নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৬ এএম, ১৩ জুলাই, ২০১৭
দিনবদলের অঙ্গীকারের নৌকায় চড়ে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা আওয়ামী লীগ থেকে প্রাপ্তি কম নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সাফল্য দেখিয়ে গেছে স্বগৌরবে। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে বিগত আট বছরের এই সরকারের পাল্লা সফলতায় ভারী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার কাজ দিয়ে জনগণের বিশ্বস্ততা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিগত বছরগুলোর অনেক সাফল্যকেই ব্যর্থতার কালো ছায়ায় আড়াল করে দিচ্ছে।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ পরিচালনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও সাংগঠনিকভাবে পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। আর এই সরকারের আমলের শেষ দিকে এসে কেমন যেন হিমশিম খাওয়ার অবস্থা হয়েছে। অনেকটা অগোছালো হয়ে পরেছে আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি হাওরের আগাম বন্যায় ত্রাণ নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্নে সম্মুখীন এই সরকার। বারবার পাহাড় ধসের ঘটনায় এতো মানুষ নিহত। তারপরও নেই ব্যবস্থা।
অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা। যানবাহনের স্বল্পতা সঙ্গে রাস্তায় তীব্র যানজট। যানজট নিরাসনে যেই উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন ফলপ্রসূ নেই কিছুতেই। এছাড়া রাস্তাঘাট মেরামতের নামে চলছে দুর্নীতি। রাস্তা কাটা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তা আর মেরামত হচ্ছে না। আর এই বর্ষার মৌসুমে মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন রাস্তার কাজ নিয়ে সমালোচিত হলেও তাতেও কোনো আশার আলো দেখছে না জনগণ। এদিকে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শহরের ভিতরে গাড়ির বদলে নৌকা চলার মতো অবস্থা। এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানকার মানুষ সারাবছরই থাকে জলামগ্ন অবস্থায়।
কিছুদিন আগে চালের লাগামহীন বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। তার উপর গ্যাসের দামের উর্ধ্বগতিতো রয়েছেই। বিদ্যুতের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। এতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পড়ছে সমস্যায়। এছাড়া ২০১৭-১৮ বাজেট নিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্নে সমুক্ষিন হতে হয়েছে সরকারকে।
চার বছর পূর্তির প্রাক্কালে আরেক দফা তেলের দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো অবস্থা হয়েছে। শেষ সময়ে এই জ্বালানি তেলের মূল্যে বৃদ্ধি সরকারকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
এখন আবার সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ আর লুটপাটে মরতে বসেছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই।
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রামপাল ইস্যু নিয়ে জনমনে বিতর্কের শেষ নেই।
হেফাজতের দাবি মেনে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন, জয়ী হলো আল্লামা আহমেদ শফির নেতৃত্বাধীন আলেম-ওলামাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক, কওমি মাদ্রাসার সনদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমমর্যাদায় স্বীকৃতিদান আর সুপ্রিমকোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য সরানোয় এই সরকারের নীতিবোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
চার বছর পেরিয়ে সরকারের মেয়াদের প্রায় শেষের দিকে পদার্পণ করলেও তীর থেকে প্রত্যাশার তরী এখনও অনেকটাই দূরে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কমেনি। রাজনীতির সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তন শূন্যের কোঠায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা ও সমর্থন ব্যক্ত করলেও গত বছরে পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্কসহ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা সরকারের বিশাল সাফল্যেকে ম্লান করে দিয়েছে। জনসমর্থনেও ধাক্কা লেগেছে।
সরকারের চার বছর মেয়াদ শেষে এই দ্রব্যমূল্য নিয়েই দুশ্চিন্তায় সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে চার বছর নেয়া হয়েছে অনেক উদ্যোগ। হয়েছে বাজার ও দাম নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কখনও বেঁধে দেয়া হয়েছে নির্ধারিত পণ্যের দাম। আবার কখনও নেয়া হয়েছে বাজার পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত। মন্ত্রিত্বও রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু চার বছর বাজার পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি বাজারের অসাধু সিন্ডিকেটকে। এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিই সরকারের সাফল্যেগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, শিক্ষায় পাশের হার বাড়িয়ে বাহ্বা নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার মান নিম্ন নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই সরকারের আমলেই, বড়ি-ঘরে জ্বালানী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছেনা, অপরদিকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, কারিগরি অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটিত দুর্ঘটনায় ধ্বংস হচ্ছে বাড়ি-ঘর এবং মারা যাচ্ছে মানুষ।
মহাজোট সরকারের আরেকটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে দেশব্যাপী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্তের বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনা। চার বছর ধরেই এদের কারণে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
বেশ কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীসহ দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে ন্যায় নীতির কথা বললেও এখন আর তার কোনো চিহ্ন নেই বললেই চলে। এখন মহাজোট সরকার আগামী নির্বাচন জেতার লড়াইয়ে উঠে পরে লেগেছে। আর এই লড়াইয়ের মাঝে ভুলতে বসেছে যারা এই সরকারকে নির্বাচিত করবে তাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা কত? বিগত কাজগুলো যেভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সব সাফল্যে পানি ফেলে দিয়েছে। অনেকটা তীরে এসে তরী ডুবানোর মত অবস্থা। এ থেকে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি সরকার? নাকি এই অবস্থা তাদের কাছে কোনো মাথাব্যাথাই নয়?
