পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারত। আগামী পাঁচ বছর কোন দল দেশ শাসন করবে, তা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে নির্বাচনী তোড়জোড়। এবার, ৯৬ কোটি ৯০ লাখ ভারতীয় নাগরিকের অংশগ্রহণের মধ্যে দিয়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ তথা লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দেশটিতে প্রায় তিন মাস ধরে ৭ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে ভারতীয়রা ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুনের মধ্যে ভোটে অংশ নেবেন এবং ৪ জুন ফলাফল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শেষ হবে নির্বাচনী কার্যক্রম। ভারতের এই ১৮তম লোকসভা নির্বাচন ইতিহাস গড়তে চলেছে।
ভারতের নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এবারের নির্বাচন সাত ধাপে হবে, ধরে চলা ভোটের সবচেয়ে বিশাল কর্মযজ্ঞের।
পুরো ভারতের প্রায় ৯৭ কোটি ভোটার তাদের রায়ে লোকসভার ৫৪৩ জন প্রতিনিধিকে নির্বাচিত করবেন। আর রাষ্ট্রপতির দেয়া দু’জন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান প্রতিনিধি মিলিয়ে মোট আসন সংখ্যা ৫৪৫টি। এই ভোটে যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেন, তারাই পরবর্তী কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করবে।
ভারতের নির্বাচন অন্য সব দেশের নির্বাচনের চেয়ে তুলনামূলক জটিল ও আকারেও বিশাল। মূলত, দেশটিতে সাতটি ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এই সাতটি ধাপের কারণেই দেশটির নির্বাচন আকারে ও আয়োজনে অন্য যে কোনো দেশের নির্বাচন থেকে আলাদা।
সাত ধাপের নির্বাচন প্রক্রিয়া
১৬ মার্চ তফসিল ঘোষণার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেন দেশটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। ৪৭ দিন ধরে মোট সাত ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এবারের লোকসভা নির্বাচন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত। ফল ঘোষণা করা হবে ৪ জুন।
প্রথম দফায় (১৯ এপ্রিল) পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি, লক্ষদ্বীপ, আন্দামান নিকোবার, বিহার, সিকিম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, অসম, অরুণাচল প্রদেশে ভোট হবে।
দ্বিতীয় দফায় (২৬ এপ্রিল) ভোট হবে কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তীশগড়, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, জম্মু ও কাশ্মীর, অসম, মণিপুর, ত্রিপুরায়।
তৃতীয় দফায় (৭ মে) জম্মু ও কাশ্মীর, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, দাদরা-নগর হভেলী ও দমন-দিউ।
চতুর্থ দফায় (১৩ মে) মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ডে ভোট হবে।
পঞ্চম দফায় (২০ মে) লাদাখ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্রে ভোট হবে।
ষষ্ঠ দফায় (২৫ মে) দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় ভোট হবে।
সপ্তম দফায় (১ জুন) হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব, চণ্ডীগড়, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশায় ভোট হবে।
আর সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ- এই চার রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনও হবে। পাশাপাশি বিহার, গুজরাত, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, ত্রিপুরা, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, কর্ণাটক, তামিলনাড়ুতে উপনির্বাচন লোকসভার সঙ্গেই হবে এবং চার রাজ্যেই ভোট গণনা ৪ জুন বলে ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের সিইসি।
ভোট গণনা পদ্ধতি
খুব সহজ সরল পদ্ধতিতে ভারতের ভোট গণনা করা হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে এমনটি দাঁড়াবে, আপনার কাছে ১০ টি চীনা বাদাম আছে। এরা হচ্ছেন ভোটার। এবার এদেরকে সমান দু'ভাগে ভাগ করুন। তারপর একটি ভাগকে দূরে সরিয়ে রাখুন। এরা হচ্ছেন সেই ৫০% ভোটারগণ, যারা ভোট দিতে আসেনই না। এখন আপনার কাছে রইলো ৫টি চীনা বাদাম। এরা ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করেন। এবার এই ৫টি ভোটের থেকে ৩টি ভোট যে পার্টির (ক) ঝুলিতে যাবে, তারা ক্ষমতায় আসবেন। বাকি ২ টি ভোট যে পার্টি (খ) পাবে, তারা বিপক্ষে বসবেন। এবার ধরে নেওয়া যাক, খুব বেশি প্রচার চালিয়ে ভোটারদের সচেতন করে ভোটারদের উপস্থিতি সংখ্যাটা ৫০-৫০% থেকে বাড়িয়ে ৭০-৩০করে দেওয়া হলো। তাহলে, এই ৭টি ভোটের থেকে ৪টি ভোট যে পার্টির (ক) ঝুলিতে যাবে, তারা ক্ষমতায় আসবেন।আর ৩টি ভোট যে পার্টি (খ) পাবে, তারা বিপক্ষে বসবেন। এবার আর একটা অতি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় হলো, যদি 'খ' পার্টির ঝুলিতে ৪টি ভোট হতো, তাহলে তারাই ক্ষমতায় আসতেন। অর্থাৎ, কে ক্ষমতায় আসবে তা নির্ভর করবে ওই মাত্র ১০% ভোটারদের ওপর, যাদের কৃপায় কৃতার্থ হন জনপ্রতিনিধিরা।
ভোটার সংখ্যা
ভারতের ২৮টি রাজ্য ও আটটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল জুড়ে ভোটার রয়েছে প্রায় ৯৬ কোটি ৯০ লাখ। যেখানে, ভারতে পুরুষ ভোটার ৪৭ কোটি ৯০ লাখ এবং নারী ভোটার ৪৭ কোটি ১০ লাখ। যার মধ্যে ২০ কোটি ভোটার রয়েছে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৯ বছর এবং ১ কোটি ৮০ লাখ বেশি ভোটার এবার প্রথম ভোট দিবে। ৮০ বা তার বেশি বয়সী প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ ভোটার রয়েছে এবং ২ লাখ ১৮ হাজার শতবর্ষী ভোটার এবারের নির্বাচনে অংশ নেবেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় বাড়ছে। ১৯৮০’র দশকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় ছিলো মাত্র চার দিন। এরপর থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময় পর্যায়ক্রমে বেড়েছে। ২০১৯ সালের নির্বাচন হয়েছিল ৩৯ দিন ধরে এবং আর এ বছর নির্বাচন হবে ৪৭ দিন ধরে।
ভারতের নির্বাচন কমিশনের দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী, একটি ভোটকেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৫০০ জন ভোটার থাকতে পারবে। এর ফলে এবারে ভারতে ১০ লাখ ৪৮ হাজার ২০২টি কেন্দ্রে ভোটগ্ৰহণ হবে, যেখানে ৫৫ লাখ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট নেয়া হবে।
১৪.৪ বিলিয়ন ডলারের নির্বাচন
ভারতের এই লোকসভা নির্বাচন বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন হতে চলেছে। যেখানে প্রত্যেক ভোটারের দুই কিলোমিটার মধ্যে একটি ভোটিং বুথ থাকবে। দেশটির ভোটারদের আকৃষ্ট করতে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি রুপি বা ১৪.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবেন বলে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, যা অনেক দেশের বাজেটের থেকেও বেশি।
আর এবারের নির্বাচনী বাজেট ভারতের ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যয় থেকে দ্বিগুণ হবে। এখানে সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের প্রতিনিধি পরিষদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মোট ব্যয়ও ১৪ দশমিক চার বিলিয়ন ডলার ছিলো।
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রায় দেড় কোটি নির্বাচন ও নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন করবে। এই নির্বাচন কর্মীরা পাহাড়ের চূড়া, মরুভূমি, শীতল হিমবাহ ও দুর্গম অঞ্চল পাড় দিয়ে নির্বাচনের উপকরণ সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে দিবে। এমনকি, কুমির ভরা ম্যানগ্রোভ জলাভূমি ও ঘন জঙ্গলের পাড়ি দিয়ে দেশের পূর্ব উপকূলের অদূরে, প্রত্যন্ত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দিবে এই নির্বাচন কর্মীরা।
প্রতিটি ভোটার যেন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য চীনের সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের একটি গ্রামে মাত্র একজন ভোটার থাকা সত্ত্বেও সেখানে ভোট কেন্দ্রটি স্থাপন করা হবে। আর এই ভোট কেন্দ্রেটি হবে হিমালয়ের ১৫ হাজার ২৫৬ ফুট উঁচুতে।
এছাড়াও, ভোট কেন্দ্রগুলি অন্যান্য প্রত্যন্ত স্থানে স্থাপন করা হবে। যার মধ্যে একটি দক্ষিণ কেরালা রাজ্যের একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ভেতরে হবে এবং আরেকটি পশ্চিম গুজরাট রাজ্যের একটি শিপিং কনটেইনারে।
নির্বাচন কমিশন এর কার্যক্রম
ভারতে ভোটের দিন ঘোষণার পরই আচরণবিধি মেনে চলা শুরু হয়। নির্বাচিত সরকারের তখন আর নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ থাকে না। এমনকি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এমন সিদ্ধান্তও নেয়া যায় না।
তাই ভোট ঘোষণার দিনটি ভারতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আর এটি পুরোপুরি নির্ভর করে কমিশনের মর্জির ওপর। গোপন রাখা হয় ভোট ঘোষণার সময়সূচি। ফলে আগে থেকে কেউ ফলাফল জানতে পারেন না। রাজনৈতিক দলগুলোকে আন্দাজের ওপরেই নির্ভর করতে হয়।
