২৬ জানুয়ারি ১৯৭২। ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দিল্লিতে গেলেন সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেন বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট ম্যাকনামারা। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য তাজউদ্দীন আহমদ যে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে পছন্দ করতেন না, তা ভারত সরকার খুব ভালো করেই জানত। তাই অনুষ্ঠানের আসনবিন্যাসে রবার্ট ম্যাকনামারার পাশেই তাজউদ্দীন আহমদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পুরো অনুষ্ঠানে তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একটি কথাও বলেননি। এমনকি তাঁর দিকে ফিরেও তাকাননি। ম্যাকনামারা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর দিকে তাকিয়েছেন। কিন্তু সাড়া পাননি। এর কদিন পরই (৩১ জানুয়ারি) ম্যাকনামারা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসেন। অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিলেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টকে বিমানবন্দরে গিয়ে তাঁরই রিসিভ করা উচিত। বঙ্গবন্ধু ডেকে পাঠালেন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে। তাজউদ্দীন আহমদ যুক্তি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিমানবন্দরে যাওয়া বন্ধ করলেন। এমনকি রবার্ট ম্যাকনামারাকে স্বাগত জানাতে নিজেও গেলেন না বিমানবন্দরে। শেষ পর্যন্ত পাঠানো হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠকটিও ছিল বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিরোধিতার মধুর প্রতিশোধ। বৈঠকে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জানতে চাইলেন বাংলাদেশের জন্য কোথায়, কী ধরনের সাহায্য দরকার। জবাবে তাজউদ্দীন আহমদ বললেন ‘আমাদের যা দরকার তা আপনি দিতে পারবেন কি না আমার সন্দেহ আছে।’ ম্যাকনামারা বললেন, ‘মিস্টার মিনিস্টার, আপনি বলুন আমরা চেষ্টা করব।’ উত্তরে তাজউদ্দীন বললেন, ‘মিস্টার ম্যাকনামারা, আমার গরু এবং দড়ি দরকার। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক গরু হারিয়ে গেছে। এখানে ওখানে চলে গেছে। হারিয়ে গেছে, মরে গেছে। এখন যুদ্ধ শেষ, চাষিরা গ্রামে ফিরেছে। কিন্তু গরু নেই। তারা চাষ করবে কীভাবে? কাজেই আমাদের অগ্রাধিকার চাহিদা হলো গরু।’ ম্যাকনামারার চোখমুখ লাল হয়ে গেল। এবার বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন। বললেন, ‘আর আমাদের সব দড়ি তো পাকিস্তানিরা নষ্ট করে ফেলেছে। এখন গরু বাঁধার জন্য দড়ি প্রয়োজন।’ অর্থমন্ত্রী বললেন, ‘দড়ি এবং গরু খুব তাড়াতাড়ি প্রয়োজন। না হলে সামনে জমিতে চাষ হবে না।’ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সামনে এভাবেই সদ্যস্বাধীন দেশের আত্মমর্যাদার প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। (তথ্যসূত্র : তাজউদ্দীন আহমদ-আলোকের অনন্তধারা প্রথম খন্ড)
অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদের ব্যক্তিত্ব এবং দৃঢ়তায় বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল জানা যায়নি। তবে কাজ দিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বুঝিয়ে দেন ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকার জন্য তিনি অনুতপ্ত। তাজউদ্দীন আহমদ জানতেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা লাগবেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আন্তর্জাতিক সাহায্য উপেক্ষা করা যাবে না। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের কাছে ঋণ নিতে গিয়ে তিনি হাত পাতেননি। বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দেননি। বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টও বুঝেছেন বাংলাদেশ নতজানু হওয়ার দেশ নয়। ম্যাকনামারার সফরের ছয় মাসের মধ্যেই ১৯৭২ সালের ১৭ আগস্ট বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের ১১৭তম সদস্য হয়। সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তির দরজা উন্মুক্ত হয় ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) ১০৮তম সদস্য হওয়ার মধ্য দিয়ে। সদস্য হওয়ার তিন মাসের মধ্যেই ১৯৭২ সালের ২৪ নভেম্বর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে ৫ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা পায় বাংলাদেশ। এটি বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংকের প্রথম অর্থ ছাড়। এত দ্রুতগতিতে বিশ্বব্যাংক থেকে অন্য কোনো দেশ ঋণ পায়নি।
