নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ এএম, ১১ অগাস্ট, ২০১৮
শোকের মাস আগস্ট। এই মাসেই জাতি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। স্বাধীন দেশের মাটিতে ষড়যন্ত্রকারীদের নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে। শোকের মাসে বাঙালি জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে জাতির পিতা ও অন্যান্য শহীদদের।
এই শোকাবহ মাসে বাংলা ইনসাইডার পাঠকদের জন্য নিয়েছে বিশেষ আয়োজন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের কিছু স্মরণীয় লেখা তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ থাকছে এম আর আখতার মুকুল এর ‘লন্ডনে মুজিব হত্যার সংবাদ কীভাবে পৌঁছাল’ শিরোনামে একটি লেখা। লেখাটি নেওয়া হয়েছে রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে।
লন্ডনে মুজিব হত্যার সংবাদ কীভাবে পৌঁছাল
এম আর আখতার মুকুল
সিংহ রাশিতে জন্ম আমার। তাই সমগ্র জীবনটাই হোচ্ছে শুধু উত্থান-পতন। কখনই এক নাগাড়ে বেশিদিন সুখ আমার সহ্য হয় না। এই লন্ডন মহানগরীতে এর ব্যতিক্রম হলো না। মাত্র বছর খানেক আগেও আমি ছিলাম বাংলাদেশ হাই কমিশনের একজন কূটনীতিবিদ। তখন আমার বাসা ছিল লন্ডনের সবচেয়ে অভিজাত এলাকা `হ্যামস্টেড`-এ। কার্যোপলক্ষ্যে প্রতিনিয়তই আমার যাতায়াত ছিল ব্রিটিশ ফরেন অফিস, কমনওয়েলথ সচিবালয়, বুশ হাউস-এর বি বি সি, আর ফ্রিট স্ট্রিট-এর সংবাদপত্র অফিসগুলোতে। সন্ধ্যার পর পার্টি ও নৈশভোজের আমন্ত্রণ না থাকালে প্লে-বয় কিংবা ভিক্টোরিয়া ক্লাবে আমার যাতায়াত ছিল নিয়মিত। মাঝে-মধ্যে নাটক দেখার বাতিক ছিল। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ‘উইক-এন্ড’ কাটাবার জন্য সপরিবারে গাড়িতে চলে যেতাম লন্ডনের বাইরে।
হঠাৎ করেই আমার জীবনের ছন্দ পতন হল। স্বল্পকালের ব্যবধানে এখন আমি পূর্ব লন্ডনের সর্ড-উইচ হাই স্ট্রিট-এর এক বিরাট চামড়ার কারখানার একজন সাধারণ শ্রমিক। ফ্যাক্টরির নাম একজি ফ্যাশানস। মালিক হচ্ছেন সিলেটের জনৈক বঙ্গ সন্তান। এখানে আমার কাজ প্রতিদিন সকালে পাঁচ তলা থেকে কাঁধে করে। চামড়ার গাড়ি চার তলায় নামিয়ে সেগুলোকে অর্ডার মোতাবেক কাটিং করা । কখনও ‘বোমা জ্যাকেট` কখনও বা মেয়েদের ওভারকোট। কাজে কোনো ফাঁকি দিলে নিজেরই আর্থিক ক্ষতি। কারণ এখানে কাজ হচ্ছে পিস ওয়ার্ক পদ্ধতিতে । অর্থাৎ যে শ্রমিক যত বেশি কাজ করবে, তার তত বেশি কামাই হবে। এক কথায় বলতে গেলে ‘নো ওয়ার্ক নো পে’ । তাহলে তো গোড়া থেকেই কথাগুলো গুছিয়ে বলতে হয়।
সেদিনের তারিখটা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। আমি তখন লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনে প্রেস কাউন্সিলারের দায়িত্বে। সকালে গার্ডিয়ান কাগজে একটি ডবল কলাম বিজ্ঞাপন দেখে চমকে উঠলাম। বিজ্ঞাপনের শিরোনাম ‘বাংলাদেশের ডিকটেটরকে সরিয়ে (‘রিমুভ`) ফেলতে সাহায্য করুন। বিজ্ঞাপনদাতা হিসাবে যে সংস্থায় নাম ছাপা হয়েছে, সেই নামের কোনো সংস্থ অস্তিত্ব পর্যন্ত নেই। সকাল থেকেই মনটা খুব অস্থির হয়ে রইল।
কিন্তু হাই কমিশনে কারো সঙ্গে আলাপ পর্যন্ত করতে সাহস হলো না। প্রথমেই হাই কমিশনার শ্রদ্ধেয় সৈয়দ আবদুস সুলতানের কথা। এ সময় স্থানীয় বিখ্যাত ‘রিজেন্ট পার্কে মূলত সৌদি সরকারের টাকায় একটি মসজিদ তৈরি হচ্ছিল। লন্ডনে মুসলিম দেশগুলোর সমস্ত রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনাররা এই মসজিদ কমিটির সদস্য ছিলেন। সেই সুবাদে আমাদের হাই কমিশনারও এই কমিটিতে ছিলেন একজন সিনিয়র মেম্বার। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে অন্যান্যদের মতো তারও উৎসাহের ভাটা পড়ল। ফলে তাঁর প্রতিনিধি হিসাবে আমাকেই মসজিদ কমিটির পরবর্তী বৈঠকগুলোতে যোগ দিতে হল। কিন্তু প্রথম দিনের বৈঠকে যাওয়ার আগে মাননীয় হাই কমিশনার আমাকে এ মর্মে ব্রিফিং দিলেন যে, ‘বেশি কিছু মাতবেন না। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত মিয়া মমতাজ দৌলতানা যে লাইনে কথা বলবেন, আপনিও সেই মোতাবেক কথা বলবেন এবং ভোট দিবেন।’
আমি কিন্তু এ ধরনের ব্রিফিং-এ হতবাক হয়নি। মুহূর্তে আমার মনে পড়ল অখণ্ড পাকিস্তানি জামানার কথা। দুর্দান্ত প্রতাপশালী স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল (অব)। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের সময় মরহুম আবুল হাশিমের পরামর্শে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ধকল এড়িয়ে পুরনো মুসলিম লীগ দলটাকেই দখল করে বসেন। পদ্ধতিটা ছিল খুবই অভিনব। পশ্চিম পাকিস্তানের হোমড়া-চোমড়া মুসলিম লীগাররা ছাড়াও চট্টগ্রামের ফজলুল কাদের চৌধুরী, ময়মনসিংহের মোনেম খা, রংপুরের আবুল কাশেম, খুলনার খান এ. সবুর প্রমুখের মতো পাকিস্তানের যেসব মুসলিম লীগ নেতৃবৃন্দ সামরিক জান্তাকে সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারণ করেছিল, আইয়ুব খান তাদের দিয়ে করাচির ক্লিফটন বিচ-এ মুসলিম লীগের এক বিরাট কনভেনশন আহবান করিয়ে নিজেই পার্টি দখল করে বসলেন। এ থেকেই আইয়ুব খানের মুসলিম লীগের নামকরণ হল ‘কনভেনশন মুসলিম লীগ’।
পাকিস্তান মুসলিম লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অনতিবিলম্বে পার্টির কাউন্সিল অধিবেশন আহবান করে দলকে পুনর্গঠিত করলেন। সংবাদপত্রের ভাষায় এই পুর্নগঠিত উপ-দলের নামকরণ হল ‘কাউন্সিল মুসলিম লীগ`। এই কাউন্সিল লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলেন কট্টর প্রতিক্রিয়াশীল পাঞ্জাবি নেতা মিয়া মমতাজ। দৌলতানা আর অন্যতম ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ময়মনসিংহের সৈয়দ আবদুস সুলতান। সৈয়দ সাহেব আইয়ুব-বিরোধী গণঅভ্যুত্থানের সময় মুসলিম লীগ থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় আশ্রয় নিলেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ টিকিটে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার প্রস্তাবিত গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সীমান্ত অতিক্রম করলেন।
কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ভদ্রলোক আওয়ামী লীগের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে খুব একটা সুবিধা করতে পারলেন না । ময়মনসিংহ জেলার আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে সৈয়দ সাহেবের স্থান হল না। সর্বজনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মনোরঞ্জন ধর, জিল্লুর রহমান, রফিকউদ্দিন ভূঁইয়া, ডা. আজিজুর রহমান মল্লিক এবং আবদুল মোমেন প্রমুখের পর `নব্য আওয়ামী লীগের’ সৈয়দ আবদুস সুলতানকে ময়মনসিংহ জেলার (সদর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ) কোটায় মন্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করার প্রশ্নই উঠল না।
নিয়তির পরিহাসই বলতে হয়। আলোচ্য ঘটনা প্রবাহের জের হিসাবে লন্ডনে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম হাই কমিশনার হলেন সৈয়দ আবদুস সুলতান। আবার কিছুদিনের ব্যবধানে খণ্ডিত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হলেন সেই-ই মিয়া মমতাজ দৌলতানা। এখন দু’জন হচ্ছেন দুই দেশের নাগরিক। কিন্তু পারস্পরিক সম্পর্ক?
