ইনসাইড থট

বাংলাদেশে আদিবাসী এবং দলিতদের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় প্রসঙ্গ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ১১ অক্টোবর, ২০১৯


Thumbnail

একথা বহুল ভাবে প্রচারিত হচ্ছে যে এক বছরে বাংলাদেশের উন্নয়ন  অবস্থানের উন্নতি হয়েছে তিন ধাপ। ১৮৯টি দেশকে অতি উন্নত, উন্নত, মধ্যম ও নিম্ন মানব উন্নয়নের চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে এবং ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০১৮ থেকে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ রয়েছে মানব উন্নয়নের মধ্যম দেশের স্তরে। প্রতিবেদনে ১৮৯ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১৩৬তম যার বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১,৭৫১ ডলার  যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো সর্ব্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬%। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, যোগাযোগ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার প্রসার উন্নয়নের একটি বিশেষ চিত্র তুলে ধরলেও প্রকৃত চিত্র বলছে এখনও অনেক মানুষ উন্নয়নের তলানিতেই পড়ে আছে। দেশের এই ২৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে যার মধ্যে ১২ শতাংশই হতদরিদ্র এবং এই ১২ শতাংশ  হতদরিদ্রদের মধ্যে যাদের অবস্থান অগ্রগন্য তারা সমতল ও পাহাড়বাসি সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়। শুধুমাত্র মাথাপিছু গড় আয়ের উলম্ফন দিয়ে এই মানুষগুলোর বেঁচে থাকার বহুমাত্রিক প্রান্তিকতা বিচার করা সম্ভব নয়। এই বাস্তবতা সরকারের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা,  টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠ, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকি পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০২১ , বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ ইত্যাদি অর্জনের পথে সুস্পষ্ট বাঁধা তৈরী করবে।  তাই সরকারের চলমান উন্নয়ন ধারা অব্যাহত রাখতে এবং উল্লিখিত বহুমাত্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তব রূপ দিতে প্রয়োজন বাংলাদেশের সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদাইয়ের বহুমাত্রিক প্রান্তিকতা দূর করে স্থায়ীত্বশীল ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সরকার উদ্ভাবনী উন্নয়ন উদ্যোগ নিতে হবে। এই নতুন ও উদ্ভাবনী উন্নয়ন উদ্যোগ নিঁখুতভাবে বাস্তবায়নের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বাংলাদেশের সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করতে না পারা। তাই সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় সরকারের ইচ্ছা থাকলেও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি, শিক্ষাবৃত্তি, কারিগরী দক্ষতা উন্নয়ন অবকাঠামো সম্প্রসারণ, আবাসন তৈরীতে সহায়তা, উদ্যোক্তা পর্যায়ে নগদ সহায়তা ইত্যাদি উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশের সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়কে নিশ্চিত ভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারছে না এবং অন্যদিকে, সামাজিক ও বেসরকারি সংগঠন গুলোও সরকারি সঠিক জমমিতি না পাবার ফলে সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিতে পারছে না।  এই সামগ্রিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকারের ২০২১ সালের জনসুমারিতে যেন সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের সঠিক সংখ্যা নিরূপণ করা যায় সরকারকে যে ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে।

