ইয়ুথ থট

সোলো এক্সপিডিশনে ইয়ালা পিক'র চূড়ায় বাংলাদেশের তানভীর

প্রকাশ: ১২:৫২ পিএম, ১২ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

(পর্ব-১)

স্বপ্নের নেপাল। হিমালয়ের কন্যা সে। সাদা সুউচ্চ পর্বত একে তুষারের শুভ্রতা দিয়ে আচ্ছন্ন করে রাখে গভীর আর মৌন সৌন্দর্যে। আর তাই যারা পাহাড় ভালোবাসেন, উচ্চতাকে ভালোবাসেন তাদের কাছে হিমালয় হলো স্বর্গ

এক একটা পাহাড় জয় করা যেনো পাহাড়প্রেমীদের কাছেও স্বপ্নের মতো। সেই স্বপ্নপূরণ করতে বাংলাদেশের থেকে যাত্রা করেন মোহাম্মদ তানভীর আলম। ছুয়ে আসেন ইয়ালা পিকের শিখর। ল্যাংটাং রিজিয়নের ইয়ালা পাহাড়ের উচ্চতা ৫৫২০ মিটার বা প্রায় ১৯ হাজার ফুট। সেই গল্প ও নেপাল পৌছানোর পর তার দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন আমাদের কাছে।  তার গল্প আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো দুইটি ভিন্ন পর্বে। আজকের পর্বে থাকছে সেই গল্পের একাংশ।

৩০.১০.২২, দিন ১

সকাল ৬ টায় বাসা থেকে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার মাধ্যমে অভিযানের যাত্রা শুরু। কোন গাইড ছাড়া নিজের প্রচেষ্টায় নেপালের লাংটাং রিজিওনে ৫,৫০০ মিটার উচ্চতার ট্রেকিং চূড়া ইয়ালা পিক সামিট এই অভিযানের উদ্দেশ্য।

১২:৩০: ত্রিভূবন এয়ারপোর্ট, কাঠমান্ডু থেকে বের হয়ে হোটেল এর উদ্দেশ্যে ট্যাক্সি নিলাম। হোটেল ফ্লোরিড আজকের অস্থায়ী ঠিকানা। হাতে সময় না থাকায় ঢাকা থেকেই হোটেল বুকিং করে এসেছিলাম।যদিও রূম পছন্দ হয়নি কিন্তু ওদের নীচতলায় যে রেষ্টুরেন্ট তার জন্য হোটেল এর পিছনে খোলা উঠানে বসার ব্যবস্থাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ওদের রিসেপশনে ছোট্ট একটা লাইব্রেরী বা বইয়ের সংগ্রহ আছে। হোটেল এর লোকেশনটা অবশ্য অনেক ভালো, কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র থামেলের জেড স্ট্রীটে এটির অবস্থান। এবং হোটেল মালিক মিঃ দিপক খুবই আন্তরিক। বাজেট হোটেল হিসেবে হোটেলটি ভালো।

সন্ধ্যায় কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা শেষ করে ও স্লিপিং ব্যাগ ভাড়া নিয়ে রূমে ফিরে ব্যাকপ্যাক গোছানো শুরু করলাম। কালকে সকালে বাস ধরতে হবে।

৩১.১০.২২, ২য় দিন
গন্তব্য সায়াব্রুবেসি


৭ টায় মাছাপোখারি বাস-স্ট্যান্ড এ এসে কয়েকজনকে সায়াব্রুবেসির কথা জিজ্ঞেস করলে লাল একটি বাস দেখিয়ে দিল (আসলে হেলপার এসে ডেকে নিল), বাসটির সামনে শুধু ডিলাক্স লেখা ছাড়া আর কিছু পড়তে পারলাম না। কারণ শুধু এটুকুই ইংরেজী শব্দ  এবং বাসটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ।

তবে, বাসে যেহেতু আরো কয়েকজন ট্যুরিস্ট (ইউরোপীয়ান) আছে তাই নিশ্চিন্তে উঠে পরলাম। তবে সিট একবারে পিছনের সারির বাম পাশে কোণায় । যদিও অনেক দীর্ঘ রাস্তা তবু অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই সিটেই বসে পরলাম কারণ পরের বাসের জন্য আবার ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে যেটার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

৩১.১০.২২, ২য় দিন- গন্তব্য সায়াব্রুবেসি

৭ টায় মাছাপোখারি বাস-স্ট্যান্ড এ এসে কয়েকজনকে সায়াব্রুবেসির কথা জিজ্ঞেস করলে লাল একটি বাস দেখিয়ে দিল (আসলে হেলপার এসে ডেকে নিল), বাসটির সামনে শুধু ডিলাক্স লেখা ছাড়া আর কিছু পড়তে পারলাম না। কারণ শুধু এটুকুই ইংরেজী শব্দ  এবং বাসটি যাত্রীতে পরিপূর্ণ।