’৭২-এ বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের ওপর যে মধুর প্রতিশোধ নিয়েছিলেন তা আবার দেখল বাংলাদেশ ১ মে, ২০২৩ সালে। আবারও প্রমাণ হলো, নতজানু হয়ে নয় বরং আত্মসম্মান দিয়েই দেশের স্বার্থ সবচেয়ে বেশি রক্ষা করা যায়। ’৭১-এর ভুলের জন্য অনুতপ্ত বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট দ্রুত ঋণ দেন বাংলাদেশকে। গরু আর দড়ির চাহিদার উপহাস হজম করেন আর ২০২৩ সালে পদ্মা সেতু নিয়ে অনুতপ্ত বিশ্বব্যাংক প্রধানমন্ত্রীকে ডেকে বাংলাদেশের উন্নয়নের স্তুতিগান গাইল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করা হলো। পদ্মা সেতুর চিত্রকর্ম গ্রহণ করলেন বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বিবর্ণ হাসিতে।
বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যে সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন, তা ৫০ বছর অতিক্রম করেছে নানা চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা ঘটেছে ২০১২ সালে। কথিত দুর্নীতির অভিযোগে সে বছর ২৯ জুন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক। এরপর তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে দেনদরবার করেন। ঋণ দিতে বিশ্বব্যাংক বেশ কিছু শর্ত দেয়। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শর্ত সাপেক্ষে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। কিন্তু এর পরই শুরু হয় চরিত্রহননের ষড়যন্ত্র। দুর্নীতি দমন কমিশনের কাঁধে বন্দুক রেখে বিশ্বব্যাংকের মনোবাসনা পূরণের মিশনে নামেন সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তখন ছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সদস্য। সরকারের একজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রাতরাশের দাওয়াত পান এই বীর মুক্তিযোদ্ধাও। তবে তাঁকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল সবার শেষে। তার আগেই দুদকের চেয়ারম্যান এবং অন্য কমিশনাররা মন্ত্রী ও উপদেষ্টার আমন্ত্রণে আপ্যায়িত হন। তাঁদের বলা হয়, সেতুমন্ত্রী (সৈয়দ আবুল হোসেন)-কে গ্রেফতার করতে হবে। হাতকড়া পরাতে হবে। টেন্ডার কমিটির সবাইকে গ্রেফতার করতে হবে। রিমান্ডে নিতে হবে। এদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে স্বীকারোক্তি আদায় করতে হবে। তা হলেই পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের কাক্সিক্ষত ঋণ পাওয়া যাবে। এ যেন ১৫ আগস্টের মতোই আরেক ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধু পরিবারকে কলুষিত করার আরেক নোংরা খেলা। মো. সাহাবুদ্দিন ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের বাকিরা রাজি হয়ে যান এ প্রস্তাবে। কিন্তু মো. সাহাবুদ্দিন আইনের মানুষ। বিচারক ছিলেন। তিনি সরকারের দুই প্রভাবশালীকে সাফ জানিয়ে দেন, আইনের বাইরে কিছুই করবেন না। এরপর বিশ্বব্যাংকের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসে। দুদকের সঙ্গে বৈঠকে বসে। একাই লড়াই করেন মো. সাহাবুদ্দিন। বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিরা যুক্তিতে হেরে যান। ফলে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তথ্যপ্রমাণ না থাকায় দুদক বিশ্বব্যাংকের নির্দেশ প্রতিপালনে অস্বীকৃতি জানায় মূলত মো. সাহাবুদ্দিনের অনড় দৃঢ় অবস্থানের কারণেই। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর ঘোষণা দেন। এ ঘোষণা ছিল আবেগের, আনন্দের। কিন্তু বাস্তবে এটি ছিল এক অভাবনীয় চ্যালেঞ্জের। অসম্ভবকে সম্ভব করার এক দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশ হারে না। শেখ হাসিনাও হারেননি। পদ্মা সেতু আজ বাস্তবতা। বাংলাদেশের সক্ষমতা এবং গৌরবের প্রতীক। আমাদের আত্মমর্যাদার স্মারক।
পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ যখন অর্ধেকের বেশি, তখন প্রথম সুখবর আসে কানাডা থেকে। পদ্মা সেতুর কল্পিত দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছিল কানাডার ফেডারেল আদালতে। কানাডার আদালত এ মামলার রায়ে পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতিকে কল্পকাহিনি হিসেবে আখ্যা দেন। আদালত দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে একে ‘আষাঢ়ে গল্প’ বলে মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনার সামনে পদ্মা সেতু নিয়ে দুটি চ্যালেঞ্জ ছিল। প্রথমত, পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি এটা প্রমাণ করা। দ্বিতীয়ত, নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ। প্রথম চ্যালেঞ্জে শেখ হাসিনা জয়ী হন, পদ্মা সেতু নির্মাণ সমাপ্তির আগেই। আর পদ্মা সেতু নির্মাণের পর তিনি বিশ্বব্যাংকের অপমানের মধুর প্রতিশোধ নিলেন ১ মে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এবং তাজউদ্দীন আহমদের অনুসৃত তিনি অনুসরণ করেছেন। তিনি যেমন বাংলাদেশের মর্যাদার সুরক্ষা করেছেন, বিশ্বব্যাংকের অন্যায় অভিযোগ মানেননি; ঠিক তেমনি সম্পর্ক এগিয়েও নিয়ে গেছেন। ওয়াশিংটনে অবস্থানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার শতরূপা বড়ুয়াকে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংক প্রসঙ্গে বেশ কিছু খোলামেলা কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের কাছে আমরা ভিক্ষা বা খয়রাত নিই না। ঋণ নিই। এ ঋণের টাকা আমরা সুদসহ পরিশোধ করি। ওই সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক যখন দুর্নীতির অভিযোগ আনে, তখন ওই অভিযোগটা আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম।’ তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ আমি গ্রহণ করিনি। নীতিগতভাবে আমি গ্রহণ করতে পারি না। আমি তখন বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ দিলাম, আমাকে প্রমাণ দিতে হবে যে দুর্নীতি হয়েছে। তারা অনেক চেষ্টা করেও সেটা প্রমাণ করতে পারেনি।’ একই বক্তব্য সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানেও দেন শেখ হাসিনা। সাধারণ মানের রাজনীতিবিদ হলে এখান থেকেই হয়তো বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটত। বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেওয়াও সস্তা আবেগে বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক। তাঁর রাজনৈতিক কৌশল ভিন্ন। তিনি বিশ্বব্যাংককে ভুল প্রমাণ করে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বব্যাংকের কাছে সম্মান এবং সমীহ আদায় করে ৫০ বছরের সম্পর্ক উৎসবকে রঙিন করে তুললেন। মাথা উঁচু করে এ সম্পর্কের ধারা এবং নীতি শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আমরা আস্তে আস্তে নতজানু নীতি গ্রহণ করি। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফকে আমরা প্রভু ভাবতে শুরু করি। জনসম্পৃক্তহীন সরকারগুলো ঋণনির্ভর এক অর্থনীতির অন্ধকার গহ্বরে বাংলাদেশকে নিয়ে যায়। সামরিক একনায়করা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ দাতাদের একান্ত অনুগত ব্যক্তিদের অর্থমন্ত্রী বা অর্থ উপদেষ্টা বানানো শুরু করেন। জনগণের কাছে নয় বরং বার্ষিক ভিত্তিতে দাতাদের কাছে জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু হয়। দাতাদের কনসোর্টিয়াম তৈরি করা হয়। সেখানে বার্ষিক সভায় একান্ত ভৃত্যের মতো আমাদের অর্থমন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত হওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। দাতাদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে করজোড়ে ক্ষমা ভিক্ষা করতেন আমাদের কর্তারা। কতটা নতজানু হলো তার ওপর নির্ভর করত ভিক্ষা কতটুক জুটবে। এই ভিক্ষার টাকা না এলে বাজেট করতে পারত না বাংলাদেশ। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাংকসহ দাতা দেশ ও সংস্থাগুলো কী আচরণ করত বোঝার জন্য ড. আকবর আলি খানের ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ গ্রন্থে ‘মোল্লা নস্্রুদ্দীনের অর্থনীতি’ শিরোনামে প্রবন্ধের খানিকটা স্মরণ করা যেতে পারে। ‘মোল্লা বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল না দেখলেও অনেক মহাজন দেখেছেন। মহাজনদের আচরণ জানতে পারলেই এ দুটো প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি আঁচ করা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে মোল্লার একটি কাহিনি মনে পড়ছে। কথিত আছে মোল্লা নস্্রুদ্দীনের একটি হাতি দেখে খুবই পছন্দ হয়। তিনি হাতিটি কেনার অর্থ সংগ্রহের জন্য মহাজনের দোরে গিয়ে হাজির হলেন। মোল্লা মহাজনকে বললেন, আমাকে কিছু টাকা ধার দিন। মহাজন বললেন, কেন? মোল্লা জবাব দিলেন, আমি একটি হাতি কিনতে চাই। মহাজন প্রশ্ন করলেন, তোমার যদি টাকা না থাকে তুমি হাতি পালবে কী করে? মোল্লা আক্ষেপ করে বললেন, আমি আপনার কাছে টাকার জন্য এসেছি, উপদেশের জন্য নয়।’
