৩ আগস্ট, ১৯৭৫। দৈনিক ইত্তেফাকের দ্বিতীয় পাতার কোনায় একটি ছোট্ট খবর।
‘বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের
সাক্ষাৎ’। মার্কিন রাষ্ট্রদূত
ডেভিস ইউজেন বোস্টার খন্দকার মোশতাকের আগামসিহ লেনের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সেই সময় খবরটি
গুরুত্বহীন ছিল। কিন্তু ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট
এ খবরটি ইতিহাসে নিকৃষ্টতম হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের একটি বড় সূত্র
হয়ে যায়। কাকতালীয়ভাবে ঠিক
৪৮ বছর পর ঠিক
এই দিনেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বঙ্গবন্ধু
অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গেলেন।
এটাও সৌজন্য সাক্ষাৎ। আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার দেহভঙ্গিমা এমন যেন মনে
হলো, পিটার হাস একজন রাষ্ট্রদূত
নন, বাংলাদেশের শাসক অথবা দেবদূত।
বাংলাদেশে মার্কিন ভাইসরয়। যুগ্ম সচিব মর্যাদার একজন
কর্মকর্তাকে ফুল দিয়ে বরণ
করে ধন্য হলেন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক। একেক নেতার চেহারায়
যেন ঈদের খুশির ঝলক।
কদিন আগেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী
মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ ১২টি দেশের কূটনীতিকদের
তলব (আমন্ত্রণ) করেছিলেন। তাদের কূটনৈতিক শিষ্টাচার সম্পর্কেও সবক দেন। দেশের
অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে অযথা নাক না
গলানোর পরামর্শ দেন। এর এক
দিন পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.
এ কে আব্দুল মোমেন
গণমাধ্যমকে একহাত নেন। তিনি বলেন,
‘গণমাধ্যমের অতি উৎসাহের জন্যই
বিদেশিরা বাংলাদেশে মাতব্বরি করার সুযোগ পায়।’
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ নিয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশি কূটনীতিকদের ওপর বেজায় চটেছিলেন।
রেগে তিনি বলেন, ‘তারা
কি মগের মুল্লুক পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনাও গত কিছুদিন ধরে
খোলামেলাভাবেই মার্কিন নীতির সমালোচনা করছেন। সর্বশেষ ইতালি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন কারও কারও কাছে
চক্ষুশূল। এ জন্য তারা
আমাকে এবং আওয়ামী লীগকে
ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়।’
এর আগে আলজাজিরা এবং
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি স্পষ্ট
করেই বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে চায়।’
জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণে শেখ হাসিনা একই
কথা বলেছেন। তিনি এটাও বলেছেন,
‘যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো দেশে
চাইলে ক্ষমতার ওলটপালট ঘটাতে পারে।’ দেশের প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এরকম অবস্থানে,
তখন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে পিটার
ডি হাসের উষ্ণ অভ্যর্থনা কী
বার্তা দেয়? আওয়ামী লীগের
সাধারণ সম্পাদক কি মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সাক্ষাতের সময় নির্ধারণের পরামর্শ
দিয়েছিলেন? এটাই কূটনৈতিক শিষ্টাচার।
অন্যান্য
দেশে রাষ্ট্রদূতরা কোনো রাজনৈতিক দলের
নেতা কিংবা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে
সাক্ষাৎ করতে চাইলে সে
দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রথমে অবহিত করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই সময় ও অলোচ্যসূচি
নির্ধারিত হয়। ৩ আগস্ট
আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বৈঠক কি সেই
ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হয়েছে? ভারতে
এভাবে কোনো বৈঠকের কথা
একজন রাষ্ট্রদূত কল্পনাও করতে পারেন না।
এই তো সেদিন, পাকিস্তানে
নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য পাকিস্তানের
পররাষ্ট্র দপ্তরের অনুমতি প্রার্থনা করলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমতি দিতে সময়ক্ষেপণ করছে
বলে অভিযোগ করলেন ইমরান খানের মুখপাত্র। পাকিস্তানেও যদি মার্কিন রাষ্ট্রদূত
কূটনৈতিক শিষ্টাচার মানেন, তাহলে বাংলাদেশে মানবেন না কেন? পররাষ্ট্রমন্ত্রী
কূটনীতিকদের বাড়াবাড়ির জন্য গণমাধ্যমকে দায়ী
করেছিলেন, এখন ড. মোমেন
কী বলবেন। আওয়ামী লীগের নেতাদের অতিভক্তির জন্যই কি যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি
সীমা অতিক্রম করছে না? খুব
জানতে ইচ্ছে করে, এখন কি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে কৈফয়ত তলব
করবে? তাকে বলবে, পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়কে অবহিত না করে এ
ধরনের বৈঠক সঠিক নয়।
এ বৈঠকের পর আওয়ামী লীগ
কার্যালয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে,
তিনি আবার একই কথার
পুনরাবৃত্তি করেন—‘যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন
চায়।’ এ কথা বারিধারা
থেকে গুলিস্তানে এসে ঘটা করে
বলতে হবে কেন? এ
কথা তো গত দুই
বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তা শতবার বলেছেন। পিটার হাস দায়িত্ব নেওয়ার
পর অন্তত এক ডজনবার এরকম
মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করে পিটার
হাস সংবাদ সম্মেলন করলেন। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে তিনি
সংবাদ সম্মেলন করেন না কেন?
