আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের
জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত। দেশটিতে এ সময় তীব্রভাবে আলোচনা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারতের
ভূমিকা নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হতে চাইছেন
এবং প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্বাচন বর্জন করায় তার জয় অনিবার্য বলেই মনে হচ্ছে। এছাড়া
নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে বরাবরই বার্তা দিচ্ছে পশ্চিমাসহ বিদেশি বন্ধু
রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা।
সরকার বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)
এবং তার মিত্ররা বলেছে, শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবেন বলে তাদের কোনও বিশ্বাস
নেই। তারা তাকে পদত্যাগ করতে এবং একটি নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচন
আয়োজন করতে দাবি করেছে। তবে বিরোধীদের এই দাবি শেখ হাসিনা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ
দেশ বাংলাদেশকে প্রায় তিন দিক দিয়ে ঘিরে আছে ভারত। এর বাইরে কেবল দক্ষিণ-পূর্বে মিয়ানমারের
সাথে বাংলাদেশের ২৭১ কিলোমিটার (১৬৮ মাইল) দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। আর ভারতের কাছে বাংলাদেশ
শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়। এটি ভারতের কৌশলগত অংশীদার এবং একটি ঘনিষ্ঠ মিত্রও বটে। কারণ
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নিরাপত্তার জন্য ভারতের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ।
এ কারণেই ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা যুক্তি
দেন যে, দিল্লির জন্য ঢাকায় একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার প্রয়োজন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার
নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে শেখ হাসিনা ভারতের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন এবং
দিল্লি আবারও তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় এবং এই তথ্য কারও কাছে কোনো গোপন বিষয় নয়।
অন্যদিকে শেখ হাসিনা বরাবরই দিল্লির সঙ্গে
ঢাকার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ন্যায্যতা দিয়েছেন। ২০২২ সালে ভারত সফরের সময় তিনি বলেছিলেন,
বাংলাদেশ যেন ভারতকে ভুলে না যায়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত, তার সরকার,
জনগণ এবং সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল।
অবশ্য আওয়ামী লীগ দলের প্রতি এই সমর্থন বিরোধী
দল বিএনপি থেকে তীব্র সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সিনিয়র বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী
বিবিসিকে বলেছেন, ‘ভারতের উচিত বাংলাদেশের জনগণকে সমর্থন করা, কোনও বিশেষ দলকে নয়।
দুর্ভাগ্যবশত, ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র চায় না।’
রিজভী আরও বলেন, দিল্লি শেখ হাসিনার জন্য
প্রকাশ্যে শিকড় গেড়ে এবং ‘ডামি নির্বাচনকে’ সমর্থন করে ‘বাংলাদেশের জনগণের থেকে বিচ্ছিন্ন’
হয়ে গেছে।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশের নির্বাচনে দিল্লির হস্তক্ষেপের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, ‘নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে আমরা সেখানে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চাই।’
অবশ্য ভারত নিজেও উদ্বিগ্ন যে, বিএনপি এবং
জামায়াতে ইসলামী দলের প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের প্রত্যাবর্তনের পথ প্রশস্ত
করতে পারে। যেমনটি ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে জোট সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় হয়েছিল।
ঢাকায় কাজ করা সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার ড.
