১৯৭৫
এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যার নেপথ্যে ছিলেন জিয়া। ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট
থেকে ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহে দেখা যায় জিয়া ছিলেন একজন নিষ্ঠুর স্বৈরাচার এবং ঠান্ডা
মাথার খুনী। তার অপকর্মের কিছু চিহ্ন পাওয়া যায় ‘মহিউদ্দিন আহমদের’ লেখা ‘জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি’ শিরোনামে গ্রন্তটি থেকে। পাঠকের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে
গবেষণাধর্মী গ্রন্থটির কিছু অংশ ধারাবাহিক প্রকাশ করা হলো:
১৬ জুলাই বিকেলে তাহের করপোরাল
মজিদকে তাঁর সেলে ডেকে নিলেন। বললেন, 'আমাদের অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে। নেক্সট টাইম
আমরা আরও কেয়ারফুল হব । এয়ারফোর্সকে রি-বিল্ড করতে হবে। ছিয়াত্তরের ১৫ জুলাই রায়
ঘোষণার কথা ছিল। রায় দেওয়া হলো ১৭ জুলাই। রায় ঘোষণার সময় অভিযুক্তরা সবাই হইচই,
চিৎকার করছিলেন এ রায়ে তাহের, জলিল ও আবু ইউসুফের ফাঁসির আদেশ হয়। পরে রায় সংশোধন
করে জলিল ও ইউসুফকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া
ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন মেজর জিয়াউদ্দিন (১২ বছর), আ স ম আবদুর রব, হাসানুল হক ইনু
ও আনোয়ার হোসেন (প্রত্যেকের ১০ বছর), সিরাজুল আলম খান, করপোরাল আলতাফ হোসেন ও করপোরাল
শামসুল হক (প্রত্যেকের সাত বছর), নায়েব সুবেদার মোহাম্মদ জালালউদ্দিন, হাবিলদার এম
এ বারেক, রবিউল আলম, সালেহা বেগম ও নায়েক সিদ্দিকুর রহমান (প্রত্যেকের পাঁচ বছর) এবং
হাবিলদার আবদুল হাই মজুমদার ও করপোরাল আবদুল মজিদ (প্রত্যেকের এক বছর)। কারাদণ্ডের
সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে বিভিন্ন অঙ্কের জরিমানা এবং অনাদায়ে তিন মাস থেকে দুই বছর
পর্যন্ত অতিরিক্ত কারাবাসের আদেশ দেওয়া হয়। যাঁরা 'বেকসুর খালাস' পান, তাঁদের মধ্যে
ছিলেন আখলাকুর রহমান, আনোয়ার সিদ্দিক, মহিউদ্দিন, নায়েব সুবেদার বজলুর রহমান, মাহমুদুর
রহমান মান্না, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, মো. শাজাহান, কে বি এম মাহমুদ, আম্বিয়া, হাবিলদার
সুলতান হামিদ, নায়েক আবদুল বারী, সার্জেন্ট কাজী আবদুল কাদের, কাজী রোকনউদ্দিন, নায়েব
সুবেদার আবদুল লতিফ আখন্দ, নায়েক শামসুদ্দিন ও সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। আদালতের
শুনানির ওপর কোনো রকমের তথ্য বাইরে প্রকাশ করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
২১ জুলাই ভোর চারটায় তাহেরের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
তাহের ছিলেন অত্যন্ত সাহসী,
প্রাণবন্ত ও আশাবাদী। রায় ঘোষণার পর থেকে তাকে কখনো মন করতে দেখা যায়নি। তিনি যখন
ফাঁসির মঞ্চের দিকে হেঁটে যান, তখনো তিনি ছিলেন দৃপ্ত, অবিচল।
'ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলার
রায় মানি না'- এই স্লোগান ব্যবহার করে জাসদ ৩১ জুলাই হরতাল আহ্বান করে। হরতাল সফল
করার জন্য ঢাকা নগর গণবাহিনীর কয়েকটি ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুতি নেন। কামরাঙ্গীরচরে
হুসেনের ঘরে বাদল, মুশতাক, ইদ্রিস, ইয়াকুব এবং আরও কয়েকজন ৩০- ৪০টি 'নিখিল' বানিয়েছিলেন।
একটাও ফাটেনি। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তপন কুমার সাহা জুরাইনের একটি বাড়িতে
বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন। ঘটনাটি ছিল খুবই মর্মান্তিক ।
৩১ জুলাই কোথাও হরতাল হয়নি।
জাসদ সমাজ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। অনেক জায়গায় কর্মীরা কোনো শেল্টার
