নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ এএম, ২৬ মে, ২০২০
করোনা পরবর্তী বিশ্ব ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন আসবে তার সুস্পষ্ট ইংগিত ইতোমধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। করোনায় শুধু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাননি অনেক রাষ্ট্রনায়ক তাঁদের স্বজন হারিয়েছে। করোনার উৎপত্তি সম্পর্কে সবাই মোটামুটি নিশ্চিত হলেও এর বিস্তার নিয়ে চীন নিজেকে সন্দেহাতীতভাবে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে সত্য মিথ্যের মিশেল দুনিয়া জুড়ে মানুষ আর রাষ্ট্রের কর্ণধারদের অন্তরের গভীরে সন্দেহের বীজ গেড়ে বসেছে। এছাড়া সস্তা শ্রম আর পণ্য মূল্যের কারণে চীনের উপর নির্ভরশীলতার পরে নিত্য ব্যবহার্য পণ্য সরবরাহে করোনাকালে যে চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে চীনে বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রসমূহ এক বা একাধিক বিকল্প পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আমেরিকা ইউরোপ ছাড়াও এশিয়ার অন্যতম শিল্পোন্নত দেশ জাপানও তাঁদের শিল্প কারখানা চীন থেকে অন্য দেশে সরিয়ে নেওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছে। মনের ভিতর ক্ষোভ পুষে রাখা ইউরোপ অন্তর্মুখী ভাব দেখালেও যুক্তরাষ্ট্র তার স্বভাব সুলভ ভাষায় কথা বলছে যাতে মনে হচ্ছে চীনের সাথে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের শুরু হতে যাচ্ছে আমেরিকার। আসলে কি শুধুই আমেরিকা একাই না সাথে আরও কেউ আছে?
অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন যে, পারমানবিক বোমা মেরে দেশ জয়ের দিন আর নেই। এখন অর্থনৈতিক যুদ্ধের সময়। মঙ্গোলিয়ান চেঙ্গিস খান সারা দুনিয়ার অর্ধেক দখল করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও অল্পের জন্য সফল হতে পারেন নি। তারই উত্তরসূরি চায়নিজরা সারা দুনিয়ার বাণিজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে চেয়েছিল বলে এখন অনেক দেশ সন্দেহ করছে। তাই তারা বিকল্পের সন্ধানে আছেন, কোথা থেকে কম মূল্যে তাদের জন্য ভোগ্য পণ্য আর ক্যাপিটাল মেশিনারি বানানো যায়।
বিপুল জনসংখ্যার দেশ ভারত। গবেষণা আর প্রযুক্তির দিক দিয়েও তারা খুব পিছিয়ে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই তারা তাদের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছে। তাই ইউরোপ আমেরিকা, জাপানের মত অনেক দেশ ভারতে তাদের শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠায় বেশী আগ্রহী হতে পারে, কারণ ভারতে তাঁরা কম করে হলেও ২০ বছর তাঁদের ব্যবসা চালাতে পারবেন। এছাড়া আছে বাংলাদেশ। এর জনসম্পদও কম নয়, অবকাঠামোগত দিক দিয়ে দেশটি দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যা শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য খুব জরুরি। এর পাশে আছে অল্প জনসংখ্যার উন্নয়নে আগ্রাসী ভূমিকার দেশ ভিয়েতনাম সাথে কম্বোডিয়া, লাউস, ইত্যাদি। আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানের মত দেশ যদি তাদের শিল্প কারখানা এসব দেশে স্থানান্তর করতে শুরু করে তাহলে তারা চীনের চেয়ে কম মূল্যে তাদের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে বলে আশাবাদী। তখন বিশ্ববাণিজ্যে চীন হবে অনেকটা কোন ঠাঁসা। এমতাবস্থায় চীন কী করবে তার বিপুল দক্ষ কর্মী বাহিনী নিয়ে? কীভাবে তারা সস্তায় পণ্য তৈরি করে আন্তর্জাতিক বাজার দখলে রাখবে বর্তমানের মত করে? কারণ সব দেশের মানুষ সস্তায় পণ্য সামগ্রী কিনতে চান।
চীনের সঙ্গে চলমান সম্পর্ককে যুক্তরাষ্ট্র নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈশ্বিক করোনাভাইরাস সংকট ও হংকংয়ে নতুন আইন পাসসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় গত রোববার তিনি এ মন্তব্য করেছেন। বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক শক্তিকে দোষারোপ করেছেন। ওয়াং ই বলেন, `যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনৈতিক শক্তি চীন-মার্কিন সম্পর্ককে জিম্মি করছে এবং এই দুই দেশকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।`
চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের চলমান কূটনৈতিক সম্পর্ক বেশ তিক্ত। বাণিজ্য, মানবাধিকার ও অন্যান্য ইস্যুতে দুই দেশের মতানৈক্য তীব্র আকার ধারণ করেছে। সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস পরিস্থিতি এই সংকট নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়শই অভিযোগ করছেন যে, নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পেছনে চীনের হাত রয়েছে।