বিএনপি নেতাদের সকাল-সন্ধ্যা আমেরিকান
ক্লাব কিংবা তার বাসভবনে নিয়ে
যান কী কারণে? এর
ব্যাখ্যা কি তিনি পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়কে দেন? মার্কিন রাষ্ট্রদূত
কেন অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের
বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট ডেস্কে বলেন না? এটাই
তার একমাত্র কূটনৈতিক পথ? এসব বৈঠক
করে কি তিনি দেখাতে
চান মার্কিন আধিপত্য? সব রাজনৈতিক দল
তাদের প্রভুত্ব স্বীকার করে, এটা প্রমাণের
জন্যই কি এসব বৈঠক?
আওয়ামী লীগের যেসব নেতা নিজেদের
গুরুত্ব বাড়াতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করেন, তাদের
কাছেও আমার কিছু প্রশ্ন।
শোকের মাসে আওয়ামী লীগ
নেতারা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। কেউ কি প্রশ্ন
করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কেন খুনি রাশেদ
চৌধুরীকে ফেরত দিচ্ছে না?
জাতির পিতার এ আত্মস্বীকৃত খুনি
যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র এ
জঘন্য খুনিকে নাগরিকত্ব দিয়েছে।
১৯৯৬
সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে
খুনি রাশেদ ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয়
নেয়। তখন থেকেই বাংলাদেশ
খুনি রাশেদকে ফেরত পাওয়ার জন্য
বারবার অনুরোধ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে
এ বিষয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনকে অনুরোধ
করেন। ওভাল অফিসে অনুষ্ঠিত
ওই বৈঠকে ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমিও চাই না,
এ ধরনের ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকুক।’ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এ
খুনিকে ফেরত দেয়নি। শোকের
মাসে আওয়ামী লীগের নেতারা যদি পিটার হাসকে
খুনি রাশেদ চৌধুরীর বিষয়টি মনে করিয়ে দিতেন,
তাহলে খুশি হতাম। আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি
হয়েছিলেন। সেখানে খুনি রাশেদ চৌধুরী
প্রসঙ্গ আসেনি। কী আশ্চর্য? এ
প্রসঙ্গে আমার ২০১৩ সালের
আগস্ট মাসের একটি ঘটনা মনে
পড়ল। প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
তখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াত শুরু করেছে দেশব্যাপী
অগ্নিসন্ত্রাস। এরকম একটি উত্তপ্ত
রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের
সাক্ষাৎ প্রার্থনা করলেন। সৈয়দ আশরাফুল বিষয়টি
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করলেন। সচিবালয়ে দুপুর ১২টায় সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত হলো।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক নিয়ে
এলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে। এক ঘণ্টার বৈঠকের
পর, সাংবাদিকদের ডাকা হলো ফটোসেশনের
জন্য। রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে করমর্দনরত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি
রাষ্ট্রদূতকে ইংরেজিতে কয়েকটি কথা বললেন। যার
বাংলা অর্থ এরকম—‘সম্মানিত
রাষ্ট্রদূত, আপনার সঙ্গে এরপর যখন আমার
সাক্ষাৎ হবে, তার আগেই
আমরা নিশ্চয়ই খুনি রাশেদ চৌধুরীকে
ফেরত পাব।’ তখন ড্যান মজিনার
মুহূর্তে ব্রিবত হওয়ার দৃশ্যটি আমার চোখের সামনে
ভেসে ওঠে। মন্ত্রণালয়ের করিডোরে
সাংবাদিকদের কাছে দুয়েকটি কথা
বলেই তিনি বিদায় নিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের বললেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কাজ হলো ’৭৫-এর আত্মস্বীকৃত খুনি
রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত দেওয়া।’
সৈয়দ
আশরাফুলের এ দৃঢ়তা এখনকার
আওয়ামী লীগের কজন নেতার আছে?
তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্র
নিয়ে আওয়ামী লীগের পরস্পরবিরোধী অবস্থান কেন? কেন স্ববিরোধী
বক্তব্য? সরকার এবং আওয়ামী লীগের
মার্কিন নীতি কী, এ
নিয়ে আমার মতো আমজনতার
বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আওয়ামী
লীগের কিছু নেতা প্রকাশ্যেই
যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। ২ আগস্ট থেকে
আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট ১৪ দল
কর্মসূচি শুরু করেছে। এ
কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে মার্কিন হস্তক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন ১৪ দলের নেতারা।
আবার আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা
প্রকাশ্যে-গোপনে মার্কিন দূতাবাসে দেনদরবার করছেন। কোনটা আওয়ামী লীগের পথ, তা আওয়ামী
লীগকেই পরিষ্কার করতে হবে। যারা
আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকে মার্কিন জুজুর
ভয় দেখাচ্ছেন, তাদের আসল মতলব কী
তা খুঁজে বের করতে হবে।
এরা ‘নব্য মোশতাক’ কি
না, সে প্রশ্ন উঠতেই
পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এটা তাদের কূটনৈতিক
দায়িত্ব। আর দল তার
রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করবে। বাংলাদেশের মর্যাদা ও সম্মান সুরক্ষার
দায়িত্ব ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের। আওয়ামী লীগকে প্রমাণ করতে হবে, কারও
চাপে নয়, বিবেকের তাড়নায়
নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বাংলাদেশের নির্বাচন, গণতন্ত্র এ দেশের অভ্যন্তরীণ
বিষয়। কিন্তু যেভাবে যুক্তরাষ্ট্র এ নির্বাচন নিয়ে
হৈচৈ করছে, তাতে মনে হচ্ছে
বাংলাদেশ বোধহয় মার্কিন কলোনি। আর মার্কিন এ
নব্য আগ্রাসনকে প্রশ্রয় দিচ্ছে আওয়ামী লীগের একটা অংশ।
একটি
উদাহরণ দিতে চাই, আওয়ামী
লীগের নেতা এবং সংসদ
সদস্য শামীম ওসমান সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। সেখানে বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটে তার সঙ্গে অপ্রীতিকর
ঘটনা ঘটে। প্রবাসে থাকা
কিছু বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক
আচরণ করে। মুহূর্তেই ওই
ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নোয়াখালীতে ছাত্রলীগের
কিছু কর্মী এ ভিডিও দেখে
একজন বিএনপি কর্মীকে শনাক্ত করে। এরপর তার
বাড়ি আক্রান্ত হয়। এটি সঠিক
না ভুল তা অন্য
প্রসঙ্গ। কিন্তু এ ঘটনা দেশে
প্রবাসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করে। বিদেশে কিছু
দুর্বৃত্তের বাড়াবাড়ি এখন সব সীমা
অতিক্রম করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলেও কিছু অর্বাচীন এমন
কাণ্ড করে, যাতে দেশের
ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। সাম্প্রতিককালে
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ সফরে
কিছু বিএনপি-জামায়াত সমর্থক এমন কদর্য কাণ্ড
করেছে যাতে বাংলাদেশের মর্যাদা
ক্ষুণ্ন হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে শামীম
ওসমানের ঘটনার পর নোয়াখালীর প্রতিক্রিয়া
ছিল স্বাভাবিক পরিণতি। এ ঘটনার কোনো
আন্তর্জাতিক তাৎপর্য নেই। এটি উপমহাদেশের
রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বাস্তবতা। কিন্তু
নোয়াখালীর ঘটনার পর আওয়ামী লীগের
কিছু নেতা হাহাকার শুরু
করলেন। এমনকি তারা বলে বসলেন,
‘এখন যুক্তরাষ্ট্রকে সামাল দেব কীভাবে?’
হায়!
হায়। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ কি
এখন মার্কিন বশীকরণ বটিকা আবিষ্কারে ব্যস্ত? বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। যারা স্বাধীন
দেশে মার্কিন প্রভুত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারা
একালের মোশতাক। যারা আওয়ামী লীগের
হর্তাকর্তা সেজে দল এবং
নেতার স্বার্থের বাইরে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি
করতে চায়, তারা নব্য
মোশতাক।
’৭৫-এ যুক্তরাষ্ট্রকে চটানো
যাবে না, এ তত্ত্ব
দিয়ে যারা আওয়ামী লীগকে
বিভ্রান্ত করেছিল, তারা সবাই আগস্ট
ষড়যন্ত্রের হিস্যা হিসেবে প্রমাণিত। এখন যারা যুক্তরাষ্ট্রকে
সমীহ করার ফর্মুলা দিচ্ছে,
তাদের সতর্ক নজরদারিতে রাখতে হবে। না হলে
বিপর্যস্ত হবে আওয়ামী লীগ,
বাংলাদেশ।
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ইমেল
: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা।
নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার।
শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন,
ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি
হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়,
দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
এজন্য দেখা যায়, অনেক সন্তান যোগ্যতা
ও মেধায় পূর্বসূরির চেয়েও খ্যাতি অর্জন করেন। আবার অনেক পূর্বসূরি সুনামের মর্যাদা
রাখতে পারেন না। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাজনীতিতে আলো ছড়াতে পারেননি। রাজনীতিতে
সুবিধা করতে পারেননি এ কে ফজলুল হকের সন্তানরাও। গাভাস্কারের ছেলে ক্রিকেটে বড় তারকা
হতে পারেননি। অমিতাভের সন্তান অভিষেক পিতার ছায়ার নিচেই জীবন কাটালেন। ইন্দিরা গান্ধী
বা রাজীব গান্ধীর মতো জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছাতে পারেননি রাহুল গান্ধী। এরকম উদাহরণ
অনেক দেওয়া যায়। উত্তরাধিকারের রাজনীতি এক বাস্তবতা। এতে দোষের কিছু নেই। বিশেষ করে
উপমহাদেশে রাজনীতি উত্তরাধিকার একটি অনুষঙ্গ। বিলাওয়াল ভুট্টো, রাহুল, প্রিয়াঙ্কার
যোগ্যতা এবং রাজনীতিতে প্রবেশ নিয়ে তাই কেউ প্রশ্ন তোলে না। বাংলাদেশেও রাজনীতিতে উত্তরাধিকারের
প্রচলন দীর্ঘদিন ধরেই। দেশের প্রধান দুই দলের জনপ্রিয়তার উৎস হলো উত্তরাধিকার। জাতির
পিতার রক্তের উত্তরাধিকার ছাড়া আওয়ামী লীগের ঐক্য এবং অস্তিত্ব কেউ কল্পনাও করে না।
আবার বিএনপি টিকে থাকার সূত্র জিয়া পরিবার বলেই মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দুটি দলেই উত্তরাধিকারের রাজনীতির স্বাভাবিক
প্রবাহ লক্ষ করা যায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী রাজনীতিতে এসেছেন উত্তরাধিকার
সূত্রে। পিতা বা স্বজনদের আদর্শের পতাকা তারা বয়ে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। স্পিকার শিরীন
শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি,
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসনমন্ত্রী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী, প্রাথমিক
ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পারিবারিক পরিচয়ের সূত্রে দ্রুত রাজনীতিতে
এগিয়ে গেছেন। পিতৃপরিচয়ের কারণে এবার আওয়ামী লীগের টিকিটে এমপি হয়েছেন এমন সংসদ সদস্যের
সংখ্যা একশর ওপর। এবার নির্বাচনে কয়েকজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সন্তানকে রাজনীতিতে
প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিজেরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার
মোশাররফ হোসেন নিজে প্রার্থী হননি। তার ছেলে নির্বাচিত হয়ে এখন সংসদ সদস্য। রংপুরের
আশিকুর রহমানও ছেলের জন্য নির্বাচন করেননি। ছেলে রাশেক রহমান অবশ্য নির্বাচনে জয়ী হতে
পারেননি। আওয়ামী লীগ বা বিএনপিতে পারিবারিক পরিচয় একটা বড় স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
ঘনিষ্ঠ ছিলেন, ’৭৫-এর পর ত্যাগ স্বীকার করেছেন, ১৯৮১ সালে কঠিন সময়ে দলের সভাপতির প্রতি
বিশ্বস্ত কিংবা দুঃসময়ে দলের জন্য লড়াই করেছেন, এমন ব্যক্তিদের সন্তানরা আওয়ামী লীগে
বাড়তি খাতির-যত্ন পান। আওয়ামী লীগ সভাপতি তাদের বারবার সুযোগ দেন। দোষ-ত্রুটি উপেক্ষা
করেন। কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদ খোকনের কথাই ধরা যাক। রাজনীতিতে নিজের আলোয় উদ্ভাসিত হতে
না পারলেও তিনি প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের সন্তান, এ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হয়েছিলেন।
এখন এমপি। পিতার পরিচয়ের জোরেই ডা. মুরাদ এমপি, প্রতিমন্ত্রী হন। কিন্তু নিজের অযোগ্যতার