মোল্লা মহাজনের কাছে আক্ষেপ করতে পারতেন। কিন্তু নব্য মহাজন বিশ্বব্যাংক বা দাতা সংস্থার কাছে অগণতান্ত্রিক সরকারগুলো আক্ষেপ করতেও ভয় পেত। পাছে সাহায্য বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হতো দাতাদের নির্দেশে। জনগণের চাহিদার কথা বিবেচনা করে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হতো না। উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হতো দাতাদের পছন্দে। ’৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত দাতাদের সহযোগিতায় গৃহীত প্রকল্পের অধিকাংশই জনবিচ্ছিন্ন। এসব প্রকল্পে জনগণের উপকার হয়েছে সামান্যই। অবশ্য আমলা ও লুটেরা রাজনীতিবিদদের পকেট ভর্তি হয়েছে ভালোভাবেই। এ সময় বাড়তে থাকে শর্তের পরিধিও। ড. আলি তাঁর ‘মোল্লা নস্রুদ্দীনের অর্থনীতি’ নিবন্ধে এই শর্তের বেড়াজাল উল্লেখ করেছেন এভাবে : ‘আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো একটি নতুন দাওয়াই আবিষ্কার করেছে। তারা এর নাম দিয়েছে প্রাক-কর্মসূচি শর্তনির্ভরশীলতা (upfront conditionality) অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মত কর্মসূচি গ্রহণের আগেই এ ধরনের শর্ত পালন করতে হয়। অবশ্য এ ধরনের শর্তনির্ভরশীলতা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবিষ্কার করেনি। এ ধরনের ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই মোল্লা সাহেব চিন্তা করে গেছেন। মোল্লা একবার একটি ছোট ছেলেকে একটি পাত্রে কুয়ো থেকে পানি তুলে আনতে বলেন। ছেলেটির হাতে পাত্রটি তুলে তিনি চিৎকার করে বললেন, খেয়াল রেখো পাত্রটি যাতে কোনোমতেই না ভাঙে’ এবং তার পরই ছেলেটিকে থাপ্পড় মারলেন। ঘটনার সময় অন্য এক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তিনি মোল্লার কাছে জানতে চাইলেন, মোল্লা কেন বিনা কারণে ছেলেটিকে আঘাত করলেন। মোল্লা বললেন, আহাম্মক, তুমি বুঝতে পারছ না, পাত্রটি ভাঙার পর ছেলেটিকে শাস্তি দিয়ে কোনো লাভ হবে না। কাজেই আগে শাস্তি দিলাম।’ মোল্লার মতো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পাত্র ভাঙার জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয়, তারা আগেই স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় খেয়ে খেয়েই ক্ষমতায় থাকার নিরন্তর চেষ্টায় সবকিছু বিসর্জনের ধারা চলে সামরিক জান্তাদের শাসনামলে। শুধু অর্থনীতি নয়, রাজনীতিরও নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠে দাতারা। কৃষিতে ভর্তুকি দেওয়া যাবে না, আদমজী পাটকল বন্ধ করে দিতে হবে, এ ধরনের দাতা নির্দেশনা মানতে বাধ্য হন সরকারপ্রধানরা। না হলে গদি হারানোর ভয়। এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর বিশ্বব্যাংক কৃষিতে ভর্তুকি প্রত্যাহারের পরামর্শ দেয় নতুন সরকারকে। কিন্তু শেখ হাসিনা সেই পরামর্শ অগ্রাহ্য করেন। শুরু করেন কৃষি ভর্তুকি। সেই ভর্তুকির কারণেই আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শেখ হাসিনা বুঝতে পেরেছিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে, ততদিন দাতাদের খবরদারি উপেক্ষা করা যাবে না। তাই তিনি স্বনির্ভর অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দেন। বাজেটে বিদেশি সহায়তা ও ঋণ হ্রাসের জন্য কাজ শুরু করেন। ২০০৯ থেকে ধাপে ধাপে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট প্রণয়নের দিকে এগিয়েছে। ফলে এখন দাতাদের আর প্রভু মনে করা হয় না। তবে বাংলাদেশের আত্মমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার টার্নিং পয়েন্ট পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থ ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস সঞ্চালিত হয়েছে সর্বত্র। পদ্মা সেতুর ঘটনার আগে বিশ্বব্যাংক এবং দাতাদের ভয় সরকারের সর্বত্র ছিল। আমার মনে আছে, ২০০৯ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলেন বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্তরের একজন পরামর্শক। তিনি বাঙালি। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে তাঁর আগমন উপলক্ষে সাজসাজ রব। আতঙ্কে স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নালিশ করলেন। মন্ত্রণালয় মুহূর্তের মধ্যে তাদের ওএসডি করল। বিশ্বব্যাংকের ওই কর্মকর্তা যেন মন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবান। পদ্মা সেতুর ঘটনার পর সম্পূর্ণ বিপরীত দৃশ্য দেখলাম একই মন্ত্রণালয়ে। করোনা মোকাবিলায় সীমাহীন ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যাপক পরিবর্তন আনেন। বিতর্কিত সচিবকে বাদ দিয়ে নতুন সচিব করা হয় মো. আবদুল মান্নানকে। তাঁর কক্ষে একদিন হঠাৎ উঁকি মারতেই দেখি বিশ্বব্যাংকের কয়েকজন প্রতিনিধি। সঙ্গে সেই পরামর্শক যাকে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রীতিমতো আতঙ্কে থাকত। গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ভেবে আমি বেরিয়ে যাচ্ছি, এ সময় সচিব নিজেই আমাকে ডাকলেন। সোফায় বসতে বললেন। শুনলাম স্বাস্থ্যসেবা সচিবের কণ্ঠে শেখ হাসিনার কণ্ঠের প্রতিধ্বনি। তিনি বলছিলেন, ‘বিশ্বব্যাংক আমাদের উন্নয়ন অংশীদার। আপনাদের প্রস্তাব যদি দেশের স্বার্থে হয় আমরা বিবেচনা করব। দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে হলে আমরা দুঃখিত।’
২০১৮ সালে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে সবচেয়ে বড় ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে বিশ্বব্যাংক। ‘লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে। এ প্রকল্পের উদ্যোক্তা ডা. গোলাম রব্বানী। মেধাবী, পরিশ্রমী দেশপ্রেমিক একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি এ প্রকল্পের মুখ্য কারিগরি কর্মকর্তা। তিনি আমাকে বলছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সাহসের পরিধি বাড়িয়েছেন। এখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে তারা কিছু চাপিয়ে দিলে আমরা তাদের পদ্মা সেতুর কথা বলি।’ দাতারা প্রভু নয় পার্টনার। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে এ উপলব্ধি নতুন করে শিখিয়েছে। আর বিশ্বব্যাংকের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাসকে পদ্মা সেতুর ছবি উপহার দিয়ে শেখ হাসিনা সমমর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করলেন। যে সমমর্যাদা ও আত্মসম্মানের সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
আরও পড়ুন: কুড়ি বছর পর আবারো আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভক্ত, কোন্দলে
জর্জরিত আওয়ামী লীগ দল গোছাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে একটি ছিল উপজেলা নির্বাচনে
দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি মন্ত্রী-এমপির
স্বজনদের উপজেলায় প্রার্থী না করার আহ্বান জানায়; কিন্তু দলের ওই নির্দেশনা মানেননি
অনেকেই। যেসব মন্ত্রী, এমপির স্বজনরা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউই
মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা
ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সারা দেশে আওয়ামী
লীগের তৃণমূলের দৃষ্টি সেদিন ছিল গণভবনে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত গণভবনে
বৈঠকে উপজেলা প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, সাংগঠনিক বিষয় নিয়েই কোনো আলোচনা হয়নি। বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। একজন সংবাদকর্মী
প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার
মর্মার্থ হলো, এখনই চটজলদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আওয়ামী
লীগ কোনো শাস্তির সিদ্ধান্তই চটজলদি নেয় না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তা অনুমোদন করে
না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কোনো নেতাকর্মী সংগঠনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে
প্রথমে তাদের কারণ দর্শানো হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে
সবকিছু পর্যালোচনা করে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু বিএনপিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় এক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবে, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে। কয়েক বছর ধরেই বিএনপি শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। উপজেলা নির্বাচনেও প্রথম দফায় ৭৩ জন, পরবর্তী সময়ে আরও ৬০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। কিন্তু শাস্তি প্রদানের একটি প্রক্রিয়া থাকা দরকার। সবার সামনে খুন করলেও, পুলিশ যদি অপরাধী ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গুলি করে, সেটা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এটাকে অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থেকে বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার।
আরও পড়ুন: আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার
কিন্তু দলেই প্রতিনিয়ত বিচারহীনতার
সংস্কৃতি লালন করা হচ্ছে। যে কোনো অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ
করা উচিত। কিন্তু বিএনপি কিছুদিন ধরে যে গণবহিষ্কারের উৎসব করছে, তা কি আইনি প্রক্রিয়া
অনুসরণ করে? যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের কি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল? তারা
কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছেন? কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থায়ী কমিটিতে কি গোটা বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা হয়েছে? উপজেলায় যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের কাউকে ন্যূনতম আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ দেওয়া হয়নি। দপ্তর থেকে সেসব হতভাগাকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি
একটি গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেমন গর্হিত, অনাকাঙ্ক্ষিত,
ঠিক তেমনি এই বহিষ্কার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। অথচ দলের ভেতর চলছে অগণতান্ত্রিক
কার্যক্রম। বিএনপির জন্য অবশ্য ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভ্যাস জন্মগত।
ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। তিনি
অবৈধ প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরপর যারা তার জন্য ন্যূনতম
হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতো, তাদের বিচার ছাড়াই জিয়া নির্মমভাবে হত্যা করতেন। কেন্দ্রীয়
কারাগারে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ সৈনিককে। যুদ্ধাহত
মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) তাহেরকে এরকম বিচারের নামে প্রহসন করেই হত্যা করা হয়েছিল।
কাজেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। জিয়ার মৃত্যুর পর
বেগম জিয়া এবং এখন তারেক জিয়াও সেই চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
গণতান্ত্রিক চিন্তা থেকে দেখলে, বিএনপির গণবহিষ্কার সমর্থন যোগ্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এটি করতে পারে না। আওয়ামী লীগ যেভাবে একজন নেতা বা কর্মীকে শাস্তি দেয়; সেটিই সঠিক। কিন্তু এর বিপরীতে কোন ব্যবস্থা বেশি কার্যকর, দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে পারে; সে তর্ক হতেই পারে। বিএনপির এক নেতা বলেছিলেন, দলে শৃঙ্খলা রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে অন্যরা শিক্ষা পাবে। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহস পাবে না। এ কঠোর অবস্থান নাকি দলকে শক্তিশালী করবে। সত্যি কি তাই? এর জবাব পাওয়া যায় ১ মে প্রকাশিত ‘দৈনিক কালবেলায়’। ‘বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—‘বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে।’ কী তাজ্জব কথা! রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শুনেছি, কমিটি ও পদ-বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বিএনপি এখন রাজনীতিতে ‘বহিষ্কার বাণিজ্য’ শুরু করল। নেতাদের অভিনব উপার্জনের এই পথ আবিষ্কারের জন্য দলটির শীর্ষ নেতাকে পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। অতীতে এরকম অনেক নেতাকে দেখা গেছে, যারা দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাদের দলে মহাসমারোহে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি কখন বিএনপিতে থাকেন আর কখন বহিষ্কৃত হন, সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কথাই ধরা যাক। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারালেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন।
