নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ২২ অগাস্ট, ২০২০
ছোট ছোট কাঠের টং ও মাচা গড়ে উঠছে। ফুটপাতে প্লাস্টিক বর্জ্য বা ভাঙারির ছড়াছড়ি। অর্ধশতাাধিক ঘরের নির্মাণ কাজ চলছে। সড়কের পাশেই খালের উপর গড়ে উঠছে এসব কাঠের টং ও টিনের ঘর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া টিনগুলো সরিয়ে নতুন করে তারা আবার উঠে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। এতক্ষণ যে দৃশ্যপটের বিবরণ দেওয়া হয়েছে তার দর্শন পাওয়া যাবে কালশীর বাউনিয়াবাঁধ বস্তি এলাকায়।
একরাতের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছিল চার শতাধিক মানুষের সহায়সম্বল। ঘরের আসবাবপত্র ও জিনিসপত্রের সাথে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল তাদের হাজারো স্বপ্ন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছিল ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার রাতে। সম্প্রতি শিশু জিহাদের (১২) এর কাছ থেকে জানা যায়, ঐ অগ্নিকাণ্ডে বই-খাতা পুড়ে যাওয়ায় শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সে। না চাওয়া সত্তে¡ও খেলাধুলা ছেড়ে লেগুনায় হেল্পার হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে সংসারে সৃষ্ট আর্থিক সমস্যার পাহাড়ের উচ্চতা কিছুটা হলেও কমানোর জন্য। এখনো সে আতঙ্কে কেঁপে ওঠে সেই রাতের অগ্নিকাণ্ডের কথা মনে পড়লে।
পাশেই নতুন তোলা দোকানঘওে বসে দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন শাহজাহান ব্যাপারী (৪০)। তিনি বলেন, চেকবই আর আইডি কার্ড পুইড়া গেছে। ঘর তুলতে যে টাকা লাগবো, ব্যাংক থেকে উঠামু কেমনে? এইজন্য লাভে টাকা ঋণ নিছি। কার্ড ও কাগজ উঠাইতে ব্যাংকে গেছিলাম। তারা অনেক ঘুরাইতেছে।’
হাজেরা বেগম (৩৫) বলেন, জরুরি কাগজপত্র পুড়ে গেছে। অন্যদের কাছ থেকে পরনের কাপড় পরতে হয়। কামাই রোজগার নাই। ছেলেমেয়েদের স্কুলে দিতে পারি নাই। ভাড়াবাড়িতেও থাকার সামর্থ্য নাই।’
মনির হোসেন (৩৫) বলেন, তিনি এ বস্তিতেই বেড়ে উঠেছেন। ভাঙারীর দোকান পুড়ে যাওয়ায় গত দুইমাস যাবৎ বেকার তিনি। দোকান উঠলে মহাজন তাকে কাজ দিবে।
রাহিমা বেগম (৩৭) বলেন, ‘মাইয়ারে স্কুলে পড়াইতাম। জানুয়ারি মাসে ভর্তি চলাকালীন সময় টাকার অভাব ছিল। থাকনের জায়গাও নাই। কি আর করমু? এভাবেই দোটানার সৃষ্টি হওয়ায় মেয়ের শিক্ষা বাদ দিয়ে মাথাগোজার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করাকে প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। এখন নতুন করে ঘর তোলার জন্য চড়া সুদে ঋণ এনেছেন বলে জানান তিনি।
ফজল মিয়ার (৬০) কাছ থেকে জানা যায়, তার দুটি গরু আগুনে পুড়ে মারা গেছে। তার ধারণা, বস্তিতে বিদ্যুৎ এর অবৈধ সংযোগের কারণেই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা।
এই বস্তিতে চারশতাধিক লোক বসবাস কওে আসছে। বস্তির ঘরগুলো ঘিঞ্জিমতো। একটির সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া। ফাঁকা জায়গা বলতে গেলে নেই। একটি কক্ষে অনেকে ঠাসাঠাসি করে থাকেন। প্রায় অধিকাংশই নিম্নআয়ের নদীভাঙা লোকের বসবাস। কেউ গার্মেন্টসকর্মী, কেউ রিকশাচালক, কেউবা দিনমজুর। ভাঙারির ব্যবসায়ী ও গৃহকর্মী হিসেবেই এরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। জীবনে নতুন করে আবার যুদ্ধ শুরু করতে হচ্ছে এই বস্তিবাসীদের। এদের আর কোথাও যাওয়ার ঠাঁই নেই।
নতুন করে ঘর ওঠানোর বিভিন্ন জায়গা থেকে চড়াসুদে টাকা ধার করেছে অনেকেই। স্কুলগামী শিশু জোনাকী (১৩), মনির (৯), কাওসার (১৩), রহিম (৯), তানিয়া (১১) সহ আরও অনেকের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। জীবিকার তাগিদে তাদের বাবা-মা শিশুশ্রম করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই ভাসমান শিশুদের শিক্ষার দায়িত্ব কে নেবেন? যদিও এনজিও এবং সিটি কর্পোরেশন থেকে যৎসামান্য সাহায্য দেওয়া হয়েছে। তবুও এদের আবাসনের প্রশ্ন থেকেই যায়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ‘মুজিববর্ষে কেউ গৃহহারা থাকবে না। সবার আবাসনের ব্যবস্থা হবে।’