আর ভারতের ভোট হয় ইভিএম পদ্ধতিতে। এখানে ইভিএমে জালিয়াতি হলেও ভোটের ফলে হেরফের হতে পারে না। নিরপেক্ষতার প্রশ্নে বেশ সক্রিয় ভারতের নির্বাচন কমিশন। তৃণমূল স্তর থেকে রাজ্যস্তর পর্যন্ত পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেন তারা। অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকদের হাতে থাকে প্রচুর ক্ষমতা।
এই পর্যবেক্ষকদের প্রতিবেদনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। এখন নির্বাচন কমিশন প্রতি রাজ্যেই পুলিশের নিরপেক্ষতা দেখতে পুলিশ পর্যবেক্ষক, কালো টাকা রোধে আর্থিক পর্যবেক্ষক এবং সামগ্রিক বিষয় দেখতে সাধারণ পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
পুলিশ ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ দেখা দিলেই কড়া ব্যবস্থা নেয় কমিশন। একদম নিচুতলা থেকে ওপরতলা পর্যন্ত সবাই কমিশনের ভয়ে তটস্থ থাকেন। একারণেই ভোটের সময় বদলি ও বরখাস্ত হওয়া ভারতে খুব সাধারণ একটি ঘটনা।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সাতটি জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক দল, ৪৩টি রাজ্য ভিত্তিক রাজনৈতিক দল এবং ৬২৩টি অখ্যাত রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়। যেসব দলের শুধুমাত্র রাজ্যের ভেতরে প্রভাব আছে তাদেরকে রাজ্যভিত্তিক রাজনৈতিক দল বলা হয়। আর যেসব দলের বেশ কিছু রাজ্যের মধ্যে প্রভাব আছে তাদের জাতীয় দল হিসাবে গণ্য করা হয়।
এই গণতান্ত্রিক দেশটিতে মোট ২৬৬০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। এতেই বোঝা যায় কতটা জটিল তাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া।
ভোটারদের সুবিধায় প্রতিটি নিবন্ধিত দলের একটি করে নিজস্ব প্রতীক রয়েছে। যেমন কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির প্রতীক পদ্ম, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের হাত, আর অন্যান্য দলের হাতি থেকে শুরু করে বাইসাইকেল, চিরুনি বা তীর নানাবিধ প্রতীক রয়েছে।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নরেন্দ্র মোদি ও তার ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এবং তাদের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। এই দুই দল এবারের নির্বাচনে বেশ কিছু দলের সঙ্গে জোট করেছে। বিজেপি তিন ডজনের বেশি দলের সঙ্গে এবার জোট করেছে, আর অন্যদিকে প্রায় দুই ডজন শরিক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে কংগ্রেস।
এবারের নির্বাচনে যদি নরেন্দ্র মোদী জেতেন এবং আরও পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকেন, তাহলে তিনিই হবেন ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ মেয়াদের সরকার প্রধান। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু প্রায় ১৬ বছর ৯ মাস দেশ শাসন করেন। আর তার কন্যা ইন্দিরা গান্ধী দেশ শাসন করেন ১৫ বছর ১১ মাস।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মানবতার স্বার্থে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ আর নতুন কোনো অস্ত্র গ্রহণ না করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, 'মানবতাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অস্ত্র ব্যবস্থা নয় বরং মানুষের কল্যাণে কৃষি, চিকিৎসা, মহাকাশ অন্বেষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ মানবজাতির সুবিধার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপকারী প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।'
সোমবার (২৯ এপ্রিল) ভিয়েনার হফবার্গ প্রাসাদে 'হিউম্যানিটি অ্যাট দ্য ক্রসরোডস: অটোনোমাস উইপনস সিস্টেমস অ্যান্ড দ্য চ্যালেঞ্জ অব রেগুলেশন' শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে উচ্চ-পর্যায়ের প্যানেল আলোচনায় তিনি এ আহ্বান জানান।
মানুষের ওপর অস্ত্রবল প্রয়োগে নিয়ন্ত্রণ রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে ড. হাছান মাহমুদ প্রশ্ন রাখেন, যদি রাষ্ট্রবহির্ভূত এবং সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবহারের সুযোগ পায় তবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার কী হবে।
স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ব্যবস্থাকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশ্বব্যাপী নীতি নির্ধারণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রাণহানির ক্ষমতাসম্পন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ এবং স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র উভয়ের বিষয়েই উপযুক্ত আন্তর্জাতিক আইন বিচক্ষণতার সঙ্গে প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় গাজার অনিশ্চিত পরিস্থিতি তুলে ধরেন এবং সংঘাত ও উত্তেজনার নতুন ফ্রন্ট খোলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করেন।
অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার শ্যালেনবার্গ, কোস্টারিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্নল্ডো আন্দ্রে টিনোকো, নরওয়েজিয়ান স্টেট সেক্রেটারি ইভিন্ড ভাদ পিটারসন এবং রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সভাপতি মির্জানা স্পোলজারিক এগার সহ-প্যানেলিস্ট হিসেবে যোগ দেন।
অস্ট্রিয়ার ইউরোপীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই সম্মেলনে ১২০টিরও বেশি দেশ জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা, অধিকার গোষ্ঠী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার আট শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অস্ত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মন্তব্য করুন
স্কটল্যান্ডের প্রথম মুসলিম ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা হামজা ইউসুফ পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন। সোমবার (২৯ এপ্রিল) তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। খবর আলজাজিরার।
স্কটিশ গ্রিনস পার্টির সঙ্গে জোট করে স্কটল্যান্ডে সরকার গঠন করেছিল হামজার দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। তবে এই দলের সঙ্গে সম্প্রতি তার দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির জোট ভেঙে যায়। এরপর তাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে দুটি অনাস্থা ভোটের ডাক দেন বিরোধীরা। একটি ফার্স্ট মিনিস্টার ও আরেকটি স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির সরকারের বিরুদ্ধে। এসব অনাস্থা ভোটে হামজা হেরে যেতে পারেন, এটা অনেকটা নিশ্চিত। তাই অনাস্থা ভোটের আগেই পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন তিনি।
সোমবার এক ভাষণে হামজা বলেছেন, আমি আমার মূল্যবোধ ও নীতি নিয়ে ব্যবসা করতে চাই না। অথবা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য যার-তার সঙ্গে চুক্তি করতে চাই না।
এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে হামজা বলেছিলেন, বিরোধীদের ডাকা অনাস্থা ভোটে তিনি জিততে পারবেন বলে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তবে সোমবারের মধ্যেই নিজের সংখ্যালঘু সরকারকে শক্তিশালী করতে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
গত বছর স্কটল্যান্ডের ক্ষমতাসীন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা নির্বাচিত হন পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত হামজা ইউসেফ। এরপর সাবেক ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জেনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। স্কটল্যান্ডের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম হিসেবে ফার্স্ট মিনিস্টার নির্বাচিত হয়েছিলেন হামজা।
পদত্যাগ স্কটল্যান্ড ফার্স্ট মিনিস্টার
মন্তব্য করুন
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে মিয়ানমার। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। যা মিয়ানমারের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। খবর এপি ও দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৮.৭৬ ফারেনহাইট)। যা মিয়ানমারের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এই তথ্যটি জানিয়েছে, মিয়ানমারের আবহাওয়া বিভাগ।
আবহাওয়া বিভাগের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোববার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় ম্যাগওয়ে রাজ্যের চাউক শহরে তাপমাত্রা পারদ ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছেছে। ৫৬ বছর আগে রেকর্ড সংরক্ষণ শুরু করার পর মিয়ানমারের ইতিহাসে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
একই দিন দেশটির বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত ইয়াঙ্গুনে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছুঁয়েছে। এছাড়া দেশটির আরেক শহর মান্দালয়ে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের শুষ্ক সমতলে অবস্থিত চাউক শহরের একজন বাসিন্দা বলেছেন, 'এখানে অত্যন্ত গরম এবং আমরা সবাই বাড়িতেই ছিলাম।' নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, 'এই পরিস্থিতিতে আমরা কিছুই করতে পারছি না।'
