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনবে, তা নির্ভর করছে ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের
সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার ওপর। গাজায় যুদ্ধ বন্ধে, অবরোধ তুলে নিয়ে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে
আলোচনায় ইসরায়েল সরকার যত দিন পর্যন্ত না বসছে, তত দিন পর্যন্ত এই অঞ্চলের আগুন নিভবে
না।
আশঙ্কা আছে, এই বিরোধ হয়তো লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে পৌঁছাবে। আরব বিশ্বে গণ-অভ্যুত্থান ঘটবে। এতে করে শুধু এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ক্ষতিতে পড়বে তা-ই নয়; রাশিয়া ও চীনের সম্পৃক্ততাও বাড়বে।
এদিকে সামরিক বিশ্লেষক ও জেরুজালেম পোস্টের কলামিস্ট ইয়াকভ কাটজ মনে করেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান শুরু হলে এবং বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন অনেকটাই চাপের মুখে পড়বে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মার্কিন এই সমর্থনের সুর কিছুটা নরম হয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
সবকিছু মিলিয়ে বর্তমানে বেশ চাপের মুখেই আছে যুক্তরাষ্ট্র। ইসরায়েলিদের সমর্থন করে নিজেদের কতটা বিপদ ডেকে আনলো তারা সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ইসরায়েল হামাস বিশ্ব সংবাদ যুদ্ধ ফিলিস্তিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা বিপদ
মন্তব্য করুন
গত ১৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
এপির হিসেব অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মোট ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ বার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেসব অভিযান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের।
সর্বশেষ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে (ইউসিএলএ) অভিযান চালিয়ে ২০০ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্লাইউড, মেটাল ফেন্স, প্ল্যাকার্ড দিয়ে তৈরি করা ব্যারিকেড এবং ক্যাম্পাস চত্বরের অস্থায়ী তাঁবুগুলো তছনছ করে দিয়েছে পুলিশ। এসব তাঁবুতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা রাতে ঘুমাতেন।
ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে গত মার্চের শেষ দিক থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ আন্দোলন শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ। পরে সেই আন্দোলন দেশটির অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে সেই আন্দোলন চলার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ১৮ এপ্রিল রাতে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। এ অভিযানে ১০০ জন ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ এবং তাদের তাঁবু-ব্যারিকেডও তছনছ করে দিয়েছিল পুলিশ।
কিন্তু পরের দিন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ফের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। মার্কিন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ-আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্যরা মার্কিন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে 'ইহুদিবিদ্বেষী' আন্দোলন বলে আখ্যা দিয়েছেন। তবে আন্দোলনের সংগঠকদের (যাদের মধ্যে ইহুধি ধর্মাবলম্বীরাও রয়েছেন) দাবি, তারা কেবল ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভ গ্রেপ্তার শিক্ষার্থী ইউসিএলএ
মন্তব্য করুন
মুক্ত গণমাধ্যম বাংলাদেশ পাকিস্তান
মন্তব্য করুন
চলন্ত ট্রেনে অপ্রত্যাশিত এক ঘটনার সাক্ষী হলেন যাত্রীরা। স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে পালালেন স্বামী। গত ২৯ এপ্রিল ভারতের জাহাংসি জংশনে এ ঘটনা ঘটে।
২৮ বছর বয়সি মোহাম্মাদ আরশাদ তার ২৬ বছর বয়সি স্ত্রী আফসানাকে নিয়ে ট্রেনে ভ্রমণ করার সময় তালাকের এ ঘটনা ঘটে। খবর এনডিটিভির।
পেশায় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আরশাদের চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি বিয়ে হয়েছিল আফসানার সঙ্গে। বিয়ের পর দুজনে ভোপালে থাকতেন। এক সপ্তাহ আগে কানপুরের পুখরায়ানে যান দুজনে। সেখানে আরশাদের পৈতৃক বাড়ি। কিন্তু সেখানে গিয়েই চমকে যান আফসানা। জানতে পারেন আরশাদের আরও এক স্ত্রী রয়েছে। এর প্রতিবাদ করলে আরশাদ ও তার মা আফসানার কাছে যৌতুকের দাবি করতে থাকে।