তবে ভাসমান এই মানুষগুলো আজ বাদে কাল কোথায় যাবে যদি এই বস্তিটি কোনো কারণে না থাকে? শুধু তাদের জন্য নির্দিষ্ট করে কোনো স্থায়ী বাসস্থানের কোনো পদক্ষেপ কি কর্তৃপক্ষ বা সরকার নেবে? কারণ যে সাহায্য দেওয়া হয়েছে তা তাদের চাহিদার তুলনায় নগণ্য। সরকার কি তাদের ভাসমান জীবনে স্থায়ী বসতির ব্যবস্থা করে তাদের জীবনযুদ্ধে একটুখানি মানবিক ও মানসম্মতভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেবে?
লেখক: জাকারিয়া আজিজ আরাফাত
বয়স: ১৯, সম্মান প্রথম বর্ষ, বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ
শাহেদ আহমেদ মোহন
বয়স: ১৪, নবম শ্রেণী, বাউনিয়াবাঁধ আইডিয়াল হাই স্কুল
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তারুন্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত বাংলাদেশে।সে লক্ষ্যে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কাঠামোগত উন্নয়নের একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ কে দেখলে বুঝা যায় দেশে কি উন্নয়ন হয়েছে।এটি কোনো যাদু নয়, এটা হয়েছে শেখ হাসিনার যাদুকরি নেতৃত্বের কারণে।
মন্ত্রী আজ শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে জেসিআই টয়োপ এওয়ার্ড ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
২য় বারের মতো জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেসিআই বাংলাদেশের এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নিয়াজ মোরশেদ এলিট। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরওয়ার হাসান,কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপিসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এওয়ার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ৮ টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন তরুন তরুনীকে বিশেষ অর্জনের জন্যে এওয়ার্ড দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন
বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কারনে শিশুশ্রম অনেকটাই নিন্মমখি।কিন্তু করোনা কালিন পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর। এই শিশুশ্রম আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে শ্রমে থাকা শিশুদের হয়ত আরও বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে বা তাদের আরও খারাপ পরিবেশে কাজ করতে হতে পারে। তাদের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির কারণ হচ্ছে । মহামারী পারিবারিক আয়ে বিপর্যয় নিয়ে আসায় কোনো সহায়তা না পেয়ে অনেকেই শিশু শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হবে। সংকটের সময়ে সামাজিক সুরক্ষা অপরিহার্য, যেহেতু তা সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়। শিশু শ্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রশমনে শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, শ্রমবাজার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সমন্বিতভাবে বৃহত্তর পরিসরে নীতিমালা প্রণয়ন বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
কোভিড-১৯ এর ফলে দারিদ্র্য বেড়ে গিয়ে শিশু শ্রম বাড়াবে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য পরিবারগুলো সম্ভাব্য সকল্ভাবে চেষ্টা করবে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে,নির্দিষ্ট কিছু দেশে দারিদ্র্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধিতে শিশু শ্রম অন্তত দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে।