জন্য পিতৃপরিচয়ে পাওয়া অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। এরকম আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিতেও এ স্বজনপ্রীতি
স্বীকৃত। পৈতৃক পরিচয়েই শামা ওবায়েদ, রুমিন ফারহানা কিংবা ইশরাক বিএনপিতে তরতর করে
ওপরে উঠছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক বন্ধন বাড়তি যোগ্যতা বলেই বিবেচিত হয়।
এজন্য অনেক রাজনীতিবিদই তার সন্তানকে ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
প্রধান দুই দলের রাজনীতিতে পারিবারিক পরিচয়, এগিয়ে যাওয়ার পথ মসৃণ করে। কিন্তু এবার
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নিলেন। গত বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির ‘স্বজন’প্রীতির
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বার্তাটি ঘোষণা করেন। উপজেলা নির্বাচন কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত।
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারও বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপজেলা
নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবেও বিএনপির কেউ দাঁড়াতে পারবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের
স্থায়ী কমিটি। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করবে তাদের বহিষ্কার করা হবে
বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি সম্ভবত এরকম একটি পরিস্থিতির কথা আগেই অনুমান
করেছিলেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তিনি উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার
সিদ্ধান্ত নেন। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুটি কারণে। প্রথমত, আওয়ামী লীগ স্থানীয়
নির্বাচনে দলগতভাবে কাউকে মনোনয়ন না দিলে এবং নৌকা প্রতীক ব্যবহার না করলে অভ্যন্তরীণ
কোন্দল এবং বিরোধ বন্ধ হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ
করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি ‘ডামি’ কৌশল গ্রহণ করেছিল। যারা মনোনয়ন পাননি, তাদের স্বতন্ত্রভাবে
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগ গ্রহণ করে স্থানীয় পর্যায়ের
বহু আওয়ামী লীগ নেতা ‘নৌকার বিরুদ্ধে’ প্রার্থী হন। ৫৮ জন বিজয়ীও হন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যে উত্তেজনা
তা স্বতন্ত্রদের কারণেই। ৫৮ জন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত
করেন ওই নির্বাচনে। এর ফলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ নির্বাচন ‘মন্দের ভালো’ হিসেবে
স্বীকৃতি পায়। পশ্চিমা বিশ্ব ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য বিএনপির বর্জনকেও দায়ী করে।
কিন্তু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের ‘ডামি কৌশল’ সারা দেশে সংক্রামক ব্যাধির
মতো কোন্দল ছড়িয়ে দেয়। নির্বাচনের পরও চলতে থাকে মারামারি, হানাহানি, খুনোখুনি। উপজেলা
নির্বাচন উন্মুক্ত করার ফলে এ কোন্দল কমবে এমন আশা ছিল আওয়ামী লীগের। যদিও এ কৌশল এখন
ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের বিভক্তিকে দগদগে ক্ষতের
মতো উন্মোচিত করেছে।
উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করার দ্বিতীয়
কারণ ছিল ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো। দলের মনোনয়ন না থাকলে স্বাধীনভাবে যে কেউ নির্বাচনে
দাঁড়াবে। বিএনপিও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাবে। ফলে উপজেলা নির্বাচন
হবে উৎসবমুখর। ভোটার উপস্থিতি বাড়বে—এমন একটি প্রত্যাশা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ। এর বাইরেও আওয়ামী লীগ সভাপতির আরেকটি প্রত্যাশা ছিল। তিনি সম্ভবত চেয়েছিলেন,
সব ধরনের প্রভাবমুক্ত একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। এ কারণেই নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার
পরপরই শেখ হাসিনা বলেছিলেন, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলায় প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
কেউ যেন উপজেলায় পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না দেয়, তাকে জেতানোর জন্য প্রভাব বিস্তার
না করে। সে ব্যাপারেও সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ লিখিত নির্দেশ
দিয়ে বলেছিল, মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবেন না। প্রভাবমুক্ত একটা
স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। কিন্তু দলের প্রভাবশালীরা
শেখ হাসিনার নির্দেশের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ান।
উপজেলা নির্বাচনকে কিছু মন্ত্রী এবং
এমপি তাদের রাজত্ব কায়েম করার মোক্ষম সুযোগ হিসেবে বিবেচনা শুরু করেন। নির্বাচনী এলাকায়