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বিবিসিকে বলেছেন, ‘তারা অনেক জিহাদি গ্রুপের জন্ম দিয়েছে যা
বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছিল। যার মধ্যে ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা
এবং পাকিস্তান থেকে আসা অস্ত্র ভর্তি ১০টি ট্রাক আটকের ঘটনাও ছিল।’
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই শেখ হাসিনা ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে দিল্লির আস্থা অর্জন করেন। এসব জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েকটি আবার বাংলাদেশ থেকেও পরিচালিত হতো।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক,
জাতিগত ও ভাষাগত সম্পর্ক রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাঙালি প্রতিরোধ বাহিনীর সমর্থনে সৈন্য
প্রেরণের মাধ্যমে দিল্লি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে।
চাল, ডাল এবং শাকসবজির মতো অনেক প্রয়োজনীয়
পণ্য পাওয়ার বিষয়ে ঢাকা দিল্লির ওপর নির্ভরশীল। আর তাই রান্নাঘর থেকে ভোটের ব্যালট
পর্যন্ত বাংলাদেশে ভারত প্রভাবশালী। অবকাঠামো ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ২০১০ সাল থেকে
বাংলাদেশকে ৭ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ঋণ দিয়েছে ভারত।
কিন্তু কয়েক দশক ধরে পানিসম্পদ ভাগাভাগি
নিয়ে বিরোধ থেকে শুরু করে একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ নিয়েও সম্পর্কের
মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
ঢাকায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের বিশিষ্ট
ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বিবিসিকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে ভারতের ভাবমূর্তিগত সমস্যা
রয়েছে। এটি এই উপলব্ধি থেকে আসছে যে, বাংলাদেশ ভালো প্রতিবেশীর কাছ থেকে সেরা আচরণটা
পাচ্ছে না।’
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার
ক্ষমতায় আসেন এবং তার দল পরে আরও দুটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। যদিও সেই নির্বাচনগুলোতে
ব্যাপক ভোট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করে থাকে।
যদিও ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে সড়ক, নদী এবং ট্রেনের অ্যাক্সেস পেয়েছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, ঢাকা এখনও ভারতীয় ভূখণ্ডের ভেতর দিয়ে স্থলবেষ্টিত নেপাল এবং ভুটানের সাথে সম্পূর্ণভাবে ওভারল্যান্ড বাণিজ্য করতে পারছে না।
ঢাকায় বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার থাকার পেছনে ভারতের
অন্যান্য কৌশলগত কারণও রয়েছে। দিল্লি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে তার উত্তর-পূর্বের সাতটি
রাজ্যে সড়ক ও নদীপথে পরিবহনের সুবিধা চায়।
এখন ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্বে
যেতে রাস্তা এবং ট্রেনের সংযোগ ‘চিকেনস নেক’-এর ওপর নির্ভরশীল। এটি মূলত ২০ কিমি (১২
মাইল) দীর্ঘ স্থল করিডোর যা নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভুটানের সীমান্তে অবস্থিত। দিল্লির
কর্মকর্তারা ভয় পাচ্ছেন, ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সাথে যেকোনও সম্ভাব্য সংঘর্ষে
এই স্থানটি দিল্লির জন্য কৌশলগতভাবে দুর্বল পয়েন্ট হবে।
যদিও বেশ কয়েকটি পশ্চিমা সরকার কথিত মানবাধিকার
লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের জন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের ওপর অতিরিক্ত আরও
নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে চেয়েছিল, তবে ভারত এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করে তা প্রতিহত
করছে। এছাড়া ভারতের সাথে আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াইয়ে বাংলাদেশে নিজের পদচিহ্ন প্রসারিত
করতে আগ্রহী চীনও।
সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক ড. পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী
বলেছেন, ‘আমরা পশ্চিমাদের জানিয়েছি, আপনারা যদি শেখ হাসিনাকে চাপ দেন, তাহলে তিনি
চীনা শিবিরে চলে যাবেন, যেমনটা অন্যান্য দেশও করেছে। এটি ভারতের জন্য কৌশলগত সমস্যা
সৃষ্টি করবে। আমরা এটি মানতে পারব না।’
ভারত ও বাংলাদেশের দুই সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠ
সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতের বিষয়ে কিছু বাংলাদেশিদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। জমিরউদ্দিন
নামে ঢাকার একজন সবজি ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি মনে করি না ভারতীয়রা সব ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ।
আমরা একটি মুসলিম জাতি হওয়ায় ভারতের সাথে আমাদের সবসময় সমস্যা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আগে নিজেদের রক্ষা করতে হবে এবং তারপর অন্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। অন্যথায়, আমরা সমস্যায় পড়ব।’
ভারত যখন বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের ফিরে আসার
সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তখন বাংলাদেশের অনেকেই আবার সীমান্তের ওপারে (ভারতে) কী ঘটছে
তা নিয়ে চিন্তিত।
মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, ভারতে ২০১৪ সালে
হিন্দু-জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে ধর্মীয়
সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বেড়েছে। যদিও এই অভিযোগ বিজেপি
অস্বীকার করে থাকে।
ভারতীয় রাজনীতিবিদরাও ‘বাংলাদেশি অবৈধ অভিবাসীদের’
কথিত অনুপ্রবেশের বিষয়ে প্রায়ই কথা বলে থাকেন। এমনকি আসাম এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে
বসবাসকারী বাঙালি মুসলমানদের ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ অংশ হিসাবে দেখা হয়।
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলছেন, ‘ভারতীয় মুসলমানদের
সাথে দুর্ব্যবহার করা হলে তা বাংলাদেশে বসবাসরত হিন্দু সংখ্যালঘুদের সাথে দুর্ব্যবহার
করার উচ্চ সম্ভাবনা সৃষ্টি করে।’
বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮ শতাংশ হিন্দু। দিল্লি স্পষ্ট যে, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে সেটি তাদের স্বার্থের জন্য ভালো। কিন্তু ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জিং অংশটি হবে, বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছানো।
সূত্র: বিবিসির বিশ্লেষণ
বাংলাদেশ ভারত নির্বাচন বিশ্ব সংবাদ
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার ছাত্র আন্দোলন গাঁজায় গণহত্যা ইসরায়েল
মন্তব্য করুন
যুক্তরাষ্ট্র কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
কানাডা প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো
মন্তব্য করুন
হলিউড সিনেমাতে হরহামেশাই আমরা দেখে থাকি, অস্ত্র চালনা কিংবা হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট, যুদ্ধক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রোবট। কখনো মানুষের পক্ষে কখনো মানুষের বিপক্ষে বিরাট রোবট বাহিনী। এবার সিনেমাতে নয়, বাস্তবেই যুদ্ধের ময়দানে দেখা যাচ্ছে রোবট। সিনেমায় দেখানো রোবটের মতো এত উন্নত প্রযুক্তির না হলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে কিলার রোবটের ব্যবহার।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অধ্যাপক টোবি ওয়ালশ বলেন, কিলার রোবট শুনলে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির মুভিতে দেখা রোবটের কথা মনে হয়৷ কিন্তু সমস্যা হলো, এগুলো এখন বাস্তবে হচ্ছে৷ এগুলো টার্মিনেটর রোবট নয়৷ এগুলো একধরনের ড্রোন যার ব্যবহার আমরা ইউক্রেন যুদ্ধে দেখতে পাচ্ছি৷ এসব ড্রোনকে মানুষের চেয়ে কম্পিউটার দিয়ে নিয়ন্ত্রণের পরিমাণ বাড়ছে৷
ট্যাঙ্ক, পরিখায় সৈন্য- ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুতে আমরা এমনটা দেখেছিলাম৷ কিন্তু পরবর্তীতে দুই পক্ষই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করে৷ যেমন বায়রাক্তার ড্রোন৷ একেকটির দাম ১১ মিলিয়ন ইউরোর বেশি৷
জার্মান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. গারি শাল বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার কাছে থাকা অনেক অস্ত্রকে পরবর্তীতে এআই-সমৃদ্ধ করা হয়েছে৷ ফলে যুদ্ধে পরিবর্তন এসেছে৷ যেমন রাশিয়াকে আমরা এআই-সমৃদ্ধ গ্লাইড বোমা ব্যবহার করতে দেখেছি৷ আর ইউক্রেনের এআই-সমৃদ্ধ অস্ত্রের মধ্যে আছে ড্রোন৷ যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসে ইউক্রেন যে কার্যকর ও সফল ছিল, তার কারণ ছিল তারা পরিস্থিতি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছিল৷
সামরিক সংঘাত মানে হলো, তথ্য সংগ্রহ ও সেগুলোর অর্থ বুঝতে পারা৷ কত দ্রুত সেটা করা যাচ্ছে তাও গুরুত্বপূর্ণ৷ এআই সেটা করতে পারে ও সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
মিউনিখের বুন্ডেসভেয়ার ইউনিভার্সিটির আক্সেল শুলটে বলেন, এখন অনেক কিছু স্বয়ংক্রিয় হয়ে যাওয়ায় মানুষ ও যন্ত্রের মধ্যে শ্রম বিভাজন করতে গিয়ে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে ভাবতে হবে৷ মানুষের উদ্দেশ্য আছে, যন্ত্রের নেই৷ আমরা এসব যন্ত্রকে, এসব স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাকে, হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করি৷
কিন্তু ড্রোন কি হিউম্যানয়েড কিলার রোবট বা টার্মিনেটর হতে পারে? আক্সেল শুলটে বলেন, টার্মিনেটর? না সেটা সম্ভব না৷ আমরা এখনো প্রযুক্তিগতভাবে অতদূর এগোইনি৷ হ্যাঁ, ইউটিউবে আমরা বস্টন ডাইনামিক্সের দারুন সব ভিডিও দেখি বটে৷ আমরা দেখি, গতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এসব যন্ত্রের দক্ষতা বেশ ভালো৷ তারা ডিগবাজি বা সে রকম কিছু দিতে পারে৷ কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সেগুলো বিপজ্জনক কিলার রোবট হয়ে গেছে৷