তবে, বাসে যেহেতু আরো কয়েকজন ট্যুরিস্ট (ইউরোপীয়ান) আছে তাই নিশ্চিন্তে উঠে পরলাম। তবে সিট একবারে পিছনের সারির বাম পাশে কোণায় । যদিও অনেক দীর্ঘ রাস্তা তবু অনিচ্ছা সত্ত্বেও এই সিটেই বসে পরলাম কারণ পরের বাসের জন্য আবার ৪০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে যেটার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।

ড্রাইভার এবং হেলপার খুবই প্রফেশনাল; বাসের এক ইঞ্চিও ফাঁকা রাখে নাই। সিট পরিপূর্ণ হওয়ার পর মাঝখানের জায়গা বস্তা দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে এবং  মাল বোঝাই সেই বস্তাগুলোকে আবার সিটে রূপান্তরিত করে তার উপর যাত্রীও বসাইছে । বাসটি লোকাল হলেও এসি ও টিভি আছে, এবং  সবার বিনোদনের জন্য হেলপার প্রায় পুরো রাস্তা টিভিতে নেপালি ও হিন্দি মিউজিক ভিডিও চালু রেখেছে।

গন্তব্যে পৌঁছানোর আগে দুই জায়গায় পুলিশ চেক পোস্টে এন্ট্রি করতে হয়েছে এবং ধুনচেতে আর্মি চেক পোস্টে ব্যাগ চেকিং করাতে হয়েছে। বাংলাদেশ এর কথা শুনে ব্যাগ খুলে নাই। চেকপোস্ট এর পাশেই ট্রেকিং পারমিশন সেন্টার, ওখান থেকে ১৫০০ রূপি (সার্ক কান্ট্রি না হলে ৩০০০ রুপি) দিয়ে পারমিশন নিয়ে নিলাম।

সন্ধ্যা ৫:৩০ এ সায়াব্রুবেসিতে এসে পৌঁছালাম, ১০:৩০ ঘন্টার বাস জার্নি। বাস জার্নিটা প্রথমে উপভোগ্য থাকে, ভ্রমন শুরুর উত্তেজনা এবং চারপাশে মনোরম দৃশ্য। কিন্তু যত সময় গড়ায় তত বিরক্ত লাগে, কখন জার্নি শেষ হবে শুধু এই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়।  পিছনের সিটে যতটা ঝাঁকির আশা করেছিলাম অল্প কিছু জায়গা ছাড়া সেটা পাইনি।

হোটেল গার্ডেন ইন  আজকের ঠিকানা। হোটেলের পিছনের উঠানটি একেবারে নদীর কোল ঘেঁষে। উঠানে বসলে ত্রিশুলি নদীর তীব্র স্রোতের অনবরত শব্দ একধরনের ঘোর তৈরি করে, সাথে ঠান্ডা বাতাস আর ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক সেই ঘোরের মাত্রা বাড়িয়ে মোহাবিষ্ট করে কল্পনার কোন এক জগৎ এ নিয়ে আছড়ে ফেলে।

১.১১.২২, ৩য় দিন

আজকে ট্রেকিং শুরু, মানে ট্রেকিং এর প্রথম দিন। আজকে গন্তব্য লামা হোটেল, দূরত্ব ১১ কিঃমিঃ।

২৫+ কেজি ব্যাকপ্যাক এর জন্য একবার পোর্টার নেয়ার চিন্তা করেও পরে নিজেই বহন করার সিদ্ধান্ত নেই।

সকাল ৭টায় হাঁটা শুরু করলাম। ট্রেইলের শুরুতে একটা চেকপোস্ট পরে, ডাকল না দেখে নিজে গিয়ে পারমিশন দেখাতে চাইলাম তাও দেখল না। হাঁটা শুরু করার একটু পরেই একটা Y জাংশনে এসে দ্বিধায় পরে গেলাম। আমিতো লামা হোটেল যাব, কিন্তু সাইনবোর্ডে লামা বা লাংটাং এর কোন নাম নেই। ডানদিকে দেখাচ্ছে কিওয়াহারি আর বাম দিকের নামটা ঠিক মনে নেই। রাস্তাটা উপরের দিকে লুপের মত উঠে গেছে তাই ম্যাপ দেখেও ১০০% বুঝতেছিনা কোন দিকে যাব। পরে ডানে বামে দুই দিক দিয়ে উঠানামা করে বুঝলাম রাস্তা ডানদিকের টা এবং একজন স্থানীয় বাসিন্দা ঐখান দিয়ে যাচ্ছিলেন তাঁর সাথে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে নিলাম যে রাস্তা ডানদিকেরটা। এখান থেকে ট্রেলটি লাংটাং খোলার (নদী) পাশ দিয়ে চলে গেছে।