নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১৭ পিএম, ২৯ অগাস্ট, ২০২০
কিশোরী মিম। মাগুরা থেকে গৃহপরিচারিকা হিসেবে এসেছে ঢাকায়। ছোট্ট একটি পরিবারে। সেই পরিবারে সে আরবি আর বাংলা শিক্ষা পেলেও সেটা প্রাতিষ্ঠানিক নয়। তার আয়ের অর্থ কখনোই তার হাতে আসে না। পাঠিয়ে দেওয়া হয় তার বাড়িতে। বিনোদন বলতে কখনো মালিকের সাথে বাইরে যাওয়া। এর বাইরে আলাদা কোনো বিনোদনের সুযোগ নেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কথা গৃহমালিকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মিমেরই নাকি আগ্রহ নেই।
মিমের বয়স এখন ১৪। এই বয়সেই সংসারের যাবতীয় কাজ সে করতে পারে। মিমের কাছে জানতে চাওয়া হয় বাড়ি ফিরে যাবে কবে। সে জানায় বাবা-মা বিয়ে ঠিক করলে তবেই সে যাবে। এর আগে যাওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। কারণ সংসারে ২ বোন ১ ভাইয়ের দায়িত্ব তার কাঁধে। কষ্ট হলেও থাকতে হবে এখানে।
ছোট্ট এক কিশোরী সাদিয়া। বয়স মাত্র ১০ বছর। বরিশাল জেলার সাহেলা ও মনির দম্পতির দ্বিতীয় কন্যা। পারিবারিক দারিদ্রতার কারণে তাকেও দূরসম্পর্কের আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই সে বড় হবে এবং শিখবে সংসারের ছোটখাট কাজগুলো। শেখার পাশাপাশি হাতে হাতে কাজ করে দেবে তার আত্মীয়ের। এতে কিছু অর্থ পাবে তার পরিবার। সাদিয়া তার পরিবার ছেড়ে ঢাকায় বসবাস করে। সাদিয়ার সাথে কথা বলে জানা যায় যখন সে গ্রামে থাকতো, প্রায়ই সকালে দুপুরে না খেয়ে থাকতো। বাড়িতে থাকতে তার অনেক কষ্ট হতো। তবে এখন আর তার কষ্ট হয় না কারণ সে প্রতিদিন ঠিকভাবে খাবার পায়। সে আরও বলে, মাঝে মাঝে খেলতে যেতে ইচ্ছে করে। তবে সে খেলার জন্য কখনোই বাইরে যায় না। কারণ তার গৃহমালিক তাকে বাইরে যেতে দেয় না। যখন তার খেলতে ইচ্ছে করে তখন সে গৃহমালিকের ছোট মেয়ে সাবিকুন এর সাথে খেলা করে। এ বিষয় গৃহমালিক শারমিন সুলতানা বলেন, সাদিয়া গ্রাম থেকে এসেছে মাত্র কয়েকদিন। সে তার এলাকার কিছুই চেনে না। তাই তিনি সাদিয়াকে বাইরে যেতে দেন না। শারমিন সুলতানা বলেন, বিনোদনের জন্য তিনি মাঝেমাঝে সাদিয়াকে বাসার বাইরে বেড়াতে নিয়ে যান।
সুরমা, বয়স ১৬ বছর। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। অনেক শখ করে নদীর নামে নাম রাখা হয়েছিল তার। তবে দারিদ্র্য তাদের সন্তানকে কাছে রাখতে দেয়নি। মিরপুরের সাহিদা বেগমের ছোট্ট ফ্লাটে কাজ করে সুরমা তার আয়ের টাকাটা পাঠিয়ে দেয় বাড়িতে। সংসারের সব কাজে সে বেশ পারদর্শী। সে জানায়, তার যখন ১০ বছর বয়স তখন থেকে তিনি সাহিদা বেগমের বাড়িতে কাজ করে। বছরে দুইবার বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ হয়, আবার মাঝেমাঝে গ্রাম থেকে তার মা এসে তাকে দেখেও যায়।
গৃহমালিক শারমিন সুলতানা তার গৃহপরিচারিকা সম্পর্কে জানালেন, তার মেয়েকে তিনি যেভাবে দেখেন, ঠিক তেমনি তার গৃহপরিচারিকাকেও দেখেন। তার মেয়ে কোনো অন্যায় করলে তিনি যেভাবে শাসন করেন, ঠিক তেমনি তার গৃহপরিচারিকাকেও শাসন করেন।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা যায়, শুধু সুরমা, সাদিয়া, মীম নয়, হাজারো শিশু- কিশোর কাজ করছে শহরের অনেক বাড়িতে। শহরের প্রায় সব পরিবারেই এক বা একাধিক গৃহপরিচারিকা রয়েছে। বাংলাদেশে গৃহপরিচারিকা রয়েছে প্রায় ২০ লক্ষ।
বিশেষ করে গ্রামের দরিদ্র পরিবারে যখন সংসারে আয়ের তেমন কোনো পথ থাকে না বা স্বচ্ছলতার অভাব পড়লে পরিবারের ছোট মেয়ে বা ছেলেটিকে শহরের কোনো আত্মীয় বা পরিচিতের বাড়িতে পাঠানো হয় গৃহপরিচারিকা হিসেবে।