তাই গার্ডিয়ান` পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে মাননীয় হাই কমিশনারের সঙ্গে কোনো আলাপই করলাম না। এরপর ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব ফারুক চৌধুরীর কথা। সিলেটের এক খান্দানি বংশের সন্তান ফারুক সাহেব উচ্চ শিক্ষিত ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। যদিও ১৯৭২ সালে লন্ডনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পেটে অপারেশনের সময় এই চৌধুরী সাহেব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কষ্টের কথা চিন্তা করে হাসপাতালের করিডোরে নিজেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন।` তবুও একথা উল্লেখ করতে হয় যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভদ্রলোক ঢাকায় পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বহাল তবিয়তেই কাজ করে গেছেন। তাই বলতে বাধা নেই যে, আমি জনাব ফারুক চৌধুরীকে একজন সহকর্মীরূপে পছন্দ করলেও কোনো সময় একান্ত আপনজন হিসাবে গ্রহণ করতে পারিনি।
সবশেষে হাই কমিশনের গোয়েন্দা প্রধান জনাব নূরুল মোমেন খান মিহির । বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি যখন বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক, তখন জনাব খান জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার । (এন এস আই) প্রথম মহাপরিচালক হিসেবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে নেতৃবন্দের আস্থাভাজন হয়েছিলেন। আবার দুজনে একই সঙ্গে লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকশিনে। তখন আমাদের মধ্যে চমৎকার সমঝোতা। সপ্তাহের প্রতি সন্ধ্যায় অবসর মুহূর্তে আমরা দুজন একই সঙ্গে। একেবারে মানিকজোড়। সমস্ত রাত্রির প্রাইভেট পার্টি থেকে শুরু করে ম্যাকলিয়ড রোডের ভিক্টোরিয়া ক্লাব পর্যন্ত দুজনার একই সঙ্গে যাতায়াত। খান সাহেবের নতুন গাড়ি ‘অডি-৮০’ আর আমার নতুন জাপানি ‘ডাটসন-১৬০০` নিয়ে আম সমস্ত লন্ডন একেবারে চষে ফেললাম। কখনো উত্তর লন্ডনে শেফিক তালেয়ার বাসায় আডডায়। কখনো কর্পোরেশনের সীমানা ছাড়িয়ে মেথুয়েন রোডে গাফফার চৌধুরীর বাড়িতে, আবার কখনো বা পশ্চিম লন্ডনের শেফার্ড বুশ-এ গাউস ‘এলাহাবাদ রেস্টুরেন্টে’।
এসবের পরেও একটি `কিন্তু` থেকে গেল। ১৯৭৫ সালের মাঝামারি, বাংলাদেশে `বাকশাল` গঠনের প্রাক্কালে দুজনের চিন্তারাজ্যে বেশ কিছুটা ফারাক হয়ে গেল। ‘বাকশাল` গঠনের ব্যাপারে আমার মনে তখনো নানা প্রশ্ন। মানসিক দ্বন্দ্বে আমি জর্জরিত। বাকশালের বিপক্ষে কিছু না বললেও, প্রকাশ্যে বাকশাল কে সমর্থনের জন্য সেচ্ছায় এগিয়ে আসতে ব্যর্থ হলাম । তাই, সত্যি কথা বলতে হলে, ১৪ আগস্ট সকালে অফিসে যেয়েও ‘গার্ডিয়ান` পত্রিকায় এই বিশেষ বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে নুরুল মোমেন খান-এর সঙ্গে কোনো আলাপই করলাম না।
একমাত্র হাই কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ও হিসাব রক্ষণ বিভাগের প্রধান এবং আমার একান্ত সুহৃদ লুৎফুল মতিন-এর সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনায় আগ্রহী হলাম। ভদ্রলোক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শুরুতেই পাকিস্তানি মিশন থেকে ডিফেক্ট করে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন। এ সময় তাঁর সহকর্মী ছিলেন পি আই এ-র ইস্তাম্বুল অফিস থেকে ‘ডিফেক্ট` করা। জনসংযোগ অফিসার মহিউদ্দীন আহম্মদ চৌধুরী।
সে যাই হোক। আলোচ্য দিন সকালে লুৎফুল মতিনকে তার অফিসে পেলাম। । কার্যোপলক্ষ্যে তিনি জেনেভার বাইরে গিয়েছিলেন। তাই আর আলাপ আলোচনা হল না।
দুপুরে আমরা হাইকমিশন থেকে দল বেঁধে কাছেই লাঞ্চ করতে গেলাম। দলের সদস্যরা হচ্ছেন ডেপুটি হাই কমিশনার ফারুক চৌধুরী, সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী, জুলফিকার আলী ভুট্টোর এককালীন প্রাইভেট সেক্রেটারি ও প্রাক্তন কুটনীতিবিদ কায়সার রশীদ চৌধুরী, কায়সার-তনয়া জিনাত, নুরুল মোমেন খান এবং আমি।
খেতে বসে অনেক আলাপ হল। কিন্তু আলোচনার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কথায় কথায় একজন সরাসরি একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘আচ্ছা, আপনারা কেউ বলতে পারেন বঙ্গবন্ধু আর কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবেন?’
