সেপ্টেম্বর মাস বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি
শেখ হাসিনার জন্ম মাস। এই সেপ্টেম্বর মাসেই দুনিয়ার নজরকাড়া বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জনের
উজ্জ্বল নেতৃত্বদানকারী বিশ্বনেতা রাষ্টনায়ক শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি জন্মগ্রহণ
না করলে হয়তো বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুক্তি, আইনের শাসন এবং উন্নত বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের
অবস্থান উচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভবপর হতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম
‘বাংলাদেশের আলোর পথযাত্রা’। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মমাসে
‘শেখ হাসিনা রচনা সমগ্র-১’ থেকে চতুর্থ পর্ব পাঠকদের জন্য তাঁর একটি লেখা তুলে ধরা
হলো।
বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের
জন্ম
পর্ব -৪
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালের
২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক জনসভায় বলেন, .... কিন্তু একটি কথা এই যে নতুন
সিস্টেমে যেতে চাচ্ছি, তাতে গ্রামে গ্রামে বহুমুখী কো-অপারেটিভ করা হবে। ভুল করবেন
না। আমি আপনাদের জমি নেব না। ভয় পাবেন না যে জমি নিয়ে যাব। তা নয়। পাঁচ বছরের প্ল্যানে
বাংলাদেশের পঁয়ষট্টি হাজার গ্রামে একটি করে কো-অপারেটিভ হবে। প্রত্যেকটি গ্রামে এ
কো- অপারেটিভের জমি মালিকের থাকবে। কিন্তু তার ফসলের অংশ সবাই পাবে। প্রত্যেকটি বেকার,
প্রত্যেকটি মানুষ – যে মানুষ কাজ করতে পারে, তাকেই কো- অপারেটিভের সদস্য হতে হবে। এগুলো
বহুমুখী কো-অপারেটিভ হবে। পয়সা যাবে তাদের কাছে, ফার্টিলাইজার যাবে তাদের কাছে, টেস্ট
রিলিফ যাবে তাদের কাছে, ওয়ার্কস প্রোগ্রাম যাবে তাদের কাছে। আস্তে আস্তে ইউনিয়ন কাউন্সিলের
যারা টাউট আছেন তাদেরকে বিদায় দেওয়া হবে। ...
আজকে আমার একটিমাত্র
অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে, আমি বলেছিলাম ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে, জেহাদ করতে হবে,
যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি
বলব বাংলার -জনগণকে এক নম্বর কাজ হবে, দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে
হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। গণ- আন্দোলন করতে হবে, আমি গ্রামে গ্রামে নামব। এমন
আন্দোলন করতে হবে যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান
করে দেয় তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
দ্বিতীয় কথা, আপনারা
জানেন আমার দেশের এক একর জমিতে যে ফসল হয়, জাপানের এক একর জমিতে তার তিন গুণ বেশি
ফসল হয়। কিন্তু আমার জমি দুনিয়ার সেরা জমি। আমি কেন সে জমিতে ডবল ফলাতে পারব না,
করতে পারব না, কেন ভিক্ষা করতে হবে!
আমি চাই বাংলাদেশের প্রত্যেক
কৃষক ভাইয়ের কাছে, যারা সত্যিকার কাজ করে, যারা প্যান্ট পরা কাপড় পরা ভদ্রলোক, তাদের
কাছেও বলতে চাই, জমিতে যেতে হবে। ডবল ফসল করুন। প্রতিজ্ঞা করুন আজ থেকে ঐ শহীদদের কথা
স্মরণ করে ডবল ফসল ফলাতে হবে। ভাইয়েরা আমার, একটি কথা ভুলে গেলে চলবে না যে প্রত্যেক
বছর আমাদের ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে। আমার জায়গা হলো ৫৫ হাজার বর্গমাইল। যদি আমাদের প্রত্যেক
বছর ৩০ লক্ষ লোক বাড়ে তাহলে ২৫/৩০ বছরে বাংলার কোনো জমি থাকবে না হালচাষ করার জন্য।
বাংলার মানুষ বাংলার মানুষের মাংস খাবে। সে জন্য আমাদের পপুলেশন কন্ট্রোল, ফ্যামিলি
প্ল্যানিং করতে হবে। এটি হলো তিন নম্বর কাজ। এক নম্বর দুর্নীতিবাজদের খতম করা। দুই
নম্বর হলো কলকারখানায়, ক্ষেতে-খামারে প্রোডাকশন বাড়ানো। তিন নম্বর হলো পপুলেশন প্ল্যানিং।
চার নম্বর হলো জাতীয় ঐক্য। জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য এক দল করা হয়েছে। ...