এদেরই অনেকে অত্যাচারের শিকার হয় এবং হারিয়ে যায় তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ। এই শিশুরা না পায় কোনো বিনোদন, না পায় কোনো পড়াশোনার সুযোগ। সুন্দর শৈশবটাও নষ্ট হয়ে যায়। ইট-পাথরের শহরে বন্দী হয়ে যায় তাদের ছেলেবেলা এবং স্বপ্ন। খুব কম বয়সেই তাদের শিখে নিতে হয় সংসারের যাবতীয় কাজগুলো। এই শিশু গৃহকর্মীদের অনেকেই তাদের শৈশবে আরেকটি শিশুকে লালন-পালনে ব্যস্ত থাকে। নিজের হাসি-কান্নায় ব্যস্ত না থেকে অন্যের শিশুর হাসি-কান্নার মাঝেই নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হয় পরিবারের জন্য কিছু আয়ের লক্ষ্যে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মীম, সুরমা, সাদিয়ার মতো অনেকেই তাদের কাজ হারিয়েছে। তাদের মধ্যে নতুন করে অভাব অনটন শুরু হয়েছে। অনেকে থাকার জায়গা না পেয়ে ভাসমান জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। আমরা যেমন মীম, সাদিয়া, সুরমার মতো শিশু-কিশোর গৃহপরিচারিকার কাজ করুক, তা চাই না। একইভাবে তারা উদ্বাস্তু হয়ে যাক বা কর্মহীন হয়ে পড়ুক এটাও কাম্য নয়। দুটোর মধ্যে সমন্বয় করে তাদের জন্য আনন্দময় কাজের পরিবেশ তৈরি করা, তাদের বিকশিত করার সুযোগ করে দেওয়া এবং তারা যেন পড়ালেখার সুযোগটা পায়, এই প্রত্যেকটা বিষয় নিশ্চিত হবে, এটাই আমরা কামনা করি।
লেখক: রোকসানা আফরোজ তুলি
বয়স: ১৮
উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষ, দুয়ারিপাড়া সরকারি মহাবিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, তারুন্যের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত বাংলাদেশে।সে লক্ষ্যে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, কাঠামোগত উন্নয়নের একটি মানবিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। ১৪ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ কে দেখলে বুঝা যায় দেশে কি উন্নয়ন হয়েছে।এটি কোনো যাদু নয়, এটা হয়েছে শেখ হাসিনার যাদুকরি নেতৃত্বের কারণে।
মন্ত্রী আজ শুক্রবার রাতে কক্সবাজারের ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপে জেসিআই টয়োপ এওয়ার্ড ২০২২ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
২য় বারের মতো জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, । অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেসিআই বাংলাদেশের এর ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট নিয়াজ মোরশেদ এলিট। অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, কানাডা আওয়ামীলীগের সভাপতি সরওয়ার হাসান,কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপিসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এওয়ার্ড তুলে দেন। অনুষ্ঠানে ৮ টি ক্যাটাগরিতে ১০ জন তরুন তরুনীকে বিশেষ অর্জনের জন্যে এওয়ার্ড দেয়া হয়।
মন্তব্য করুন
বর্তমানে বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি কারনে শিশুশ্রম অনেকটাই নিন্মমখি।কিন্তু করোনা কালিন পরিস্থিতি শেষ হওয়ার পর। এই শিশুশ্রম আরো বেড়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে শ্রমে থাকা শিশুদের হয়ত আরও বেশি কর্মঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে বা তাদের আরও খারাপ পরিবেশে কাজ করতে হতে পারে। তাদের মধ্যে আরও বেশি সংখ্যক শিশুকে হয়ত ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিযুক্ত হতে বাধ্য হবে, যা তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক হুমকির কারণ হচ্ছে । মহামারী পারিবারিক আয়ে বিপর্যয় নিয়ে আসায় কোনো সহায়তা না পেয়ে অনেকেই শিশু শ্রমে নিয়োজিত হতে বাধ্য হবে। সংকটের সময়ে সামাজিক সুরক্ষা অপরিহার্য, যেহেতু তা সবচেয়ে বিপর্যস্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেয়। শিশু শ্রম নিয়ে উদ্বেগ প্রশমনে শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, শ্রমবাজার এবং আন্তর্জাতিক মানবিক ও শ্রম অধিকার বিষয়ে সমন্বিতভাবে বৃহত্তর পরিসরে নীতিমালা প্রণয়ন বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
কোভিড-১৯ এর ফলে দারিদ্র্য বেড়ে গিয়ে শিশু শ্রম বাড়াবে। কারণ বেঁচে থাকার জন্য পরিবারগুলো সম্ভাব্য সকল্ভাবে চেষ্টা করবে। কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে,নির্দিষ্ট কিছু দেশে দারিদ্র্য ১ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধিতে শিশু শ্রম অন্তত দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে।
