২৮
জুলাই ভারতে মুক্তি পেয়েছে মসলা মুভি ‘রকি
অউর রানি প্রেম কাহানি’। করণ জোহর
পরিচালিত এ ছবিটি মুক্তির
আগেই সাড়া ফেলেছে, একটি
সংলাপের জন্য। ছবিতে অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। তার মুখ
দিয়ে উচ্চারিত হয়েছে ‘খেলা হবে’।
পশ্চিম বাংলার গত নির্বাচনের কল্যাণে
‘খেলা হবে’ ভারতজুড়ে ব্যাপক
জনপ্রিয়তা পায়। ওই নির্বাচনে
মমতা ব্যানার্জি এ শব্দ দুটিকে
রীতিমতো টাইটেল স্লোগান বানিয়ে ফেলেন। ‘খেলা হবে’ আওয়াজ
তুলে নির্বাচনী খেলায় তিনি বাজিমাত করেন।
‘রকি অউর রানি প্রেম
কাহানি’ নিয়ে আলোচনার অন্যতম
কারণ ‘খেলা হবে’।
সেন্সরের কাঁচি থেকে শব্দযুগল বাদ
পড়েছে কি না, তাই
নিয়ে মিডিয়ায় হৈচৈ। বলিউড সিনেমার কল্যাণে এ ‘স্লোগান’ আন্তর্জাতিক
স্বীকৃতি পাবে। সামনে নিশ্চয়ই হলিউডেও কোনো নির্মাতা ‘খেলা
হবে’ জুড়ে দেবেন কারও
সংলাপে। ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি
মমতা ব্যানার্জির মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত। তবে এ স্লোগানটির
আবিষ্কারক বাংলাদেশের আলোচিত রাজনীতিবিদ শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের এ নেতাই প্রথম
জামায়াত এবং বিএনপির বিরুদ্ধে
‘খেলা হবে’ বলে ঘোষণা
দিয়েছিলেন। তবে মমতা যেমন
নির্বাচনে খেলা দেখিয়ে দিয়েছেন,
শামীম ওসমানের ‘খেলা হবে’ শুধু
হুঙ্কারই থেকেছে, বাস্তবে খেলা হয়নি। পশ্চিম
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূমিধস
বিজয়ের পর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে
জনপ্রিয় হয় ‘খেলা হবে’। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের নেতারাই
‘খেলা হবে’ বলে চ্যালেঞ্জ
জুড়ে দেন, প্রতিপক্ষকে। ২৮
জুলাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
যেমন এ স্লোগান দিয়ে
বিএনপিকে সতর্ক করেছেন। তেমনি বিএনপিরও বেশ কজন নেতা
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে এ শব্দযুগল ব্যবহার
করেছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, রাজনীতি যদি খেলা হয়,
তাহলে এটা কোন খেলা?
ভারতের কিংবদন্তি নেতা, প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু রাজনৈতিক কৌশলকে ‘দাবা’র চালের
সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। সম্প্রতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতিকে ‘ডার্টি গেম’ (নোংরা খেলা) হিসেবে অভিহিত করেছেন। আফ্রিকার মুক্তির মহান নেতা নেলসন
ম্যান্ডেলা অবশ্য রাজনীতিকে খেলার সঙ্গে তুলনার ঘোরতর বিরোধী ছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘রাজনীতি
কোনো খেলা নয়, রাজনীতি
মানুষের মুক্তির পথ।’ কিন্তু বাংলাদেশে
প্রধান দুটি দল রাজনীতিকে
রীতিমতো ‘খেলা’ বানিয়ে ফেলেছে। ২৯ জুলাই ঢাকার
বিভিন্ন পয়েন্টে বিএনপির তাণ্ডব, আগুন সন্ত্রাসের পর
জনমনে আতঙ্ক। খেলা কি তাহলে
শুরু হয়ে গেল? আওয়ামী
লীগ-বিএনপির খেলার নাম কী? প্রধান
দুটি রাজনৈতিক দল এখন যে
খেলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তা ‘স্কুইড গেমে’র সঙ্গে তুলনীয়।
বছর দুই আগে ‘স্কুইড
গেম’ ‘নেটফ্লিক্স’ প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পেয়ে সারা বিশ্বে
হৈচৈ ফেলে। বিশ্বেও অন্যতম প্রশংসিত এবং জনপ্রিয় ‘ড্রামা
সিরিয়াল’ হিসেবে পরিচিতি পায় দক্ষিণ কোরিয়ায়
নির্মিত এ সিরিজটি। মূলত
এটি দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় শিশুতোষ খেলা। কিন্তু নির্মাতা এ খেলার এক