হঠাৎ করে জবাবটা দিলেন জিয়াউল হক টুলু।
‘বঙ্গবন্ধুর নীতির জন্য আমরা ব্যবসায়ী সম্প্রদায় মোটামুটি সন্তুষ্ট। আমার তো মনে হয় বঙ্গবন্ধু সরকার আরও বছর দশের জন্য ক্ষমতায় থাকবে।’
এবার গাফফার চৌধুরী ঠোঁট-কাটা কথা বললেন, ‘এভাবে বাংলাদেশ চলতে পারে না। শেখ মনি আরও শক্তিশালী হলে আগামি বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বছর সরকার টিকতে পারে কিনা সন্দেহ।’
গাফফারের এ ধরনের জবাবে বুকটা আমার ধক করে উঠল। তা`হলে কি সাম থিং রং সাম হোয়ের? এবার সবাই আমাকে ধরে বসল। আমার মুখ থেকে সেচ একটা জবাব বের করবেই।` এরকম এক সমাবেশে কোনো কথা না বলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু এদের চাপাচাপিতে আকস্মিকভাবে একটা হেঁয়ালি ধরনের জবাব দিলাম।
‘তা`হলে শোনেন। প্রায় ৭ হাজার মাইল দূরে বসে আমার জবাব সঠিক হবে কিনা জানি না। সঠিক না হলেই খুশি হব। আমার তো মনে হয়, ‘তোমারে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’
প্রাসঙ্গিক বিধায় এখানে গাফফার সম্পর্কিত একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করতেই হচ্ছে। লন্ডনে পরিচিত মহলে তখন একথা প্রায় সবারই জানা ছিল যে, বেকার অবস্থায় অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে বেশ কিছুদিন থেকে চৌধুরী সাহেবের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই ঢাকার সরকারি মালিকানাধীন পত্রিকাগুলোর লন্ডনস্থ সংবাদদাতার চাকুরির জন্য গফফার চৌধুরী প্রার্থী হলেন। এ ব্যাপারে সুরাহার লক্ষ্যে হপ্তা কয়েক আগে বাংলাদেশ বিমানে একটা ফ্রি রিটার্ন টিকিটের ব্যবস্থা করে আমিই চৌধুরী সাহেবকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু এ প্রস্তাবে রাজিও হয়েছিলেন। কিন্তু হিসাবে একটু ভুল ছিল। গাফফার চৌধুরীর মতে শেখ মনির মাধ্যমে চাকুরির সুপারিশ না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিপত্তির সৃষ্টি হল। চাকুরিটা হয়েও হল না।
গাফফার চৌধুরীও তাঁর বরিশাইল্যা জেদ’ ছাড়লেন না। ঢাকায় স্বল্পকালীন অবস্থানকালে একটা চাকুরির জন্য শেখ মনির সঙ্গে দেখা তো দূরের কথা, যোগাযোগ পর্যন্ত করলেন না। দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আবার তিনি লন্ডনের পথে রওয়ানা হলেন। আসার দিনে আওয়ামী লীগের মুখপত্র দৈনিক জনপদ-এর প্রথম পাতায় বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশে বাকশাল`-কে নিয়ে লেখা গাফফার চৌধুরীর সেই বিখ্যাত সম্পাদকীয় প্রকাশিত হল- ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু’।
লন্ডনে ফিরে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই গাফফার চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনায় নতুন বক্তব্য উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন, বাংলাদেশে এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ ও বুরোক্রেটদের কারসাজিতে গোপনে আরও একটা ‘বিপ্লব` হয়ে গেছে। এজন্যই ‘কোলাবরেটার’ আর রাজাকাররা এখন শুধু ক্ষমা প্রাপ্তই নয়, সমাজজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। অবশ্য গাফফারবিরোধিতা ছাড়াও আফসোস-এর সুর দারুণভাবে বিদ্যমান।
লন্ডনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুক্রবার ভোররাত সাড়ে ৩টা। নীরব-নিঝুম। বাংলাদেশের ঘড়িতে এখন সকাল সাড়ে ৯টা। লন্ডনে এর শীতের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। টয়লেট থেকে বেরিয়ে আবার বিছানায় সুযোগ পেলাম না। বিশ্রী শব্দ করে টেলিফোনটা বেজে উঠল। ওপাশ থেকে আওয়াজ ভেসে এলো, ‘হ্যালো, হ্যালো। কে? মুকুল সাহেব? আমি কায়সার বলছি। কায়সার রশিদ চৌধুরী।’
‘তা` কায়সার ভাই এত রাতে? সকালে ফোন করলেও তো` পারতেন, কোনো জরুরি খবর আছে নাকি?’
‘হ্যা খুবই জরুরি কথা। আর ঘুমাতে যাবেন না। আমি এক্ষুণি আসছি।’
‘হ্যালো, হ্যালো-----’
ফোনের লাইনটা খুট করে কেটে গেল। আমি একাকী বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগলাম।
মিনিট দশেক পরেই কলিং বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই কায়সার ভাই হুড়মুড় ঘরে ঢুকলেন।
‘মুকুল সাহেব, এখন মাথা ঠাণ্ডা করে কাজ করার সময়। ঢাকার খবর ভালো না।
‘কায়সার ভাই, যা জানেন সবকিছু খুলেই বলুন। কসম খোদার বলছি, আমি খুব একটা উত্তেজিত হব না। বাংলাদেশে কি মিলিটারি ক্যু হয়েছে? বন্ধবন্ধু বেঁচে আছেন তো?’
‘মুকুল সাহেব, গতকাল দুপুরে ‘পাব’-এ লাঞ্চ খাওয়ার সময় আপনি আর গাফফার যা ভবিষ্যৎ বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, সেটাই হয়েছে। ব্রিটিশ ফরেন অফিসের খবর হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকে ‘ওরা’ হত্যা করেছে। তবে মিলিটারি ক্যু হয়েছে কিনা জানি না।’
আমি পাথরের মতো নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। শুধু চোখের সামনে বারবার করে ভেসে উঠল ধবধবে পাঞ্জাবি পরিহিত সৌম্য চেহারার মুজিব ভাই-এর। অমায়িক হাসিমাখা মুখখানা। মনে পড়ল লন্ডনে পোস্টিং হওয়ার পর ১৯৭০ সালের ৩০ ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার ধানমণ্ডিতে বত্রিশ নম্বরের দোতলায় বঙ্গবন্ধু সঙ্গে আমার একান্তে শেষ সাক্ষাৎকারের কথা। সেদিন দরজা বন্ধ করে শেখ হাসিনার ঘরে দু’জনের মাঝে অনেক কথা হল। ‘তাহলে শেষ পর্যন্ত তুইও আমারে ছাইড়া ছইল্যা যাইতাছস?’
‘মুজিব ভাই, আমি দেশে থাকতে পারলাম না বইল্যা মাফ কইরা দিয়েন। বেয়াদবি নিবেন না। আসলে আপনি কিন্তু আবার `বাস মিস’ করছেন। আমার তো আর ধানমণ্ডি গুলশানে বাড়ি নাই। ব্যাংক ব্যালেন্সও নাই। আমি হইতাছি ছা-পোষা মানুষ। আমি বাঁচতে চাই।’
একটা পশমি আলোয়ান গায়ে বঙ্গবন্ধু বিছানায় কাত হয়ে শুয়েছিলেন। আমাকে ডেকে মাথার কাছে বসালেন। এরপর তার হাতের আঙুলগুলো ফুটিয়ে দিতে বললেন। সবে মাত্র গোটা দুয়েক আল ফুটিয়েছি, এমন সময় বলে উঠলেন `আমার হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা, কর্মী আর অফিসারদের মধ্যে একমাত্র তুই-ই এধরনের কথাবার্তা সাহস কইর্যা বলছস। আমি কিন্তু সবকিছুই আন্দাজ করতে পারি। শুধু মুখ ফুইট্যা বলি না।’
মিনিট খানিক দু`জনেই চুপচাপ। এর পরে বঙ্গবন্ধু হঠাৎ করে আমার হাতটা টেনে গেঞ্জির নিচে তার বুকের উপর নিয়ে গেলেন। বললেন, ‘বলতে পারস কয়টা গুলি আমার এই বুকটা ছেদা কইর্যা ফেলাইব? ভালো কইর্যা বুকটা একটু হাতাইয়্যা দে।
এরপর দুজনেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। আবার ঘরে কবরের নিস্তব্ধতা।
একটু পরেই মুজিব ভাই উঠে নিজেকে সামলে নিলেন। বললেন, বউ পোলাপান সব সঙ্গে লইয়া লন্ডন যাইবি। তোর পরিবারের কেউ যেন বাংলাদেশে না থাকে বুঝছো। ফরেন অফিসেও তোর শত্রু রইছে।’
বিদায়ের সময় মুজিব ভাইকে কদমবুচি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে বুকে ঝড়িয়ে ধরে বললেন, ‘বাংলাদেশে যখন ফেরত আইবি, তখন আমারে আর পাইবি না। আমার কবর যেখানেই থাকক জিয়ারত কইরা একটা সাদা ফুল দিয়া আসিস।
‘তবে তোরে আইজ আরও একটা কথা কইয়া দেই। তুই তো` ১৯৪৬ সাল থাইক্যা আমারে দেখতাছোস। সে-ই ক্যালকাটা পলিটিকস। আমি আছিলাম শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য। ছাত্র রাজনীতিতে দিনাজপুর জেলা থাইক্যা দবিরুল ইসলাম আর তুই ছিলি আমাগো অন্ধ সাপোর্টার। হেই জন্য নুরুল আমিনের টাইম-এ দিনাজপুরে জেলও খাটোস এক বছর। পঞ্চাশ সালের রায়ট-এর বচ্ছর ঢাকায় আইলি ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্য। তারপর মানিক ভাই-এর ইত্তেফাকের জনের টাইম থাইক্যা তুই হইলি ফুল টাইম সাংবাদিক। পাকিস্তানের চব্বিশটা বছরই তুই আমার রাজনীতির সব কিছুই দেখছো। এরপর একাত্তর থাইক্যা তুই হইলি আমার বাংলাদেশ সরকারের অফিসার । যা আইজ তোরে একটা ভবিষ্যত বাণী কইয়া দিলাম। আমি যখন এই দুনিয়ায় থাকুম না, তুই তখন আমার সম্বন্ধে বই লিখবি। বুঝছোস, এইসব বই বেইচ্যা তোর হইবো রুজি-রোজগার। পোলাপান খাওয়াইতে পারবি।’
দরজার ছিটকানি খুলে বেরিয়ে আসার মুহূর্তে আবার পিছনে ডাক এলো। তাঁর স্নেহমাখা হাসি। বললেন, ‘আমার মুকুল, তুই আর ফুটলি না। আর কথা শুইন্যা রাখ। আমার ফ্যামেলির সঙ্গে তাঁর স্পেশাল সম্পর্কের কথা, ভুলিস না। এই বাড়ির তিন-তিনটা `জেনারেশনের লগে তোর হইতাছে ভাই এর সম্পর্ক। ১৯৪৬ সাল থাইক্যা তুই আমারে চিনি। আমি তোর মুজিব ভাই আর রেণু তোর ভাবী। আবার কামাল-জামাল-রাসেল আর হাসিনা-রেহানা তোরে ‘মুকুল ভাই’ কইয়া ডাকে।
‘সব চাইতে বড় ডাকটা তুই শোনছোস? আমার নাতি মানে হাসিনার পোলা ‘জয়`ও কিন্তু তোরে ‘মগল ভাই’ কইয়া ডাকে। এই জন্যই তুই হইতাছোস এই বাড়ির হগলের ভাই’।
কথা ক`টা বলেই মুজিব ভাই তার স্বভাবসুলভ শিশুর মতো সরল হট্টহাস্যে ফেটে পড়লেন। আমি তখন দরজার কাছে থকে দাঁড়ানো। তিনি এবার নিভে যাওয়া পাইপটা আবার ধরিয়ে এক গাদা ধূয়া ছেড়ে হঠাৎ গুরু গম্ভীর গলায় বললেন, ‘করি কি? মনে হইতাছে, মস্কো আমারে এখনও ঠিক মতো বিশ্বাস করে। আবার লাহোরের ইসলামি সম্মেলনে গেছিলাম বইল্যা দিল্লির `সাউথ ব্লক’ গোস্বা। আর নিক্সন-কিসিঞ্জারের আমলে ওয়াশিংটনের পলিসি তো বুঝতেই পারতাছোস। একেবারে এক ঠ্যাং-এ খাড়া। আমাগো মতো `ন্যাশনালিস্ট’গো বিপদ তো এইখানেই। আমি ঠিকই বুঝতে পারতাছি। চিলির পর বাংলাদেশ। আলেন্দের পর এবার আমার পালা। আমিও শ্যাষ দেইখ্যা ছাড়ুম। পারুম কিনা জানি না।’
‘আমি পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইলাম। মনটা আমার কোন সে সুদূরে চলে গেল। হঠাৎ নেতার কথায় সম্বিৎ ফিরে এল। তিনি ধরা গলায় বললেন, ‘আমি যখন থাকুম না, যদি সম্ভব হয় ভাই হিসাবে এগো একটি খোঁজ-খবর নিস।’ সপরিবারে প্রেসিডেন্ট মুজিবকে হত্যার স্বল্প দিনের ব্যবধানে ঢাকা থেকে আমার জনৈক সাংবাদিক বন্ধু কার্যোপলক্ষে লন্ডনে এসে হাজির হলেন। বিবিসি এক্সটানাল সার্ভিসেস-এর বাংলা বিভাগে দেখা। খন্দকার মোশতাক তখন ক্ষমতায় টলটলায়মান। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জানার জন্য। অস্থির হয়ে উঠলাম। বিবিসি`র নুরুল ইসলাম-এর সঙ্গে আমরাও বিকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য বেসমেন্ট-এর রেস্টুরেন্টে গেলাম। তিনজনে অনেক আলাপ হল। একটু পরে রেকর্ডিং-এর জন্য নূরুল ইসলাম উঠে গেলেও আমাদের কথাবার্তা অব্যাহত রইল। কথায় কথায় নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক সাংবাদিক বন্ধু গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার গোরস্থানে বঙ্গবন্ধুর লাশ দাফনের সংগৃহীত কাহিনী বললেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকাল থেকেই কারফিউ। বিকাল নাগাদ টুঙ্গিপাড়ার আকাশে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে হেলিকপ্টার এল। এর আগেও অনেকবার টুঙ্গিপাড়ার লোকজন হেলিকপ্টার নামতে দেখেছে। প্রতিবারই হাজার হাজার লোক টুঙ্গিপাড়ার কৃতী সন্তান শেখ মুজিবকে একনজর দেখার জন্য দৌড়ে গেছে।
কিন্তু এবার? কারফিউ-এর ভয়ে কেউই আর ঘর থেকে বেরুতে সাহসী হল না। বাংলাদেশ বেতারে তখন পাকিস্তানি উর্দু সিনেমার গান আর মাঝে মাঝে সরকারি নির্দেশ ঘোষণা হচ্ছে।
হেলিকপ্টার থেকে ধীরে ধীরে বাংলার অগ্নিপুরুষ ও বর্তমান বিশ্বের। অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতাকে তার জন্মভূমিতে নামানো হলো। কিন্তু তিনি আর জীবিত নেই। এবার টুঙ্গিপাড়ায় নামল একটা বস্তাবন্দি লাশ।
[রহীম শাহ সম্পাদিত ‘পঁচাত্তরের সেই দিন’ বই থেকে নেওয়া। (পৃষ্ঠা- ৯৩ থেকে ১০১)]
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা
করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো
দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না।
পহেলা এপ্রিল পশ্চিমা দেশগুলোতে অনেকে কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন
করে। অন্যথায় কারো না কারো কাছে তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত হতে হবে এবং এটি নিয়ে হাস্যরস
তৈরি হতে পারে।
এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে
পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী
দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
