সব রকম প্রস্তুতি পুরোদমে চললেও দেশে উৎসবমুখর পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রত্যাশিত অনুকুল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। গণমাধ্যমের সম্পাদকদের বরাবর পাঠানো এক ধারণাপত্রে এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে।
সংসদ
ভেঙে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে রাজপথে সোচ্চার সরকারবিরোধী
দল বিএনপি। অন্যদিকে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অনড় ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ। যার যার অবস্থানে থেকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও পালন করছে দুই দল। এ কারণে
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কার কথা বলছেন। এই পরিস্থিতিতে
সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পথ খুঁজছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার
নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার আহ্বান
জানিয়ে বলেন, ‘শুধু আমরা কেন, পুরো দেশবাসী সমঝোতা চায়। দেশের মানুষ আশঙ্কার মধ্যে
থাকতে চায় না। আমরাও আশা করি, একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য ভালো
হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা হলে নির্বাচন কমিশনও ভোট অনুষ্ঠানে নিঃশঙ্কচিত্তে
এগিয়ে যেতে পারবে।’
তিনি
আরও বলেন, ‘ভোটের ভালো পরিবেশ সৃষ্টির জন্য নির্বাচন কমিশনের যেমন দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক
দলগুলোরও আছে। কারণ, ভোটের মাঠে রাজনৈতিক দলগুলোই থাকবে। সেজন্য আমরা চাই দেশ ও জাতির
কথা চিন্তা করে দলগুলো একটা সমঝোতার প্রক্রিয়ায় যাক। আমরা পেছনের দিকে যেতে চাই না।
আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
জানা
গেছে, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় ও কর্মশালার অংশ হিসেবে এবার গণমাধ্যমের
৩৮ জন সম্পাদকের সঙ্গে বসবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৬ অক্টোবর সকাল ১১টায় নির্বাচন
ভবনে ‘আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: গণমাধ্যমের ভূমিকা, জাতির প্রত্যাশা’ শীর্ষক
এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার ছাড়াও ইসি
সচিব ও অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যেই সম্পাদকদের সেই কর্মশালার
আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
সূত্র
জানায়, এবারের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে একটি ধারণাপত্রও সংযুক্ত করে পাঠিয়েছে নির্বাচন
কমিশন। সেখানে আলোচনার বিশাল এক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। সেই ধারণাপত্রে বলা হয়েছে,
‘কমিশন আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ, ও শান্তিপূর্ণ করার বিষয়ে সততা,
নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এরপরও বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচন
কমিশনের ওপর অনাস্থা ব্যক্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন প্রশ্নে সরকার ও কমিশনের বিষয়ে কিছু
রাজনৈতিক দলের গণমাধ্যমে প্রচারিত অনাস্থা কাটিয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে জনগণের
আস্থা অর্জনের প্রয়াস আমরা অব্যাহত রেখেছি। তবে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর
নির্বাচনের জন্য যে অনুকূল পরিবেশ প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেটি এখনো হয়ে ওঠেনি। প্রত্যাশিত
সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে মতভেদ নিরসন হয়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রধানতম দলগুলো নিজ নিজ
সিদ্ধান্ত ও অবস্থানে অনড়। রাজপথে মিছিল, জনসমাবেশ ও শক্তি প্রদর্শন করে নিজ নিজ পক্ষে
সমর্থন প্রদর্শনের চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু এতে প্রত্যাশিত মীমাংসা বা সংকটের নিরসন হচ্ছে
বলে কমিশন মনে করে না।’
নির্বাচনকে
গণতন্ত্রের প্রাণ ও বাহন উল্লেখ করে ধারণাপত্রে আরও বলা হয়, ‘নির্বাচন আয়োজনে যদি সংকট
নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত থাকে, তাহলে গণতন্ত্র বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।’
নির্বাচন পরিবেশ প্রত্যাশিত অনুকুল সৃষ্টি তৈরী
মন্তব্য করুন
ফরিদপুরের সালথায় তীব্র দাবদাহে ৩ শিক্ষক ও ১০ শিক্ষার্থী অসুস্থ
হয়ে পড়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে তিন শিক্ষার্থীকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
রোববার (২৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের
রামকান্তুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ও সালথা থানার ওসি ঘটনাস্থল পরিবদর্শন করেন।
অসুস্থদের মধ্যে রয়েছেন রামকান্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের
সহকারী শিক্ষক মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, রোজার ঈদের পর থেকে স্কুল বন্ধ ছিল। প্রধান
শিক্ষকও মাতৃত্বকালিন ছুটিতে রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর গতকাল রোববার স্কুল খোলা হয়। সকালে
স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে প্রথমে বিদ্যালয়ের ক্লাস রুম ও মাঠে জমে থাকা
ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করার কাজ শুরু করি।
তিনি আরও বলেন, কিছু সময় কাজ করার পর তীব্র গরমে আমরা সবাই পানির
পিপাসায় ভুগছিলাম। তখন সবারই গলা শুকিয়ে আসছিল। পরে স্কুলের টিউবওয়েল চেপে ঠান্ডা পানি
বের করে তা পান করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পর একে একে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বমি করতে থাকে
এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ সময় স্থানীয় এক যুবক এসে আমাকে বলেন, স্যার ওই টিউবওয়েলের পানি
খেয়েন না, পানিতে বিষ মেশানো হয়েছে। পরে অসুস্থদের দ্রুত সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে
নেওয়া হয়। সেখানে সকলকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রানিতা নামে এক শিশুর অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে ফরিদপুর
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থদের মধ্যে
শিক্ষক সুকলা রানী শীল, রেবেকা বেগম, রবিউল ইসলাম, শিক্ষার্থী সাদিহা, নাহিদ ও তৌকিয়ার
নাম পাওয়া গেছে। বাকিদের নাম পাওয়া যায়নি।
সালথা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল
মমিন বলেন, ‘টিউবওয়েলের পানিতে কোনো ধরনের বিষক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা
করা হচ্ছে, ওই শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অসুস্থদের মধ্যে দুজনের
চিকিৎসা এখনো চলছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সবাই শঙ্কামুক্ত’।
সালথা থানার ওসি ফায়েজুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রথমে খবর পেয়েছিলাম
টিউবওয়েলের পানি খেয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরে ঘটনাস্থলে এসে ডাক্তারের
সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তিনি জানিয়েছেন টিউবওয়েলের পানিতে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ পাননি’।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী
জানান, রোববার স্কুল খোলার পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সকালে স্কুলে এসে টিউবওয়েলের পানি
খেয়ে অসুস্থ পরলে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন সবাই মোটামুটি সুস্থ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছেন, তারা বিষক্রিয়ার কোনো আলামত
পাননি। গরমের কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে। তারপরও টিউবওয়েলের পানি আমরা পরীক্ষা করে দেখব।
একইসঙ্গে আগামীকাল থেকেই ছাত্রছাত্রীরা যাতে নিরাপদ পানি খেতে পারে, সে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা হবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন