পবিত্র মাস রমজান। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা সিয়াম সাধনা শুরু করেছেন। রোজা পালনের মূল বিষয়গুলো সারা বিশ্বে এক হলেও রমজানকে কেন্দ্র করে একেক দেশের মানুষ মাসটি স্বাগত জানান ও উদযাপন করেন একেকভাবে। রমজান মাস উদযাপনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক দেশের রয়েছে নিজস্ব কিছু ঐতিহ্য ও রীতিনীতি। মনুষ্য বসতির ইতিহাসে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো দেশ ইন্দোনেশিয়া। তিনশ’র বেশি জাতি-গোত্র আর সাড়ে সাতশ’র মতো ভাষা রয়েছে দেশটিতে।
রমজান মাস শুরুর আগের দিন ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিজেদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। মধ্য এবং পূর্ব জাভার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ নিজেদের শরীর শুদ্ধ করার প্রথা ‘পাডুসান’ পালন করেন। পাডুসান অর্থ গোসল করা। জাভানিজ মুসলিমরা ঝর্ণার পানিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ডুবিয়ে রেখে এটি পালন করেন। অথবা পুকুর বা জলাশয়ে, লেক বা সুইমিং পুলে গোসল করে শুদ্ধি প্রথা পালন করেন অনেকেই।
ইন্দোনেশিয়ার ধর্ম এবং সংস্কৃতিতে পাডুসান হলো- শুদ্ধি প্রথা। জাভার সংস্কৃতিতে ঝর্ণার গভীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে এবং এগুলো পবিত্র মাসের জন্য শুদ্ধতা অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মনে করা হয়, ওয়ালি সঙ্গো এর প্রচলন শুরু করেন। ওয়ালি সঙ্গো হলো বিশিষ্ট ধর্মপ্রচারকের দল, যারা জাভাতে প্রথম ইসলাম প্রচার করেছিলেন।
আগে স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ও ধর্মীয় নেতারা পাডুসানের জন্য কোনো পবিত্র ঝর্ণা নির্ধারণ করে দিতেন। কিন্তু এখন অনেকেই নিকটস্থ লেক অথবা সুইমিং পুলে গিয়ে অথবা বাড়িতেই নিজেদের শরীর শুদ্ধির এই প্রথা পালন করেন। কোভিড-১৯ এর মহামারির কারণে এবার পাডুসান প্রথা পালন নিষেধ করা হয়। তার পরও অনেক স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনেকে তা পালন করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন নামে ‘শরীর ও মনকে পরিশুদ্ধ’ করার এই রীতি প্রচলিত আছে। আর তা করা হয় নদী, পুকুর বা সমুদ্রে গোসল করার মাধ্যমে। ইসলাম ধর্মে ‘পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়’। এই বিশ্বাস থেকেই ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দারা এ উৎসব পালন করে থাকেন। ক্লাটেন, বোয়োলাটি, সালাতিগা ও ইয়োগিয়াকার্তার বাসিন্দারা ‘পাডুসান’ উৎসব পালন করে থাকেন। রমজান শুরুর আগে এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা নদী অথবা পুকুরে গোসল করে ও সাঁতার কেটে ‘পাডুসান’ পালন করেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলমান বাস করেন ইন্দোনেশিয়ায়। প্রায় ২৭ কোটিরও বেশি জনঅধ্যুষিত এই দেশের ৯০ ভাগই মুসলমান। তবে সরকারিভাবে ইন্দোনেশিয়া কোনো মুসলিম রাষ্ট্র নয়; ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। এখানে রয়েছে ব্যাপক সাংস্কৃতিক ভিন্নতা। আরবীয়, ভারতীয়, চীনা, মালয় ও ইউরোপীয় সংস্কৃতির মিশেল রয়েছে জীবনাচরণে।
ইন্দোনেশিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসের সিয়াম সাধনা করা হয়। দেশটিতে রমজান মাস শুরু হয় উৎসবের মধ্য দিয়ে। রহমতের মাসের চাঁদ ওঠার সংবাদ প্রচার হওয়ার পর তাদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে। মসজিদের পাশে কোনো খোলা জায়গায় বিশাল ড্রাম বাজিয়ে সবাই পরস্পরকে অভিনন্দন জানায়।
এ ছাড়াও স্থানীয় ঐতিহ্যের পরশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতেও দেখা যায় বৈচিত্র্য। এ কারণেই এ দেশে পবিত্র রমজান উদযাপনে পার্থক্য দেখা যায়। ইন্দোনেশিয়ার মধ্য জাভার সেমারাং শহরের বাসিন্দারা হাজার বছর ধরে ‘দুগদেরান’ নামের এক উৎসব পালন করে থাকেন। রমজান মাস শুরুর সংকেত হিসেবে প্রতি বছরই দেশটির মসজিদগুলোতে ঢাক পেটানো হয়। ‘দুগ’ শব্দটি এসেছে মসজিদের ওই ঢাকের শব্দ থেকে। এর পাশাপাশি মসজিদের কামান থেকে গোলাবারুদ ছোঁড়া হয়। ‘দার’ শব্দটি এসেছে কামানের ওই আওয়াজ থেকে। সাধারণত রমজান শুরুর দুই সপ্তাহ আগে থেকে সেমারাং শহরের বাসিন্দারা এ উৎসব পালন করে থাকেন। উৎসবে বাসিন্দারা রং বেরঙের পোশাক পরেন, শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
অন্যদিকে পশু জবাই করার মধ্য দিয়ে পালিত হয় ‘মিউগানা’। এর আরেকটি নাম ‘মাকমিউগানা’। রমজান শুরুর দিন দুয়েক আগে পালন করা হয় এই রীতি। রমজান মাস শুরুর একদিন আগে সুদানিসির নৃগোষ্ঠী এ উৎসব পালন করে থাকে ‘মুংগাহান’। ‘মুংগাহান’র উৎপত্তি ‘উনগাহ’ শব্দ থেকে। যার অর্থ সামনের দিকে এগিয়ে চলা। রোজাদার যেন আগেরবারের চেয়ে আরও বেশি সংযমের সঙ্গে এবারের রোজা পালন করতে পারে, এ উদ্দেশ্যেই ‘মুংগাহান’ উৎসব পালন করা হয়।
বিভিন্নভাবে ‘মুংগাহান’ পালন করা হয়। যেমন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খাবার খাওয়া, প্রতিবেশিদের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করা। অর্থাৎ এমন কিছু করা যেখানে পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়।
ইন্দোনেশিয়ায় ইফতারকে বলা হয় ‘বুকা’, যার অর্থ শুরু করা। ইফতার আয়োজনে সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হলো ‘আবহাম’ নামের পানীয় এবং খেজুর। খেজুরের সঙ্গে ‘কোলাক’ নামে এক প্রকার মিষ্টান্নও পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়া তারা রাতের খাবারে ভাত, সবজি, মুরগি ও গরুর গোশত খেতে পছন্দ করেন। তবে সেহেরিতে খাবার খায় খুবই সামান্য।
দেশটির সুরাবায়া শহরে রমজানের শুরুতে ‘আপেম’ নামীয় একটি খাবার না হলে চলেই না। রমজানে তাদের প্রতিদিনকার খাবার এটি। তবে খাবারের চেয়ে এর উদ্দেশ্যটা বেশি চমৎকার। ধারণা করা হয়, ‘আপেম’-এর উদ্ভব আরবি ‘আফওয়ান’ শব্দ থেকে। যার অর্থ ‘দুঃখিত’। খাবারটিকে ‘ক্ষমা’র প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। তাই পরিবার-পরিজন সবাই একসঙ্গে ‘আপেম’ খাওয়ার পর একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আগের সব ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চান। ‘আপেম’ দেখতে চিতই পিঠার মতো। নারকেল ও চালের গুড়া দিয়ে এই স্ন্যাকসটি তৈরি করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় ‘নিওরোজ’ নামের উৎসব পালন করা হয়। ‘নিওরোজ’ শব্দের অর্থ পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে খাবার ভাগাভাগি করা। তাই রমজানের আগে বাবা-মা, দাদা-দাদী, শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ অন্যান্য স্বজনদের বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য পাঠানোর মাধ্যমে ‘নিওরোজ’ পালিত হয়। সাধারণত এই খাদ্যদ্রব্যের তালিকায় থাকে গোস্ত, কফি, দুধ, চিনি, মিষ্টি রসসহ অন্যান্য পণ্য। পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে রমজান মাসের শুরুতে এ উৎসব পালন করা হয়।
ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানরা যথেষ্ট ধর্মপরায়ণ। তারা ধর্মীয় জীবনযাপন এবং সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষাদানের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক। রমজানে তাদের ধর্মীয় এই স্পৃহা আরও বৃদ্ধি পায়। পুরুষের মতো নারীরাও মসজিদে তারাবির জামাতে অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়।
রমজান মাসে ইবাদত, বন্দেগি ও কল্যাণমূলক কাজে ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের প্রতিযোগিতা চোখে পড়ার মতো। বড় বড় শহরে বসবাসকারী মুসলিমরা প্রায়শই রমজান মাসে, বিশেষ করে শেষের দিকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। রমজান মাসের শেষে শ্রমিকদের দেওয়া হয় এক মাসের বেতনের সমান বিশেষ বোনাসের টাকা। ইন্দোনেশীয়রা একে ‘তের নম্বর মাসের’ বোনাস বলে থাকেন। ধনী থেকে মধ্যবিত্ত অনেকেই এ মাসে জাকাতের পাশাপাশি বাড়তি দান-খয়রাতের হাত বাড়িয়ে দেন।
বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মতো ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে আশ্রিত মুসলিম অভিবাসীরাও রোজা রাখেন। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় কুয়ালালাঙসা শহরের এই শরণার্থী শিবিরে বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের শতাধিক নাগরিককে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার পক্ষ থেকে এসব মানুষের জন্য ইফতার ও সেহেরির আয়োজন করা হয়।
সমাজ থেকে অনাচার ও পাপাচার দূরীকরণে দেশটির সরকারের উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয়। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়া থেকে সমস্ত যৌনপল্লী উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে সে দেশটির সরকার। দেশটির ৭০টি জেলায় যৌনপল্লী উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখনও প্রায় শতাধিক যৌনপল্লী রয়েছে বিভিন্ন জেলায়। ২০১৯ সালের মধ্যে এগুলো উচ্ছেদ শেষ হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এভাবেই হয়তো এক সময় সামাজিক অবক্ষয় রোধে ব্যভিচার ও ব্যভিচারে উৎসাহী আনুসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াবলিতে দেশটি ইসলামি অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করবে। আর সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে অপরাপর দেশগুলো ইসলামি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে। প্রয়োগ করবে নিজ দেশে।