আরও পড়ুন: আদর্শবানরা ক্ষমতায় বিনয়ী হন, অযোগ্যরা বদলে যায়
কিন্তু ২০০১ সালে আবার বীরদর্পে ফিরে
আসেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নানা বাণিজ্যে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এক-এগারোর
সময় বিএনপিতে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র প্রয়াত আবদুল মান্নান
ছাড়া সবাই বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। দুষ্ট লোকেরা বলে, মান্নান ভূঁইয়া বেঁচে থাকলে তিনিও
আবার বিএনপিতে ফেরত আসতেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা অলি আহমদদের মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন
নেতারা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে বিএনপিতে ফেরত যাননি; কিন্তু তাদের দলে ফেরাতে কম চেষ্টা
হয়নি। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপিতে ‘বহিষ্কার’ আর ‘সাধারণ ক্ষমা’র লুকোচুরি খেলা চলছে।
এ যেন শুধু যাওয়া-আসার খেলা। কে কখন দল থেকে ছাঁটাই হচ্ছেন, কে দলে ফিরছেন, কেউ জানেন
না। একই অপরাধের জন্য একজনকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। দলের
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যখন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির স্থানীয় নেতাদের
বহিষ্কার করা হচ্ছে, তখন একই অপরাধে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দেওয়া হচ্ছে
পুরস্কার। বিএনপিতে গঠনতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে দল।
যার ফলে সংগঠনে অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং হতাশা দানা বেঁধেছে। চরম পন্থা যে একটি রাজনৈতিক
দলের সাংগঠনিক শক্তিকে ক্ষয় করে বিএনপি তার প্রমাণ। বিএনপিতে মৃত্যুদণ্ড তাই ক্রমেই
অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বহিষ্কার’ অস্ত্র ব্যবহার করে কদাচিৎ। লতিফ সিদ্দিকীর মতো গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অপরাধ না করলে, আওয়ামী লীগ এই চরম শাস্তি প্রয়োগ করে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা কাপুরুষতা করে অথবা লোভে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল, শেখ হাসিনা ফিরে এসে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি। দলে তাদের ধীরে ধীরে অপাঙক্তেয় করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আবদুল মান্নান কিংবা মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। এক-এগারোতে যারা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেছিল, তাদের বিএনপি স্টাইলে গণবহিষ্কার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট যে চার নেতা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাদের ২০০৯ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জাঁদরেল নেতারা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আলংকারিক পদে জায়গা পেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন। প্রয়াত মুকুল বোস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো তারকা নেতাদের বহিষ্কার না করে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। তাদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। দলে থেকেও তারা গুরুত্বহীন, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হন। কর্মীদের উপেক্ষা আর টিপ্পনী সহ্য করে তাদের দল করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে তারা অপমানিত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিল তিল করে তাদের সাজা দেওয়া হয়। এই শাস্তি সহ্য করতে না পেরে মান্না, সুলতান মনসুর, আবু সাইয়িদের মতো নেতারা দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগের পর তারা রীতিমতো রাজনৈতিক উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। আওয়ামী লীগের প্রায়শ্চিত্ত নানা মেয়াদে। অপরাধের গুরুত্ব এবং মাত্রা বিবেচনা করে প্রায়শ্চিত্তের সময় নির্ধারণ করা হয়। অনেককে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন প্রয়াত মুকুল বোসের প্রায়শ্চিত্তকালীন সময় শেষ হলে, তাকে উপদেষ্টা পরিষদে ফিরিয়ে আনা হয়। লঘু অপরাধে অনুশোচনার শাস্তি ভোগ করা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এখন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আবার সাবের হোসেন চৌধুরী প্রায়শ্চিত্ত শেষ করে এখন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