একই সাথে এদিন পরিবারের ছোটরা সাধারণত বড়দের সাথে নানাভাবে মজা
করে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। আবার বন্ধু বা কলিগরাও একে অন্যের সাথে মজা করে। তবে
যাকে বোকা বানানো হয়, তাকে শেষে সবাই মিলে চিৎকার করে জানিয়ে দেয় 'এপ্রিল ফুল'।
ধারণা করা হয়, ইউরোপে এপ্রিল ফুলের প্রসার ফ্রেঞ্চ জাতির মধ্যে।
ফ্রেঞ্চরা ১৫০৮ সাল, ডাচরা ১৫৩৯ সাল থেকে এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে কৌতুকের দিন হিসেবে
পালন শুরু করে। ফ্রান্সই প্রথম দেশ হিসেবে সরকারিভাবে নবম চার্লস ১৫৬৪ সালে এক ফরমানের
মাধ্যমে ১ জানুয়ারিকে নববর্ষ হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন । অর্থাৎ তিনি এটি করেন ১৫৮২ সালে
ইতালীয়ান পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরী প্রবর্তিত গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডার হিসেবে প্রচলন হওয়ারও
আগে। পাশাপাশি ১ এপ্রিল বন্ধুদের উপহার আদানপ্রদানের প্রথা বদলে যায় ১ জানুয়ারি। কারণ
তখন বিভিন্ন দেশে জুলিয়ীও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নিউইয়ার পালিত হত ১ এপ্রিলে। অনেকেই
এই পরিবর্তনকে মেনে নিতে না পেরে এদিনই তাদের পুরনো প্রথাসমূহ চালিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু
১ জানুয়ারির পক্ষের লোকজন এদেরকে ফাঁকি দিতে ১ এপ্রিলে ভুয়া উপহার পাঠানোর প্রথা চালু
করে।
ফ্রান্সে কাউকে বোকা বানালে বলা হত এপ্রিল মাছ (April fish), ফ্রেঞ্চ
ভাষায় poisson d’avril. এই্ নামকরণের কারণ, রাশিচক্র অনুযায়ী স্বর্গের কাল্পিক রেখা
অতিক্রম করলে এপ্রিলে সূর্যকে মাছের মত দেখায়। এইদিনে তারা ছুটি কাটাত এবং মরা মাছ
এনে তাদের বন্ধুদের পেছনে সেটে দিয়ে মজা করত।
ডাচদের আরও কারণ রয়েছে। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপ ১৫৭২ সালে নেদারল্যান্ড
শাসন করতেন। যারা তার শাসন অমান্য করেছিল তারা নিজেদেরকে গুইযেন বা ভিখারী বলে পরিচয়
দিত । ১৫৭২ সালের এপ্রিলের ১ তারিখে গুইযেন বা বিদ্রোহীরা উপকূলীয় ছোট শহর ডেন ব্রিয়েল
করায়ত্ব করে ফেলে। তাদের এই সফলতায় বিদ্রোহের দাবানল দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। শেষমেষ স্প্যানিশ
সেনাপ্রধান বা দ্যা ডিউক অব অ্যালবা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হন। সেই থেকে দিনের প্রচলন।
মুসলমানদের জন্য ট্র্যাজেডির?
বাংলাদেশে একটা প্রচলিত ধারণা এপ্রিল ফুলের সঙ্গে আসলে মুসলমানদের
বোকা বানানোর ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
অনেকেই মনে করেন ১৫শতকের শেষ দিকে স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসান ঘটান
রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা। তারা স্পেনের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রানাডায় হামলা করেন
এবং পরাজিত অসংখ্য মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশুকে মসজিদে আটকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারেন।
আর সেদিনটি ছিল পহেলা এপ্রিল।
কিন্তু এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই বলছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান।
"এটি আমরাও শুনেছি এবং এটি একরকম আমাদের বিশ্বাসের অংশ হয়ে
দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে যখন স্পেনের ইতিহাস পড়েছি, দেখেছি যে
সেসময় গ্রানাডার শাসক ছিলেন দ্বাদশ মোহাম্মদ। তার কাছ থেকেই ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা
গ্রানাডা দখল করে নেন। আর এ ঘটনাটি ঘটেছিল জানুয়ারি মাসের ২ তারিখে। কোন কোন সূত্র
বলে জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ। এবং এটি দুই পক্ষের মধ্যে আনুষ্ঠনিক চুক্তি স্বাক্ষরের
মাধ্যমে হয়েছিল।"
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও
ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, কিন্তু এপ্রিল ফুলের
যে ট্র্যাজেডির কথা বলা হয় সেটার সাথে তার কোন সত্যতা পাওয়া যায় না।
"ইতিহাসে আমরা যে বইগুলো পড়েছি সেখানে কোথাও ঐ বর্ণনা পাইনি।
আমাদের কাছে মনে হয় এই ঘটনা নিয়ে একটা মিথ তৈরী করা হয়েছে, যার সাথে কোন ঐতিহাসিক
সংযোগ নেই।"
মি. ছিদ্দিক বলেন অন্যদিকে গূরুত্ব দিয়ে অবশ্য মুসলমানরা এটি উদযাপন
নাও করতে পারে। কারণ ইসলাম ধর্ম মিথ্যা বলা, প্রতারিত করা বা কাউকে বোকা বানানো সমর্থন
করে না।
মজা আনন্দের জন্য তো কোনো বিশেষ দিন আমাদের না হলেও চলে। সেখানে
কোনো ছক কষে কাউকে ঘাবড়ে, কোনো কঠিন পরিস্থিতির মুখে ফেলে দিয়ে আনন্দ নেওয়াটা সুস্থ
মানসিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে দিতেই পারে।
মজা করে কাউকে বোকা বানাতে চাইলে সেটা বিশেষ কোনোদিনেই করতে হবে এমনটা তো নয়। মজা করুন, তবে সেটা বোকা বানিয়ে নিজের বিমলানন্দ নেওয়ার মাধ্যমে নয়। কারণ আপনি যাকে বোকা বানাতে চান, সে যে আপনাকে কখনো বোকা বানানোর চেষ্টা করতে না, এটা ভাববেন না। আর এই বোকা বানাতে গিয়ে আপনার স্বভাব, সম্পর্কগুলো যে নষ্টের দিকে যেতে পারে, সেটাও তো আপনাকে ভাবতে হবে।
মন্তব্য করুন
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
গবেষণা অনুযায়ী, গত চার মাসে রাজধানীতে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ গবেষণার জন্য পাতা ফাঁদে জানুয়ারিতে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টিরও বেশি পূর্ণবয়স্ক মশা ধরা পড়েছে। যার মধ্যে ৯৯ শতাংশই কিউলেক্স মশা এবং বাকি ১ শতাংশ এডিস, অ্যানোফিলিস, আর্মিজেরিস ও ম্যানসোনিয়া।
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের মধ্যে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত রোগ হচ্ছে মাইক্রোসেফালি, যা মশাবাহিত জিকা ভাইরাসের কারণে হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ভাইরাসের কারণে গর্ভের সন্তানের মস্তিষ্ক অপরিপক্ব থাকে এবং শিশুর মাথা স্বাভাবিকের চেয়ে আকারে ছোট হয়। এই রোগের জন্য ব্রাজিলে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। তবে মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থেকে জনজীবনকে রক্ষা করতে হলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসন মশা নিধনের কার্যকরী আরও পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। মশার উপদ্রব ও জিকা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে, মাছির উপদ্রবে জরাজীর্ণ ঢাকার বসবাসরত কোটি মানুষের। সামনে আসছে বর্ষাকাল। প্রবল বৃষ্টি আর পানিতে টইটুম্বুর থাকবে বাড়ীর আঙ্গিনা রাস্তাঘাট কিংবা আশপাশের অনেক স্থান। বর্ষাকাল মানেই মশা-মাছির উপদ্রব। ছোঁয়াচে রোগের জাঁকিয়ে বসার আদর্শ সময় বর্ষাকাল। তাই এই সময় দরকার অতিরিক্ত একটু সতর্কতা, অতিরিক্ত কিছুটা সাবধানতা। খাবার খোলা রাখলে, বা বাড়িতে নোংরা আবর্জনা জমলে, বা খোলা ড্রেনে মাছির উপদ্রব বাড়ে। মাছি থেকে নানা রকম রোগও ছড়ায়। তাই বাড়ি থেকে মাছি তাড়াতে অবশ্যই করুন এই কাজগুলো।