আমরা তো কলোনি ছিলাম।
দুই'শ বছর ইংরেজদের কলোনি ছিলাম। পঁচিশ বছর পাকিস্তানিদের কলোনি ছিলাম। আমাদের তো সব
কিছুই বিদেশ থেকে কিনতে হয়। কিন্তু তারপর বাংলার জনগণ কষ্ট করে কাজ করতে আরম্ভ করেছে।
কিন্তু তারা তাদের এগোতে, কাজ করতে দেয় না। আরেক বিদেশি সুযোগ পেল তারা বিদেশ থেকে
অর্থ এনে বাংলার মাটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করল। স্বাধীনতাকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করল।
আজ এ দিনে কেন বলছি একথা অনেক বলেছি, এত বলার দরকার ছিল না। কিন্তু আমার চোখের সামনে
মানুষের মুখ ভাসে। আমার দেশের মানুষের রক্ত ভাসে। আমার চোখের সামনে আমারই মানুষের আত্মা।
আমার চোখের সম্মুখে সে সমস্ত শহীদ ভাইয়েরা ভাসে, যারা ফুলের মতো ঝরে গেল, শহীদ হলো।
রোজ কেয়ামতে তারা যখন বলবে – আমরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলাম, তোমরা স্বাধীনতা
নস্যাৎ করেছ। তোমরা রক্ষা করতে পারো নি, তখন তাদের আমি কী জবাব দেব?
আরেকটি কথা, কেন সিস্টেম
পরিবর্তন? সিস্টেম পরিবর্তন করেছি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য। সিস্টেম পরিবর্তন
করেছি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য। কথা হলো, এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, অফিসে যেয়ে
ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যায়, সাইন করিয়ে নেয়, ফ্রি স্টাইল। ফ্যাক্টরিতে যেয়ে কাজ
না করে টাকা দাবি করে, সাইন করিয়ে নেয়, যেন দেশে সরকার নেই। দেখলাম, অনুরোধ করলাম,
কামনা করলাম, কেউ কথা শোনে না, চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।
ভাইয়েরা-বোনেরা আমার,
আজকে যে সিস্টেম করেছি তার আগেও ক্ষমতা বঙ্গবন্ধুর কম ছিল না। আমি বিশ্বাস করি না ক্ষমতা
বন্দুকের নলে। আমি বিশ্বাস করি ক্ষমতা বাংলার জনগণের কাছে। জনগণ যেদিন বলবে 'বঙ্গবন্ধু
ছেড়ে দাও, বঙ্গবন্ধু তারপর একদিনও রাষ্ট্রপতি, একদিনও প্রধানমন্ত্রী থাকবে না। বঙ্গবন্ধু
ক্ষমতার রাজনীতি করে নি। বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছে শোষণহীন সমাজ কায়েম করার জন্য। দুঃখের
বিষয়, তারা রাতের অন্ধকারে পাঁচজন পার্লামেন্ট সদস্যকে হত্যা করেছে, ৩/৪ হাজারের মতো
কর্মীকে হত্যা করেছে। আর একদল দুর্নীতিবাজ টাকা-টাকা পয়সা-পয়সা করে। তবে যেখানে খালি
দুর্নীতি ছিল সেখানে গত দুই মাসের মধ্যে অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধ
করার জন্য আজকে কিছু করা হয়েছে।
শিক্ষিত সমাজের কাছে
আমার একটি কথা, শতকরা কতজন শিক্ষিত লোক। তার মধ্যে শতকরা পাঁচজন আসল শিক্ষিত। শিক্ষিতদের
কাছে আমার একটি প্রশ্ন, আমি এই যে কথা বলছি, আমার কৃষক দুর্নীতিবাজ? না। আমার শ্রমিক?
না। তাহলে ঘুষ খায় কারা? ব্ল্যাক মার্কেটিং করে কারা? বিদেশি এজেন্ট হয় কারা? বিদেশে
টাকা চালান করে কারা? হোর্ড করে কারা? এই আমরা, যারা শতকরা পাঁচজন শিক্ষিত। এই আমাদের
মধ্যে আছে ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ। আমাদের চরিত্র সংশোধন করতে হবে, আত্মশুদ্ধি করতে হবে।
দুর্নীতিবাজ শতকরা পাঁচজনের মধ্যে, এর বাইরে নয়।
বঙ্গবন্ধু শাসন ব্যবস্থায়
পরিবর্তন এনেছিলেন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। স্পষ্ট মনে আছে একবার আমি নিজে আলাপ করেছিলাম,
তখন তিনি বলেছিলেন যে, এদেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয় নি। বার বার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার কীভাবে ভোগ করতে হয়, কীভাবে চর্চা করতে হয় তাও মানুষকে বুঝতে
হবে, মানুষকে বোঝাতে হবে অধিকার অর্জন করলে তা কীভাবে ভোগ করতে হয়। আর অধিকার ভোগ
করা মানে অপরের প্রতি কর্তব্য পালন করা। অপরের অধিকার রক্ষা করা কর্তব্য। এদেশে একটি
বিপ্লব হয়েছে, গেরিলা যুদ্ধ হয়েছে—বিরাট সামাজিক বিবর্তন
আসবে। এ বিবর্তন সমাজে বিরাট পরিবর্তন আনবে। এ পরিবর্তন যাতে মানুষের অধিকার সংরক্ষণের
কাজে লাগে, জনগণের কল্যাণসাধন হয় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য ।
শাসনতন্ত্রের এ পরিবর্তনে
নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তন করা হয়। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সামাজিক বিবর্তনে যে পরিবর্তন
আসবে তাতে অনেক মানুষ অর্থশালী হয়ে পড়বে। নির্বাচন অর্থ ও লাঠির জোরের ওপর নির্ভরশীল
হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে যারা সমাজসেবা করে, দেশসেবা করে, আত্মত্যাগ
করে তাদের লাঠি ও টাকার জোর থাকবে না। যে নির্বাচন টাকা ও লাঠির জোরে হবে, সেখানে এ
ধরনের আদর্শবান ত্যাগী মানুষের কোনো অবস্থান থাকবে না। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিকার
দেশের সেবক যারা তারা যাতে নির্বাচিত হতে পারে তারই জন্য এ পরিবর্তন করা হলো। অন্তত
একটি নির্বাচন যদি হয় তার পরই মানুষ শিখে যাবে কাকে ভোট দিতে হবে ও নির্বাচিত করতে
হবে। মানুষকে কেউ আর টাকা ও শক্তি দিয়ে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। মাত্র তিন বছরের
জন্য তিনি শাসনতন্ত্রের পরিবর্তন এনেছিলেন। নির্বাচনের পর আবার সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরে
যাবেন এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর চিন্তা।
সে সময় কয়েকটি উপনির্বাচন
হয় যে নির্বাচনে ৪/৫/৬ জন প্রার্থী মনোনীত হন। সরকার প্রচার ও প্রকাশনার দায়িত্ব
নেয়। সমানভাবে প্রচারকার্য চলে, সরকার থেকে খরচ দেওয়া হয় সমানভাবে। যে প্রার্থী
সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সে- ই নির্বাচনে জয়ী হয়। কিশোরগঞ্জের এক উপনির্বাচনে উপরাষ্ট্রপতির
ভাই প্রার্থী হয়েও কোনোরকম ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন নি। একজন সমাজসেবক সে নির্বাচনে
জয়ী হয়—যার ব্যক্তিগত টাকা-পয়সা কিছুই ছিল না, শুধুমাত্র
জনগণের সঙ্গে ব্যাপক যোগাযোগ ছিল।
বর্তমান নির্বাচনগুলোর
অবস্থা কী? কালো টাকা ও অস্ত্রশক্তির প্রাধান্য। নির্বাচনগুলো দেখলে বার বার বঙ্গবন্ধুর
ভবিষ্যদ্বাণী আমার স্মরণে আসে, আর মনে পড়ে দেশ ও জনগণকে তিনি কী ভালোবাসতেন, কত গভীরভাবে
চিনতেন।
(সূত্র: শেখ
হাসিনা রচনা সমগ্র-১।। পৃষ্টা: ৮৮-৯১)
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে পিটার ডি হাসের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ডেভিড স্লেটন মিল। আর নতুন এই রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। শুক্রবার (১০ মে) সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ মনোনয়নকে আমরা স্বাগত জানাই। মাস দেড়েক আগে এ বিষয়টা আমাদের জানানো হয়েছে। এখন তারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। আশা করছি— নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশে মানবাধিকার অনেক দেশের চেয়ে ভালো। বিশ্বের কোনো দেশেই মানবাধিকার আদর্শ অবস্থানে নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ যেভাবে দমন করছে, সেটি আমরা টিভির পর্দায় দেখছি। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নাগরিক আন্দোলনকে কীভাবে পুলিশ দমন করছে, সেটিও আমরা দেখছি।
তিনি বলেন, সব দেশের উচিত মানবাধিকার উন্নয়নে একযোগে কাজ করা। আমরাও আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে মানবাধিকার উন্নয়নে কাজ করতে চাই।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের জুলাই থেকে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা পিটার হাসের স্থলাভিষিক্ত হবেন কূটনীতিক মিল। মিনিস্টার কাউন্সেলর হিসেবে ১৯৯২ সালে ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি। এরপর ওয়াশিংটনের ফরেইন সার্ভিস ইনস্টিটিউটের লিডারশিপ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট স্কুলের সহযোগী ডিন, ঢাকায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন ডেভিড মিল।
ডেভিড মিল বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
মন্তব্য করুন
মন্ত্রী-এমপি ফেসবুক আইডি ভেরিফায়েড আইডি
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে পিটার ডি হাসের অধ্যায়। বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন এটি সিনেটের অনুমোদন হলে ডেভিড মিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে আবির্ভূত হবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিচ্ছেন পিটার ডি হাস। অর্থাৎ এটি সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ব্যাপারে যে মার্কিন নীতি অনুসরণ করছিল সেই নীতিতে পরিবর্তন আসছে। নিশ্চয়ই ডেভিড মিল একটি নতুন মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। আর এ কারণেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে নেওয়া হল পিটার ডি হাসকে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, নতুন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে মার্কিন নীতির কী পরিবর্তন করবেন, তার নীতি কী ধরনের হবে? একজন রাষ্ট্রদূতকে যখন মনোনয়ন দেওয়া হয় তখন প্রথমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওই দেশে তাদের পররাষ্ট্রনীতির কৌশলপত্র চূড়ান্ত করে। আর ওই কৌশল বাস্তবায়নের জন্য যাকে যোগ্য মনে করা হয় তাকে মনোনয়ন দেয়।
পিটার ডি হাসকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল এমন এক সময়ে যখন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে গণতন্ত্র সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি, বাংলাদেশের র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি সুস্পষ্ট চাপ দিচ্ছিল। এই চাপকে আরও বাড়ানোর জন্যই পিটার ডি হাস বাংলাদেশে এসেছিলেন। তার দায়িত্ব পালনকালে সুস্পষ্টভাবে তিনি তার অবস্থান প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব দেখানোর লক্ষ্যেই নির্বাচন নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের দৌড়ঝাঁপ করেছিলেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে প্রায় প্রকাশ্য অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিটার ডি হাস মিশন ব্যর্থ হয়েছে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তাও দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পিটার ডি হাসের সরে যাওয়াটা ছিল অবধারিত। অবশেষে সেটাই ঘটল।
এখন ডেভিড মিল বাংলাদেশে কী করবেন? প্রথমত, ডেভিড মিলের কূটনৈতিক ক্যারিয়ার যদি আমরা পর্যবেক্ষণ করি তাহলে দেখব যে, তার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দেয়। একই সাথে বাংলাদেশে চীনকে মোকাবেলা করার জন্য মার্কিন কৌশলেরও একটি ইঙ্গিত বহন করে। ডেভিড মিল বাংলাদেশে উপ-রাষ্ট্রদূত হিসাবে বা ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কাজেই বাংলাদেশ তার পরিচিত। বাংলাদেশের রাজনীতি, বাংলাদেশের মানুষের মন মানসিকতা এবং বাংলাদেশে কীভাবে কাজ আদায় করতে হয় ইত্যাদি কলাকৌশল সম্পর্কে তাকে নতুন করে শিখতে হবে না। এটি ডেভিড মিলের জন্য একটি ইতিবাচক দিক। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এটি বিবেচনা করেই সম্ভবত ডেভিড মিলকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, ডেভিড মিল এখন এই মুহূর্তে চীনের বেজিংয়ে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মার্কিন-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার জন্য কাজ করেছেন। শুধু তাই নয়, ডেভিড মিল চীনের রাজনীতি এবং চীনের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অনেক পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ ধারণা রাখেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ চীনের উপর অর্থনৈতিকভাবে অনেকখানি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর এর প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন একজন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছেন যিনি চীনের রাজনীতির অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে ওয়াকিবহাল। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূরত্বের একটি বড় বিষয় হল, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি মাখামাখির সম্পর্ক। আর এ কারণেই চীনের কূটনীতিতে অভিজ্ঞ এবং চীনের কূটনীতি অলিগলি চেনা ডেভিড মিলকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ডেভিড মিলের নিয়োগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি বার্তা সুস্পষ্ট হয়েছে। তা হল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক, বিশেষ করে অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও প্রসারিত করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য বাংলাদেশ সম্পর্কে অভিজ্ঞ এবং বাংলাদেশে কাজ করা একজন ব্যক্তিকে পাঠানো হয়েছে। তৃতীয়ত বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্কের লাগাম টেনে ধরতে পারে এজন্য চীনের কূটনীতি সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে এমন একজন কূটনৈতিককে বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। এখন দেখা যাক, ডেভিড মিলের বাংলাদেশ মিশন কতটুকু সফল হয়।
ডেভিড মিল বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র কূটনীতি
মন্তব্য করুন
বর্তমানে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল। তবে এই লাইন বধিত হচ্ছে নতুন নকশায়। যা দিয়াবাড়ি থেকে সাভারের আশুলিয়া নয়, বর্ধিত হবে টঙ্গী পর্যন্ত।
এরই মধ্যে বর্ধিত এ পথের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। দ্রুতই নকশা চূড়ান্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। মেট্রোরেল এখন চলছে উত্তরা থেকে মতিঝিল। বর্ধিতাংশ আসছে বছর কমলাপুরে পর্যন্ত চালু হবে।
এদিকে এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণের সময়ই দিয়াবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার পথ তৈরি করে রাখা হয়েছে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। পরিকল্পনা ছিল পথটি আশুলিয়া পর্যন্ত নেয়ার। তবে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কর্তৃপক্ষ।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টঙ্গী পর্যন্ত নেয়া হবে এ রেলপথ; পরিকল্পনা টঙ্গী রেলস্টেশন পর্যন্ত যুক্ত করার।
উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত পথ তৈরি হয়েছে বিআরটি। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে। ফলে এ পথে নতুন করে আরো একটি উড়াল রেলপথ বের করা অসম্ভব। যার জন্য রুট কোনটি হবে তা নিয়ে চলছে পরিকল্পনা।
মেট্রোরেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, এখন টঙ্গী রেলস্টেশন পর্যন্ত এ পথটি যুক্ত করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। মূলত টঙ্গী রেলস্টেশন এবং সড়ক জংশনকে যদি সংযুক্ত করতে পারি, তাহলে ঐ অঞ্চলের মানুষের সুবিধা বাড়বে।
তিনি বলেন, যদিও প্রাথমিক পরিকল্পনায় এখনই এ অংশের কাজে হাত দেওয়ার কথা ছিল না। তবে এবার দ্রুত এ পথে হাঁটতে চায় ডিএমটিসিএল। এরই মধ্যে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শুরু হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত নকশা হবে। এ পথটি যুক্ত হলে টঙ্গী থেকে কমলাপুর পর্যন্ত যেতে সময় লাগবে ৪৮ মিনিট।
মেট্রোরেল বাংলাদেশ ঢাকা রাজধানী
মন্তব্য করুন
ফেক আইডি দিয়ে অপপ্রচার বন্ধে মন্ত্রী-এমপিদের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েড করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এমপি-মন্ত্রীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ইউটিউব চ্যানেল ভেরিফায়েড করার জন্য পাঠালে আমরা ফেরিফাই করে দেবো। ফলে ফেক আইডি দিয়ে আপনার নামে কেউ অপপ্রচার করতে পারবে না।
শেষ পর্যন্ত শেষ হয়ে যাচ্ছে পিটার ডি হাসের অধ্যায়। বাংলাদেশে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ডেভিড স্লেটন মিলের নাম মনোনয়ন দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এখন এটি সিনেটের অনুমোদন হলে ডেভিড মিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসাবে আবির্ভূত হবেন। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বিদায় নিচ্ছেন পিটার ডি হাস। অর্থাৎ এটি সুস্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের ব্যাপারে যে মার্কিন নীতি অনুসরণ করছিল সেই নীতিতে পরিবর্তন আসছে। নিশ্চয়ই ডেভিড মিল একটি নতুন মিশন নিয়ে বাংলাদেশে আসবেন। আর এ কারণেই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরিয়ে নেওয়া হল পিটার ডি হাসকে।