পাচ্ছেন না। কোথাও কোথাও জনতা তাঁদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
গণবাহিনীর সদস্য আবু আলম শহীদ খান গুলিস্তান ভবনে চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী জহিরের অফিসে
চাঁদা আনতে গেলে অফিসের কর্মচারীরা তাঁকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। জাসদ কেন্দ্রীয়
কমিটির তথ্য ও গণসংযোগ সম্পাদক শাহ আলম মগবাজারে চীনা দূতাবাসের একটি অফিসে প্রচারপত্র
দিতে গেলে দূতাবাসের কর্মচারীরা তাঁকে ধাওয়া করেন । তিনি দেয়াল টপকে কোনোমতে পালাতে
সক্ষম হন। সময়টা বৈরী। চারদিকে পরাজয় ও হতাশা।
সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। যে তারুণ্যের শক্তি নিয়ে জাসদ একদিন মাথা তুলে
দাঁড়িয়েছিল, চার বছরের মাথায় তা প্রায় নিঃশেষিত।
তাহেরের ফাঁসি নিয়ে বাংলাদেশের
কোনো রাজনৈতিক দল বা বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় মাথা ঘামায়নি। দলের তরুণদের কাছে এটা ছিল
একটা ভীষণ দুঃখজনক ঘটনা। রায়হান ফেরদৌস মধুর উদ্যোগে একটা কবিতা সংকলন বের করা হলো।
তাহেরকে নিয়ে লিখলেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে ছিলেন মাশুক চৌধুরী, অসীম সাহা, আবু করিম,
মোহন রায়হান প্রমুখ। অসীম সাহার একটা কবিতার কয়েকটা লাইন ছিল এরকম :
তাহের
তাহের বলে ডাক দিই
ফিরে
আসে মৃত্যুহীন লাশ
কার
কণ্ঠে বলে ওঠে আকাশ বাতাস
বিপ্লব
বেঁচে থাক তাহের সাবাশ।
এই মামলায় যাঁরা খালাস পেয়েছিলেন,
তাঁদের অনেককেই দীর্ঘদিন জেলে বন্দী রাখা হয়েছিল বিশেষ ক্ষমতা আইনের মাধ্যমে। এঁদের
একজন ছিলেন সার্জেন্ট সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। তাঁকে কখনো এক মাস, কখনো ১৫ দিন, কখনো বা
এক সপ্তাহের আটকাদেশ দিয়ে আটকে রাখা হতো। ষোলো মাস পর সাতাত্তর সালের নভেম্বরে তিনি
জেল থেকে ছাড়া পান।
৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান, জাসদ-গণবাহিনীর
হঠাৎ জড়িয়ে পড়া, জিয়ার সঙ্গে তাহেরের সখ্য এবং পরিণামে প্রতারণার শিকার হওয়া এসব
দলের মধ্যে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। এ ছাড়া তাহেরের আগবাড়িয়ে জিয়াকে প্রধান সামরিক
আইন প্রশাসক, এমনকি রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া নিয়েও বিতর্ক হয় । জাসদের
মতো একটা গণমুখী রাজনৈতিক গণসংগঠনের এরকম 'সামরিকীকরণ' কতটুকু কাঙ্ক্ষিত ছিল, এ নিয়ে
মতপার্থক্য দেখা দেয়। এসব বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে একটা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা হয়।
পঁচাত্তরের ডিসেম্বরে দলের এক মূল্যায়নে বলা হয়:
৭ নভেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর
রহমানকে কোনো প্রকার সরকারি আদেশ ব্যতীতই বিপ্লবী সিপাহি ও বিপ্লবী গণবাহিনী কর্তৃক
বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার পেছনে একটিমাত্র যুক্তি
ছিল তা হলো, নিদেনপক্ষে জিয়াউর রহমান হয়তো বা এত তাড়াতাড়ি কোনো বিদেশি শক্তির কাছে
মাথা নত করবেন না, আত্মমর্যাদা বিকিয়ে নেবেন না- বিপ্লবী সিপাহিসহ সাধারণ জনতার ওপর
এত শিগগির অত্যাচারের স্কিম রোলার চালাবেন না, অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক জাতীয়
সরকার গঠন করবেন এবং অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে কিছুটা হলেও শিক্ষা গ্রহণ করবেন। কিন্তু
ক্ষমতায় আসীন হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই জিয়াউর রহমান ও তাঁর সঙ্গীরা বেমালুম ভুলে গেলেন
তাঁদের চার দিনের বন্দিজীবনের কথা।
জিয়া ও তাহেরের সম্পর্কের
বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। এ নিয়ে তাহেরের মনোভাব সামরিক আদালতে দেওয়া তাঁর জবানবন্দিতে
কিছুটা উঠে এসেছে সত্য, কিন্তু এটা ছিল অনেক পরে বিচার চলার সময়ের মন্তব্য। নভেম্বরের
ওই মুহূর্তে তাহেরের মনে কী ছিল, তা জানার তেমন কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে তাহের সংসদের
প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অধ্যাপক আহমদ শরীফের প্রশ্ন ছিল :
কর্নেল তাহের সম্বন্ধে আমার
একটা জিজ্ঞাসা রয়েই গেল। তা এই, কর্নেল তাহের সিপাহি-জনতার অভ্যুত্থান বলে প্রচার
করলেও মূলত এ অবসেনানী কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের সৈন্যদের প্রভাবিত করে তাদের দিয়েই
ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট দখল করান। সিপাহি জনতার জাসদী (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল) নেতা কেন
পাকিস্তান ও ইসলাম পছন্দ' জিয়াউর রহমানের উপর আস্থা রাখলেন, আর কেনই বা সিআইএ এজেন্ট
খন্দকার মোশতাক আহমদকে—যিনি ট্রেইটর সর্বার্থে ও সর্বাত্মকভাবে,
তাঁকে বা-ইজ্জত স্বরে নিরাপদে বাস করার সুযোগ দিলেন, হত্যা না করে, হাজতে না পাঠিয়ে
বিচারের ব্যবস্থা না করে।
(সূত্র: জাসদের উত্থান
পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি ।। পৃষ্টা: ২১৯-২২২)
মন্তব্য করুন
আজ ৪ জুন, জাতীয় চা দিবস। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য- ‘চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প।’ এবার দেশে তৃতীয়বারের মতো এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। চা পৃথিবীতে একটি পরিচিত পানীয়। চায়ের স্বাদ গন্ধ রঙ ক্লান্তি শ্রান্তি শেষে শরীরে সতেজতা আনতে সাহায্য করে। চা হয়ে উঠেছে বাঙালির নিত্যসঙ্গী। প্রমথ চৌধুরী এ সম্পর্কে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে লিখেছেন- ‘চা পান করলে নেশা না হোক, চা পানের নেশা হয়।’ কখনো চায়ের সাথে বিশেষ বৃষ্টি বা শীতের আবহাওয়ার একটা সাযুজ্য পান রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা।
চা-পান নিয়ে সেকালের কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিস্তর। তাদের নানা লেখায় ও অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকের স্মৃতিকথায় প্রকাশ পেয়েছে চায়ের প্রতি তাদের অনুরাগ।
সেন্ট্রাল টি বোর্ডের চায়ের বিজ্ঞাপনে কবিগুরুর একাধিক কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে। আর তা প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বভারতীয় পত্রিকার বেশ কটি সংখ্যায়।
চা পানের বিচিত্র পদ্ধতি ছিল রবীন্দ্রনাথের। তিনি খানিকটা গরম জলে কয়েকটা চা পাতা ফেলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেয়ে নিতেন। ১৯২৪ সালে চীন ভ্রমণকালে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গী ছিলেন দোভাষী নামক একজন নারী। এ বিদেশি বন্ধুর নামে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সুসীমো চা-চক্র’ মজলিস। ১৯২৮ সালে ‘সুৎসী-মো’র শান্তিনিকেতন দর্শন উপলক্ষে গান রচনা করেন। ‘হায় হায় হায় দিন চলি যায়/চা-স্পৃহ চঞ্চল চাতকদল চলো চলো চলো হে।’ পরবর্তীকালে এ চা-চক্রের আমন্ত্রণে আরেকটি কবিতায় কবি অতিথিগণকে নিয়ে লেখেন। ‘চা-রস ঘন শ্রাবণ ধারা প্লাবন লোভাতুর/কলাসদনে চাতক ছিল ওরা।’
ঔপন্যাসিক শংকরের লেখা ‘অচেনা অজানা বিবেকানন্দ’ গ্রন্থ থেকে স্বামী বিবেকানন্দের চা প্রেমের খবর পাওয়া যায়।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের চা পান সম্পর্কে হেমেন্দ্রকুমার রায় লিখেছেন- ‘কেবল কাঁড়ি কাঁড়ি পান নয়, আঠারো-বিশ পেয়ালা চা না পেলে সিক্ত হতো না তার কণ্ঠ দেশ!’