ভয়ংকর রূপ দেন জনপ্রিয়
সিরিজে। ‘স্কুইড গেম’-এর মূল
উপজীব্য হলো ‘মরো অথবা
মারো’। জীবনের বিভিন্ন
ক্ষেত্রে ব্যর্থ, হতাশ, ঋণগ্রস্ত কিছু মানুষের একত্রিত
করা হয় একটি খেলার
জন্য। মোট ৪৬৫ জন
অংশ নেয়। যিনি চূড়ান্তভাবে
বিজয়ী হবেন, তিনি পাবেন বিপুল
অর্থ (৪৫ বিলিয়ন ডলার)। এ বিপুল
অর্থ তার সব ঋণ,
হতাশা দূর করে দেবে।
তিনি পাবেন নতুন জীবন। কিন্তু
এ বিপুল অর্থ জয় করতে
তাকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিতে হবে। খেলার
প্রতি পর্বে যারা হারবে, তাদের
শাস্তি মৃত্যু। এভাবে প্রতি পর্বে খেলা গড়ায়। শেষ
পর্বে যিনি জিতবেন তিনি
পুরস্কার পাবেন। আর পরাজিতের জন্য
মৃত্যু। বাংলাদেশে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল
কি এখন সেই খেলার
দিকে এগিয়ে যাচ্ছে? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য সাফ বলে দিয়েছেন—“আমাদের জন্য এই আন্দোলন
‘ডু অর ডাই’।
হয় জিতব না হয়
মরব।” আওয়ামী লীগ সভাপতিও দলের
নেতাকর্মীদের বারবার সতর্ক করছেন। দলের ঐক্যের ওপর
গুরুত্ব দিচ্ছেন। বললেন, ‘ঐক্যবদ্ধ না থাকলে আবার
বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগকে কচুকাটা করবে।’ অর্থাৎ এ আন্দোলনে (খেলায়)
যারা হারবে তাদের মৃত্যু অনিবার্য। বাংলাদেশে ‘প্রতিহিংসার’ রাজনীতির রূপ যে কী
ভয়ংকর, তা আমরা ১৯৭৫-এ দেখেছি। ২০০১
ও ’০৪ সালেও দেখেছি।
১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে
থাকা বিএনপির পক্ষ থেকে বলা
হচ্ছে, তারা কোনো প্রতিশোধ
নেবে না। প্রতিহিংসার রাজনৈতিক
সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে।
কিন্তু ক্ষমতায় গেলে বিএনপি যে
কী ভয়ংকর হতে পারে, তা
জাতি ২০০১ থেকে ২০০৬
সাল পর্যন্ত দেখেছে। ২০০১ সালে অক্টোবর
নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয় বিএনপি-জামায়াত জোট। ভোটে যখন
তাদের বিজয় নিশ্চিত হয়,
তখন শুরু হয় তাণ্ডব।
সারা দেশে একযোগে বিএনপি
নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ
এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর। হত্যা, ধর্ষণ,
লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের এক পৈশাচিক উৎসব
শুরু হয় দেশজুড়ে। ধর্ষিতা
হন পূর্ণিমা, ফাহিমা, শেফালী রানী। পঙ্গু হন শতাধিক নিরীহ
মানুষ। শুধু নৌকায় ভোট
দেওয়ার জন্য প্রাণ দিতে
হয় বহু নিরীহ ভোটারকে।
মুহূর্তে সর্বস্ব হারিয়ে উদ্বাস্তু হন অনেকে। ১
অক্টোবর ২০০১ থেকে ১০
অক্টোবর পর্যন্ত দেশে কোনো আইন
ছিল না। ছিল না
বিচার। বিএনপির মূল লক্ষ্য ছিল
আওয়ামী লীগ এবং সংখ্যালঘু
সম্প্রদায়কে নিঃশেষ করে দেওয়া। এ
ধারা অব্যাহত ছিল বিএনপির ক্ষমতার
শেষ দিন পর্যন্ত। আজ
যখন বিএনপি নেতারা সুন্দর করে মিষ্টি মিষ্টি
কথা বলেন, তখন আমি অবাক।
বিএনপি নেতারা যদি ২০০১-এর
অক্টোবর সন্ত্রাসের জন্য অনুতপ্ত হতেন,
দুঃখ প্রকাশ করতেন, তাহলে দেশবাসী আশ্বস্ত হতো। তাদের মুখে
সুশীলদের শেখানো বুলি কিছুটা হলেও
বিশ্বাস করত। বিএনপি যদি
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড
হামলার জন্য জাতির কাছে
ক্ষমা চাইত, তাহলে দেশবাসী বিশ্বাস করত তাদের নেতারা
সত্য বলছেন। কিন্তু বিএনপির ভাষায় অনুতাপ নেই। অতীতের অপকর্মের
জন্য ক্ষমা প্রার্থনা তো দূরের কথা,
দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত নেই। তাই বিএনপি
যদি এই ‘স্কুইড গেমে’
জয়ী হয় তাহলে তারা