বিজ্ঞান বলছে, মাছি আমরা যা জানি তার থেকেও অনেক বেশি রোগজীবাণু বহন করে। মাছির ডিএনএ বিশ্লেষণ করে।
আমেরিকান গবেষকরা বলছেন, ঘরের মাছি আর নীল মাছি মিলে ৬০০য়ের বেশি বিভিন্নধরনের রোগজীবাণু বহন করে। এর মধ্যে অনেক জীবাণু মানুষের শরীরে সংক্রমণের জন্য দায়ী, যার মধ্যে রয়েছে পেটের অসুখের জন্য দায়ী জীবাণু, রক্তে বিষক্রিয়া ঘটায় এমন জীবাণু এবং নিউমোনিয়ার জীবাণু।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মাছি এসব জীবাণু এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছড়ায় তাদের পা আর ডানার মাধ্যমে। গবেষকরা বলছেন, মাছি তার প্রত্যেকটি পদচারণায় লাইভ জীবাণু ছড়াতে সক্ষম।
মাছির মাধ্যমে নানা রোগের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। কারণ এটি নর্দমায় বসে, ক্ষতিকর জীবাণু ও ব্যাকটেরিয়া বহণ করে। মাছি দূর করার জন্য বাজারে যেসব স্প্রে কিনতে পাওয়া যায়, সেগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য আরো বেশি ক্ষতিকর।
মাছির উপদ্রব কমানো সহজ কাজ নয়। তবে তা কমানোর চেষ্টা তো করতেই হবে। স্বাস্থ্যক্ষাত ও সিটি কর্পোরেশনের সঠিক উদ্যেগে মাছির উপদ্রব কমানোটা অনকে সহজ হতে পারে। এছাড়াও বাসা বাড়িতে বসবাসরত মানুষজন নিজেরে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মাছির খাবারের উৎসগুলো ফেলে দেওয়া, পোষা প্রাণীর নোংরা দূর করা, মাছি ঢোকার পথ বন্ধ করু, বিশেষ কিছু গাছ রোপণ করুন, এমনকি প্রাকৃতিক ফাঁদ পেতেও মানুষ সতর্ক থাকতে পারে।
মশা. মাছি রাজধানী জনজীবন সিটি কর্পোরেশন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশের
শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা
অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন
সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত
হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত
শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে
মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে
পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের
প্রতিফলন হয়ে দেশ ও
জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার
চেয়ে সুশিক্ষিত
হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সুশিক্ষিত একজন মানুষের মধ্যে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকবে। মনকে সুন্দর করবে। মানসিকতাকে পরিপূর্ণ করবে মানবিকতায়। অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসবে। এক কথায় প্রজন্মকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আর তাই শিক্ষাকে পর্যবসিত করতে হবে সুশিক্ষায়।
সুশিক্ষার অর্থ হচ্ছে শিক্ষার এমন এক অবস্থা, যে শিক্ষার্থীদের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠে সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে।
শিক্ষিত সমাজে অনেক ব্যক্তিই প্রতিনিয়ত হাজারও জঘন্য ঘটনার জন্ম দিচ্ছে। আর নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করছে একদল স্বার্থপর শিক্ষিত মানুষ। যাদের কাছে জিম্মি দেশের নানান শ্রেণী পেশার মানুষ,বৃদ্ধ,শিশু কিংবা নারীরা।
শিক্ষিতের ব্যানার প্রয়োগ করে হাসিল করছে তাদের নিজস্ব স্বার্থ। যা কিনা দেশ জাতীর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব নামধারী শিক্ষিত মানুষদের যেন দেখার কেউ নেই।
দেশের বর্তমান ঘটনাবহুল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বাবা তার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে, আবার তাকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে, শিক্ষক ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে। আবার ছাত্র শিক্ষককে ধর্ষণ করছে তাহলে, শিক্ষিত সমাজে শিক্ষিত ব্যক্তির মানসিকতা কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে। যেখানে বর্তমান সমাজে বাবার কাছেই তার মেয়ে নিরাপদে থাকে না। এটাই কি তাহলে শিক্ষা?
যেখানে বাবা মায়ের কলিজার টুকরা শিক্ষিত সন্তান তার পিতা-মাতাকে রেখে আসে বৃদ্ধাশ্রমে।
শিক্ষা নামক শব্দকে ব্যবহার করে শিক্ষিত নামক লোগো লাগিয়ে ঘুরছে কিছু শিক্ষিত মহল। আর এর মারাত্মক ফলাফল হচ্ছে এসব ঘটনাগুলো। সমাজে সন্তানকে বাবা-মা বড় করছেন। শিক্ষার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। কিন্তু সন্তান তার বাবা-মাকে ভরণপোষণ দিচ্ছেন না। তাহলে এখানে আমাদের শিক্ষার আলো কোথায় গেল?
যদি শিক্ষার বদলে মানুষ সুশিক্ষা অর্জন করত, তাহলে হয়তো নারীরা লাঞ্ছিত হতনা, হতনা বিবাহ বিচ্ছেদ, পরকীয়া, শিশু ধর্ষণ, কিংবা পরম মমতাময়ী মা কে থাকতে হত না বৃদ্ধাশ্রমে।
তবে,
দেশের বড় বড় দায়িত্বতে
থাকা শিক্ষিত ও সুশিক্ষিত দায়িত্ববান
ব্যক্তিরা, কিংবা রাজনীতি, সমাজ কিংবা কোন
নাম করা প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে
থাকা ব্যক্তিরা তাদের সুশিক্ষিত মনোভাবে যদি দেশের তরুন
প্রজন্মকে শিক্ষিত নয়, বরং সুশিক্ষিত
করে গড়ে তোলার জন্য
ভূমিকা রাখেন তাহলে হয়ত বাংলাদেশের পরবর্তী
প্রজন্মে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের নাম প্রথম সারিতে নিয়ে যাবে।
সুশিক্ষা প্রজন্ম বিকাশ তরুণ তরুণী শিক্ষা
মন্তব্য করুন
পুরুষের কাছে নারী মানে মহীয়সী, নারী মানে আত্মবিশ্বাসী, নারী মানে সম্মান, নারী
মানেই মাতৃত্ব, নারী মানে ঠিক যেন তাজা পবিত্র ফুল। যে ফুলকে আগলে রাখতে হয় পরম মমতায়
ভালোবাসায় যত্নে। নারী নামক এই ফুলকেই সাজিয়ে রাখতে হয় ফুলদানিতে। যেন সম্মান ছড়ায়
এক পৃথিবী সমপরিমাণ।
পুরুষের কাছে
নারী হয় ভালোবাসার ফুল, আবার সেই নারীর জন্যই কোন পুরুষ হারায় তার কূল। কেননা পৃথিবীতে
নারী স্থান যতটাই অপ্রত্যাশিত থাকে না কেন, একটি সংসার, পরিবার, সমাজ কিংবা জাতি পরিপূর্ণই
হয় এই নারীর কারণেই।
পুরুষবিহীন
যেমন পৃথিবী অসম্পূর্ণ তেমনি নারীবিহীন এই জগতসংসার পরিপূর্ণ নয়। কেননা, মাতৃগর্ভের
প্রবল নিরাপত্তা ডিঙ্গিয়ে ধূলোর এই পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয় ঠিক নারীর গর্ভ থেকেই।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, পুরুষের ন্যায় নারীদের জীবনেও উচ্চ মানসম্পন্ন এবং মূল্যবান ব্যক্তিত্বের অবস্থা থাকা জরুরী। এটি নারীদের অধিকার, স্বাধীনতা, সমর্থন, এবং সমানুভূতির মাধ্যমে তাদের সম্প্রদায়ে এবং সমাজে প্রতিরোধশীল ও উন্নত করতে সাহায্য হয়ে থাকে। এটি একটি ব্যক্তির যোগাযোগে, সাধারণ জীবনে, শিক্ষা, কাজে, এবং সমাজে প্রভাবিত হওয়ার একটি উপায়ও হতে পারে।