এক কাপ চা দিয়ে আপনি কয়েক মুহূর্ত অসাধারণ অনুভূতি কিনে নিতে পারবেন। প্রিয়জনের সাথে বসে দু কাপ চা পান করতে করতে কথার ঝুড়ি সাজিয়ে তুলুন। বুঝতে পারবেন কী এক অনন্য মুহূর্ত কাটাতে চলেছেন আপনি। এক কাপ চা শুধু যে চা তা নয়। বরং এর সাথে মিশে থাকে দু চামচ চিনি এবং এক চামচ ভালোবাসা। নিঃসন্দেহে এক কাপ চা এবং একটি ভালো বই বৃষ্টিমুখর দিনে, আপনার ভালো সঙ্গী হয়ে উঠবে। কখন যে সময় কেটে যাবে আপনি টেরই পাবেন না।
উল্লেখ্য, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যোগে তৃতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা দিবস' এবং দ্বিতীয়বারের মতো 'জাতীয় চা পুরস্কার' দেয়া হবে আজ।
চা শিল্পে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ৮টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন চা কোম্পানি/ব্যক্তিকে ‘জাতীয় চা পুরস্কার ২০২৪’ দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী চা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত চা মেলা পরিদর্শন করার পরিকল্পনা আছে।
চা দিবস সেন্ট্রাল টি বোর্ড রবীন্দ্রনাথ
মন্তব্য করুন
এসএসসি বা মাধ্যমিকের শিক্ষা সমাপ্তির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চতর শিক্ষার দুয়ারে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে এক বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে। একজন শিক্ষার্থীর ১০ বছরের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ধরা হয় এসএসসি পরীক্ষাকে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে। এই পরীক্ষার ওপর তার শিক্ষা জীবনের অন্য স্তরের সফলতাও নির্ভরশীল। আর তাই এই এসএসসি পরিক্ষার পরের ধাপে ভর্তি হতে হয় একাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তিচ্ছুকরা বিশেষ কয়েকটি কলেজকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাদশে ভর্তি পদ্ধতিটা ভিন্ন রকম হওয়ায় কোন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল নিয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেনা আবার অনেক কলেজ পায়না ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে কলেজগুলোতে থাকে শিক্ষার্থীশূণ্যতা।
গত কয়েক বছর ধরে চার্চ পরিচালিত রাজধানীর চারটি কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়ে থাকে। যার মধ্যে রয়েছে হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, সেন্ট গ্রেগরি এবং নটর ডেম কলেজ। এসব কলেজে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। অন্যদিকে ঢাকা কলেজসহ দেশেরে বিভিন্ন কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়না কিন্তু জিপিএর মাধ্যমে ভর্তি হতে হয় এবং পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে অনেক শিক্ষার্থী কলেজ না পাওয়া বা ভর্তি হতে না পারার সম্ভাবনাই সেবচেয়ে বেশি। একশ্রেনীর ভর্তিচ্ছুকরা দেশের ভালো কলেজের ভর্তির জন্য ঝুঁকেও অনেকেই ভর্তি হতে পারেনা তাদের কাঙ্খিত কলেজে। আবার অন্যদিকে যেসব কলেজে পরীক্ষার নাম্বারের ভিত্তিতে ভর্তি করা হয় সেসব কলেজ ভর্তি নেওয়ার জন্য পায়না তেমন ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার যেন দেখার কেউ নেই।
আরও পড়ুন: বিসিএস উন্মাদনায় তরুণ প্রজন্ম
ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে উক্তির্ণ হয়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হতে হয় এমন কয়েকটি কলেজ ছাড়া দেশের বাকি কলেজ ও মাদ্রাসায় এবারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুসরণ করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হবে। পরে বোর্ডে থাকা শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা করা হবে। এবারও শিক্ষার্থীরা অনলাইনে সর্বোচ্চ ১০টি কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
সম্প্রতি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গণমাধ্যমে বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি ক্ষেত্রে আসনের কোনো সমস্যা নেই। সংকট হচ্ছে, অনেকেই হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে চায়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দমতো ভালো মানের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম। এ কারণে যারা ভালো ফলাফল করেছেন কিছু প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে বেশি প্রতিযোগিতা করতে হবে’।
বিগত বছরগুলোতে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অভিবাবকরা তার সন্তানকে কোন কলেজের নাম দেখে ভর্তির জন্য আবেদন করেননা। কোনটির বিগত ফলাফল কি সেগুলো বিবেচনা করে ভর্তি করানো হয়। অনলাইনে ভর্তি পদ্ধতিতেই অনেকে ঝুঁকছেন। এছাড়াও একই মহল্লায় একাধিক কলেজ থাকে। কিন্তু কিছু অভিবাবক তাদের সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আবার কিছু অভিবাবক কলেজের নাম এমনকি কিছু শিক্ষার্থীর অভিবাবকরা বিগত বছরগুলোর ফলাফল চিন্তা করে তাদের সন্তানদের ভর্থি করাতে চান। এতে করে একজন শিক্ষার্থী কোন কলেজে পড়লে তাদের পড়াশুনার বেঘাত হবে না বা সঠিক মানের কলেজে পড়ে সঠিক শিক্ষা অর্জনে শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ধাপ সম্মন্ন করতে পারবে অভিবাবকদের কাছে সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?