বাংলা ইনসাইডার/টিআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাপ্রধান মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া
মন্তব্য করুন
আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।
চীনের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এর একটি কন্টিনজেন্ট যৌথ মহড়ায় যোগ দিতে আগামী মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসবে। আর এই বিষয়ে গতকাল দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন যে, প্রতিবেশী দেশ কিংবা উন্নত এই ধরনের মহড়ার ওপর ভারত সবসময়ই দৃষ্টি রাখে।
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে সহায়তা করার জন্য যেমন তারা আশ্বাস দিচ্ছে, তেমনই নানা ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব নিয়েও চীন আগ্রহ দেখাচ্ছে।
চীনের সঙ্গে ভূরাজনীতিতে ভারতের কৌশলগত বিরোধ রয়েছে। এমন এক সময়ে চীন বাংলাদেশে এই যৌথ সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে যে সময় ভারতের নির্বাচন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এখন ভারতের নীতি নির্ধারক এবং সকলের দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে। আর একারণেই এখন চীনের এই সামরিক মহড়ার যৌক্তিকতা এবং এর প্রভাব এই উপমহাদেশের শান্তি এবং নিরাপত্তায় কীভাবে পড়বে তা নিয়ে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মালদ্বীপ হারানোর পর ভারতের এই অঞ্চলে কৌশলগত একমাত্র মিত্র হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নানা বাস্তবতার দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন এবং সেভেন সিস্টারে শান্তি ও অখণ্ডতা সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতও বাংলাদেশকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। গত নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। আর দুই দেশের সম্পর্ক ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যখন নতুন মাত্রায় উত্তীর্ণ হবে ভাবা হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, তিনি প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন ভারতে। আবার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরেও ভারতে যাওয়ার কথা। নির্বাচনের পরপর এরকম একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানানও হয়েছে। কিন্তু যখন দুই দেশের সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা স্পর্শ করছে তখন ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের চীনপ্রীতি এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ অমূলক নয় বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি প্রধান দেশেরই আগ্রহ রয়েছে।
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর চীনকে অনেক আগ্রাসী কূটনীতিতে দেখা যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এমনকি যে সমস্ত মন্ত্রীরা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত, তাদের সাথেও চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ নগদ অর্থ বা ঋণ এর দায় মেটানোর জন্য চীনের কাছে হাত পাততে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যে এতদিন ধরে ভারসাম্যের কূটনীতি রক্ষা করেছিল সেটি কতটা রক্ষা করতে পারবে সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর চীনের সাথে এই যৌথ সামরিক মহড়ার ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনদিকে যায় সেটাও দেখার বিষয় বলে অনেকে মনে করছেন।
বাংলাদেশ ভারত চীন ভূরাজনীতি সামরিক মহড়া
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকের পর পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি ছাড়াও একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম।
বাংলাদেশ একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের। দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি।
এদিন বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান আয়তন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজিকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগের এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।
এদিন বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমসটেক মোট ১.৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ড বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
নরসিংদীর শিবপুরে প্রেমিকার আত্মহত্যার শোক সইতে না পেরে প্রেমিক সিফাত (১৯) নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমিকার মৃত্যুর ১৯ দিন পর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিক সিফাত পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত ওই গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আত্মহত্যা করে প্রমাণ করে গেল আমারে কতটা ভালোবাসে। আমিও প্রমাণ করে দিমু তানহারে আমি কতটা ভালোবাসি। কারও সঙ্গে ভুল করে থাকলে মাফ করে দিও। আর দেখা হবে না সবাই দোয়া কইরো শান্তিতে থাকি কিংবা অশান্তিতে দুজন যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। আমার শেষ ইচ্ছা তানহার কবরের পাশে আমাকে কবর দেওয়া হোক।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। আর আমার কোনো কিছুর জন্য
তানহার পরিবার বা আমার পরিবার দায়ী না, এমনকি আমার কোনো ভাই-ব্রাদার বা বন্ধুও দায়ী
না। যা হবে আমার নিজের ইচ্ছেতে হবে। সত্যি বলতে আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নাই। আমাকে যদি
কেউ বাঁচিয়েও নেয় আমি পুনরায় আত্মহত্যার চেষ্টা করব। প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচানোর চেষ্টা
কইরো না। বেঁচে থেকে আর কি হবে, যার জন্য বাঁচার কথা ছিল সে তো আর নেই।’
সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আমারে কথা দিছিলো যদি বাঁচি তো একসঙ্গে বাঁচমু
আর যদি মরতে হয় তো একসঙ্গে মরমু। আমি তানহারে এই কথাটাই দিছিলাম। কিন্তু একটা চরিত্রহীন
জানোয়ার আমাদের সুখে থাকতে দিল না। ওদের অত্যাচারে তানহা আত্মহত্যা করল। এক প্রকার
তারা তানহারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল। জানোয়ারের পরিবারকেই আমি খুনি বলে দাবি করি।
আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে জানোয়ারের পরিবার স্বাধীনভাবে চলবে, ওদের কোনো সাজা হবে না।
আর অন্যদিকে আমার তানহা শেষ, আমি অর্ধেক শেষ আমার পরিবারও শেষ। আমি আর কষ্ট সহ্য করতে
পারছি না (প্রমাণ হয়ে যাক দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসতাম) আর আমি চরিত্রহীন জানোয়ারের
পরিবারের সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এমন সাজা দেওয়া হোক অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন
এমন না হয়। আর যেন কারও প্রাণ না ঝরে। কেউ যেন ব্ল্যাকমেইলের শিকার না হয়। আমার শেষ
একটাই ইচ্ছে- আমরা দুজনে সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম, বাস্তবে তা হলো না। তাই
আমার মৃত্যুর পর তানহার কবরের পাশে যেন আমার কবর দেওয়া হয়। আমি আঙ্গুররে মারছি শুধু
একটা কারণে, হেয় তানহার হাতে ধরছিল। তানহারে খারাপ প্রস্তাব দিছিল। আমি সহ্য করতে পারি
নাই। তাই হেরে কোবাইছি। আমরা প্রেম করছি এটাই কি অপরাধ ছিল। আমাদের জীবন শেষ করে দিল।
ভালো থাকুক আঙ্গুর আর আঙ্গুরের পরিবার।
এদিকে সিফাতের বাবা ইব্রাহিম জানান, প্রতিবেশী চাচাতো বোন খলিলের
মেয়ে তানহার (১৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমার ছেলে সিফাতের। গত ৩ এপ্রিল দিবাগত
রাত ২টার সময় তানহা ঘরের ভেতর থেকে আর সিফাত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় দেখে
ফেলে একই এলাকার রাজুর ছেলে আঙ্গুর (২৫)।
এ সময় আঙ্গুর তানহাকে কুপ্রস্তাব দেয়। সিফাত এতে নিষেধ করে। কুপ্রস্তাবে
রাজি না হওয়ায় আঙ্গুর সিফাতকে মারধর করে টাকা দাবি করে। পরে সে উত্তেজিত হয়ে আঙ্গুরকে
কুপিয়ে আহত করে। মারামারির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। লোকলজ্জায় গত ৬ এপ্রিল রাতে
তানহা নিজ ঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এসব বিষয়ে গ্রামীণ সালিস দরবার হওয়ার কথা ছিল। সালিস দরবারে আমাকে
ও আমার ছেলেকে এটা করবে ওটা করবে বলে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। দরবারে গেলে
জমির দলিল নিয়ে যেতে বলতো। এসব মানসিক চাপ সইতে না পেরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে
ছেলে সিফাত। আমি এর বিচার দাবি করছি।
শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ
উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো
হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
মন্তব্য করুন
আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।