দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শারীরিক অক্ষমতা, দরিদ্রতা ও সন্তানদের কাছে বিতারিত হয়ে সিরাজগঞ্জে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামছেন দরিদ্র মানুষ। প্রতিদিনই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শহরের ভিড় করছেন তারা। সকাল থেকে জনাকীর্ণ এলাকায় দেখা যায় তাদের জটলা। স্থানীয়রা বলছেন, ভাসমান ভিক্ষুকদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে অনেক জায়গায় অর্ধশতাধিক ভিক্ষুকের আনাগোনাও চোখে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর না হলেও তারা বলছেন, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনে কাজ চলমান রয়েছে।
জেলার কোর্ট ভবন, এস এস রোড, মুজিব সড়ক, বাজার স্টেশন, বড়পুলসহ
কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভিক্ষুকরা দল বেঁধে ভিক্ষা নিতে বিভিন্ন দোকানের
সামনে ঘোরাঘুরি করছেন। তাদের মধ্যে কেউ বলছেন তিনি নিজে অসুস্থ, আবার কেউ বলছেন
ঘরে অসুস্থ স্বামী রয়েছে। কেউবা জানিয়েছেন স্বামী মারা গেছেন, সন্তানরা দেখেন না।
কেউ আবার বলছেন, সন্তানরা যে টাকা আয় করে তা দিয়ে তাদেরই চলে না।
সদর উপজেলার খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের সরিষাখোলা গ্রাম থেকে সিরাজগঞ্জ
শহরে ভিক্ষা করতে এসেছেন দুলাল হোসেন (৬৫) জানালেন, তিনি একসময় রিকশা চালাতেন। সড়ক
দুর্ঘটনায় পা ভাঙার পর অনেকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু পাননি। উয়ান্তর না
পেয়ে এখন ভিক্ষা করছেন।'
দুলাল হোসেন শারীরিক অক্ষমতার কারণে হাত পেতেছেন মানুষের কাছে।
কিন্তু তার চেয়েও খারাপ অবস্থায় আছেন মর্জিনা খাতুন। স্বামী না থাকায় একসময় না
খেয়েও দিন গেছে তার। এখন নেমেছেন রাস্তায়। প্রতি মাসে বয়স্ক ভাতা পান কাজীপুর
উপজেলার একডালা গ্রামের মর্জিনা খাতুন (৭০) কিন্তু এই টাকায় দিন পার হয় না।
স্বামীও মারা গেছেন অনেক আগে। বললেন, জমিজমা, বাড়িঘর কিছুই নেই আমার। মাসে ৫০০
টাকা বয়স্ক ভাতা পাই। তা দিয়ে চলে না। তাই মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কোনো
রকমে দিন পার করছি।’
ঘরহারা বৃদ্ধা দিলরুবা খাতুন। নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালেন
অশ্রুসিক্ত নয়নে। বলেন, ‘দুনিয়ায় আমার কেউ নেই। দিনে বিভিন্ন এলাকায় ভিক্ষা করি,
আর রাতে রেলস্টেশনের যাত্রী ছাউনিতে থাকি। কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই আমার।’
শুরুর দিকে ভিক্ষা করতে গিয়ে অপমান বোধ করলেও এখন আর সেই অনুভূতি
নেই।' শারীরিক অক্ষমতার কারণে সব ভুলে মানুষের কাছে হাত পাততে হয়েছে রায়গঞ্জ
উপজেলার চান্দাইকোনা থেকে আসা রজব আলীর (৬৫) বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনায় আমরা পা ভেঙেছে।
কোনো কাজ করতে পারি না। দুই ছেলে থাকলেও আমাকে দেখে না। তাই পেটের দায়ে ভিক্ষা
করি। শুরুর দিকে ভিক্ষা করতে অপমানিত বোধ করতাম, কিন্তু এখন আর কিছু মনে হয় না।’
তাড়াশের নওগাঁ ইউনিয়নের মাজেদা খাতুন (৬৩) অবশ্য জানিয়েছেন, ভিক্ষা করে প্রতিদিন তার আয় হয় ৩০০-৪০০ টাকা। তা-ই দিয়ে চলে সংসার। আগের তুলনায় ভিক্ষুকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে দাবি করে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন দোকানে আসতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। মুজিব সড়কের রাজ্জাক ডেন্টালের মালিক শাহিন হোসেন বলেন, প্রতিদিন অনেক ভিক্ষুক দোকানে সামনে এসে ভিড় করেন। তবে কোনো কোনো দিন এই সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সিরাজগঞ্জে সরকারি হিসাবে প্রায় চার হাজারের বেশি ভিক্ষুক আছেন। এ পর্যন্ত আমাদের দপ্তর থেকে ২১৩ জনকে পুনর্বাসন করেছি। আরও ভিক্ষুককে যেন সহযোগিতা দেওয়া যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। প্রয়োজনে আবারও ভিক্ষুকদের তালিকা করে তাদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিরাজগঞ্জ ভিক্ষাবৃত্তি গরীব মানুষ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জয়পুরহাটের