ওদিকে চীনের নতুন আইন প্রণয়নকে কেন্দ্র করে আবারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে বিশ্ববাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হংকং। প্রযুক্তিতে উন্নত তাইওয়ানের সাথে শুরু হয়েছে নতুন ঝামেলা, তাইওয়ান স্বাধীনতা চায়। এর পিছনে আমেরিকার হাত আছে বলে চীন অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছে। ফলে হংকংও তাইওয়ানকে সামাল দিতে চীনের সামরিক ব্যয় বাড়বে। অর্থনীতিতে পড়বে চাপ।
উপরের অবস্থা বিবেচনা করে একজন বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন যে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বাংলাদেশের সরকারী অফিস সংস্কৃতির কারণে প্রথম ধাক্কায় চীন থেকে আমেরিকা, ইউরোপ ও জাপানের শিল্প বাণিজ্য স্থানান্তরে বাংলাদেশের ভাগ্যে খুব কম সুযোগ জুটতে পারে। আর সেই সুযোগ লুফে নিতে পারে চীন। কারণ বাংলাদেশ একসাথে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তি ভারত, চীন ও জাপানের সাথে একতালে সম্পর্ক রেখে চলেছে। এছাড়া ভারতের সাথে চীনের সম্পর্ক খুব মধুর নয়, বরং বৈরী। অন্যদিকে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, লাউস জনসংখ্যার নিরিখে বড় দেশ নয়। পুরো শিল্প কারখানা কম্পিউটারাইজড করতেও সময় নেবে। তখন চীনের সামনে বিকল্প হিসেবে এশিয়ায় থাকবে একমাত্র বাংলাদেশ। ততদিনে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হবে অনেক বেশী, বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বাংলাদেশের সরকারী অফিস সংস্কৃতিতেও পরিবর্তন আসবে, আসতে বাধ্য হবে। এমতাবস্থায় চীন তার বিনিয়োগের বিরাট অংশ আনবে বাংলাদেশে। কিছু হয়তো যাবে আফ্রিকার কোন কোন দেশে।
করোনা স্থিতু হলেই আগামী কয়েক বছরেই চীন থেকে শিল্প বাণিজ্য স্থানান্তরের পুরো চিত্রটা পরিষ্কার হতে শুরু হবে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক গবেষণা-প্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিলের ২০১৯ সালের ভাষ্যমতে, `২০৩৭ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বেড়ে হবে কমপক্ষে ২১ কোটি’ হবে। এই বিপুল জনসংখ্যাকে কাজে লাগিয়ে চীন এখানে শ্রমঘন শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে উৎসাহী হবে, আর তার সম্ভাবনাও অনেক বেশী। এখন দরকার বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠন আর কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো জোরদার করা চীন, জাপান ও অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশে শিল্প বাণিজ্যে বিনিয়োগ আনায়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ সেনাপ্রধান মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া
মন্তব্য করুন
আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।
চীনের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতেই চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) এর একটি কন্টিনজেন্ট যৌথ মহড়ায় যোগ দিতে আগামী মে মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশে আসবে। আর এই বিষয়ে গতকাল দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়ালকে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন যে, প্রতিবেশী দেশ কিংবা উন্নত এই ধরনের মহড়ার ওপর ভারত সবসময়ই দৃষ্টি রাখে।
গত কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অতি আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটে সহায়তা করার জন্য যেমন তারা আশ্বাস দিচ্ছে, তেমনই নানা ধরনের প্রকল্প প্রস্তাব নিয়েও চীন আগ্রহ দেখাচ্ছে।
চীনের সঙ্গে ভূরাজনীতিতে ভারতের কৌশলগত বিরোধ রয়েছে। এমন এক সময়ে চীন বাংলাদেশে এই যৌথ সামরিক মহড়া করতে যাচ্ছে যে সময় ভারতের নির্বাচন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এখন ভারতের নীতি নির্ধারক এবং সকলের দৃষ্টি নির্বাচনের দিকে। আর একারণেই এখন চীনের এই সামরিক মহড়ার যৌক্তিকতা এবং এর প্রভাব এই উপমহাদেশের শান্তি এবং নিরাপত্তায় কীভাবে পড়বে তা নিয়ে নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মালদ্বীপ হারানোর পর ভারতের এই অঞ্চলে কৌশলগত একমাত্র মিত্র হল বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে নানা বাস্তবতার দিক থেকে ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন এবং সেভেন সিস্টারে শান্তি ও অখণ্ডতা সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশের সহযোগিতা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতও বাংলাদেশকে বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করেছে। গত নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতার কথা আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেন। আর দুই দেশের সম্পর্ক ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর যখন নতুন মাত্রায় উত্তীর্ণ হবে ভাবা হচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই যৌথ সামরিক মহড়ার বিষয়টি সামনে এসেছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন যে, তিনি প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরে যাবেন ভারতে। আবার প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফরেও ভারতে যাওয়ার কথা। নির্বাচনের পরপর এরকম একটি সফর হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানানও হয়েছে। কিন্তু যখন দুই দেশের সম্পর্ক একটি নতুন মাত্রা স্পর্শ করছে তখন ভারতের মধ্যে বাংলাদেশের চীনপ্রীতি এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এক ধরনের উদ্বেগ অমূলক নয় বলে মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে ভারত, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তিনটি প্রধান দেশেরই আগ্রহ রয়েছে।
বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনের পর চীনকে অনেক আগ্রাসী কূটনীতিতে দেখা যাচ্ছে। চীনের রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। এমনকি যে সমস্ত মন্ত্রীরা ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত, তাদের সাথেও চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশ নগদ অর্থ বা ঋণ এর দায় মেটানোর জন্য চীনের কাছে হাত পাততে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশ যে এতদিন ধরে ভারসাম্যের কূটনীতি রক্ষা করেছিল সেটি কতটা রক্ষা করতে পারবে সেটি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। আর চীনের সাথে এই যৌথ সামরিক মহড়ার ফলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোনদিকে যায় সেটাও দেখার বিষয় বলে অনেকে মনে করছেন।
বাংলাদেশ ভারত চীন ভূরাজনীতি সামরিক মহড়া
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে হাসপাতাল ও চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গভর্নমেন্ট হাউসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এদিন দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠকের পর পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি ছাড়াও একটি চুক্তি, তিনটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি আগ্রহপত্র (এলওআই) স্বাক্ষরিত হয়।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা বাংলাদেশি চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি থাই প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের হাসপাতাল ও চিকিৎসা সুবিধায় বিনিয়োগের সম্ভাবনা অন্বেষণ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলাম।
বাংলাদেশ একটি নিকট প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক, ভাষাগত এবং অভিন্ন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের। দুই দেশের মধ্যে উষ্ণ সৌহার্দ্যপূর্ণ সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে, যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাণবন্ত অর্থনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমরা থাইল্যান্ডকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং গতিশীল অংশীদার হিসেবে দেখছি।
এদিন বৈঠকে দুই নেতা পারস্পরিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেই সঙ্গে বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়ে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বর্তমান আয়তন বাড়ানোর জন্য দীর্ঘ পদক্ষেপ নিয়েও আলোচনা করেন এবং শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে একসঙ্গে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, থাই প্রধানমন্ত্রীকে (থাভিসিন) বাংলাদেশে বিনিয়োগ সহজিকরণ এবং ব্যবসা সহজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। থাই পক্ষকে আমাদের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগের এবং বিশেষভাবে একটি এসইজেড নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। সরকারপ্রধান বলেন, আমি থাই পক্ষকে দুই দেশের মধ্যে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে, বিশেষ করে কৃষি, মৎস্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছি।
এদিন বৈঠকে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক কাঠামোর অধীনে আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা করেছেন। চলতি বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে বর্তমান সভাপতি ও আয়োজক হিসেবে থাইল্যান্ড বাংলাদেশের কাছে সভাপতিত্ব হস্তান্তর করবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, বিমসটেক মোট ১.৮ বিলিয়ন জনসংখ্যার আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধান অর্জনের জন্য বাংলাদেশ থাইল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধান দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফরের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে থাই প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ড বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