তথ্য বলছে, এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারা দেশে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী পাস করেছে।। দেশের কলেজগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৫ লাখ। আর মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসন রয়েছে আরও কয়েক লাখ। সবমিলে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ। সে হিসেবে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ১১ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে। তবে দেশে ভালো মানের কলেজ রয়েছে সর্বোচ্চ ২০০। আর এসব কলেজে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে সর্বোচ্চ ১ লাখ। ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন্দ্র করে ভর্তিচ্ছুদের বাড়ছে আগ্রহ। অথচ সারা দেশে এসএসসি ও সমমানে সর্বোচ্চ ফলাফল জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১২৯ শিক্ষার্থী। জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর নিচে পেয়েছেন এমন শিক্ষার্থী রয়েছেন ৫ লাখ ৬৬ হাজার ৯৪৯ জন। তাহলে সর্বোচ্চ ভালো ফল করেও প্রায় ১ লাখ ছাত্রছাত্রী তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। অন্যান্য বছরের মত এবারেও তিন ধাপে ভর্তি সম্পন্ন করা হতে পারে।
গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তিন ধাপে ভর্তি শেষ করতে চাইলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাও তিন ধাপে ভর্তির আবেদন শেষে কোনো কলেজ বরাদ্দ পান না। কারণ হিসেবে ভর্তি কার্যক্রমে যুক্ত শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, আবেদনের সময় শিক্ষার্থীরা ১০টি কলেজ পছন্দক্রম দেওয়ার সুযোগ পায়। তারা বারবার পছন্দের কলেজগুলো পছন্দের তালিকায় রাখে। ওই কলেজগুলোতে তাদের নম্বর অনুযায়ী আসন মেলে না। এতে একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত কিছু শিক্ষার্থী ভালো ফল করেও কলেজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়।
কলেজ শিক্ষার্থী শিক্ষা ব্যবস্থা
মন্তব্য করুন
দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি চাকরি। আর তাই
সরকারির চাকরির মধ্যে এক নম্বরে পছন্দের বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এ ক্যাডার হওয়ার
জন্য চলে রীতিমতো পড়াশোনার যুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রচন্ড এক জেদে এগিয়ে
যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে
ছুটছেন তাই না প্রকৌশল বা মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং
ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ হতে চাচ্ছেন।
বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) পরীক্ষা বাংলাদেশে সরকারি পদে চাকরি অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এবং সেই পরিক্ষার সহায়ক হওয়া জন্য শিক্ষার্থীরা একাধিক কারণে এই পথে যেতে চায়, যেমন সরকারি সেবা, সামাজিক সেবা, ক্যারিয়ার সুযোগ, সামরিক ও আর্থিক সুরক্ষাসহ নানান অর্জনের দৌড়ে বর্তমান তারুণ্যরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিরাপদ জীবিকা নির্বাহের মোহে শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের প্রধান লক্ষ্য, যে করে হোক বিসিএস ক্যাডার হতে হবে। না হতে পারলে জীবন বৃথা। চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক এমন পেশাজীবীর মর্যাদাও নিশ্চিত করতে হবে। অন্য পেশায় জীবন নিশ্চিত করতে না পারলে চাকরিপ্রার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটবেন এটিই স্বাভাবিক।
আরও পড়ুন: কেন চাকরির বয়সসীমা ৩৫ করা উচিত নয়?
এদিকে দেশের প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ নিষ্ক্রিয়। অর্থাৎ তারা পড়াশোনায় নেই, কিংবা কর্মসংস্থানে নেই। এমনকি কোনো কাজের জন্য প্রশিক্ষণও নিচ্ছেন না। মেয়েদের মধ্যে নিষ্ক্রিয়তার হার বেশি, ৬১ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এ হার কম, ১৮ দশমিক ৫৯ শতাংশ। দিন দিন এই ধরনের তরুণের সংখ্যা বাড়ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ২০২২ প্রতিবেদনে বিবিএস নিষ্ক্রিয় তরুণের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ধরেছে ১৫ থেকে ২৪ বছর। তাদের হার ধরে হিসাব করে দেখা যায়, নিষ্ক্রিয় তরুণের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৯ লাখ।
প্রতিবছর বিসিএস পরীক্ষায় প্রার্থী বেড়ে যাওয়ায় এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। যে তরুণরা কেন বিসিএস মুখী হচ্ছে তার যৌক্তিক কিছু কারণও কিছু খুঁজে পাওয়া যায়। যেমন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে বিভিন্ন নীতিমালা, নতুন নতুন পে-স্কেলে সরকারি চাকরীজীবি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি।
এছাড়াও আরও কিছু কারণ উঠে এসেছে। যেমন, সামাজিক মর্যাদা, বর্তমান সরকারের আমলে বড় রকমের ঝুটঝামেলা ছাড়া স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া, মেধার মূল্যায়ন, বেতন বেসরকারি চাকরির প্রায় সমান, সরকারি চাকরিতে নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপের কারণে, ক্ষমতার জন্য, বিয়ের বাজারে বিসিএস চাকরিজীবীর কদর বেশি, সরকারি চাকরি হতে অবসর গ্রহণের পর পেনশন ও গ্রাইচুটি সুবিধা, তরুণদের পড়াশোনা শেষ করে উদ্যোক্তা হবার মত পুঁজির অভাব এ ব্যাপারে পরিবারের সাপোর্ট না থাকাসহ নানাবিধ কারণে শিক্ষিত তরুণরা সরকারি চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
শুধু কি স্ফীত বেতন ও লোভনীয় পেনশনের আকর্শনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র আকৃষ্ট হয়! তরুন সম্প্রদায় সর্বত্তম নিদর্শন হিসেবে বেছে নেয় বিসিএস। কারণ তারা শাসন কার্যে নিজেদের নিয়োজিত করতে চায়। যে শাসন দেশের দাসত্বকে করে দৃঢ়মূল, দারিদ্রকে করে ক্রম বর্ধমান।
বিসিএস একটা নিছক চাকরির পরীক্ষা নয়, এটা হল একটা ‘লাইফ স্টাইল’ চয়েজ করার মতো। এই লাইফস্টাইল চয়েজ অনেকের পছন্দ না। বাংলাদেশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা গৎবাঁধা সরকারি চাকরির পেছনে না দৌড়িয়ে চ্যালেঞ্জিং, সৃজনশীল আর স্বাধীন জীবন যাপনের প্রতি আকর্ষণবোধ করে থাকেন। এ কারণে অনেকে উচ্চ বেতনের বেসরকারি চাকরি, নিজস্ব ব্যবসা বা পারিবারিক ব্যবসায় নিয়োজিত হতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন। এছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চেয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিসিএসে অংশগ্রহন করার প্রবণতা কম থাকে। অনেকের আবার সৃজনশীল অথবা টেকনিকাল কাজে আগ্রহ বেশি থাকায় তারা সরকারি চাকরির দিকে কম ঝুঁকে।
আরও পড়ুন: জিপিএ-৫ পেয়েও ‘নামি’ কলেজে ভর্তি কঠিন!
অস্বাভাবিক "সম্মান" এর লোভে তরুণরা এখন এই ক্যাডার সার্ভিসে ঝুঁকছে। যেখানে সার্ভিসে আসার মূল কারণ হওয়া উচিত ছিল দেশের সেবা করা। সেটার বদলে এখন সার্ভিসে আসলে নিজের আখের গোছানো সুবিধা তাই সবাই আসতে চায়। এই মেন্টালিটি নিয়ে যারা সার্ভিসে ঢুকবে তাদের কাছ থেকে আপনি কি সার্ভিস আশা করবেন? কোরায় একজন ক্যাডারের লেখা দেখেছিলাম সে একদম সরাসরি বলছে যে অন্য কাজের ভ্যালু নাই শুধু বিসিএসই একমাত্র যোগ্য চাকরি দেশের সেবার জন্য। ভেবে দেখেনতো তাহলে, তারা কি চিন্তা নিয়ে সার্ভিসে ঢুকছে!
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের প্রাইভেট সেক্টরের ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের CSE, EEE, IT এর মতন ডিমান্ডিং বিষয়ে পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সময় মনমতো চাকরি পেতে হিমশিম খায়। এমনকি একদল তরুণ যাচ্ছে বিদেশে আরেক দল যাচ্ছে বিসিএস এ, দেশের কাজ তাই চায়না ইন্ডিয়া থেকে বেশি টাকা দিয়ে লোক এনে করানো লাগতেসে। তাই এতে স্পষ্ট সমস্যাটা বহুমাত্রিক।
তবে এটার ফলাফল হচ্ছে দেশ এমন একটা নিউ জেনারেশন পাচ্ছে যারা এনালিটিকাল
ক্ষমতার বদলে মুখস্ত ক্ষমতায় দক্ষ বেশি হচ্ছে। যাদের সায়েন্স, টেকনোলজি, ফিলোসফি বা
ইকোনমিক্সের বদলে MP3 পড়ায় বেশি আগ্রহ। বিসিএসমুখী পড়ালেখার কারণে শিক্ষার্থীরা গুরুত্ব
দিয়ে পড়ালেখা করেন। যার ফলে তারা বিষয়ভিত্তিক পড়ালেখায় যথাযথ মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন।
ফলে উচ্চশিক্ষার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।
বিসিএস বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস তরুণ প্রজন্ম বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকেই পারি দেন বিদেশে।
শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশেষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে বেড়েছে। গেল বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?
রোববার (১২ মে) এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর এক সংবাদে সম্মেলনে পরিক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের সংখ্যা কম দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন ছেলেরা পিছিয়ে তা জানতে শিক্ষা বোর্ড প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ অনুযায়ী এসএসসি ফলাফলে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কেন এগিয়ে তার কিছু সুনির্দিষ্ট দিক থেকে শিক্ষার্থীদের বেড়ে উঠা, তাদের প্রতি পরিবারে দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি যে..
সাধারণত পড়াশোনার ক্ষেত্রে ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার পেছনে মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় করা প্রধানত দায়ী হতে পারে। ছেলেরা বাইরে ঘোরাঘুরির পাশাপাশি বাসায় ফিরে মোবাইল ফোনে ডুবে যাচ্ছে। স্কুলপড়ুয়ারা অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করায় পড়ালেখায় মনোযোগী হতে পারছে না। এমনকি ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা মোবাইল ফোন ব্যবহারের বেশি সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়াও ছেলেদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। ছাত্রীদের মধ্যে তারা পড়াশোনায় বেশি আগ্রহ দেখছেন। আর ছেলে সন্তানদের চেয়ে মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী হয়ে ওঠায় তাদের পড়াশোনায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বাবা-মাও। এমনকি মেয়েদের লেখাপড়ায় অভিভাবকরা বেশি ব্যয় করতেও দ্বিধা করছেন না।
সচেতন মহল মনে করছেন, স্কুলপড়ুয়া ছেলেটার হাতে বাবা-মা মোবাইল তুলে দিচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার হাতে দিচ্ছে না। হয়তো অন্য কোনো চিন্তা থেকে দিচ্ছে না। তাতে মেয়েটা পড়াশোনায় মনোযোগ দিচ্ছে। আর ছেলেটা ফেসবুক, গেমিংয়ে সেটা ব্যবহার করছে। এভাবে ছেলেরা পড়ালেখায় ক্রমে চরম অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।’ অতি মাত্রায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়ালেখায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে।
মেয়েরা কেন এগিয়ে
মেয়েরা পড়ালেখায় মনোযোগি হতে পারে কারণ তারা আগ্রহশীল, সাহায্যকারী, মনোযোগী, এবং সমর্থনশীল হতে পারেন। তাদের প্রকৃতি বিশেষভাবে পড়াশোনার ক্ষেত্রে উত্সাহী এবং অনুশাসিত হয়। মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগের আরও কিছু কারণ হতে পারে, যেমন..
সামাজিক প্রতিফলন: সাধারণ সমাজে শিক্ষার প্রতিফলন মেয়েদের হাতেই। তাই তারা নিজেকে সমাজের মধ্যে সাবাস করার জন্য শিক্ষালোভী হতে চায়।
প্রতিযোগিতামূলক: মেয়েদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষার আগ্রহ অনেক। আর তাই তারা শিক্ষা অর্জন ও পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারে।
সামর্থ্য ও উদারতা: মেয়েদের অনেকে সামর্থ্য ও উদারতা দেখানোর চাপে থাকে, যা তাদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে।
পরিবারের সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা মেয়েদের উত্সাহ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এতে করে মেয়েদের ফলাফল আসে সাফল্যের।
এছাড়াও সম্পূর্ণ সমাজে মেয়েদের উপলব্ধি ও প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগিতা বৃদ্ধি করে। এই সমস্ত কিছু কারণে মেয়েদের পড়ালেখায় মনোযোগিতা বৃদ্ধি হয় তার তাই তারা পরিক্ষার ফলাফলে অর্জন করে সাফল্য।
সাধারণত আদর্শ ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হিসেবে আমরা জানি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত উপস্থিত থাকা, নিয়মিত পড়াশোনা করা, সহপাঠদের (জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও শ্রেণী নির্বেশেষে) সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করা, নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, মাদক থেকে দূরে থাকা, প্রলোভন থেকে বিরত থাকা, এমনকি সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকা।
যা করা উচিৎ
সম্প্রসারণ ও সমর্থন: পরিবারের সদস্যরা ছাত্রদের শিক্ষামূলক প্রক্রিয়ার সমর্থক করতে হবে এবং তাদের পক্ষ থেকে প্রশংসা ও সমর্থন প্রদান করতে হবে।
প্রোত্সাহন ও সমর্থন: পারিবারিক সদস্যরা ছাত্রদের এমন কার্যকলাপে উৎসাহিত করতে হবে যা ছাত্রদের শিক্ষামূলক ও ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ছাত্রদের প্রেরণা ও মনোনিবেশ: ছাত্র প্রোত্সাহন ও প্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে তারা উচ্চ লক্ষ্য স্থাপন করতে পারে এবং নিজেদের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ:
এছাড়া ছাত্র-ছাত্রী উভয়কেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন ক্যারিয়ার প্লানিং, দারিদ্র্য সহায়তা, নৈতিক শিক্ষা, ব্যক্তিগত উন্নতি ইত্যাদির জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কেননা পারিবারিক শিক্ষাব্যবস্থা সামাজিক, মানসিক ও ব্যাক্তিগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্থ ও সমৃদ্ধ রেখে তাদের পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ফলে ছাত্র-ছাত্রীরে মেধা বৃদ্ধি হতে পড়াশোনায় মনোযোগি হবে। এবংকি পরিক্ষার ফলাফল অগ্রগতি হবে। জাতি হবে শিক্ষিত। প্রজন্ম গড়বে শিক্ষিত মেধাযুক্ত।
মন্তব্য করুন
আজ ৪ জুন, জাতীয় চা দিবস। এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য- ‘চা দিবসের সংকল্প, শ্রমিকবান্ধব চা শিল্প।’ এবার দেশে তৃতীয়বারের মতো এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। চা পৃথিবীতে একটি পরিচিত পানীয়। চায়ের স্বাদ গন্ধ রঙ ক্লান্তি শ্রান্তি শেষে শরীরে সতেজতা আনতে সাহায্য করে। চা হয়ে উঠেছে বাঙালির নিত্যসঙ্গী। প্রমথ চৌধুরী এ সম্পর্কে তার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে লিখেছেন- ‘চা পান করলে নেশা না হোক, চা পানের নেশা হয়।’ কখনো চায়ের সাথে বিশেষ বৃষ্টি বা শীতের আবহাওয়ার একটা সাযুজ্য পান রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা।
এসএসসি বা মাধ্যমিকের শিক্ষা সমাপ্তির মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক কিংবা উচ্চতর শিক্ষার দুয়ারে প্রবেশ করে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে এক বিশাল জ্ঞানের রাজ্যে। একজন শিক্ষার্থীর ১০ বছরের পরিশ্রমের ফসল হিসেবে ধরা হয় এসএসসি পরীক্ষাকে। এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। যা গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে। এই পরীক্ষার ওপর তার শিক্ষা জীবনের অন্য স্তরের সফলতাও নির্ভরশীল। আর তাই এই এসএসসি পরিক্ষার পরের ধাপে ভর্তি হতে হয় একাদশ শ্রেণিতে। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার জন্য ভর্তিচ্ছুকরা বিশেষ কয়েকটি কলেজকে গুরুত্ব দিতে দেখা যায়। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একাদশে ভর্তি পদ্ধতিটা ভিন্ন রকম হওয়ায় কোন শিক্ষার্থী ভালো ফলাফল নিয়েও পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারছেনা আবার অনেক কলেজ পায়না ভালো শিক্ষার্থী। এই অসামঞ্জস্যতার ফলে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত অন্যদিকে কলেজগুলোতে থাকে শিক্ষার্থীশূণ্যতা।
দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের পছন্দের শীর্ষে সরকারি চাকরি। আর তাই সরকারির চাকরির মধ্যে এক নম্বরে পছন্দের বিসিএস ক্যাডার হওয়া। আর এ ক্যাডার হওয়ার জন্য চলে রীতিমতো পড়াশোনার যুদ্ধ। শিক্ষার্থীদের মনের মধ্যে প্রচন্ড এক জেদে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয়। শুধু যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা বিসিএসের পেছনে ছুটছেন তাই না প্রকৌশল বা মেডিকেল কলেজের অনেক শিক্ষার্থীও এখন ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ হতে চাচ্ছেন।
বাংলাদেশের চাকরির বাজারের প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা হওয়ার জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। চাকরিপ্রত্যাশীদের মতে সরকারি চাকরির মত পেশাগত নিরাপত্তা আর কোথাও নেই। আর সেজন্যই অনেক দেশে বেশি বয়সে সরকারি চাকরির আবেদনের সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশে এর সীমাবদ্ধতা ৩০ বছরে রয়েছে। সরকারি চাকরির কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ দক্ষতার দরকার হয়। সেই দক্ষতা অর্জনের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। তাছাড়া চাকরির আবেদনের বয়স যতই থাকুক না কেন, পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ অনির্দিষ্ট হয় না। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ৫ বা ৭ বার সিভিল সার্ভিসের জন্য আবেদন করতে পারেন। আমাদের দেশেও যেকোন যুক্তিতে বয়স বাড়াতে গেলে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত।
একটি জাতির মেরুদণ্ড হল শিক্ষা। যা কিনা জাতি গঠনের প্রধান উপাদান। স্বমহিমায় নিজেদের উদ্ভাসিত করতে কেবল শিক্ষত জাতিই পারে। বিবেকবান মানুষ, সুনাগরিক, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্ববান ও দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার বিকল্প নেই। সে জন্য প্রয়োজন শিশুকাল থেকেই শিক্ষা অর্জন। স্কুল-কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য পারি দেন বিদেশে। শিক্ষার সূচনা পরিবারের থেকে হলেও জ্ঞান অর্জনের বাল্যকালের বিশষ ধাপ মনে করা হয় প্রাইমারি থেকে এসএসসি পর্যন্ত। আর এই এসএসসি পরিক্ষার ফলাফলে চলতি বছরে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের গড় হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৪। যা গতবারের (২০২৩ সালে) চেয়ে পাসের হার বেড়েছে। গেল পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। কিন্তু এবারের এসএসসি তে মোট পাসের হারের মধ্যে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪.৪৭ আর অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১.৫৭ শতাংশ। এর নেপথ্যের কারণ কি? কেনইবা ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের পাসের হার এগিয়ে?