আক্কেলপুরে তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে বাবলু খন্দকার (৪৫) নামে এক ভ্যানচালকের মৃত্যু
হয়েছে। আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকালে উপজেলার গোপীনাথপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত
ভ্যান চালক জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল সরকারপাড়া গ্রামের শুকুর মাহমুদ খন্দকারের
ছেলে বলে জানা গেছে।
পুলিশ
ও স্থানীয়রা জানান, বিক্রির জন্য বাবলু খন্দকার ভ্যান যোগে কয়েক বস্তা আলু নিয়ে গোপীনাথপুর
হাটে যান। সেখানে আলুর বস্তা নামিয়ে রেখে চা খেতে দোকানে বসেন তিনি। এসময় হঠাৎ করে
বুকে ব্যাথা উঠলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্তে কর্মকর্তা নয়ন হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মন্তব্য করুন
নওগাঁ সদর উপজেলায় কৃষি কাজে ব্যবহৃত একটি গভীর নলকূপ বন্ধ রাখা হয়েছে। পানির অভাবে এই সেচযন্ত্রের আশ পাশের প্রায় ১০০ বিঘা জমি অনাবাদি পড়ে আছে। সেচ সংকটের কারণে কিছু কৃষক ধানের আবাদ না করে জমিতে তিলের চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টির কারণে তিলের গাছও মরে যেতে বসেছে।
সেচ নিয়ে কৃষকদের এমন দুরাবস্থা নওগাঁ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের হাজীপাড়া, মাদ্রাসা পাড়া, সরদার পাড়া, শেখপুরা ও মন্ডলপাড়া এলাকায়।
কৃষকদের দাবি, পৌরসভার হাজীপাড়া মহল্লা সংলগ্ন মাঠে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। গভীর নলকূপটি মকবুল হোসেন ওরফে গ্যাদো নামের এক ব্যক্তি পরিচালনা করে থাকেন। ওই এলাকায় প্রায় ২০০ বিঘা জমি রয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতে নলকূপটির মালিক মকবুল হোসেন কৃষকদের কাছ থেকে বোরো ধান আবাদের জন্য প্রতি বিঘা জমিতে সেচের জন্য ২ হাজার টাকা করে দাবি করেন। আশপাশের অন্যান্য নলকূপের সেচ খরচের তুলনায় বেশি টাকা দাবি করায় কৃষকেরা ওই পরিমান টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। চাহিদা অনুযায়ী সেচ খরচ দিতে রাজি না হওয়ায় সেচযন্ত্রটি বন্ধ রেখেছেন গভীর নলকূপের মালিক মকবুল হোসেন। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেও কৃষকেরা কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।
গত ১৯ মার্চ ৬০ জন কৃষক স্বাক্ষরিত ওই লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ পৌরসভার হাজীপাড়া, সরদারপাড়া ও মাদ্রাসাপাড়া মহল্লার মধ্যবর্তী মাঠে প্রায় ৩০০ বিঘা ফসলি জমি আছে। এসব জমিতে প্রতি মৌসুমে কয়েক হাজার মণ ধান হয়। বোরো মৌসুমে ওই এলাকার কৃষকদের কথা মাথায় রেখে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ওই মাঠে দুটি গভীর নলকূপ স্থাপন করে দিয়েছে। ওই দুটি সেচ যন্ত্রের মধ্যে মকবুল হোসেন পরিচালিত গভীর নলকূপের অধীনে প্রায় ১৫০ বিঘা জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে। বিগত তিন বছর ধরে মকবুল হোসেনের ছেলে সবুজ কৃষকদের জিম্মি করে সেচ বাবদ বেশি টাকা আদায় করছে।