কী করবে, তা সহজেই অনুমান
করা যায়। এক লহমায়
রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে বাংলাদেশে।
গত
১৫ বছর আওয়ামী লীগ
সরকার পরিচালনা করছে। এ কথা অস্বীকার
করার কোনো কারণ নেই
যে, এ সময়ে বাংলাদেশ
পাল্টে গেছে। দৃশ্যমান উন্নয়ন বাংলাদেশকে এক নতুন পরিচয়ে
উদ্ভাসিত করেছে। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত হয়েছে অনেক। সব ক্ষেত্রে এগিয়ে
যাওয়া এ বাংলাদেশের রূপকার
শেখ হাসিনা। কিন্তু এই ১৫ বছরে
আওয়ামী লীগের মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি জনগণের
বিরক্তি এবং ক্ষোভের কারণ
হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে পারেনি
সরকার। অর্থ পাচার, ব্যাংক
লুট, খেলাপি ঋণ অর্থনীতিকে ঝুঁকির
মধ্যে ফেলেছে। আওয়ামী লীগে বিভিন্ন স্তরে
এমন কিছু নেতা গজিয়ে
উঠেছেন, যারা জনগণকে ‘ক্রীতদাস’
মনে করেন। নব্য এ আওয়ামী
প্রভুদের উৎপাত আজ দেশের বিভিন্ন
স্থানে। ২০১৪ ও ’১৮-এর নির্বাচনের পর
আওয়ামী লীগের অনেকের মধ্যেই জনগণকে উপেক্ষা করার এক উদ্বেগজনক
প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
মুষ্টিমেয় কিছু দুর্বৃত্ত, লুটেরার
দায় নিয়ে সমালোচিত হচ্ছে
সরকার এবং আওয়ামী লীগ।
ছাত্রলীগ, যুবলীগের কিছু ঘটনা জন-অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্যেও অসহনীয় ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরতে সরকার
ব্যর্থ হয়েছে। অর্থনীতিকে ফোকলা বানানো কিছু ব্যক্তি সরকারের
চারপাশে ঘুরঘুর করে। ১৫ বছরে
আমলারা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অস্তিত্বকে প্রায় গিলে খেয়েছে। ব্যবসায়ীরা
আওয়ামী লীগের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে
গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে।
কিন্তু এসব সমালোচনার পরও
দেশের জনগণ একজন মানুষের
ওপর এখনো আস্থাশীল। তার
নাম শেখ হাসিনা। এ
দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, শেখ
হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।
পার্থক্য এটুকুই।
বিএনপি
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল
পর্যন্ত ‘খাম্বা’র নামে বিদ্যুৎ
খাতে সহস্র কোটি টাকা লুট
করেছে। আওয়ামী লীগ আমলে ক্যাপাসিটি
চার্জের নামে লুট হয়েছে
হাজার কোটি টাকা। পার্থক্য
হলো, আওয়ামী লীগ শতভাগ মানুষের
কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। আর বিএনপি কোনো
বিদ্যুৎ উৎপাদনই করতে পারেনি। এরকম
তুলনামূলক চিত্র অনেক দেওয়া যায়।
কিন্তু সেটা যাচাই করার
দায়িত্ব আমার নয়। এটা
বিচার করবে জনগণ। জনগণই
সিদ্ধান্ত নেবে দেশ পরিচালনার
দায়িত্ব কাদের হাতে দেবে। জনগণের
মতামতই শেষ কথা। আর
জনগণের মতামত পাওয়ার একটাই উপায়—নির্বাচন। পল্টনে
মহাসমাবেশ করে, কিংবা বায়তুল
মোকাররমের দক্ষিণ গেটে তারুণ্যের শান্তি
সমাবেশ করে, জনমত যাচাই
হয় না। ঢাকার প্রবেশমুখে
অবস্থান কর্মসূচি পালন করে, শুধু
জনভোগান্তি হয়। যেমনটি হলো
গত শনিবার (২৯ জুলাই)।
বিএনপি ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচির
মাধ্যমে আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ পথ পরিত্যাগ করল।
আবার সংঘাত এবং সহিংসতার পথ
বেছে নিল। বিএনপির নেতারা
দাবি করছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনী বাধা দিয়েছে। কিন্তু
রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কী ধরনের কর্মসূচি?
