সংসদীয় গণতন্ত্রের আঁতুড়ঘর ব্রিটেন। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সম্পর্কে একটি কথা বহুল প্রচলিত। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সম্পর্কে বলা হয় ‘একমাত্র নারীকে পুরুষ এবং পুরুষকে নারীতে পরিবর্তন ছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সব পারে’।
সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্লামেন্ট জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সরকার পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু। সংসদের মধ্য দিয়েই প্রজাতন্ত্রে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। সংসদীয় গণতন্ত্রে পার্লামেন্টকে দেশ পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু মনে করা হয়। যুক্তরাজ্য, ভারতসহ সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশগুলো এর উদাহরণ। বাংলাদেশেও
সংসদীয় গণতন্ত্র। নানা টানাপোড়েন এবং চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ গত ৭ এপ্রিল
৫০ বছর পূর্ণ করল। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এক বিশেষ অধিবেশন
আহ্বান করা হয়। রাষ্ট্রপতি এ অধিবেশনে বক্তব্য
রাখেন। প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদের সিনিয়র নেতারা ভাষণ দেন। কিন্তু সংসদের ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে
পেছনে ফিরে তাকিয়ে আমরা কি বলতে পারি
আমাদের জাতীয় সংসদ ক্ষমতাবান? ব্রিটেন বা ভারতের মতো
রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু? জাতির পিতা সারা জীবন ছিলেন জনগণের ক্ষমতায়নের পক্ষে। সংসদীয় গণতন্ত্রে তার আস্থা ছিল। এ কারণেই ১০
জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গণপরিষদে ৪ নভেম্বর ১৯৭২
সালে নতুন সংবিধান প্রণীত হয়। ৭২-এর সংবিধানে
সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এ সংবিধান গৃহীত
হওয়ার পর ১৫ ডিসেম্বর
গণপরিষদ ভেঙে দেওয়া হয়। ১৯৭৩-এর ৭ মার্চ
অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জাতীয়
সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের পর
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল জাতীয়
সংসদের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় সংসদের এই ৫০ বছরের যাত্রাপথ সহজ সরল স্বাভাবিক ছিল না। ৫০ বছরে ১১টি সংসদ গঠিত হয়েছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। এর মধ্যে ছয়টি সংসদই তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। প্রথম জাতীয় সংসদের মেয়াদ ছিল ২ বছর ৬ মাস। ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর অবৈধ রাষ্ট্রপতি সংসদের বিলুপ্তি ঘোষণা করে। ৭৫-এর ১৫ আগস্টের নারকীয় নৃশংসতার পর সংসদ এমনিতেই ছিল অকার্যকর। প্রথম জাতীয় সংসদেই সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বাকশাল গঠন এবং রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি প্রবর্তিত হওয়া রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা বহাল ছিল ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ সময়কালে সংসদ তার সার্বভৌমত্ব হারায়। সংসদ ছিল নির্বাহী কর্তৃত্বের অধীনে। সংসদ এ সময় অবৈধ শাসকদের ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার রাবার স্ট্যাম্পে পরিণত হয়। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। সেনাশাসন জারি করে সংবিধান স্থগিত করেন। বুটের তলায় পিষ্ট হয় গণতন্ত্র। সেনা পোশাকেই জিয়া অস্ত্রহাতে বঙ্গভবন যান। নামমাত্র রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাদাত মো. সায়েমকে অস্ত্রের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করেন। উর্দি পরেই স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হন জিয়া। এ সময় জিয়া সংবিধান স্থগিত করেই ক্ষান্ত হননি। সাময়িক ফরমানের মাধ্যমে একের পর এক সংবিধান কাটাছেঁড়া করেন সামরিক একনায়ক জিয়া। ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের মতো রাষ্ট্রের মৌলিক স্তম্ভগুলোকে উপড়ে ফেলেন সংবিধান থেকে। রক্তাক্ত এবং ক্ষতবিক্ষত হয় পবিত্র ৭২-এর সংবিধান। ক্ষমতায় বসেই জিয়া রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সামরিক শাসনের মধ্যেই আয়োজন করা হয় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন। প্রহসনের এই নির্বাচনে একটি ফলাফলই নির্ধারিত ছিল। তা হলো, সামরিক শাসনের গর্ভে জন্ম নেওয়া জিয়ার দল বিএনপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সংসদে আনা। পাতানো ওই নির্বাচনে সেটিই হয়। ২০৭টি আসন পায় জিয়ার দল বিএনপি। দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসে ২ এপ্রিল। প্রথম অধিবেশনের আয়ুষ্কাল ছিল মাত্র পাঁচ দিন। এ পাঁচ দিনেই জিয়ার সামরিক শাসন জারি থেকে অবৈধ ক্ষমতা দখল, সবকিছুর বৈধতা দেওয়া হয়। সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক অভিশাপ। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় সংসদের প্রধান কাজই ছিল জিয়ার অবৈধ শাসন বৈধতা দেওয়া। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ক্ষমতা দখল করেই তিনি জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করেন। তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের মৃত্যু হয়। ক্ষমতা দখল করে এরশাদ জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। সংবিধানে কাটাছেঁড়া করা হয় সামরিক ফরমানে। এরশাদও ক্ষমতায় বসে দল গঠন করেন। তার অবৈধ ক্ষমতা দখলকে বৈধতা দিতে প্রয়োজন হয় নতুন সংসদ। ১৯৮৬ সালের ৭ মে বহুল বিতর্কিত, সমালোচিত, মিডিয়া ক্যু-এর মাধ্যমে তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১০ জুলাই মাত্র আট দিনের জন্য বসে প্রথম অধিবেশন। প্রথম অধিবেশনেই সপ্তম সংশোধনী বিলের মাধ্যমে এরশাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয় সংসদ। বিরোধী দলের সরব উপস্থিতিতে এ সংসদ ছিল উত্তপ্ত। প্রাণবন্ত। কিন্তু রাজপথের আন্দোলনের মুখে ১৯৮৭ সালে ৬ ডিসেম্বর এরশাদ সংসদ বাতিল করেন। তৃতীয় জাতীয় সংসদও মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি।
এরশাদ সংসদ ভেঙে দিয়ে আন্দোলন দমন করেন। নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেন। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যে নির্বাচন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ প্রধান প্রধান সব রাজনৈতিক দল বর্জন করে। এরশাদ আ স ম আবদুর রবের মতো ভাড়া করা অনুগত বিরোধী দল জোগাড় করেন। এই অনুগত, গৃহপালিত বিরোধী দলকে নিয়ে জাতীয় পার্টি চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। ২৫ এপ্রিল ১৯৮৮ সালে বসে প্রথম অধিবেশন। কিন্তু এ সংসদও তার মেয়াদপূর্তি করতে পারেনি। ২ বছর ৭ মাসের মাথায় জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে এরশাদের পতন হয়। এভাবেই স্বাধীনতার পর প্রথম বিশ বছর চারটি সংসদই ছিল অকার্যকর। অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের বৈধতা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান। রাবার স্ট্যাম্প। এ চারটি সংসদ একবারও তার মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ৭৫-এর পর দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা ছিল সামরিক স্বৈরাচারদের হাতে। সংসদ ছিল স্রেফ অলংকার। রাষ্ট্রের সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো একনায়কতান্ত্রিক ভাবেই।
নব্বইয়ের গণআন্দোলনের অন্যতম আকাঙ্ক্ষা ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। তিনজোট এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় অঙ্গীকার করে যে, এরশাদের পতনের পর তারা ঐক্যবদ্ধভাবে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে। ৯১-এর ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ছিলেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। সবাইকে অবাক করে ওই নির্বাচনে বিএনপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেন বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে ৯১-এর জাতীয় সংসদ ছিল অন্যতম প্রাণবন্ত এবং কার্যকর। ৯১-এর জাতীয় সংসদে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থা অবসান ঘটে। সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়। কিন্তু সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আসলে রাষ্ট্রপতিশাসিত শাসনব্যবস্থার বদলে প্রধানমন্ত্রীর শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়। রাষ্ট্রপতির সব ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীকে অর্পণ করা হয়। রাষ্ট্রপতি হয়ে যান ক্ষমতাহীন। ৯১-এর নির্বাচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী হন বেগম জিয়া। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রে অনভ্যস্ত, আড়ষ্ট ছিলেন। সংসদে আসতেন কম। কথা বলতেন আরও কম। সংসদের বাইরে মন্ত্রিসভা দিয়েই দেশ পরিচালনা করতেন। মন্ত্রীদের সংসদে জবাবদিহিতায় তীব্র অনীহা এবং আপত্তি ছিল লক্ষণীয়। কারণ ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেওয়া বিএনপি সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চায় অভ্যস্ত ছিল না। ফলে সংসদীয় গণতন্ত্র শুধু কাগজে কলমেই থাকে। সংসদ জবাবদিহিতার কেন্দ্রবিন্দুও হয় না। বিএনপি ক্ষমতায় এসে ভোটচুরি ও কারচুপির একই ধারা শুরু করে। বিশেষ করে মাগুরা এবং মীরপুরের উপনির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। বিএনপি সেই আন্দোলনের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানায়। উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে পঞ্চম জাতীয় সংসদ মেয়াদপূর্তির মাত্র চার মাস আগে ভেঙে যায়। বিরোধী দল একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়াই ছিল একমাত্র বিকল্প। ১৯৯৫ সালের ২৪ নভেম্বর সংসদ বিলুপ্ত করা হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখে। বিরোধী আন্দোলন উপেক্ষা করে বিএনপি একতরফাভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালের নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়াই এ নির্বাচন হয়। বিএনপি ছাড়া ৭৫-এর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দল ওই নির্বাচনে অংশ নেয়। তীব্র গোলযোগ এবং সহিংসতার মুখে ভোট ছাড়াই নির্বাচন কমিশন ঘরে বসে ফলাফল বানায়। ২১ মার্চ জাতীয় সংসদের অধিবেশন ডাকা হয়। মাত্র ১১ দিন স্থায়ী ছিল ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ। এ সংসদে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবলিত সংবিধানের ১৩তম সংশোধনী পাস করা হয়। ৩০ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২১ বছর পর এ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সংসদীয় গণতন্ত্রকে অর্থবহ এবং কার্যকর করতে সংসদ নেতা এ সময় বেশ কিছু যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেন। সংসদীয় কমিটিগুলোর সভাপতি করা হয় মন্ত্রী নন এমন সংসদ সদস্যদের। যাতে মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্ব চালু করেন। কিন্তু সংবিধান প্রধানমন্ত্রীকে যে বিপুল নির্বাহী ক্ষমতা দিয়েছে তাতে সংসদ শুধু আলোচনা এবং বিতর্কের কেন্দ্র হতে পারে। জবাবদিহিতার মাধ্যমে ক্ষমতাবান হতে পারে না। তবে সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি এবং কার্যকর সংসদীয় কমিটি যে সংসদকে ক্ষমতাবান করতে পারে পঞ্চম ও সপ্তম জাতীয় সংসদ তার প্রমাণ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সংসদ যেটি মেয়াদপূর্ণ করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। বেগম জিয়া যেহেতু সংসদীয় গণতন্ত্রে স্বাচ্ছন্দ্য নন, তাই আবার সংসদ পাশ কাটিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যায়। এ সময় স্বীকৃত সরকারের চেয়ে হাওয়া ভবনে প্রতিষ্ঠিত ছায়া সরকারই অধিক ক্ষমতাবান হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকেই বিতর্কিত করে ফেলে। নানা বিতর্ক ও টানাপোড়েনের পর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ হন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান। বিএনপির অনুগত ইয়াজউদ্দিন একটি প্রহসনের নির্বাচনের পথে হাঁটেন। যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনাই ছিল তার লক্ষ্য। এরকম বাস্তবতায় সেনা সমর্থনে সুশীল নিয়ন্ত্রিত অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। দুই বছর গণতন্ত্র নির্বাসনে যায়। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। সেই থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলটি টানা ১৪ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায়। সংসদে বিরোধী দল উত্তাপহীন। ২০০৯ সালের নবম সংসদে বিরোধী দল ছিল দুর্বল। সংখ্যায় খুবই কম। ২০১৪ সালে বিরোধী দল আর সরকারি দল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। ২০১৮-এর নির্বাচন জাতীয় সংসদকে প্রায় বিরোধী দলশূন্য করে ফেলে। ফলে সংসদ উত্তাপহীন, আগ্রহহীন একটি রুটিন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। মন্ত্রীরা সংসদে জবাবদিহিতা করেন না। কারণ বিরোধী দল শক্তিশালী নয়। সংসদ এখন আলোচনা এবং বক্তৃতার জায়গা। সিদ্ধান্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, মন্ত্রিসভায়। এমপিদের ভূমিকা এখন গৌণ। আমলারা ক্ষমতাবান। তবে একটা ইতিবাচক দিকে হলো, ১৯৯৬ সাল থেকে সংসদের অপমৃত্যু নেই। সব সংসদই মেয়াদপূর্ণ করছে। জাতীয় সংসদ গণতন্ত্রের পাহারাদার। রাষ্ট্রপরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় সংসদ উপেক্ষিত এটা সত্যি। তবে এও সঠিক যে, জাতীয় সংসদ আছে বলেই এখনো গণতন্ত্র টিকে আছে। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে খারাপ গণতন্ত্রও অনির্বাচিত স্বৈরশাসনের চেয়ে ভালো। জাতীয় সংসদ তার ৫০ বছর পূর্ণ করল। জাতীয় সংসদ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিষ্ঠান। তাই একে কার্যকর করা রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব। শক্তিশালী বিরোধী দল, সংসদ সদস্যদের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থিতি এবং প্রাণবন্ত বিতর্কই সংসদকে শক্তিশালী করতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন একটি ভালো নির্বাচন।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
ইরান-ইসরায়েল শেখ হাসিনা শান্তির দূত জো বাইডেন ইরান
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
ইরান-ইসরায়েল ইস্যু ক্রমশ উত্তপ্ত হচ্ছে। তৈরি হয়েছে যুদ্ধ পরিস্থিতি। ইরান যে কোন সময় ইসরায়েল হামলা করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব উৎকণ্ঠিত। এক অস্থির যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে পুরো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জানিয়েছে, ইরানের আক্রমণের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের ভূখণ্ড তারা ব্যবহার করতে দেবে না। সব কিছু মিলিয়ে একটি বিভাজন এবং বৈরি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে অবাক করার ব্যাপার হলো এই বৈরি পরিবেশে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একজন উদার নৈতিক নেতা নেই যিনি এই পরিস্থিতিতে সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। আর এরকম শূন্যতার মধ্যে শেখ হাসিনাই হতে পারেন আলোকবর্তিকা।