যুগের বিবর্তনে প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের পরিবর্তন হওয়াটা যেমন স্বাভাবিক, তেমনি সেই পরিবর্তনের ফলে যুগের মহিমায় পৃথিবীতে প্রযুক্তিগত দিক থেকে পুরুষদের মতে নারীদেরও ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা নারীদেরকে কর্মস্থলে তাদের সমান অবস্থানে রাখা জরুরী। এতে তৈরি হবে কর্মবন্ধন, সম্পূর্ণ হবে প্রযুক্তির উদ্দেশ্যের সফলতা আর পরিপূর্ণ হবে পৃথিবীর চলমান প্রথা।
এছাড়াও ধর্মীয় জায়গা থেকে দেখা যায়, একটা সময় যেখানে গোটা দুনিয়া যেখানে নারীকে একটি অকল্যাণকর তথা সভ্যতার অপ্রয়োজনীয় উপাদান মনে করতো সেখানে ইসলাম নারীকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। যেসব দোষ নারীকে দেওয়া হতো আল্লাহ তা’আলা কুরআন-উল-কারিমে আয়াত নাজিল করে নারীকে সেসব দোষ অপনোদন থেমে মুক্তি দিয়েছে। তাই নারীদের তার নিজ প্রেক্ষাপটে নিজের স্ব স্ব সঠিক দায়িত্বটা অবগত হয়ে তা পালনে মনযোগী হলে সঠিক পুরুষের কাছে নীতিগত নারী ঠিক সঠিক মূল্যয়ন ই পাবে।
তবে, এক শ্রেনির পুরুষ নামক কিছু অপ্রত্যাশিত মানুষের কাছে নারীর মর্যাদা নেই বল্লেই চলে, এদের মধ্যে কিছু পুরুষের মস্তিস্কহীন, কিছু পুরুষ মনুষ্যত্বহীন আর কিছু পুরুষ অমানুষের গণনায় অবস্থিত। কেননা পৃথিবীতে নারীদের যে পুরুষ সম্মান ভালোবাসা আর মমতায় আগলে রাখতে পারেনা বা জানেনা, সেই পুরুষ কখনোই সঠিক পুরুষের মধ্যে পড়েনা। এতে করে ওইসব নারীদের কাছে পুরুষদের অবমানা হয় যে সব নারী সঠিক পুরুষদেরকে দায়িত্ববান মনে করেন।
তবে, পুরুষ
সর্বদা নারীদেরকে তার মনুষ্যেতর স্থান থেকে পৃথিবীর সেরা সম্মানটা দেওয়া উচিত। কেননা
সঠিক পুরুষ আর সঠিক ব্যক্তিত্বের অধিকারি হতে এই নারীদের ভূমিকাই অপরিসীম। অবস্থান,
আস্থা আর বিশ্বাষের দিক থেকে নারী পুরুষ উভয়েই সমান্তরাল হয়ে জীবন পরিচালনা করা উচিত।
এতে করে তৈরি হবে সঠিক বন্ধন। হোক সেটা সামাজিক, পারিবারিক কিংবা জাতীগত। চলে যাবে
অবমাননা, চরিত্রহীনতা কিংবা নারীর মূল্যহীনতা। থেকে যাবে হৃদয়ের বন্ধন ভালোবাসা সম্মান
আর চলমান জীবন পরিচালনার সুশিল সমাজের পারিবারিক বন্ধন। তৈরি হবে নারী পুরুষের সঠিক
বন্ধন আর ভবিষ্যত প্রজন্মের সঠিক নির্দেশনা।
নারীর প্রতি সম্মান পুরুষের ভালোবাসা নারী দিবস
মন্তব্য করুন
“পৃথিবীতে
যা কিছু মহান সৃষ্টি
চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী
অর্ধেক তার নর’’ কবি
কাজী নজরুল ইসলামের চোখে নারী এভাবেই
ধরা পড়েছে। তবে সবসময় নারীদের
এমন মহান দৃষ্টিতে দেখা
হতো না। এর জন্য
করতে হয়েছে নানা আন্দোলন। নারীর
সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
১৮৫৭
সালের ৮ই মার্চ নারীদের
জন্য একটি স্মরণীয় দিন
বলে বিবেচিত। এ দিন মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের একটি সূচ তৈরি
কারখানার নারী শ্রমিকেরা আন্দোলন
শুরু করেন। কারখানার মানবেতর পরিবেশ, ১২ ঘণ্টার কর্মসময়,
অপর্যাপ্ত বেতন ও অস্বাস্থ্যকর
পরিবেশের বিরুদ্ধে তাদের এক প্রতিবাদ মিছিল
বের হয়। কিন্তু পুলিশ
এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে মহিলা শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
বহু শ্রমিককে আটক করা হয়।
এই ঘটনার স্মরণে ১৮৬০ সালের ৮
মার্চ মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে নিউইয়র্ক
সূচ শ্রমিকেরা। এভাবেই সংঘবদ্ধ হতে থাকে মহিলা
শ্রমিকদের আন্দোলন। এক সময় তা
কারখানা ও ইউনিয়নের গন্ডি
অতিক্রম করে।
১৯০৮
সালে জার্মান সমাজতন্ত্রী নারী নেত্রী ক্লারা
জেটকিনের নেতৃত্বে প্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় জার্মানিতে। এই সম্মেলনে নারীদের
ন্যায্য মজুরী, কর্মঘণ্টা এবং ভোটাধিকারের দাবী
উত্থাপিত হয়। ১৯১০ সালের
২য় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয় ডেনমার্কের কোপেনহেগে। এতে ১৭টি দেশের
প্রতিনিধিরা যোগ দেয়। এ
সম্মেলনেই ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক
নারী দিবস হিসেবে পালনের
সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯১১ সালে
প্রথম ৮ মার্চ দিবসটি
পালিত হয়। ১৯১৪ সাল
থেকে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোতে দিবসটি বেশ গুরুত্বের সাথে
পালিত হতে থাকে। ১৯৭৫
সাল থেকে জাতিসংঘ দিবসটি
পালন করতে থাকে। তবে
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদিত হয় ১৯৭৭ সালের
১৬ ডিসেম্বর। এ সময় জাতিসংঘ
দিবসটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে জাতিসংঘের সকল
সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে দিবসটি পালনের আহবান জানায়। এর ফলে অধিকার
বঞ্চিত নারী সমাজের রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির
পথ সুগম হয়। নারীর
অধিকার রক্ষা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়
এটি এক নতুন অধ্যায়ের
সূচনা করে।
বাংলাদেশ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই যথাযোগ্য
মর্যাদার সাথে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস পালন করে আসছে।
নারী দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বাংলাদেশের সংবিধানে নারী দিবসের শিক্ষাসমূহের
প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের
সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান
মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। কেবল
নারী হওয়ার কারণে যাতে কেউ বৈষম্যের
শিকার না হয় তার
আইনগত সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনে নারীর সুরক্ষার
বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে এবং নারীর নিরাপত্তায়
বিশেষ বিশেষ আইন প্রণয়ন করা
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান শিল্প পোশাক শিল্প, যার অধিকাংশ শ্রমিকই
নারী। পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ,
কর্মঘণ্টা এবং ন্যায্য মজুরী
পাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
যে নারী শ্রমিকদের মধ্য
থেকেই দিবসটির উৎপত্তি হয়েছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে সেরূপ নারী শ্রমিক রয়েছে
কয়েক লক্ষ। নিউইয়র্কের সেদিনকার সূচ কারখানার নারী
শ্রমিক ও বাংলাদেশের পোশাক
তৈরি কারখানার নারী শ্রমিক যেন
একই পথের অনুসারী। বাংলাদেশ
প্রতি বছর। যথাযোগ্য মর্যাদার
সাথে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
করে থাকে। কিন্তু এখানকার নারী পোশাক শ্রমিকেরা