২০০৯ সালে মনোনয়ন না পাওয়া প্রয়াত খ
ম জাহাঙ্গীর পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্তির
কয়েকটি তাৎপর্য আছে। প্রথমত, এই শাস্তির ফলে নেতাদের আত্মোপলব্ধির সুযোগ বটে। তারা
তাদের ভুল এবং বিভ্রান্তি উপলব্ধির সুযোগ পান। ফলে তারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের
শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, এর ফলে দলের অন্য নেতারা একটি সতর্ক সংকেত পান।
চূড়ান্ত সুবিধাবাদ এবং আদর্শহীনতা একজন রাজনৈতিক নেতার ক্যারিয়ার কীভাবে গিলে খায়,
তার উদাহরণ সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চর্চা হয়। অন্য কেউ দলের এবং নেতৃত্বের
বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের পরিণাম উপলব্ধি করেন। তৃতীয়ত, এর ফলে দলের প্রধান নেতার প্রতি
নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সাজার কৌশলের পার্থক্য দল
দুটির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগে কোন্দল আছে, আতঙ্ক নেই।
দলে দ্বন্দ্ব, বিভক্তি আছে, কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই।
সুবিধাবাদী আছে, আদর্শহীনতা আছে; কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি নেই। প্রতিপক্ষ
হীন রাজনীতির মাঠে ‘কোন্দল’ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তৎপর রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপির
চরম শাস্তির কৌশল নেতাকর্মীদের আতঙ্কের ঘরে বন্দি করেছে। সারা জীবন দলের জন্য অবদান
একটি ভুলে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দলে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মতো। দলে সবাই
কুণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। গণতন্ত্র চর্চার বদলে ষড়যন্ত্র
ডালপালা মেলেছে। যোগ্যতার বদলে চাটুকারিতা, তোষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে
বিএনপি সংগঠনটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে।
শুধু রাজনীতি নয়, কোনো ক্ষেত্রেই চরম শাস্তি সমাধান নয়। আর সেই শাস্তি যদি উপযুক্ত বিচার ছাড়াই হয়; তাহলে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, ঠিক একই কারণে, একটি ভুলেই দল থেকে বহিষ্কার মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল। গণতান্ত্রিক ধারা বিশ্বাস করলে চরম অপরাধীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তার কথাও শুনতে হবে। একটি গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট কায়দায় চলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
দেশের মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস অবস্থা। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ সংকটে চেয়েও বড় অস্থিরতা হলো জিনিস পত্রের দাম। অস্থির সময়ে মানুষের জন্য বিনোদনের কোন খোরাক নেই। তবে প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল মানুষের জন্য অস্বস্তির তাপদাহে এক পশলা বৃষ্টির মতো, বিনোদনের খোরাক যোগালেন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯ টি উপজেলার নির্বাচনের পর সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘ধান কাটার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে আসেননি।’ নিষ্প্রাণ উপজেলা নির্বাচনে সিইসির বক্তব্যই একমাত্র চমক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। নানা কারণে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে অত্যন্ত আলোচিত একটি নাম। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তাঁর তৎপরতা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি একাধিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাঁর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং বেশ কিছু কথাবার্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন।