ভারতের কারাগারে
বন্দি গ্লোবাল ইসলামী (সাবেক এনআরবি গ্লোবাল) ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত
কুমার (পি কে) হালদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে এ পর্যন্ত ৩৬টির মতো মামলা করেছে
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রোববার
(৮ অক্টোবর) ৪২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং তা পাচারের অভিযোগে প্রথম
রায় হচ্ছে। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১০-এর বিচারক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের আদালতে মামলার
রায় ঘোষণার কথা রয়েছে।
কারাগারে থাকা
চার আসামি অবন্তিকা বড়াল, শংখ বেপারী, সুকুমার মৃধা ও অনিন্দিতা মৃধা মামলায় লড়ছেন।
প্রথম মামলার আসামিদের মধ্যে পি কে হালদারসহ ১০ জন পলাতক। আসামিপক্ষের আইনজীবী বলছেন,
‘পি কে হালদার যদি অ্যারেস্ট থাকতেন অথবা তিনি যদি মামলায় কনটেস্ট করার (মামলা লড়া)
সুযোগ পেতেন, তাহলে প্রকৃত অর্থে টাকাগুলো কী হয়েছে, কে দোষী, কাকে ব্যবহার করা হয়েছে,
কে ব্যবহৃত হয়েছেন- এসব বিষয় উঠে আসতো।’
দুদকের পাবলিক
প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে ১০৬
জন সাক্ষীর মধ্যে ৯৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আমরা যুক্তি উপস্থাপন করেছি। সব
সাক্ষ্য-প্রমাণে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ২৭(১) ধারা ও মানিলন্ডারিং আইনে অভিযোগ
প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা তাদের ২৭(১) ধারায় ১০ বছর ও মানিলন্ডারিং আইনে ১২ বছরের
কারাদণ্ড প্রত্যাশা করছি।’
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের
আইনজীবী শাহিনুর রহমান বলেন, ‘পি কে হালদারের মানি লন্ডারিং মামলায় মোট আসামি ছিলেন
১৪ জন। ১৪ জনের মধ্যে চারজন কনটেস্ট করছেন। বাকিরা পলাতক থাকায় কনটেস্ট করার সুযোগ
পাননি। আমরা জানি পি কে হালদার ভারতের কলকাতায় আছেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে আনেননি এবং
কনটেস্ট করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। চারজন আসামি কনটেস্ট করছেন। তাকে আনলে হয়তো কনটেস্ট
হতো। আর আমরা যারা আছি তারা কেউ নিকটাত্মীয়, কেউ পি কে হালদারের অফিসিয়াল স্টাফ।
আমাদের মামলার মধ্যে বলা হচ্ছে, আমরা পি কে হালদারকে মানি লন্ডারিংয়ে সহায়তা করেছি,
আমাদের অ্যাকাউন্টে টাকা-পয়সা গেছে। আর আমরা বলেছি, আমাদের অ্যাকাউন্টে যে টাকা এসেছে
তা মানি লন্ডারিংয়ের টাকা কি না তা আমরা জানি না। আমরা যেটা জানি তা হলো বিজনেস ট্রানজেকশনে
আমাদের অ্যাকাউন্টগুলো ব্যবহার করা হয়েছে এবং আমরা যেহেতু পি কে হালদারের স্টাফ ছিলাম,
আমরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অ্যাবিউজ (অপব্যবহার) হয়েছি।’
পি কে হালদার
পলাতক অবস্থায় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ
অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে মামলা করে দুদক।
বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল
ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ও কানাডীয় ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তথ্যের
বরাত দিয়ে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পি কে হালদার ২০১২ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাঁর
ভাই প্রীতিশ হালদারের কাছে ১ কোটি ১৭ লাখ ১১ হাজার ১৬৪ কানাডীয় ডলার পাচার করেছেন।
বাংলাদেশি টাকায় তা প্রায় ৮০ কোটি টাকা।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।