বাংলাদেশ বহুমাত্রিক জাতিগোষ্ঠীর একটি দেশ। বাংলাদেশের মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান বা অন্যান্য ধর্মালম্বী সকলেই বাঙ্গালি নয়। এদেশে বাস করছে বাঙ্গালি মুসলমান, অবাঙ্গালি মুসালমান, বাঙ্গালি হিন্দু, অবাঙ্গালি হিন্দু, বাঙ্গালি খৃষ্টান, অবাঙ্গালি খৃষ্টান, বাঙ্গালি বৌদ্ধ, অবাঙ্গালি বৌদ্ধ এবং অন্যান্য জাতিসত্ত্বা এবং ধর্মালম্বী মানুষ। এই নানামুখি বৈচিত্রতার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠী হচ্ছে সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায় এবং এই সব মানুষের সংখ্যা বেসরকারি নানা হিসেবে প্রায় সাড়ে সাত মিলিয়ন। এই সড়ে সাত মিলিয়নের মধ্যে ২.৫ মিলিয়ন হচ্ছে সমতলে ও পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং ৫ মিলিয়ন জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের।  প্রায়ই ব্যাবহৃত এই সংখ্যাটি নিয়ে যদিও গবেষক মহলে ভিন্নমত আছে। সংখ্যা ভিত্তিক এই ভিন্নমত সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের সঠিক সংখ্যা নির্নয়ে জটিলতা হিসেবে বিরাজ করে এবং সরকারি হিসেবের সাথে সাংঘর্সিক। এই সংখ্যা গত সংঘর্স আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তথ্য ব্যাবহারে নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্ন বিদ্ধ করে বারবার। ভৌগলিক ভাবে এই জনগোষ্ঠী অতীতকাল থেকে বাসকরে আসছে বাংলাদেশের দক্ষিন-পুর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১৮ টি জেলাতে।  এই ১৮ টি জেলাতে বসবাসরত সমতলের এবং পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ মায়ানমানের আরাকান অঞ্চল থেকে, ভারিতের ত্রিপুরা, খাসিয়া, পশ্চিম বাংলা এবং অনেকে জনগষ্ঠী মধ্য ভারত থেকে সুদূর অতীতে বাংলাদেশে অভিবাসন নিয়েছে এবং আদিবাসী হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এই নৃগোষ্ঠী গুলো যেহেতু নিজস্ব জাতি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে নাই তাই তারা বাঙ্গালি জাতি এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দ্বারা হরহামেশাই প্রভাবিত, নির্যাতিত এবং প্রিতারিত।  এই সমতলের এবং পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ ব্যাতিত অন্যান্ন  জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত অমুসলিম এবং দলিত সম্প্রদায়ের বসবাস বাংলাদেশের সর্ব অঞ্চলে, বিশেষত শহরাঞ্চলে। এই গোষ্ঠী পেশাগত, সনাতনী ধর্মাশ্রিত বর্ন এবং জাত-পাতের কারণে প্রতিনিয়ত নিষ্পেষণের শিকার।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ৫ম আদমশুমারি ও গৃহগণনা-২০১১ হিসাব বলছে বাংলাদেশে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তথা আদিবাসীদের সংখ্যা ২৭টি এবং মোট জনসংখ্যা ১৩,৮০,৪৮৮ জন, অর্থাৎ ১.৪ মিলিয়ন।  এই ১.৪ মিলিয়নের মধ্যে পেশাগত, সনাতনী ধর্মাশ্রিত বর্ন এবং জাত-পাতের কারনে অচ্ছুত গোষ্ঠী গুলোও রয়েছে। এই গোষ্ঠী গুলো আদিবাসী গোষ্ঠীগুলোর থেকে নানা মাত্রায় স্বতন্ত্র হলেও তাদের আলাদা হিসেবে গন্য করা হয়নি। তাই তার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ৫ম আদমশুমারি  ও গৃহগণনা-২০১১ এর রিপোর্টে যে তালিকা প্রদান করা হয়েছে তার বাইরে রয়ে গেছে। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে যারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে তারা হচ্ছেঃ   চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চ্যঙ্গা, বম, পাঙ্খুয়া, চাক, খেয়াং, খুমি, লুসাই, কোচ,  সাঁওতাল, ডালু, উসাই, রাখাইন, মণিপুরী, গারো, হাজং, খাসিয়া, মং, ওঁরাও, বর্ম্মন, পাহাড়ি, মালপাহাড়ি, মুন্ডা, কোল, কন্দ, পাংখো, পাংগোন, মুর, রাজবংশী, পাত্র এবং গঞ্জু। দেখাযাচ্ছে সরকারি হিসাব আর বেসরকারি হিসাবের মধ্যে বিশাল ফাক রয়েছে। সরকারি হিসাবে পাকপাকি ৬.১ মিলিয়ন সমতলের, পাহাড়ের আদিবাসী মানুষ এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের কোন হদিস নেই। কেন এই বিশাল তথ্যগত ফারাক? বলতে চাচ্ছি না যে বেসরকারি হিসাবই সঠিক এবং সরকারি হিসাব সঠিক নয়। এখানে অস্বীকৃতির এবং রাজনীতির একটা ব্যাপার রয়ে গেছে। এই অস্বীকৃতির এবং রাজনৈতিক অণুঘটকের উপস্থিতি পরিষ্কার বোঝা যায় যখন দেখা যায় সরকারের দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে তথ্যের ফারাক রয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর যেখানে ২৭ টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তথা আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন তারিখ: ০৫ চৈত্র ১৪২৫ বক্সগাব্দ/১৯ মার্চ ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ এস. আর. ও. নং-৭৮-আইন/২০১৯। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ২৩ নং আইন) এর ধারা ১৯ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকারি  তফসিল বলছে ৫০ টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তথা আদিবাসীদের কথা। এই সব ক্ষুদ্র  ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নাম হচ্ছেঃ ওরাওঁ, কোচ, কোল, খাসিয়া/খাসি, খিয়াং, খুমি, গারো, চাক, চাকমা, ডালু, তঞ্চক্সগা, ত্রিপুরা, পাংখোয়া/পাংখো, বম, বর্মণ, মণিপুরী, মারমা, পাহাড়ী/মালপাহাড়ী, মুন্ডা, ম্রো, রাখাইন, লুসাই, সাঁওতাল, হাজং, মাহাতো/কুর্মি মাহাতো/বেদিয়া মাহাতো, কন্দ, কড়া, গঞ্জু, গড়াইত, গুর্খা, তেলী, তুরি, পাত্র, বাগদী, বানাই,  বড়াইক/বাড়াইক, বেদিয়া, ভিল, ভূমিজ, ভূঁইমালী, মালো/ঘাসিমালো, মাহালী, মুসহর,রাজোয়াড়, লোহার, শবর, হুদি, হো, খারিয়া/খাড়িয়া এবং খারওয়ার/খেড়োয়ার। বিশ্লেষন করলে দেখা যাচ্ছে ২৩ টি গোষ্ঠী সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন ২০১৯ এ নতুন ভাবে যুক্ত হতে পেড়েছে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে ২০১১ সাল হতে ২০১৯ অর্থাৎ ৮ বছর তারা সরকারের কাছে অস্বীকৃত ছিলো। সহজেই অনুমেয় যে এই ২৩ দল সরকার থেকে নিদেন পক্ষেও কোন অধিকার ভোগ করতে পারেনি। সরকার তাদের কোন প্রকার উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে গন্যই করেনি। এই ২৩ টি অস্বীকৃত জাতি গোষ্ঠী হচ্ছেঃ মাহাতো/কুর্মি মাহাতো/বেদিয়া মাহাতো, কড়া, গঞ্জু, গড়াইত, গুর্খা, তেলী, তুরি, বাগদী, বানাই,  বড়াইক/বাড়াইক, বেদিয়া, ভিল, ভূমিজ, ভূঁইমালী, মালো/ঘাসিমালো, মাহালী, মুসহর,রাজোয়াড়, লোহার, শবর, হুদি, হো, খারিয়া/খাড়িয়া এবং খারওয়ার/খেড়োয়ার। আবার দেখাযাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ৫ম আদমশুমারি  ও গৃহগণনা-২০১১ যারা তালিকা ভূক্ত ছিলো যেমনঃ পাংগোন, মুর, রাজবংশী, উসাই, মং, বর্মন এরা সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন ২০১৯ থেকে ছিটকে গেছেন। আবার মালপাহাড়ি এবং পাহাড়ি যারা ২০১১ এর আদমশুমারিতে এক গোত্র ভুক্ত ছিল সেই গোত্রকে ২০১৯ সালের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রানালয়ের প্রজ্ঞাপনে আলাদা গোত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রানালয়ের প্রজ্ঞাপন নিয়েও প্রশ্ন রয়ে যায়। পাংগোন, মুর, রাজবংশী, উসাই, মং, বর্মন এরা তবে কি আলাদা নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃত হবে না? তাহলে তারা কি সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং  কর্মকান্ড থেকে বাদ পড়ে যাবে? সংখ্যা নিয়ে এইসব অস্বচ্ছতা সরকারী এবং বেসরকারী উন্নয়ন কর্মকান্ডে জটিলতা বাড়িয়ে চলবে। বাংলাদেশের সমতল ও পাহাড়বাসি সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের সংখ্যা নির্ধারনে এই চলমান জটিলতা সমাধা না হলে সমতা ভিত্তিক উন্নয়নের বদলে অসমতা ব্যাপক হয়ে উঠবে।

২০১২-১৩ আর্থিক বছরে সরকার “মাইনরিটি অ্যান্ড আন্ডারপ্রিভিলেজড কমিনিটি” দের জন্য জাতীয় বাজেটে ২১৮ এবং ২২১ নম্বর উপ-ধারায় উন্নয়ন বাজেট নির্ধারন করে। পরিতাপের বিষয় যে সেই উন্নয়ন বাজেট রাখা হয়েছিল শুধুমাত্র পাহাড়ি আদিবাসিদের জন্য, তাও অপ্রতুল। সে সময় সরকারের সমতলবাসি আদিবাসিদের স¤পর্কে কোন পরিকল্পনাই ছিল না। কারন পরিসংখ্যান গত কোন তথ্যই ছিলো না সরকারের কাছে। এই অনুন্নয়নের ধারাবাহিকতা ২০১৩-১৪ অর্থ বছরেও অপরিবর্তিত রয়ে যায় তবে সে বছর দলিত, হিজড়া, বেদে এদের জন্য কিছু বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১১-১২ সালে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয় সমতলের আদিবাসীদের নামে যার পরিমান ছিল মাত্র ১৫ কোটি। সরকারী আদমশুমারি ২০১১ মেনে নিয়েও যদি মাথাপিছু হিসেব করা যায় তবে সমতলের সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ ছিল ১০৯ টাকা। এমন হাস্যকর বরাদ্দের কথা নাই বা বললাম কিন্তু এই চরম নিগৃহতার কারন জাতি হিসেবে তাদের রাজনৈতিক অস্বীকারের সংস্কৃতি আর যথাযথ পরিসংখ্যানের অভাব। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর অফিসের স্পেশাল অ্যাফিয়ারস ডিভিশন এই বরাদ্দ পরিচালনা করতো এবং তারাই বলেছে যে বিশেষ বরাদ্দ পরিকল্পনার সময় তাদের ধারনা ছিল না যে সমতলের সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের প্রকৃত সংখ্যা কত এবং সমতলের ক্ষুদ্র জাতি গুলোর কোন প্রতিনিধি নেয়া হয় নাই। তাই বলতেই হচ্ছে উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্রতা কমলেও এখনও বিপুল সংখ্যক মানুষ উন্নয়নের মূলস্রোতধারার বাইরে রয়ে গেছে।  ফলে তাদের জীবনে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যেও ব্যাপক। ২০১০ সালের জরিপ অনুসারে গ্রামাঞ্চলে ৩৫.২% মানুষ এবং শহরাঞ্চলে ২১.৩% মানুষ চরম দারিদ্রের ভেতর বসবাস করছে । এই বছর জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী “সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ। সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের” শীর্ষক ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য যে প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন করেছেন, সেখানে আদিবাসী, বঞ্চিত, অবহেলিত, পিছিয়েপড়াসহ সকল মানুষের আশা আঙ্খাকার প্রতিফলন ঘটবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছিলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার নিয়ে আসা নতুন সরকার দেশের উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি এবং অবহেলিত আদিবাসী মানুষের প্রতি সরকারের অঙ্গীকার, সকল বিবেচনাতেই ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে উন্নয়ন কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের আগ্রহ ছিল। কিন্তু সেই বাজেট  ৫০ টি আদিবাসী ও অন্যান্ন পিছিয়ে রাখা জাতিগোষ্ঠীর ৭০ লক্ষাধিক জনগণের জীবনমান উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। বরং জাতীয় বাজেটে আদিবাসীরা বরাবরই অবহেলার শিকার হয়েছে। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, দ্রারির্দ্য হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। অতি দ্রারির্দ্যের হার ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১১ শতাংশ হয়েছে। দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় এখন বেড়ে ১,৯০৯ ডলার হয়েছে। কিন্তু সরকারের কাছে সমতলের এবং পাহাড়ের সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায় স¤পর্কে কোন বিভাজিত তথ্য নাই যা এই সব জনগোষ্ঠীদের  মাঝে দারিদ্যের হার স¤পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারে। তাদের প্রকৃত মাথাপিছু আয় কত কিংবা তাদের মাঝে আসল দারিদ্যের হার কত এখন? শুধুমাত্র গড়ের হিসাবে উন্নয়নকে পরিমাপ করা হলে আদিবাসীরা বঞ্চিতই থেকে যাবে, কখনই তাদের প্রকৃত বঞ্চনার তথ্য বেরিয়ে আসবে না। আমাদের ধারণা মতে, আদিবাসীদের মাঝে দারির্দ্যের হার এখনো ৬৫% এর কম হবে না। রাঙামাটি আর বান্দরবানে দারির্দ্যের হার যথাক্রমে ৬৪ শতাংশ এবং ৬৩.২ শতাংশ, সমতলের আদিবাসী অধ্যুষিত জেলা দিনাজপুরে এই হার ৬৪.৩ শতাংশ। আদিবাসীদের গড় আয় জাতীয় গড় থেকে কম। পাহাড়ের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ কম, সমতলের আদিবাসীদের ক্ষেত্রে ৪১ শতাংশ কম। সমতলের দুই-তৃতীয়াংশ আদিবাসী কার্যত ভূমিহীন। এটি বাস্তবতা যে সমতলের বিশ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠী বরাবরই উন্নয়ন বাজেটে অবহেলিত ও বঞ্চিত থাকে। তাদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন এবং মন্ত্রণালয় বা খাতভিত্তিক বাজেট প্রণয়ণের দাবি করে আসছে আদিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার সমতলের আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করে আসছে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারেও । কিন্তু কোনবারই এ উদ্যোগ গ্রহণে বরাদ্দ রাখা হয় নি। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ৭৪,৩৬৭ কোটি সামাজিক সুরক্ষায় বাজেট ধরা হয়েছে । যা বাজেটের ১৪.২১ শতাংশ এবং জিডিপির ২.৫৮ শতাংশ। গত বাজেটের চেয়ে এটি ১০,১৯০ কোটি টাকা বেশি। খুবই দুঃখজনক যে, বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত)-র জন্য থোক বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা ছাড়া সামাজিক সুরক্ষায় আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে সামগ্রিকভাবে সামাজিক সুরক্ষার এই বরাদ্দ বৃদ্ধি যদি অবহেলিত ও প্রান্তিক মানুষের অবস্থার উন্নতির লক্ষ্য হয় তাহলে এখানে অবশ্যই আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করা উচিত এবং আরো প্রকল্প গ্রহণ করা দরকার।

এই সব অতি বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য চাই ২০২১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনয় সমতলের ও পাহাড়ি সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের প্রকৃত সংখ্যা কত তা পুংখানুপুংখু রূপে বের করা এবং সঠিক প্রতিবেদন পেশ করা।  বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ১০ বছর পর পর আদমশুমারি পরিচালনা করে থাকে। জনসংখ্যা এবং খানা জরীপ হচ্ছে একটি দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন কাজ যা সরকারের দেশ পরিচালনা, নীতি নির্ধারন, উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন, বাজেট বরাদ্দ নির্ধারন ইত্যাকার গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য অতীব প্রয়োজন। জাতিসঙ্ঘের টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠ ১৭ তে সরকারের জাতীয় পর্যায়ে জনসংখ্যা এবং খানা জরীপকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে। কারন যে কোন সংখ্যাগত উপাত্তের জন্য জনসংখ্যা এবং খানা জরীপ তথ্যই একমাত্র গ্রহণযোগ্য মাধ্যম। সেখানে বলা হয়েছে ২০২১ এর আদমশুমারিরে যেন কোন প্রান্তিক, ক্ষুদ্র গোষ্ঠী এমন কি ভবঘুরে যেন না বাদ যায় এবং দেশের প্রতিটি ভৌগলিক এলাকা যেন এর আওতা থেকে বাদ না পড়ে। ২০১১ আদমশুমারি তিন পর্যায়ে স¤পন্ন হয়েছে এক. মূল গণনা, দুই. পোস্ট এনুমারেশন চেক তিন. সাধারণ গণনা: একটি নির্দিষ্ট এলাকা যাচাই। ১৬ জুলাই ২০১১ সালে আদমশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।২০২১ সালে ষষ্ঠবারের মতো আদমশুমারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এবারেও একই পদ্ধতি অনুসরন করা হবে। এরই মধ্যে প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি। উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান গুলো চেষ্টা করছে এবারের সুমারিতে যেন সমতলের ও পাহাড়ের  সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের স¤পৃক্তটা ঘটে। সেই নিমিত্ত্বে আন্তর্জাতিক দাতা প্রতিষ্ঠানের সাথে এবারই প্রথমবারের মত সট এবং লং প্রশ্নপত্র তৈরীর কাজে চলছে।  এই শুমারিতে আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে এবং আশা রাখি আগত জনমিতি সার্ভেতে সমতলের ও পাহাড়ি সংখ্যালঘূ ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী এবং জাত ও পেশাভিত্তিক অচ্ছুত মানুষ অমুসলিম এবং মুসলিম দলিত সম্প্রদায়ের প্রকৃত সংখ্যার পাশাপাশি এদেশের মুসলিম অছ্যুত জাতি যেমন পাঙ্গাল এবং মানতা যারা যথাক্রমে সিলেট, মৌলভিবাজার এবং পটুয়াখালি অঞ্চলে বাস করে তাদের সংখ্যাও নিরূপিত হবে। আর তা না হলে বাংলাদেশর পক্ষে টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট অর্জন অসম্ভব হয়ে থাকবে।

(অনিক আসাদ একজন নৃবিজ্ঞানী  এবং একই সাথে একজন মানবাধিকার কর্মী, তিঁনি বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করছেন। বর্তমান তিনি বাংলাদেশে হেক্স/ইপার এর কান্ট্রি ডিরেক্টর হিসাবে কর্মরত আছেন। হেক্স/ইপার  বাংলাদেশে বহুল আলোচিত আন্তজার্তিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান যারা মানবাধিকার ভিত্তিক সমভূমি আদিবাসী ও দলিত সম্পদায়ের সামাজিক অন্তভূক্তির বিষয়টি বিশেষ ভাবে আলোকপাত করে।)

বাংলা ইনসাইডার



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন