নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৬ এএম, ১৩ জুলাই, ২০১৭
দিনবদলের অঙ্গীকারের নৌকায় চড়ে সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা আওয়ামী লীগ থেকে প্রাপ্তি কম নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সাফল্য দেখিয়ে গেছে স্বগৌরবে। সাফল্য-ব্যর্থতার হিসাব-নিকাশ করলে বিগত আট বছরের এই সরকারের পাল্লা সফলতায় ভারী। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার কাজ দিয়ে জনগণের বিশ্বস্ততা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত বিগত বছরগুলোর অনেক সাফল্যকেই ব্যর্থতার কালো ছায়ায় আড়াল করে দিচ্ছে।
টানা দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ পরিচালনায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও সাংগঠনিকভাবে পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি ক্ষমতাসীন দলটি। আর এই সরকারের আমলের শেষ দিকে এসে কেমন যেন হিমশিম খাওয়ার অবস্থা হয়েছে। অনেকটা অগোছালো হয়ে পরেছে আওয়ামী লীগ।
সম্প্রতি হাওরের আগাম বন্যায় ত্রাণ নিয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্নে সম্মুখীন এই সরকার। বারবার পাহাড় ধসের ঘটনায় এতো মানুষ নিহত। তারপরও নেই ব্যবস্থা।
অতিবৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা। যানবাহনের স্বল্পতা সঙ্গে রাস্তায় তীব্র যানজট। যানজট নিরাসনে যেই উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন ফলপ্রসূ নেই কিছুতেই। এছাড়া রাস্তাঘাট মেরামতের নামে চলছে দুর্নীতি। রাস্তা কাটা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তা আর মেরামত হচ্ছে না। আর এই বর্ষার মৌসুমে মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন রাস্তার কাজ নিয়ে সমালোচিত হলেও তাতেও কোনো আশার আলো দেখছে না জনগণ। এদিকে, বন্দর নগরী চট্টগ্রামে বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় শহরের ভিতরে গাড়ির বদলে নৌকা চলার মতো অবস্থা। এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানকার মানুষ সারাবছরই থাকে জলামগ্ন অবস্থায়।
কিছুদিন আগে চালের লাগামহীন বৃদ্ধিতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। তার উপর গ্যাসের দামের উর্ধ্বগতিতো রয়েছেই। বিদ্যুতের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। এতে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো পড়ছে সমস্যায়। এছাড়া ২০১৭-১৮ বাজেট নিয়ে নানা বিষয়ে প্রশ্নে সমুক্ষিন হতে হয়েছে সরকারকে।
চার বছর পূর্তির প্রাক্কালে আরেক দফা তেলের দাম বৃদ্ধি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা-এর মতো অবস্থা হয়েছে। শেষ সময়ে এই জ্বালানি তেলের মূল্যে বৃদ্ধি সরকারকে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে।
এখন আবার সরকারি ব্যাংকগুলো নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে লুটপাট হয়েছে এক লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ আর লুটপাটে মরতে বসেছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে টাকা চুরি হওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই।
ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাগেরহাটের রামপালে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। রামপাল ইস্যু নিয়ে জনমনে বিতর্কের শেষ নেই।
হেফাজতের দাবি মেনে পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তন, জয়ী হলো আল্লামা আহমেদ শফির নেতৃত্বাধীন আলেম-ওলামাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক, কওমি মাদ্রাসার সনদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির সমমর্যাদায় স্বীকৃতিদান আর সুপ্রিমকোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য সরানোয় এই সরকারের নীতিবোধ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
চার বছর পেরিয়ে সরকারের মেয়াদের প্রায় শেষের দিকে পদার্পণ করলেও তীর থেকে প্রত্যাশার তরী এখনও অনেকটাই দূরে। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ব্যবধান কমেনি। রাজনীতির সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তন শূন্যের কোঠায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে দেশের শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা ও সমর্থন ব্যক্ত করলেও গত বছরে পদ্মা সেতু দুর্নীতি, হলমার্কসহ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা সরকারের বিশাল সাফল্যেকে ম্লান করে দিয়েছে। জনসমর্থনেও ধাক্কা লেগেছে।
সরকারের চার বছর মেয়াদ শেষে এই দ্রব্যমূল্য নিয়েই দুশ্চিন্তায় সরকার। বাজার নিয়ন্ত্রণে চার বছর নেয়া হয়েছে অনেক উদ্যোগ। হয়েছে বাজার ও দাম নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কখনও বেঁধে দেয়া হয়েছে নির্ধারিত পণ্যের দাম। আবার কখনও নেয়া হয়েছে বাজার পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্ত। মন্ত্রিত্বও রদবদল করা হয়েছে। কিন্তু চার বছর বাজার পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি বাজারের অসাধু সিন্ডিকেটকে। এই দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিই সরকারের সাফল্যেগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারের আমলেই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে, শিক্ষায় পাশের হার বাড়িয়ে বাহ্বা নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু শিক্ষার মান নিম্ন নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এই সরকারের আমলেই, বড়ি-ঘরে জ্বালানী গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছেনা, অপরদিকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের গাফিলতি, কারিগরি অদক্ষতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটিত দুর্ঘটনায় ধ্বংস হচ্ছে বাড়ি-ঘর এবং মারা যাচ্ছে মানুষ।
মহাজোট সরকারের আরেকটি বড় ব্যর্থতা হচ্ছে দেশব্যাপী ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নামধারী কিছু দুর্বৃত্তের বেপরোয়া দুর্বৃত্তপনা। চার বছর ধরেই এদের কারণে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে।
বেশ কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীসহ দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশ করে ন্যায় নীতির কথা বললেও এখন আর তার কোনো চিহ্ন নেই বললেই চলে। এখন মহাজোট সরকার আগামী নির্বাচন জেতার লড়াইয়ে উঠে পরে লেগেছে। আর এই লড়াইয়ের মাঝে ভুলতে বসেছে যারা এই সরকারকে নির্বাচিত করবে তাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা কত? বিগত কাজগুলো যেভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত সব সাফল্যে পানি ফেলে দিয়েছে। অনেকটা তীরে এসে তরী ডুবানোর মত অবস্থা। এ থেকে বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি সরকার? নাকি এই অবস্থা তাদের কাছে কোনো মাথাব্যাথাই নয়?
বাংলা ইনসাইডার/টিআর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।