এ কর্মসূচিটাই তো উসকানিমূলক। শনিবার
দেশের জনগণ আবার সন্ত্রাস,
অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের প্রত্যাবর্তন
দেখল। শনিবার ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যেভাবে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়তে দেখলাম, তাতে
প্রশ্ন উঠতেই পারে—বিএনপি কি
একটি নির্বাচন চায় নাকি অন্যকিছু?
২০১৮-এর নির্বাচন নিয়ে
অনেক প্রশ্ন আছে, এটি সত্যি।
কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপিও
তার অযোগ্যতা এবং ব্যর্থতার দায়
এড়াতে পারে কি? জনগণ
যদি স্বতঃস্ফূর্ত এবং ঐক্যবদ্ধ থাকে,
তাহলে কোনো শক্তিই নির্বাচনে
কারচুপি করতে পারে না।
তাছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এরই
মধ্যে একটি ‘আন্তর্জাতিক’ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। বিএনপি যদি এ নির্বাচনে
অংশ নেয়, তাহলে তা
কোনোভাবেই ২০১৪ কিংবা ২০১৮-এর মতো হবে
না। এটা বিএনপির নেতারাও
ভালো করে জানেন। তাহলে
কেন এ অস্থিরতা সৃষ্টির
চেষ্টা? এর পেছনে কি
অন্য কারও ইন্ধন আছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই আবার ‘স্কুইড গেম’ টিভি সিরিয়ালের
কথা মনে পড়ল। হতাশ,
জীবনযুদ্ধে পরাজিতদের নিয়ে এ ‘স্কুইড
গেমে’র আয়োজক এক
বিলিয়নিয়ার। যিনি নিজেও নানা
রোগে আক্রান্ত, নিশ্চিত মৃত্যু পথযাত্রী। নিজের হতাশা কাটাতেই তিনি এ প্রাণঘাতী
খেলার আয়োজন করেন। মানুষের হিংস্র চেহারাটা দেখে পৈশাচিক আনন্দ
পান। স্কুইড গেমে বিজয়ীর সঙ্গে
তার দেখা হয়, একদম
শেষে। বাংলাদেশে আবার যে স্কুইড
গেমের মতো ‘মরো অথবা
মারো’ খেলা শুরু হয়েছে,
তার নেপথ্যেও কি এরকম কোনো
প্রভাবশালী? এমন কোনো দেশ
যারা নিজেরাই সমস্যায় জরাজীর্ণ, রোগাক্রান্ত। যার প্রভাব প্রতিপত্তি
এবং ক্ষমতা আজ অস্তমিত। প্রাণঘাতী
এ খেলার মাধ্যমে কি কেউ এ
দেশের গণতন্ত্রকেই হত্যা করতে চায়? মরণ
খেলার মাধ্যমে নির্বাসনে পাঠাতে চায় গণতন্ত্রকে? বাংলাদেশে
যতবার অগণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় এসেছে, প্রতিবারই রাজনৈতিক শক্তির ব্যর্থতা ছিল। অন্ধের মতো
তারা একে অন্যকে নিঃশেষ
করার উন্মুক্ত খেলায় ব্যস্ত ছিল। এ সুযোগে
পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা
দখল করেছে অনির্বাচিতরা। বিএনপি কি আওয়ামী লীগকে
ক্ষমতা থেকে সরাতে তেমন
কিছু চাইছে? তবে শনিবার ছোট
দুটি ঘটনা আমার ভালো
লেগেছে। একটি, অসুস্থ বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানের
প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি। দ্বিতীয়টি, ডিবি কার্যালয়ে বিএনপি
নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের প্রতি সম্মানজনক আচরণ। এই সৌহার্দ্য ও
সৌজন্যতাই রাজনীতিকে বাঁচাতে পারে। গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে। সংঘাত
নয়, সমঝোতাই গণতন্ত্রের আসল সৌন্দর্য। স্কুইড
গেমে আসলে কেউ জেতে
না, জেতে শুধু হিংস্রতা।
সংলাপ, সৌহার্দ্য ত্যাগ করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অযৌক্তিক যুদ্ধেও জিততে পারে একজনই। অগণতান্ত্রিক
শক্তি।
লেখক:
নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা টালমাটাল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা নিয়েছিলেন যে, দলের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা কোন মন্ত্রী-এমপিই মানেননি। ইদানিং আওয়ামী সাধারণ সম্পাদককে দেখে মনে হয় অসহায়। তিনি বারবার চিৎকার করছেন, দলের নেতাকর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত মানার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, আবেদন-নিবেদন করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না।
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।