সংকটের সময় অনেক পরিবারই টিকে থাকার কৌশল হিসেবে শিশু শ্রমকে বেছে নেয়।
“দারিদ্র্য বৃদ্ধি, স্কুল বন্ধ ও সামাজিক সেবা প্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যায় শিশুদের কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী বিশ্বকে আমরা নতুনভাবে দেখতে চাই বলে আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যে, শিশু ও তাদের পরিবারগুলো ভবিষ্যতে একই ধরনের ধাক্কা সামলে নিতে বিকল্প পথ খুঁজে পায়। মানসম্পন্ন শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সেবাসহ আরও ভালো অর্থনৈতিক সুযোগ ইতিবাচক এই পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।
অর্থনৈতিক মন্দায় অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে কর্মরত ও অভিবাসী শ্রমিকদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, জীবনমানের পতন, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতিসহ অন্যান্য চাপ সৃষ্টি হবে। বর্তমান সংকটের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু শ্রম হ্রাসে দারুন কাজ করে আসছিল।
চলমান মহামারীর কারণে এই অর্জন যেন নস্যাৎ না হয় তা নিশ্চিত করতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের আরও বেশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সময়োচিত এই প্রতিবেদনটি কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রভাবের ওপর আলো ফেলেছে এবং সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সামনে বর্তমান সংকট মোকাবেলার সর্বোত্তম পথ খুঁজে পেতে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে অসহায় শিশুদের জীবন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের ওপর কোভিড-১৯ মহামারী বিশেষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্কুল বন্ধ ও পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর জন্য শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। “গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকে তাদের আবার স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা ততটাই কমে যায়। আমাদের এখন শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং মহামারীর পুরো সময়জুড়েই তা অব্যাহত রাখা উচিত,
মহামারীর এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ ধারাবাহিকভাবে আসছে। বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি যখন পুনরায় ক্লাস শুরু হবে তখন অনেক বাবা-মায়ের হয়ত তাদের সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে না।
ফলশ্রুতিতে আরও অনেক শিশু বঞ্চনামূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যোগ দিতে বাধ্য হবে। লিঙ্গ বৈষম্য আরও তীব্র হতে পারে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের কৃষি ও গৃহকর্মে বঞ্চনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কোভিড-১৯ ও শিশু শ্রম: সংকটের সময়, পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে এপর্যন্ত শিশু শ্রম ৯ কোটি ৪০ লাখ কমেছে, কিন্তু এই অর্জন এখন ঝুঁকির মুখে।
ইভান খান হোসাইন
বয়সঃ ১৬
কলেজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাইসার নিলুফার কলেজ
মন্তব্য করুন
আন্তর্জাতিক সংস্থা জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতি বছরই ২৬ জুন সারা বিশ্বে ‘মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস’ পালিত হয়ে থাকে। কিন্তু দিবস পালন করাই কি আর মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করতে পারবে?
মহামারী কভিড-১৯ চলাকালীন সময়ে ধূমপান ও মাদকের ঝুঁকিপূর্ণতা সম্বন্ধে বরাবরই ঘোষণা এসেছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডব্লিওএইচও(হু) থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন যে, ধূমপায়ী বা তামাক এবং মাদকসেবীরা নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যাসহ জটিল ও কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে থাকে বিধায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং প্রাণহানির ঝুঁকিতে শীর্ষ অবস্থান করছে কারন ধূমপান করোনায় আক্রান্তের ঝুঁকি ১৪ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। করোনাভাইরাস যেমন আমাদের ফুসফুসকে সংক্রমণ করে তেমনি ধূমপান বা ই-সিগারেট কিংবা সিসা সমানভাবে আমাদের ফুসফুসকে সংক্রমণ করে। ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও ধূমপান বা ই-সিগারেট, গাঁজা, হেরোইন, কোকেইন ও সিসার মাধ্যমে ফুসফুস সংক্রমিত হয়। সে কারণে তাদের রোগাক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভেন্টিলেটরে থাকার ঝুঁকি অন্য অধূমপায়ীদের তুলনায় অনেকগুণে বেশি।
শুরুর দিকে বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস এর তেমন একটা প্রকোপ না থাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী কেহই তেমন একটা আমলে নেয় নি, মার্চের শেষের দিকে মিরপুরে যখন প্রথম করোনা ভাইরাস শনাক্ত হলো তারপর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিক ভাবে সারা দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়।এমতাবস্থায় মাদকাসক্ত তরুন যুবকরা আতংকিত হয়ে যায় এবং নিজেদের যতটা সম্ভব ধুমপান, ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য সেবন কমিয়ে আনে। লকডাউনের কারনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা এমনকি সাধারন মুদির দোকান(নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকবে) পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য ঘোষণা করা হয়৷ তার সাথে সর্বপ্রকার জনসমাগম নিষিদ্ধ করে সামাজিক দূরত্ব বজার রাখার জন্যে কঠোরভাবে নির্দেশ আসে সরকার থেকে এবং স্থানীয়ভাবে অনেক স্থানে এলাকার লোকজন মদ্য, সিগারেট ও মাদকদ্রব্য বিক্রয় হয় এমন দোকানগুলোকে প্রশাসনের সাহায্য বন্ধ করে দেয়। এমতাবস্থায় একটি দীর্ঘ সময় ধরে ধমপান ও মাদকদ্রব্য বেচাকেনাও বন্ধ হয়ে যায়। উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও মাদকদ্রব্যের অবৈধ প্রবেশের ফলে আমাদের তরুণ যুবসমাজ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে জনসংখ্যার ৪৯% ভাগ মানুষ বয়সে তরুণ। দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১০ কোটি ৫৬ লাখ। প্রতিনিয়ত তাদের মাঝে মাদকাসক্তের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে যা মাদক ব্যবসায়ীদের আরো উৎসাহী করছে। সরকার ইতিমধ্যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে এবং প্রধানমন্ত্রী নিজে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মহামারীর কারণে বেশ কয়েকটি দেশে নির্দিষ্ট কিছু মাদকের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এটি একটি ইতিবাচক দিক যে কভিড-১৯ করোনা মহামারীর কারণে অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রীর মতো মাদক সরবরাহের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলেছে। এরই মধ্যে অনেক দেশে হেরোইন, ইয়াবা, ফেনসিডিল সহ আমদানিকৃত মাদকদ্রব্যাদির স্বল্পতা দেখা দিয়েছে সেসব দেশে এখন এমন মাদকদ্রব্য ব্যবহার করা হচ্ছে যেগুলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত যা শরীরের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সবচেয়ে দুঃখজনক ও ভয়ঙ্কর চিত্র হচ্ছে, এসব মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী শতকরা ৮৫ ভাগই তরুণ যুবসমাজ। মাদক স্বল্পতার ফলে মাদকাসক্ত যুবকরা যেমন ধীরেধীরে নিজেদের সাধারণ জীবনযাপনে ফিরছে তেমনি মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারকারীরা নানান ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তার মধ্যে কিডনি, লিভার ছাড়াও মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে গত বছরের প্রথম দিন থেকেই সারা দেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চলমান রয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার মাদক নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে। সম্প্রতি সরকারের একটি সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, বিষয়টি হচ্ছে, এখন থেকে সরকারি চাকরিতে ঢোকার আগে প্রার্থীদের মাদক পরীক্ষা বা ডোপ টেস্ট করা