অভিযোগ, মারধরও করা হয় আফসানাকে। এরপর স্ত্রী আফসানাকে নিয়ে ভোপালে ফিরছিলেন আরশাদ। ঝাঁসি স্টেশনে ট্রেন ঢোকার মুখে স্ত্রীকে তিন তালাক দেন আরশাদ। এরপরই ট্রেন থেকে নেমে যান।
এ ছাড়া স্ত্রীকে চলন্ত ট্রেনে মারধরও করেছিলেন আরশাদ। ট্রেন ঝাঁসিতে থামতেই জিআরপিকে সমস্ত ঘটনা জানান আফসানা। এরপরই আফসানাকে ফেরত পাঠানো হয় আরশাদের পৈতৃক বাড়িতে। ঘটনায় এফআইআর দায়ের হয়েছে। আরশাদের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
গোটা ঘটনার কথা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকেও জানিয়েছেন আফসানা। স্বামীর কড়া শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশের সার্কেল অফিসার জানিয়েছেন, আফসানার অভিযোগের ভিত্তিতে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলা থেকে রেহাই পাইনি তার বাবা-মাও।
মন্তব্য করুন
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। এই বিক্ষোভ চলাকালে এক অধ্যাপককে গ্রেফতার করার সময় তার পাঁজরের ৯টি হাড় ও একটি হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী শিক্ষক এক বিবৃতিতে এ কথা জানান।
মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তিনি।
এ ঘটনায় ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, শনিবার ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্টিভ তামারি দৃশ্যত বিক্ষোভকারীদের ছবি তোলার বা ভিডিও ধারণের চেষ্টা করছিলেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য বেপরোয়াভাবে গ্রেফতার করে নিয়ে যান তাকে।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, গ্রেফতার হওয়ার সময় অধ্যাপক তামারি মাটিতে পড়ে গেলে পুলিশের এক সদস্য তাকে হাঁটু দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। পরে দুই হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়। এরপর কয়েকজন পুলিশ তার নিস্তেজ হয়ে পড়া শরীর টেনেহিঁচড়ে একটি ভ্যানের দিকে নিয়ে যায় ও মাটিতে উপুড় করে ছুড়ে ফেলে।
যুক্তরাষ্ট্র বিক্ষোভ অধ্যাপক পুলিশ
মন্তব্য করুন
পাকিস্তানের কারাকোরাম হাইওয়েতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২১ জন। শুক্রবার ভোরে উচ্চগতির একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন জানিয়েছে, এতে বলা হয়েছে, শুক্রবার ভোরে গিলগিট-বালতিস্তানের দিয়ামার জেলার কারাকোরাম হাইওয়েতে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে যাওয়ার পর কমপক্ষে ২০ জন নিহত এবং আরও ২১ জন আহত হয়েছেন বলে উদ্ধারকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
দিয়ামের জেলা উদ্ধার কর্মকর্তা শওকত রিয়াজের মতে, বেসরকারি সংস্থার ওই বাসটি রাওয়ালপিন্ডি থেকে গিলগিটের দিকে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে কারাকোরাম হাইওয়ের কাছে গুনার ফার্মের কাছে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে বাসটি উল্টে সিন্ধু নদীর তীরে পড়ে যায়, এতেই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
পাকিস্তান সড়ক দুর্ঘটনা নিহত আহত
মন্তব্য করুন
গত ১৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২ হাজার ২০০ জন ফিলিস্তিনপন্থি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। এপির হিসেব অনুযায়ী, ১৮ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মোট ৪৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৬ বার অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। সেসব অভিযান থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের।
ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র। এই বিক্ষোভ চলাকালে এক অধ্যাপককে গ্রেফতার করার সময় তার পাঁজরের ৯টি হাড় ও একটি হাত ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। ভুক্তভোগী শিক্ষক এক বিবৃতিতে এ কথা জানান। মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের সেন্ট লুইসে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে এ ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী শিক্ষক স্টিভ তামারি সাউদার্ন ইলিনয়েস ইউনিভার্সিটি এডওয়ার্ডসভিলের ইতিহাসের অধ্যাপক। মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ তিনি।