নরসিংদীর শিবপুরে প্রেমিকার আত্মহত্যার শোক সইতে না পেরে প্রেমিক সিফাত (১৯) নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। প্রেমিকার মৃত্যুর ১৯ দিন পর ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিক সিফাত পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে উপজেলার মাছিমপুর ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিফাত ওই গ্রামের ইব্রাহিমের ছেলে। তিনি শিবপুর সরকারি শহীদ আসাদ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাসে সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আত্মহত্যা করে প্রমাণ করে গেল আমারে কতটা ভালোবাসে। আমিও প্রমাণ করে দিমু তানহারে আমি কতটা ভালোবাসি। কারও সঙ্গে ভুল করে থাকলে মাফ করে দিও। আর দেখা হবে না সবাই দোয়া কইরো শান্তিতে থাকি কিংবা অশান্তিতে দুজন যেন একসঙ্গে থাকতে পারি। আমার শেষ ইচ্ছা তানহার কবরের পাশে আমাকে কবর দেওয়া হোক।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার। আর আমার কোনো কিছুর জন্য
তানহার পরিবার বা আমার পরিবার দায়ী না, এমনকি আমার কোনো ভাই-ব্রাদার বা বন্ধুও দায়ী
না। যা হবে আমার নিজের ইচ্ছেতে হবে। সত্যি বলতে আমার আর বাঁচার ইচ্ছে নাই। আমাকে যদি
কেউ বাঁচিয়েও নেয় আমি পুনরায় আত্মহত্যার চেষ্টা করব। প্লিজ আমাকে কেউ বাঁচানোর চেষ্টা
কইরো না। বেঁচে থেকে আর কি হবে, যার জন্য বাঁচার কথা ছিল সে তো আর নেই।’
সিফাত লিখেছেন, ‘তানহা আমারে কথা দিছিলো যদি বাঁচি তো একসঙ্গে বাঁচমু
আর যদি মরতে হয় তো একসঙ্গে মরমু। আমি তানহারে এই কথাটাই দিছিলাম। কিন্তু একটা চরিত্রহীন
জানোয়ার আমাদের সুখে থাকতে দিল না। ওদের অত্যাচারে তানহা আত্মহত্যা করল। এক প্রকার
তারা তানহারে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করল। জানোয়ারের পরিবারকেই আমি খুনি বলে দাবি করি।
আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে জানোয়ারের পরিবার স্বাধীনভাবে চলবে, ওদের কোনো সাজা হবে না।
আর অন্যদিকে আমার তানহা শেষ, আমি অর্ধেক শেষ আমার পরিবারও শেষ। আমি আর কষ্ট সহ্য করতে
পারছি না (প্রমাণ হয়ে যাক দুজন দুজনকে কতটা ভালোবাসতাম) আর আমি চরিত্রহীন জানোয়ারের
পরিবারের সঠিক বিচারের দাবি জানাচ্ছি। এমন সাজা দেওয়া হোক অন্য কোনো মেয়ের সঙ্গে যেন
এমন না হয়। আর যেন কারও প্রাণ না ঝরে। কেউ যেন ব্ল্যাকমেইলের শিকার না হয়। আমার শেষ
একটাই ইচ্ছে- আমরা দুজনে সারাজীবন একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিলাম, বাস্তবে তা হলো না। তাই
আমার মৃত্যুর পর তানহার কবরের পাশে যেন আমার কবর দেওয়া হয়। আমি আঙ্গুররে মারছি শুধু
একটা কারণে, হেয় তানহার হাতে ধরছিল। তানহারে খারাপ প্রস্তাব দিছিল। আমি সহ্য করতে পারি
নাই। তাই হেরে কোবাইছি। আমরা প্রেম করছি এটাই কি অপরাধ ছিল। আমাদের জীবন শেষ করে দিল।
ভালো থাকুক আঙ্গুর আর আঙ্গুরের পরিবার।
এদিকে সিফাতের বাবা ইব্রাহিম জানান, প্রতিবেশী চাচাতো বোন খলিলের
মেয়ে তানহার (১৫) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল আমার ছেলে সিফাতের। গত ৩ এপ্রিল দিবাগত
রাত ২টার সময় তানহা ঘরের ভেতর থেকে আর সিফাত জানালার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় দেখে
ফেলে একই এলাকার রাজুর ছেলে আঙ্গুর (২৫)।
এ সময় আঙ্গুর তানহাকে কুপ্রস্তাব দেয়। সিফাত এতে নিষেধ করে। কুপ্রস্তাবে
রাজি না হওয়ায় আঙ্গুর সিফাতকে মারধর করে টাকা দাবি করে। পরে সে উত্তেজিত হয়ে আঙ্গুরকে
কুপিয়ে আহত করে। মারামারির বিষয়ে মামলা চলমান রয়েছে। লোকলজ্জায় গত ৬ এপ্রিল রাতে
তানহা নিজ ঘরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এসব বিষয়ে গ্রামীণ সালিস দরবার হওয়ার কথা ছিল। সালিস দরবারে আমাকে
ও আমার ছেলেকে এটা করবে ওটা করবে বলে বিভিন্নভাবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। দরবারে গেলে
জমির দলিল নিয়ে যেতে বলতো। এসব মানসিক চাপ সইতে না পেরে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে
ছেলে সিফাত। আমি এর বিচার দাবি করছি।
শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদ
উদ্দিন বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো
হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
মন্তব্য করুন
আগামী মে মাসে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যৌথ সামরিক মহড়া হতে পারে বলে চীনা গণমাধ্যমের খবর প্রকাশিত হয়েছে। আগামী মে মাসে এই মহড়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া ও পিপলস ডেইলি। এরকম একটি সামরিক মহড়া এই অঞ্চলে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ফেলবে তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানারকম প্রশ্ন উঠেছে।