হবে। যাদের ডোপ টেস্ট পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ হবে, তিনি চাকরির জন্য অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন। ‘দৈনিক ভোরের কাগজ’(২৫ জুন,২০২০ইং) এর তথ্য মতে দেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ লাখ। মাদকসেবীদের অধিকাংশই বয়সে তরুণ যার মধ্যে নারীরাও রয়েছে, ধারণা করা হয়, আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। দিনকে দিন মাদকসেবীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কভিড-১৯ এর মন্থরতা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে একটি পজিটিভ ভুমিকা লক্ষনীয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগ এর পরিচালক মুজিবুর রহমান পাটোয়ারীর ভাষ্যমতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভ্যন্তরীন গবেষণায় জানা যায় করোনাকালীন সময়ে পরিবহন বন্ধ থাকায় মাদকদ্রব্যের ঘাটতির কারনে এপ্রিল ও মে মাসে মাদকাসক্তের তীব্রতা অনেকটা কম ছিলো। গণপরিবহন খুলে দেয়ায় পরবর্তী সময়ে তা আবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
করোনা পরবর্তী সময়ে মাদকের তীব্রতা স্থিতিশীল এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদপ্তরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লকডাউনের পর গত আগষ্ট মাসে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ মামলা দায়ের করা হয়। তাই পরিস্থিতি কিছুটা সাভাবিক রয়েছে, এই ধারাবাহিকতা অব্যহত রেখে ছোট পরিসরে এওয়ারনেস প্রোগ্রাম করে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও যুবকদের কাছে ইন্টারনেট ও সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে মাদকের কুফল নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্লোগান ও পোস্টারিং এর মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন তারা।
তিনি আরো বলেন, মাদকের প্রভাব কমিয়ে আনতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, পুলিশ ও সাংবাদিকদের পাশাপাশি সমাজের ইনফ্লুয়েনশিয়াল ব্যাক্তিরা যদি এগিয়ে আসেন ইনশাআল্লাহ তাহলে আমরা ভালো থাকতে পারবো। তিনি জানান, চট্টগ্রামের অন্যতম মাদক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বাকলিয়া সহ বেশকিছু এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইতিমধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর ও পুলিশের সহযোগিতায় “মাদক ছাড়তে হবে, নাহয় এলাকা ছাড়তে হবে” এই স্লোগান সামনে রেখে সামাজিকভাবে মাদকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে।
পরিশেষে সকল অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “যুব সমাজকে মাদকের এই ভয়াবহ আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে সকল গার্ডিয়ানদের উচিৎ তাদের সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা। পরিবার থেকে সন্তানদের প্রতি খেয়াল রাখা না হলে সমাজে মাদক নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হয়ে যাবে।”
বাকলিয়া থানাধীন ১৯নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন কলেজ পড়ুয়া যুবক(২০) বলেন, বন্ধুদের পাল্লায় পরে প্রথম সখের বসে তিনি ই-সিগারেট খাওয়া শুরু করে পরে পকেট খরচের টাকা দিয়ে ইয়াবা ও মদ্য পান করে। তিনি যখন জানতে পারেন ধূমপায়ী ও মাদকাসক্তের করোনা সংক্রমণ এর ঝুঁকি বেশি এবং তা একজনের হলে তার পরিবারের লোকেরও হয় তারপর থেকে তিনি বাসা থেকে আর বের হয়নি প্রথম প্রথম লকডাউনে বাসায় বন্ধি থেকে লুকিয়ে কিছুদিন ধুমপান করলেও একটা সময় ধুমপান ছেড়ে দিতে তিনি বাধ্য হয়, এখন তিনি সম্পূর্ণ সাধারণভাবেই লেখাপড়ায় মনোযোগ দিচ্ছে। তার সাথে থাকা অন্য একজন(২১) বলেন, নিজের পরিবারের চেয়ে কখনো কিছু বড় হতে পারে পারে না, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে জেনে তার বাবা তাকে মোটর বাইক কিনে দিয়েছে। ইয়াবা ও গাঁজা সেবনকারি মোঃ রুবেল(২৮) সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই তিনি এসব মাদকদ্রব্য সেবন করে আসছে, অনেক চেষ্টা করেও তিনি তা ত্যাগ করতে পারেন নি তাই গত দেড় বছর আগে তাকে পরিবার থেকে বের করে দেওয়া হয়। এখন সে রিক্সার গ্যারেজ এ থাকে তার সাথে আরো অনেকেই এভাবে ইয়াবা সেবন করে নিজেদের মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে। ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আগামী প্রজন্মকে, সাথে তাদের পারিবার পরিজনকেও।।
নামঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম
বয়সঃ (১৯)
কলেজঃ জে. এম. সেন কলেজ(বেচ-২০২০)।
কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম
মন্তব্য করুন