জমিদারি প্রতিষ্ঠার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান পদে ‘মাই ম্যান’কে বসানোর মিশন শুরু করেন
কতিপয় মন্ত্রী-এমপি। ‘মাই ম্যান’ পছন্দ করতে অনেকে বাইরের লোকের ওপর ভরসা রাখতে পারেননি।
যে দলে ‘মোশতাক’দের জন্ম হয়, সেই দলের সুবিধাবাদী নেতারা অনাত্মীয়কে কীভাবে বিশ্বস্ত
ভাববে? মন্ত্রী-এমপিরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বেছে নেন
স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগনেসহ আত্মীয়স্বজনদের। বগুড়া-১ আসনের
এমপি নির্বাচনী এলাকায় দুটি উপজেলার একটিতে তিনি ভাইকে অন্যটিতে ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে
ঘোষণা করেন। টাঙ্গাইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা এবং এমপি একটি উপজেলায় প্রার্থী
হিসেবে ঘোষণা করেছেন তার খালাতো ভাইয়ের নাম। নাটোরে এক প্রতিমন্ত্রী তার এলাকার রাজত্ব
নিশ্চিত করতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে তার শ্যালককে ‘একক’ প্রার্থী ঘোষণা করেন।
সুনামগঞ্জে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান
সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলেকে প্রার্থী করে মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীতেই দুজন এমপি দলের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল
দেখিয়েছেন। উপজেলা নির্বাচনে এ দুই সংসদ সদস্য তাদের পুত্রদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা
করেছেন। তাদের একজন আবার ভোট না দিলে উন্নয়ন বন্ধেরও হুমকি দিয়েছেন। মাদারীপুরের এক
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তার পুত্রকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বেছে নিয়েছেন উপজেলা
নির্বাচন। দলের নির্দেশ অমান্য করেই পুত্রের পক্ষে মাঠে নেমেছেন ওই নেতা। এরকম উদাহরণ
অনেক। স্বজনপ্রীতির তালিকা এত দীর্ঘ যে, তা লিখলে পুরো পত্রিকা দখল করতে হবে। সে প্রসঙ্গে
তাই আর যেতে চাই না। তবে মন্ত্রী-এমপিদের উপজেলা নির্বাচন ঘিরে আগ্রাসী স্বজন তোষণের
প্রধান কারণ এলাকায় ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করা। নিজের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা।
এসব নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ২০০টিতেও যদি মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়স্বজনরা উপজেলা চেয়ারম্যান
হন, তাহলে স্থানীয় পর্যায়ে ‘রাজতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত হবে। সাধারণ জনগণ তো বটেই, আওয়ামী
লীগ কর্মীরাই পরিণত হবেন প্রজা এবং ক্রীতদাসে। সংকটে থাকা গণতন্ত্র শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ
করবে। কিছু গোষ্ঠী এবং পরিবারের কাছে জিম্মি হবে গোটা আওয়ামী লীগ।
অনেকেই প্রশ্ন করছেন, আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র
তো আগেই ছিল। পারিবারিক পরিচয়ের কারণে অনেকে যোগ্যতার বাইরে পদ-পদবি পেয়েছেন। পিতার
নাম বিক্রি করে কেউ কেউ মন্ত্রী, এমপি হয়েছেন। আওয়ামী লীগকে বলা হয় এক বৃহত্তর পরিবার।
তাই যদি হবে, তাহলে এখন স্বজনদের উপজেলার প্রার্থী হতে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে? এর উত্তর
ব্যাখ্যার দাবি রাখে। আওয়ামী লীগে ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং আদর্শবাদী নেতাদের স্বজনদের
পাদপ্রদীপে তুলে আনা হয়েছে একাধিক কারণে।
প্রথমত, এসব নেতা দুঃসময়ে দলের জন্য
জীবনবাজি রেখেছেন। ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের সন্তানরাও সেই দুর্বিষহ জীবনের সহযাত্রী
ছিলেন। এটি তাদের জন্য একটি পুরস্কার। ত্যাগী নেতাদের অবদানের স্বীকৃতি। এজন্যই তাজউদ্দীন
আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কামারুজ্জামান, মনসুর আলীর সন্তানরা আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ
হয়ে ওঠেন। প্রয়াত মহিউদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ হানিফ, মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে এমপি হন।
নির্বাচনে হারলেও ময়েজ উদ্দিনের কন্যাকে সংসদে আনা হয়। দ্বিতীয়ত, ওই সব ত্যাগী নেতার
সন্তানরা বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শচর্চা করেছে পরিবার থেকে সারা জীবন। আওয়ামী
লীগই তাদের পরিচয়। আওয়ামী লীগ তাদের কাছে এক অনুভূতির নাম। তৃতীয়ত, পরিবার থেকে তাদের
মন্ত্রী-এমপি বা নেতা বানানো হয়নি। তাদের পুরস্কার দিয়েছে দল বা আওয়ামী লীগ সভাপতি।
ডা. দীপু মনি বা শিরীন শারমিনকে তার পিতারা মন্ত্রী বা স্পিকার বানাননি। শেখ হাসিনা
বানিয়েছেন। দূরদর্শী নেতা হিসেবে তিনি তাদের মধ্যে মেধা ও যোগ্যতা নিশ্চয়ই দেখেছেন।
এটা তার সিদ্ধান্ত। দলের প্রধান নেতা যে কাউকে টেনে তুলতে পারেন আবার ফেলেও দিতে পারেন।
৭ জানুয়ারির নির্বাচনে পিতার বদলে যেসব সন্তানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তা দলের সিদ্ধান্ত,
পিতাদের নয়। কিন্তু উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিরা নিজেরাই এলাকার ‘মালিক’ বনে গেছেন। তারাই
ঠিক করছেন কে হবেন এলাকায় আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাগ্য বিধাতা। এটা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক
কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানোর শামিল। দল যখন উপজেলা নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন দিচ্ছে
না, তখন এমপিরা মনোনয়ন দেয় কীভাবে? এটা সংগঠনবিরোধী, দলের স্বার্থের পরিপন্থি।
এ কারণেই আমি মনে করি আওয়ামী লীগ সভাপতির
সিদ্ধান্ত সঠিক, সাহসী এবং দূরদর্শী। আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী।
তিনি চাইলে শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ, রিদওয়ান মুজিব সিদ্দিকী সবাইকে
মন্ত্রী-এমপি বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শেখ হাসিনার পরিবারের যে সংজ্ঞা
ও নাম জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেছিলেন, তাদের কেউই আওয়ামী লীগের নেতা নন, মন্ত্রী বা এমপি
নন। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে কোনো নেতার চেয়ে তার দেশ ও দলের জন্য বেশি অবদান রাখছেন।
শেখ হাসিনা যদি দল পরিচালনায় নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ থাকেন, তাহলে তার সত্যিকারের অনুসারীরা
কেন চর দখলের মতো এলাকা দখল করবেন? শেখ হাসিনার এই সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী। দলকে ব্যবহার
করে আওয়ামী লীগের যেসব পরিবার ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন, এটা তাদের জন্য সতর্কবার্তা। দলের
ত্যাগী, পরীক্ষিতদের জন্য উপহার। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির এ নির্দেশ ক্ষমতা লিপ্ত
নেতারা মানবেন কি? অতীতেও দেখা গেছে, শেখ হাসিনার অনেক ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে
দেয়নি দলের ভেতর স্বার্থান্বেষী কুচক্রীরা। এবারের নির্দেশনার পরিণতি কী হয়, তা দেখার
অপেক্ষায় রইলাম।
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত
হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী
লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা
যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলছেন, ওবায়দুল কাদের যা বলছেন
তা হলো শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্যের অনুরণন। আওয়ামী লীগ সভাপতি যেভাবে তাকে নির্দেশনা দিচ্ছেন সে বক্তব্যই
তিনি প্রচার করছেন। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তারা যেন সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন কোন এমপি-মন্ত্রী এবং নেতাদের স্বজনরা প্রার্থী
আছেন তার তালিকা তৈরি করেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩ টি বিষয়ের প্রতি সুনির্দিষ্ট
নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রথমত, কোন মন্ত্রী-এমপি কিংবা প্রভাবশালী নেতা তার নিকট আত্মীয় বা স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করাতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, উপজেলা নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী কোন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা করতে পারবে না। তৃতীয়ত, কোন মন্ত্রী এমপি উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য প্রশাসন বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে হাত মেলাতে পারবেন না। এই ৩ টির কোন একটির যদি ব্যত্যয় হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না তাদের বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের ৩ ধাপে যে তফসিল নির্বাচন
কমিশন ঘোষনা করেছে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে ২৭ জন মন্ত্রী এমপির স্বজনরা উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন। ২য় ধাপে প্রার্থীতার সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এখানে ১৫২ টি উপজেলার মধ্যে
৮৭ জন মন্ত্রী-এমপির সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করার আগ্রহ জানিয়েছে, যারা মন্ত্রী-এমপিদের
নিকট আত্মীয়। আর ৩য় ধাপে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০-২৫০ জন মন্ত্রী-এমপির
আত্মীয় স্বজন উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন
যদি তারা নির্বাচন থেকে সরে না দাড়ান, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে?
আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলছেন, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কেন্দ্রীয়
কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে, এই বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী
লীগ সভাপতি। তবে সিদ্ধান্ত হবে ধাপে ধাপে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে প্রার্থী
দিবেন তাদেরকে প্রথমত, দলের পদ হারাতে হবে। দ্বিতীয়ত, আগামী নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে
তাদেরকে কালো তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হবে। তৃতীয়ত, যারা মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী আছেন,
তারা মন্ত্রীত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত
কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হটকারী অবস্থান গ্রহন করে, তাহলে দল থেকে বহিষ্কারের
মতো আওয়ামী লীগ গ্রহণ করতে পারে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত
কঠোর অবস্থানে আছেন। এ ব্যাপারে তিনি কোন ছাড় দেবেন না। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
কালো তালিকায় যদি থাকেন, তাহলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-এমপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা টালমাটাল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব থেকে, আরও নির্দিষ্ট করে বললে আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা নিয়েছিলেন যে, দলের এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা প্রার্থী হতে পারবেন না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়া আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা কোন মন্ত্রী-এমপিই মানেননি। ইদানিং আওয়ামী সাধারণ সম্পাদককে দেখে মনে হয় অসহায়। তিনি বারবার চিৎকার করছেন, দলের নেতাকর্মীদেরকে সিদ্ধান্ত মানার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন, আবেদন-নিবেদন করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না।
রাজার ছেলে রাজপুত্র। ভবিষ্যতের রাজা। নাপিতের ছেলেই পিতার পরিচয় ধরে রাখবে। উকিলের সন্তানই পিতার সেরেস্তার উত্তরাধিকার। শিক্ষকের ছেলে শিক্ষক হলেই তো মানায়। নেতা বা রাজনীতিবিদের ছেলেমেয়ে রাজনীতিবিদ হবেন, ভবিষ্যতের নেতা হবেন—এটাই স্বাভাবিক। পেশার উত্তরাধিকার প্রত্যাশিত। দেশে দেশে এমনটি হয়েই থাকে। তবে উত্তরাধিকার সূত্রে যিনি যে পেশাতেই আসুন না কেন, তাকে যোগ্য হতে হয়, দক্ষ হতে হয়। যোগ্যতা না থাকলে শুধু পিতৃপরিচয়ে উজ্জ্বল হওয়া যায় না।
উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করারও শাস্তিমূলক হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। আর এ কারণে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একের পর এক বৈঠক করছেন এবং মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা যাতে উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেন সে জন্য সতর্ক বার্তা ঘোষণা করছেন।
একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে ধ্বংসের সহজ উপায় কি? এক কথায় এর উত্তর হলো রাজনীতি শূণ্য করা। গণতন্ত্রে রাজনীতি হলো রক্ত সঞ্চালনের মতো। একটি দেহে স্বাভাবিক রক্ত প্রবাহ বন্ধ হলে, মৃত্যু অনিবার্য। তেমনি গণতন্ত্রের মৃত্যু হয় বিরাজনীতিকরণে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণে চেষ্টা চলছে বহুদিন থেকে। কিন্তু এখন সবাই মিলে আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশকে রাজনীতিহীন করার উৎসবে মেতেছে। রাজনীতি হত্যার উৎসব চলছে দেশে। দেশে এখন কোন রাজনীতি নেই। রাজনৈতিক কর্মসূচী নিয়ে জনগণের হৃদয় জয়ের চেষ্টা নেই। আছে শুধু ‘ব্লেইম গেম’। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি গালাগালি। কুৎসিত, কদর্য কথার খিস্তি।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।