ইন্দোনেশীয়রা ঈদুল ফিতরকে ‘লেবারান’ বলে থাকে। রমজান মাসের শেষ দিনে সন্ধ্যা মেলানো মাত্র ঢোল বাজানো, নাচ, গান, নামাজ আর বয়ানের ভেতর দিয়ে উৎসব শুরু হয়ে যায়। বহু ইন্দোনেশীয় ঈদের নামাজের পর ঘরে ফেরার পথে পড়শি বা বন্ধুদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। প্রায়ই সংক্ষিপ্ত এইসব সফরে তাদের বিরুদ্ধে অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের জন্য ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপার জড়িত থাকে। সত্যিই আাগের বছর আহত বা কষ্ট দেওয়া হয়েছিল এমন আত্মীয় ও বন্ধুর কাছে ক্ষমা চাওয়া এই ছুটির দিনের বৈশিষ্ট্য।
ইন্দোনেশিয়ায় প্রচলিত লেবারান সম্ভাষণ হচ্ছে ‘সালামাত ঈদুল ফিতরি লাহির বাতিন’ যার অর্থ হচ্ছে ‘শুভ ঈদুল ফিতর, আমাদের সব পাপের জন্য ক্ষমা করো। ’ ঈদের দিন বেশিরভাগ ইন্দোনেশীয় বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করে দিন শুরু করে, তারপর বয়োজ্যেষ্ঠ আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে।
রিয়াও প্রদেশে ঈদ উৎসব পালন করা হয় একটু ভিন্নভাবে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে প্রদেশের বাসিন্দারা ঐতিহ্যবাহী নৌকাগুলো নিয়ে নৌকাবাইচের আয়োজন করে। যা ‘জালুর পাসু’ নামে পরিচিত। এ নৌকাবাইচের সময় শত শত মানুষ নদীর দুইপাড়ে ভীড় জমায়। তবে উৎসবটি নৌকাবাইচ দিয়ে শুরু হলেও শেষ হয় ‘বালিমা কাসাই’ দিয়ে অর্থাৎ নদীতে গোসল শরীর ও মনকে পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে। অনেকেই বলেন, এই গোসলের মধ্য দিয়ে তারা আত্মাকে পবিত্র করে নেয়। যেন পরের দিনগুলোতে আরও ভালোভাবে চলতে পারে।
মন্তব্য করুন
হত্যার মাধ্যমে ক্ষমতাগ্রহণ করলে সেটির পরিণাম যে নির্মম হয় সেটার উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। পঁচাত্তরে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকাণ্ড, এরপর ৩রা নভেম্বর জেল হত্যাকাণ্ডের প্রধান সুবিধাভোগী জেনারেল জিয়াউর রহমান একের পর এক ক্যূ-পাল্টা-ক্যূ, হত্যাকাণ্ড, মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি, চাকরিচ্যুতি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের সর্বময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার যে চেষ্টা করেছেন তার পথ ধরেই নিজেও নির্মমভাবে নিহত হন। আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের ৪১তম মৃত্যুবার্ষিকী
জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। জিয়া পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেননি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন।
সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে নানা সময় বিভিন্নভাবে সেনা-অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং সেনাবাহিনীতে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীর একে অপরের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ সেই সময়ে ঘটে চলেছিল নিয়মিতভাবেই।
বলা যায়, এমন পরিস্থিতির ধারাবাহিকতায় ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সামরিক বাহিনীর একদল অফিসারের হামলায় নিহত হন দেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান। ছয় বছর আগে ১৯৭৫ সালের নভেম্বরে সামরিক বাহিনীতে আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই তিনি দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন। এর পরের বছরগুলিতে তাকে উৎখাতের জন্য বিভিন্ন সময় সামরিক বাহিনীতে চেষ্টা করা হলেও তাঁর অনুগত সেনা অফিসার এবং সদস্যরা সেই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাগুলি দমন করেন।
কিন্তু ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে জিয়াউর রহমান নিহত হন সেনা অফিসারদের হামলাতেই। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে তখন যে সেনা অফিসাররা ছিলেন তাদের অনেকেই জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তা সত্বেও ঘটে যায় এই হত্যাকাণ্ড। প্রশ্ন ওঠে, অনুগত অফিসাররাই কি জিয়াকে হত্যা করেছিলেন? নাকি তার অনুরাগী অফিসারদের ব্যবহার করে অন্য কোনো গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থের জন্য হত্যা করেছিল তাকে?