২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী সামরিক ব্যয় দুই ট্রিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়ে গেছে- যা একটি রেকর্ড৷ ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো খরচ করে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে চীনও কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছে৷ ২০২২ সালে রাশিয়া তার সামরিক বাজেট নয় শতাংশ বাড়িয়েছিল৷
জার্মান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. গারি শাল বলেন, যদি আপনার এমন বাহিনী থাকে যেটা এআই ব্যবহার করে, তাহলে, অন্য যারা এআই ব্যবহার করে না, তাদের চেয়ে আপনার কৌশল ভিন্ন হবে৷ এটা শুধু যন্ত্রের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঢোকানোর বিষয় নয়৷ এটা পুরো ব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়: প্রশিক্ষণ, কৌশল, সংগঠন সবক্ষেত্রে৷
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র তৈরিতে কাজ করছে পৃথিবীর প্রায় ৬০টি দেশ। শান্তিপূর্ণ প্রয়োজনে রোবট বানাচ্ছে তারা। তবে এসকল রোবট বা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের দিকে ঝুঁকলে নিঃসন্দেহে তা হবে ভয়ংকর।
মন্তব্য করুন
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি)তদন্তের বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে এ আদালতের দেওয়া গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সমর্থন করেছে। মস্কো ওয়াশিংটনের এই আচরণকে ‘কপট’ উল্লেখ করে বলেছে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের ভণ্ডামি।
আইসিসি যুদ্ধাপরাধের দায়ে ব্যক্তিদের অভিযুক্ত করার পাশাপাশি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ও গণহত্যার তদন্ত করতে পারে। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা ও সাত মাস ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার তদন্ত করছে সংস্থাটি।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জ্যঁ–পিয়েরে গত সোমবার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্ত সমর্থন করে না । এ ছাড়া এই বিষয়ে আদালতের এখতিয়ারের বিষয়টিতেও বিশ্বাস করে না তারা। তবে এর আগে গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি ছিল ন্যায়সংগত। ইউক্রেনে কথিত রুশ যুদ্ধাপরাধের বিবরণ আইসিসির কাছে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্র।
মস্কো বলেছে, পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করা পশ্চিমাদের অর্থহীন প্রয়াস। এর মধ্য দিয়ে তারা রাশিয়ার সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করেছে। তারা ইউক্রেনে কোনো যুদ্ধাপরাধ করেনি। তবে ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করেছে। রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেন যে অপরাধ করেছে, তা এড়িয়ে গেছে পশ্চিমারা। তবে কিয়েভ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা টেলিগ্রামে করা এক পোস্টে বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আইসিসির দেওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা পুরোপুরি সমর্থন করে ওয়াশিংটন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের ও তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইসিসির তদন্তের বৈধতা স্বীকার করতে চাইছে না। জাখারোভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান কপটতার শামিল।
রাশিয়া আইসিসির সদস্যদেশ নয়। ইসরায়েলও এর সদস্য নয়। তবে ২০১৫ সালে ফিলিস্তিন আইসিসির সদস্য হয়। গত শুক্রবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, আইসিসির কোনো সিদ্ধান্ত ইসরায়েলের কার্যক্রমের ওপর প্রভাব ফেলবে না; কিন্তু বিপজ্জনক একটি উদাহরণ তৈরি করবে। ইসরায়েলের কর্মকর্তারা অবশ্য আইসিসির আদেশ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। তাঁদের ধারণা, আইসিসির পক্ষ থেকে গাজায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করার অভিযোগে নেতানিয়াহু ও ইসরায়েলে অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হতে পারে। একই সঙ্গে হামাস নেতাদের বিরুদ্ধেও এ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
মন্তব্য করুন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় গত সাড়ে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচার হামলা ও হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যাপক ধরপাকড় চালাচ্ছে মার্কিন পুলিশ প্রশাসন। সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্কের সিটি কলেজ ক্যাম্পাসে রাতের আঁধারে পরিচালিত হয়েছে পুলিশি অভিযান। এ অভিযানে ক্যাম্পাস দুটি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক ফিলিস্তিন সমর্থকারীকে।
হলিউড সিনেমাতে হরহামেশাই আমরা দেখে থাকি, অস্ত্র চালনা কিংবা হ্যান্ড টু হ্যান্ড কমব্যাট, যুদ্ধক্ষেত্রে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রোবট। কখনো মানুষের পক্ষে কখনো মানুষের বিপক্ষে বিরাট রোবট বাহিনী। এবার সিনেমাতে নয়, বাস্তবেই যুদ্ধের ময়দানে দেখা যাচ্ছে রোবট। সিনেমায় দেখানো রোবটের মতো এত উন্নত প্রযুক্তির না হলেও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে কিলার রোবটের ব্যবহার।