দেশটির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলীয় এলাকাগুলোতে দিনের তাপমাত্রা এপ্রিলের গড়ের তুলনায় ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
জাতিসংঘের বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ু নিরাপত্তা বিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটেরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) বলেছে, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে তাপমাত্রা রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। অন্যান্য মহাদেশের চেয়ে এশিয়ায় বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাব পড়েছে বেশি। এ কারণে এই মহাদেশের তাপমাত্রাও বাড়ছে। ১৯৯১ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে এশিয়ার গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি ২০২০ সালের তুলনায় গত বছর এশিয়ার গড় তাপমাত্রা ছিল দশমিক ৯১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
মন্তব্য করুন
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অমিত শাহ অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, বিহারের বাগুসারাই এলাকায় সোমবার এক নির্বাচনি র্যালিতে অংশ নেন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা অমিত শাহ (৫৯)। র্যালি শেষে সেখানে একটি হেলিকপ্টারে উঠেন তিনি।
উড্ডয়নের সময় সেই হেলিকপ্টার কিছু সময়ের জন্য নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান দিকে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল। মাটিতে আছাড় খাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন পাইলট।
নিতীশ কুমারের দল জেডিইউয়ের সঙ্গে মিলে বিহারে ১৭টি আসনে লড়াই করছে বিজেপি। প্রথম ধাপের নির্বাচনে গত ১৯ এপ্রিল এখানে চার আসনে নির্বাচন হয়। এরপর গত শুক্রবার দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হয় আরও ৫ আসনে।
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্মরণকালের ভয়াবহ তাপপ্রবাহ। গত কয়েকদিন ধরে দেশের তাপমাত্রা এতটাই বাড়ছে যে অনেকে এটি সহ্য করতে পারছেন না। ফলে হিটস্ট্রোকসহ অন্যান্য স্বাস্থগত ঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। শুধু বাংলাদেশ নয়, তালিকায় আছে মিয়ানমার, ভারত, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া। সব দেশেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও এল নিনোর প্রভাবে তাপপ্রবাহ ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে, যা নীরব ঘাতকে পরিণত হচ্ছে।
মানবতার স্বার্থে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রসহ আর নতুন কোনো অস্ত্র গ্রহণ না করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, 'মানবতাকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অস্ত্র ব্যবস্থা নয় বরং মানুষের কল্যাণে কৃষি, চিকিৎসা, মহাকাশ অন্বেষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ মানবজাতির সুবিধার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপকারী প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।'
স্কটল্যান্ডের প্রথম মুসলিম ফার্স্ট মিনিস্টার ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির (এসএনপি) নেতা হামজা ইউসুফ পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন। সোমবার (২৯ এপ্রিল) তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। খবর আলজাজিরার। স্কটিশ গ্রিনস পার্টির সঙ্গে জোট করে স্কটল্যান্ডে সরকার গঠন করেছিল হামজার দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি। তবে এই দলের সঙ্গে সম্প্রতি তার দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির জোট ভেঙে যায়।
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে মিয়ানমার। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। যা মিয়ানমারের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। খবর এপি ও দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমার। সোমবার (২৯ এপ্রিল) দেশটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৮.৭৬ ফারেনহাইট)। যা মিয়ানমারের ইতিহাসেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এই তথ্যটি জানিয়েছে, মিয়ানমারের আবহাওয়া বিভাগ।