এই হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম সেনানিবাসের প্রভাবশালী অফিসাররা কয়েকদিন চট্টগ্রামে কর্তৃত্ব টিকিয়ে রাখলেও ঢাকা সেনা সদর এবং দেশের অন্যান্য সেনানিবাস তাদের সঙ্গে নেই এই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতেই তাদের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম সেনানিবাসের তৎকালীন জিওসি বা ডিভিশনাল কমান্ডার জেনারেল আবুল মঞ্জুর তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অফিসারকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দ্রুতই ধরা পড়ে যান এবং তাকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরিয়ে এনেই হত্যা করা হয়। বলা হয়, উচ্ছৃঙ্খল সেনা সদস্যরা তাঁকে হত্যা করেছে।
জেনারেল মঞ্জুরকে বিচারের সম্মুখীন না করে এভাবে হত্যা করা অনেক প্রশ্ন আর সন্দেহের জন্ম দেয় স্বাভাবিকভাবেই। জিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় যে সেনা অফিসারদের তাদের অনেকেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। চট্টগ্রাম কারাগারে গোপনে এবং খুব তাড়াহুড়ো করে বিচারের পর ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা অফিসারকে ফাঁসি দেওয়া হয়, অনেককে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় এবং পরবর্তীতে সেনাবাহিনী থেকে চাকুরিচ্যুত করা হয় আরও বেশ কিছু অফিসারকে।
সত্তরের দশকের শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অফিসাররা একাধিকবার জিয়াকে উৎখাতের চেষ্টা করেন। ১৯৮০ সালে দুই মুক্তিযোদ্ধা অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল দিদারুল আলম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুন্নবী খানের মাধ্যমেও এই অফিসাররা জিয়ার বিরুদ্ধে সেনা-অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। নুরুন্নবী খান মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়ার নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্সের একটি বাহিনীতে থেকেই যুদ্ধ করেছিলেন। জিয়ার বিরুদ্ধে সংঘটিত সেনা অভ্যুত্থানসমূহের কোনোটাই অবশ্য সফল হয়নি।
এমন জটিল এক পরিস্থিতিতেই ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে সফরের সময় শেষ রাতে এক সামরিক হামলায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হন। চট্টগ্রাম সেনানিবাসে মঞ্জুরের অধীনস্থ সেনা অফিসাররা এই হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই হত্যাকাণ্ডের পর মেজর জেনারেল মঞ্জুরকেই এই পরিস্থিতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।
৩০ মে গভীর রাতে সার্কিট হাউসে প্রেসিডেন্ট জিয়ার ওপর আক্রমণ চালানো হবে তা কি জেনারেল মঞ্জুর জানতেন? সেই সময় চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার ছিলেন জিয়াউদ্দিন এম চৌধুরী। তাঁর বর্ণনা থেকে জানা যায়, যেদিন রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রাম পৌঁছান তখন তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য জেনারেল মঞ্জুর বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন না। মঞ্জুর কেন আসেননি সে ব্যাপারে জিয়া চট্টগ্রাম সেনানিবাসের অন্য একজন উর্দ্ধতন সেনা কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেসও করেন (এই প্রসঙ্গে আবার অন্য বর্ণনায় জানা যায়, রাষ্ট্রপতি জিয়াই নাকি জেনারেল মঞ্জুর যেন বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে না আসেন সেই নির্দেশ দিয়েছিলেন)।
মন্তব্য করুন
২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি এদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ বর্তমানে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। সশস্ত্রবাহিনী থেকে এ অবধি ১,৮৩,৩৭৮ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত হয়েছেন।শান্তি রক্ষায় কাজ করার সময় নিহত হয়েছেন ১৩৯ জন,আহত হয়েছেন ২৪০ জন।২০২২ সালে এসে আমরা সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৬৩২৪ জন সদস্যকে শান্তি রক্ষার কাজে নিয়োজিত দেখতে পাচ্ছি। এ ভেতর নারী সদস্য রয়েছেন ৩৭১জন। বর্তমানে ৯টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্য কাজ করছেন।উল্লেখ্য, সশস্ত্রবাহিনী থেকে ৪৩টি দেশে এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছেন।এসব তথ্যই বলে দিচ্ছে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসটি কতটা গুরুত্ববহ।
২. শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়ার আক্রমণের শিকার ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুপস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭৫ বছর পূর্ণ করল। এদিনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল পুরুষ-নারীকে শান্তি রক্ষার লক্ষ্যে সর্বোৎকৃষ্ট পেশাদারী মনোভাব বজায়, কর্তব্যপরায়ণতা, নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাঁদের আত্মত্যাগের ঘটনাকে গভীর কৃতজ্ঞতা ও যথোচিত সম্মানপূর্বক স্মরণ করা হয়। ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় নারীদের অবদান ও ভূমিকার উপর সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে। শান্তিরক্ষায় নারীর ভূমিকা ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যেই ওই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
আগেই উল্লেখ করেছি, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী পূর্ণ করেছে ৭৫ বছর। পক্ষান্তরে জাতিসংঘের অধীনে চলতি বছর বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৩৫ বছর পূর্ণ করল(১৯৮৮-২০২৩)। তবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে যুদ্ধরত সিরিয়াতে একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে শান্তি রক্ষায় মুসলিম দেশগুলোর সাথে তাঁর সরকারের বন্ধুত্ব স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন।১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে স্বীকৃতি দেয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা প্রশংসিত হয়েছেন দেশ-বিদেশে। যেমন, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা কোভিড-১৯(২০২০-২০২১)মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখার ক্ষেত্রে অব্যাহত ও নিবেদিতভাবে যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীর অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপসমূহের কথা তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, শান্তিরক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির বিষয়টি বাংলাদেশের ‘নারী, শান্তি ও সুরক্ষা’ বিষয়ক জাতীয় কর্মপরিকল্পনার মূল কৌশলের একটি।এর আগে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, মানবাধিকার সুরক্ষার পাশাপাশি গোলযোগপূর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাদের ভূমিকা আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের মহিলা পুলিশ দল সোচ্চার রয়েছেন সামাজিক-সম্প্রীতি সুসংহত করতে। আমি কোনো মিশনে গেলেই উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের সেনাদের কথা বলি।’ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা অর্জন আমাদের জন্য সত্যিকার অর্থেই গৌরবের। এ সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সেসময় বলেছিলেন, শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্রবাহিনীর অংশগ্রহণের ব্যাপক সুযোগ করে দেয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অঙ্গীকার। তাঁর মতে, ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক শান্তি আর সমৃদ্ধি ক্ষেত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। সে দীক্ষায় দীক্ষিত হয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে সবাই বিশ্বশান্তি বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। সে আলোকেই বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিরলসভাবে কাজ করছেন।’ প্রকৃতপক্ষে নিজেদের জীবন বিপন্ন করে বিভিন্ন দেশের জাতিগত সংঘাত মোকাবেলা এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত বিচিত্র দেশের রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ ও চিকিৎসা সেবায় আমাদের শান্তিরক্ষীরা অনুকরণীয় দায়িত্ব পালন করায় বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত হচ্ছেন।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর বড় অংশ এবং পুলিশ ও অন্যান্য সদস্যরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছেন। ‘দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা’- এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। এখন বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। শান্তি রক্ষা মিশনে অংশগ্রহণকারী বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তা তাঁদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেছেন। যেমন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বায়েজিদ সরোয়ার লিখেছেন ‘কম্বোডিয়া’, ‘কুর্দিস্তানের দিনগুলি’ লিখেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামস। আরো অনেকের গ্রন্থ রয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ নিয়ে। ফলে শান্তি মিশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এদেশে ‘সামরিক সাহিত্যে’র একটি ভিন্ন ধারা সৃষ্টি হয়েছে।
জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপক্ষের সম্মতি এবং মতৈক্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরক্ষা বাহিনীকে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৪৩টিতে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সদস্য
মন্তব্য করুন
সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। পুরাতন ঢাকার ধূপখোলা বাজারে রাস্তার পাশে তিতাস গ্যাস পাইপলাইন লিকেজ থেকে বিষ্ফোরণে পাশ্ববর্তী দোকান ও বাড়িঘরে আগুন লেগে শিশু, নারীসহ ৯ জন দগ্ধ হয়েছেন।
গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বিকালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের ৮ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো থেকে বিষ্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ এলাকায় Dhaka-Narayangonj-Demra (DND, ডিএনডি) Paddy field project এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত একটি পাকা মসজিদের নীচে থাকা গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
রাজধানী ঢাকা ৪ ও ৫ এবং নারায়নগঞ্জ-৪ নির্বাচনী এলাকার পাশাপাশি বেশকিছু এলাকা নিয়ে গঠিত ডিএনডি প্রকল্প এলাকায় অবহেলায় পড়ে থাকা ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের মধ্যকার বিশাল বিলে অব্যবহৃত জমিতে ধান চাষের আওতায় আনার জন্য ১৯৬২ সালে জাপানের অর্থনৈতিক সহায়তায় চারিদিকে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। ধানক্ষেতে সেচ দেওয়ার জন্য এই বাঁধের মধ্যে ৯৫ কিলোমিটার লম্বা আঁকাবাঁকা খাল খনন করা হয়। কিন্তু মেগাশহর ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট আবাসন সংকট মোকাবেলায় ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার ধানক্ষেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঁচাপাকা অসংখ্য বাড়ীঘর নির্মাণ হতে থাকে। ধানক্ষেতের আইল ধরে নিজেদের সুবিধামত রাস্তা তৈরি করা হয়। প্রথমে কাঁচা রাস্তা, পরে ইট বিছানো রাস্তা, সর্বশেষ পাকা রাস্তা। চারিদিকে নির্মিত বাঁধ এর লেবেল থেকে প্রায় ১৫-২০ ফুট নীচে ধানক্ষেতে গড়ে উঠে অপরিকল্পিত জনবসতি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। এই সকল অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা আবাসিক বাড়িঘরের বাসিন্দাদের জ্বালানী চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি থেকে ঐ সকল অপরিকল্পিত রাস্তায় গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করেছে। চারিদিকে রয়েছে উঁচু বাঁধ। ফলে গভীর নলকূপে উত্তোলিত নিত্যদিনের ব্যবহার্য পানি, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় অপরিকল্পিত বসতি ও রাস্তায় পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকলে সমর্থ্য অনুযায়ী যে যার বাড়িতে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে থাকে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে স্থানীয় প্রশাসন রাস্তাঘাট, অলিগলি গুলো মেরামতের নামে মাটি ভরাট করে উঁচু করতে থাকে। সর্বশেষ, ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে স্থানীয় রাস্তা ও তার শাখা-প্রশাখাসমূহ উঁচু করে চারিদিকে নির্মিত ডিএনডি প্রকল্পের বাঁধের সমান উচ্চতায় আনা হয়। ফলে গত দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর পূর্বে জ্বালানি চাহিদা মেটাতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি যে পাইপলাইন স্থাপন করেছিল, লৌহনির্মিত সেই পাইপলাইন সমূহ প্রায় ১৫-২০ ফুট মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়।
রাস্তাসমূহ মেরামতের পূর্বে, কদমতলীর অনেক জলমগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশে প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্যাস পাইপলাইন থেকে বুঁদ বুঁদ করে গ্যাস নির্গত হতে দেখা গিয়েছিল। এবিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরেজমিনে তদন্ত করে এই সমস্যা নিরসনে পরীক্ষামূলকভাবে পদক্ষেপ নেয়া হয়। একটি নির্দিষ্ট এলাকার কয়েক কিলোমিটার রাস্তায় ১৫-২০ ফুট মাটির নীচের পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে ২ ফুট মাটির নীচে ২ ইঞ্চি ব্যাসের নতুন পাইপলাইন স্থাপন করে অনুমোদিত প্রত্যেক গ্রাহককে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয়। ঐ নতুন সংযোগপ্রাপ্ত গ্রাহকদের তরফ থেকে বর্তমানে তেমন কোন অভিযোগ না থাকলেও, ডিএনডি বাঁধের মধ্যকার বৃহৎ এলাকায় ২০-২৫ বছর পূর্বে স্থাপিত তিতাস গ্যাস পাইপলাইনে সংযুক্ত গ্রাহকদের অভিযোগের শেষ নেই। বাড়িতে অপ্রতুল গ্যাস সরবরাহের অভিযোগতো রয়েছেই। এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যাসের চুলার সুইচ অন করার পর প্রথমে পানি নির্গমন হয়, পরে খুবই ক্ষীণ চাপে গ্যাস পাওয়া যায়। রান্নার কাজে ভোগান্তির শেষ নেই। অনেক বাড়ীতে লাকড়ির চুলা বা কেরোসিনের চুলায় রান্না করতে হয়। যদিও গ্যাস বিল নিয়মিত করে যাচ্ছে গ্রাহকগন।
এমনি পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাস পূর্বে কদমতলী থানার ৫৩ নং ওয়ার্ডের হাজী খোরশেদ আলী সরদার রোডের বাসিন্দারা স্থানীয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অফিসে গিয়ে উপরোক্ত অভিযোগ দায়ের করলে, ১৫-২০ বছর পূর্বে স্থাপিত ২০-২৫ ফুট মাটির নীচের ধ্বংস প্রাপ্ত পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো খুঁজতে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে মাটি খুড়তে শুরু করে। ২০-২৫ ফুট মাটির নীচের পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন খুঁজতে গিয়ে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো পুকুর খনন করেও পাইপে ফুটো বা ফাটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঐ সকল এলাকায় চলাচলে ব্যাঘাত ঘটায়, স্থানীয় বাসিন্দারা, একই এলাকায়, ইতিপূর্বে পরীক্ষামূলকভাবে গৃহীত প্রকল্পের ন্যায় পুরাতন পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে দুই ফুট মাটির নীচে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার পরামর্শ দেন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কর্তৃপক্ষ পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন খুঁজতে রাস্তায় পুকুর খননের কাজ বন্ধ করলেও নতুন পাইপলাইন স্থাপন করার কাজ অদ্যাবধি শুরু করেননি।
২৫-৩০ বছর পূর্বে স্থাপন করা লোহার তৈরি পাইপগুলোর টেম্পার নষ্ট হওয়া এবং ১৫-২০ ফুট নিচে মাটির চাপে ঐ পাইপলাইন গুলো ফেটে যাওয়া বা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেই ফেটে যাওয়া স্থান বা ছিদ্র দিয়ে পানি বা কাঁদা ঢুকে যাওয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া ২৫-৩০ বছর পূর্বের স্বল্পসংখ্যক স্থানীয় বাসিন্দার চাহিদা অনুযায়ী যে ব্যাসার্ধের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছিল, পরবর্তিতে প্রয়োজনের তাগিদে সেই একই পাইপলাইন থেকে অনেক বেশি সংখ্যক গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত সরু পাইপলাইনে সক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত সংযোগ দেওয়ায় গ্যাসের চাপও কমেছে।
এমতাবস্থায়, ফেটে যাওয়া বা ফুটো হওয়া গ্যাস পাইপলাইন থেকে নির্গমিত গ্যাস থেকে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি ভিত্তিতে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বিচ্ছিন্ন করে নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া গ্রাহকদের যথাযথ সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরিমাণ গ্যাস সরবরাহে নিশ্চিত করতে পুরাতন গ্যাস পাইপলাইন বাতিল করে অধিক ব্যাসার্ধের নতুন পাইপলাইন স্থাপন করা সময়ের দাবী।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
‘ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো- ভালো থেকো ধান, ভাটিয়ালি গান, ভালো থেকো- ভালো থেকো মেঘ, মিটিমিটি তারা- ভালো থেকো পাখি, সবুজ পাতারা ... ’- এভাবেই বাংলার প্রকৃতি আর প্রাণের প্রতি ভালবাসা জানিয়েছিলেন প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ।
সেই ভালবাসার আকাক্ষায় ছিল শান্তি ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ। সেই সুবাদে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো মৌলবাদের বিরুদ্ধে প্রবল সোচ্চার ছিলেন এই প্রথাবিরোধী লেখকের কলম। ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ নামের উপন্যাস লিখে স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদীদের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি। শিকার হতে হয়েছিল নৃশংস জঙ্গী হামলার। কয়েকজন তুচ্ছ মানুষের চাপাতির আঘাতে হুমায়ুন আজাদের মতো একজন মেধাবী লেখক ও অধ্যাপকের মৃত্যু হয়।
আজ শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) একুশে পুরস্কারজয়ী এই বহুমাত্রিক লেখকের ৭৭তম জন্মদিন ও ৭৬তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার রাঢ়িখাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই কীর্তিমান লেখক। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে অনন্য মননশীল, বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময়, প্রথা ভাঙার রূপকার ছিলেন হুমায়ুন আজাদ।
আরেকজন হুমায়ুন আজাদকে এই বাংলায় ফিরে পাওয়া কি সম্ভব? চাইলেই কি সবাই পারবেন তার মতো সাহসী লেখক হতে? চাইলেই কি লেখা যাবে ‘লাল নীল দীপাবলী’ কিংবা ‘কতো নদী সরোবর’র মতো বই। সৃজনশীলতার ভুবনে বহুমুখী পথে বিচরণ করেছেন হুমায়ুন আজাদ। লিখেছেন পাঠকসমাদৃত কবিতা থেকে উপন্যাস। একই সঙ্গে ছিলেন তিনি ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক ও গবেষক, রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। কর্মজীবনে বেছে নেন শিক্ষকতা পেশাকে। সবশেষ তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অলৌকিক ইস্টিমার’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত হয় এই লেখকের আলোচিত ও সমালোচিত প্রবন্ধের বই ‘নারী’। মূলত গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ুন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে একজন প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
বাংলা সাহিত্যে প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে হুমায়ুন আজাদ যোগ করেন এক ভিন্ন মাত্রা। তাঁর সমস্ত বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে, তার প্রবচনগুচ্ছ এ দেশের যুক্তিবাদী পাঠকসমাজকে করে তুলেছে সচেতন।
হুমায়ুন আজাদের লেখাতে বাঙালি মুসলমান সমাজের কুসংস্কার, ধর্মীয় গোঁড়ামি নিয়ে যুক্তিনির্ভর বক্তব্য উপস্থাপনের মাধ্যমে ভিন্ন মতবাদ তুলে ধরা হয়েছে। এতে একদিকে তিনি যেমন নন্দিত হয়েছেন, আবার নিন্দিতও হয়েছেন। এর সপক্ষে তাঁর জবাব ছিল, তিনি এই গোত্রেরই মানুষ, তাই এ জাতির কাছে তাঁর প্রত্যাশা অনেক; কিন্তু যখন দেখেন বাঙালি অনিবার্যভাবে পতনকেই বেছে নিচ্ছে, তখন তিনি তার সমালোচনা করেছেন। তিনি কুসংস্কারহীন এক আধুনিক সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু মৌলবাদীরা তাঁর স্বপ্নকে সত্যি হতে দেয়নি। তাঁকে হত্যার প্রচেষ্টা এবং পরবর্তীকালে মৃত্যুর মাধ্যমে তাঁর মতবাদকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই প্রখ্যাত লেখক, সাহিত্যিক ও কবিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জানাই। হুমায়ুন আজাদ ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতি ভাষ্যকার ও কিশোর সাহিত্যিক। তিনি ৭০টির বেশি বই লিখেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টি করেছেন ভিন্ন ধারা।
ছাত্রজীবনে হুমায়ুন আজাদ অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ১৯৬২ সালে রাঢ়িখাল স্যার জে সি বোস ইনস্টিটিউশন থেকে পাকিস্তানের মধ্যে ১৮তম স্থান অধিকার করে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬৮ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় ক্ষেত্রে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
গবেষক ও প্রাবন্ধিক হুমায়ুন আজাদ নব্বইয়ের দশকে প্রতিভাবান ঔপন্যাসিক হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেন। হুমায়ুন আজাদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অলৌকিক ইস্টিমার’, ‘লাল নীল দীপাবলি (বাঙলা সাহিত্যের জীবনী)’ ‘জ্বলো চিতাবাস’, ‘শামসুর রাহমান-নিঃসঙ্গ শেরপা’, 'Pronominalization in Bengali’, ‘বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র’, ‘বাক্যতত্ত্ব’, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসেন’, ‘কতো নদী সরোবর (বাঙলা ভাষার জীবনী)’, ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’, ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’, ‘আমার অবিশ্বাস’, ‘সীমাবদ্ধতার সূত্র’, ‘নারী’, ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’, ‘আধার ও আধেয়’, ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’, ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ’, ‘কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ’, ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রভৃতি।
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে হুমায়ুন আজাদের ওপর শারীরিক আক্রমণ করেন ধর্মীয় উগ্রবাদীরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়। পরবর্তী সময়ে জার্মানির মিউনিখ শহরে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ হুমায়ুন আজাদ পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী শিশু-সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৪) এবং ২০১২ সালে তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।
প্রথাবিরোধী বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদ
মন্তব্য করুন
জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। জিয়া পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল। জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেননি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন।
শান্তিরক্ষীদের সীমাহীন আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ২০০৩ সাল থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়ার আক্রমণের শিকার ইউক্রেনের শান্তিরক্ষী সংস্থা এবং ইউক্রেন সরকারের যৌথ প্রস্তাবনায় ১১ ডিসেম্বর, ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত ৫৭/১২৯ প্রস্তাব অনুযায়ী এ দিবসের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়। ১৯৪৮ সালে সংঘটিত আরব-ইসরাইল যুদ্ধকালীন যুদ্ধবিরতী পর্যবেক্ষণে গঠিত জাতিসংঘ ট্রুস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো) দিনকে উপজীব্য করে ২৯ মে তারিখটি স্থির করা হয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ ট্রুপস সুপারভিশন অর্গ্যানাইজেশন (আন্টসো)-ই হচ্ছে প্রথম জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী। এই হিসেবে(১৯৪৮ সাল থেকে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী ৭৫ বছর পূর্ণ করল।
গত ২৭ এপ্রিল ২০২৩ বিকালে নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জে রূপসী-কাঞ্চন সড়কের পাশে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের ৮ ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপলাইনে সৃষ্ট ফুটো থেকে বিষ্ফোরণ সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ এলাকায় Dhaka-Narayangonj-Demra (DND, ডিএনডি) Paddy field project এলাকায় অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত একটি পাকা মসজিদের নীচে থাকা গ্যাস পাইপলাইন বিষ্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
একটি অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসছে। রোববার সকাল নাগাদ এটি বাংলাদেশ ও মায়ানমারের মধ্যে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টির নামের বানান ও উচ্চারণ বিভ্রান্তিতে পড়েছে দেশের মিডিয়া জগত। মোচা, মোকা, মোখা, মকা, মখা, মউকা ইত্যাদি নামে ডেকে যাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ঘূর্ণিঝড়ের নাম কেন দরকার ? আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ের আসল নাম কোনটি ? নাকি সবই সঠিক ?