কতটা সুরক্ষিত তার প্রশ্ন থেকেই
যায়।
বাংলাদেশে
নারীদের জন্য অনেক আইন
ও বিধি বিধান থাকলেও
বাস্তব ক্ষেত্রে এখনও নারীরা উপেক্ষিত।
নারীদের গৃহস্থালী কাজের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই, মাতৃত্বকালীন ছুটির
অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি লক্ষ্যণীয়।
তবে এখন এর এ
সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কমেছে। বাংলাদেশের নারী শ্রমিকেরা যে
সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে এর পেছনে
নারী দিবসের কিছুটা হলেও ভূমিকা আছে
বলে মনে করা হয়।
বাংলাদেশসহ
বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিকেরা
আজও নানা ভাবে নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ও
তাজরিন ফ্যাশনস এর দুর্ঘটনার পর
দেখা গেছে, এতে হতাহতদের মধ্যে
অধিকাংশই নারী। নারীদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও মজুরী অধিকাংশ
উন্নয়নশীল দেশেই নিশ্চিত হয়নি বলে মনে করা
হয়। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন
কোনো উপকারে এসেছে বলে মনে হয়
না। অনেকের মতে আন্তর্জাতিক নারী
দিবস বর্তমানে কেবল একটি উৎসবে
পরিণত হয়েছে, যার বাস্তব কোনো
সফলতা নেই।
বর্তমান
যুগকে বলা হয় গণতান্ত্রিক
যুগ, সমতার যুগ। কিন্তু এ
সময়েও নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নারীরা এখন কাজের জন্য
ঘরের বাইরে যাচ্ছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণা, শিল্প-সাহিত্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই নারীর
পদচারণা লক্ষণীয়। কিন্তু তারপরও নারীরা এখনও বিভিন্নভাবে নির্যাতন
ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। নারী উন্নয়নের প্রথম
এবং প্রধান বাধা হলো পুরুষতান্ত্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
উন্নয়ন করতে হলে নারীর
ক্ষমতায়ন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং কাজের যথাযথ
মূল্যায়ন করতে হবে। নারী
উন্নয়নে সমাজ ও রাষ্ট্রকে
একসাথে কাজ করতে হবে।
নারীর প্রধান শক্তি শিক্ষা,
এ শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে হবে। নারীশিক্ষার বিস্তার
ঘটলে নারীর কর্মসংস্থান হবে, আয় বাড়বে
এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। নারী-পুরুষের বিদ্যমান বৈষম্য দূর করা। এর
জন্য নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি
রাজনৈতিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বার্থের উন্নয়নে
প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সহ নারীর উন্নয়নে
সহায়ক সেবা প্রদান করতে
হবে।
আন্তর্জাতিক
নারী দিবস নারীর অধিকার
আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা।
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদ্যাপন
সার্থক হবে।
নারী
উন্নয়নের প্রথম এবং প্রধান বাধা
হলো পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীকে
সব সময় পুরুষের অধীন
এবং ছোট করে দেখা
হয়। সামাজিক কুসংস্কার নারীর অগ্রগতিকে মেনে নিতে পারে
না। এটিও নারী উন্নয়নের
পথে এক বড় অন্তরায়।
নারী যদি শিক্ষার আলোয়
আলোকিত না হয় তবে
সে সচেতন হয় না। তার
আয় বাড়ে না। ফলে সে
অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়।
এরূপ অবস্থা নারীকে দুর্বল করে দেয়। নারীর
কাজের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকাও উন্নয়নের
পথে বাঁধার সৃষ্টি করে।
নারী
দিবস নিয়ে কিছু শিক্ষার্থী,
ডাক্তার ও কর্পোরেট সেক্টরে
নিয়োজিত কর্মজীবী নারীদের মতামত জানতে চাইলে তারা জানায়, মানুষ
এখন নারীদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয়েছে।
নারীরা নিজেরাও তাদের মতামত নিয়ে বেশ সোচ্চার।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক (রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ) জানায়, মেয়েদের নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হতে হবে, কখনো
দমে যাওয়া যাবেনা। একে অপরকে সাহায্য
সহযোগিতা করে এগিয়ে যেতে
হবে।
প্রতিবছর
নারী দিবস উদযাপন নিয়ে
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক
আয়োজন করে থাকে। আন্তর্জাতিক
নারী দিবস ২০২৪ এর
প্রতিপাদ্য - নারীর সম অধিকার, সমসুযোগ,
এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নারীর
অধিকার আদায়ের আন্দোলনের এক স্মারক দিবস।
নারীর প্রতি অবিচার ও বৈষম্যের প্রতিবাদে
এক বলিষ্ট পদক্ষেপ ছিল এই দিনটির
আন্দোলন। যদি বর্তমানে আমরা
নারীর ন্যায্য অধিকার ও চাহিদা পূরণ
করতে পারি, তবেই দিবসটির উদযাপন সার্থক হবে।
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনটি পশ্চিমা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ ঘটা করে পালন করা হয়। এদিনে একে অপরকে চমকে দিয়ে 'বোকা বানাতে' চায়। যদিও বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এই প্রচলন খুব একটা দেখা যায় না। এ দিনটিকে তাই বলা হয় অল ফুলস ডে, বাংলায় বোকা বানানোর দিনও বলতে পারেন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ফলাও করে ভুয়া ও ভুল সংবাদ ছাপায়। পরদিন অবশ্য সেটার সংশোধনী দিয়ে জানিয়ে দেয় খবরটা আসলে এপ্রিল ফুল ছিল।
ঋতু বদলে শীত শেষে বসন্ত, আসছে গ্রীস্ম। ঋতু পরির্বতনের সাথে সাথে মশার প্রবল উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীবাসী। মশা নিধনে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও মিলছেনা স্বস্তি। কয়েল, স্প্রেসহ কোন কিছুতেই কমছে না মশার উৎপাত। যিদিও ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনই মশা নিধনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে তা কার্যক্রম করছে। তবুও নিধন কমছে না মশার। রাজধানীবাসীর জন্য আতংক হিসেবে যোগ হয়েছে মশার যন্ত্রণা। ঢাকার জলাশয় ও নালা নর্দমাগুলোয় জমে থাকা পানিতে মশার প্রজনন বেড়েছে কয়েকগুন। মশা নেই এমন জায়গা খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
বাংলাদেশের শিক্ষার সাথে সুশিক্ষিত কথাটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নৈতিক গুণাবলী না থাকলে যেমন সুশিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয় তেমনি শিক্ষা পরিণত হয় কুশিক্ষায়। প্রকৃত শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে আচরণগত পরিবর্তন, মনুষ্যত্ববোধ জাগ্রত করা কিংবা সুনাগরিকে পরিণীত হওয়া। যা চলামান জীবনের প্রতিফলন হয়ে দেশ ও জাতীর উন্নতিতে অবদান রাখবে। তাই শিক্ষিত হওয়ার চেয়ে সুশিক্ষিত হওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।