সংকটের সময় অনেক পরিবারই টিকে থাকার কৌশল হিসেবে শিশু শ্রমকে বেছে নেয়।
“দারিদ্র্য বৃদ্ধি, স্কুল বন্ধ ও সামাজিক সেবা প্রাপ্তি কমতে থাকায় অধিক সংখ্যায় শিশুদের কর্মক্ষেত্রে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। কোভিড পরবর্তী বিশ্বকে আমরা নতুনভাবে দেখতে চাই বলে আমাদের নিশ্চিত করা দরকার যে, শিশু ও তাদের পরিবারগুলো ভবিষ্যতে একই ধরনের ধাক্কা সামলে নিতে বিকল্প পথ খুঁজে পায়। মানসম্পন্ন শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা সেবাসহ আরও ভালো অর্থনৈতিক সুযোগ ইতিবাচক এই পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে।
অর্থনৈতিক মন্দায় অপ্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে কর্মরত ও অভিবাসী শ্রমিকদের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক কর্মী ও বেকারত্ব বৃদ্ধি, জীবনমানের পতন, স্বাস্থ্যগত সমস্যা এবং সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ঘাটতিসহ অন্যান্য চাপ সৃষ্টি হবে। বর্তমান সংকটের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ শিশু শ্রম হ্রাসে দারুন কাজ করে আসছিল।
চলমান মহামারীর কারণে এই অর্জন যেন নস্যাৎ না হয় তা নিশ্চিত করতে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আমাদের আরও বেশি সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সময়োচিত এই প্রতিবেদনটি কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ প্রভাবের ওপর আলো ফেলেছে এবং সরকার, নিয়োগকর্তা, শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সামনে বর্তমান সংকট মোকাবেলার সর্বোত্তম পথ খুঁজে পেতে তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরেছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে অসহায় শিশুদের জীবন, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও ভবিষ্যতের ওপর কোভিড-১৯ মহামারী বিশেষ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। স্কুল বন্ধ ও পরিবারের আয় কমে যাওয়ায় অনেক শিশুর জন্য শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং বাণিজ্যিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। “গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা যত বেশি সময় স্কুলের বাইরে থাকে তাদের আবার স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা ততটাই কমে যায়। আমাদের এখন শিশুদের শিক্ষা ও সুরক্ষার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত এবং মহামারীর পুরো সময়জুড়েই তা অব্যাহত রাখা উচিত,
মহামারীর এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশু শ্রম বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ ধারাবাহিকভাবে আসছে। বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে ১০০ কোটিরও বেশি শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি যখন পুনরায় ক্লাস শুরু হবে তখন অনেক বাবা-মায়ের হয়ত তাদের সন্তানকে স্কুলে দেওয়ার সক্ষমতা থাকবে না।
ফলশ্রুতিতে আরও অনেক শিশু বঞ্চনামূলক ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যোগ দিতে বাধ্য হবে। লিঙ্গ বৈষম্য আরও তীব্র হতে পারে। বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের কৃষি ও গৃহকর্মে বঞ্চনার শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়বে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কোভিড-১৯ ও শিশু শ্রম: সংকটের সময়, পদক্ষেপের সময়’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে এপর্যন্ত শিশু শ্রম ৯ কোটি ৪০ লাখ কমেছে, কিন্তু এই অর্জন এখন ঝুঁকির মুখে।
ইভান খান হোসাইন
বয়সঃ ১৬
কলেজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কাইসার নিলুফার কলেজ
মন্তব্য করুন