পার্শ্ববর্তী বোয়ালিয়া, শেখপুরা এলাকায় গভীর নলকূপ থেকে প্রতি বিঘা জমিতে সেচ খরচ বাবদ যেখানে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে, সেখানে সবুজ তার সেচযন্ত্র থেকে সেচ খরচ দাবি করে ২ হাজার টাকা।
অধিকাংশ কৃষক এই পরিমাণ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় মকবুল হোসেনের ছেলে সবুজ সেচ যন্ত্রটি থেকে পানি তোলা বন্ধ করে দেন। ধানের বীজ তলায় সেচ দিতে না পারায় কৃষকদের চারা নষ্ট হয়ে যায়। জমিতে ধান লাগাতে না পেরে অনেক কৃষক জমিতে তিলের চাষ করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ অনাবৃষ্টির কারণে এবং সেচ যন্ত্র বন্ধ থাকায় অধিকাংশ তিল গাছ মরে যেতে বসেছে। এই দূরাবস্থা নিরসনে জেলা ও উপজেলা সেচ কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কৃষকেরা।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) পৌরসভার হাজীপাড়া সংলগ্ন ওই ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ওই মাঠে অনেক জমি অনাবাদি পড়ে আছে। কিছু জমিতে তিলের চাষ করা হয়েছে। কিন্তু পানির অভাবে অনাবাদি জমি ও তিলের খেতের জমি শুকিয়ে আছে। পানির অভাবে শুকনো মাটিতে বপন করা তিল বীজ থেকে চারা গজায়নি। আবার কিছু কিছু জমিতে চারা গজালেও পানির অভাবে তিলের গাছগুলোর পাতা শুকিয়ে লালচে হয়ে মরতে বসেছে।
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সেচ যন্ত্রের মালিক মকবুল হোসেন ওরফে গ্যাদো বলেন, ‘একটা মৌসুমে একটা ডিপ টিউবওয়েল চালালে তিন থেকে চার লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। এছাড়া ট্রান্সফরমার বা সেচ যন্ত্রের অন্য কোনো অংশ নষ্ট হয়ে গেলেও বাড়তি খরচ হয়ে যায়। মেশিন চালাতে যে খরচ হবে, সেটা তুলতে না পারলে লোকসান গুনতে হবে। তাই পানি তোলা বন্ধ রেখেছি।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি এস এম রবিন শীষ বলেন, ‘বেশ কিছু দিন আগে এ ধরণের একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সম্ভবত এ বিষয়ে তদন্ত করতে বলেছিলাম। কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সেচ যন্ত্রটি চালু করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বাসিন্দা ইতালি প্রবাসী বাচ্চু শেখ অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে মারা যান ৩ বছর আগে। সেই মামলার রহস্যের জট খুলেছে ৩ বছর পর। আসামী আমির হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ঘটনার সত্যতা প্রকাশ করেছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই-এর এসআই ফিরোজ আহমেদ জানান, বিগত ২০২১ সালের ৯ মার্চ ইতালি প্রবাসী বাচ্চু শেখ হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে করে তার গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার তপারকান্দি গ্রামে আসছিলেন। পথিমধ্যে অজ্ঞান পার্টির সদস্য আমির হোসেন ও তার দলবল কায়দা করে ভিকটিমের সাথে ভাব জমিয়ে তাকে বিস্কুটের সাথে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খ্ইায়ে দেয় এবং তার কাছে থাকা মালামাল নিয়ে যায়। এতে সে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে বাসের হেলপার তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে ছাগলছিড়া এলাকায় তাকে বুঝে দিয়ে বরিশালের দিকে বাস চলে যায়।
পরে
মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় বাচ্চু শেখকে প্রথমে মাদারীপুরের রাজৈর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মৃত বাচ্চু শেখের স্ত্রী মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে গোপালগঞ্জ পিবিআই মূল অভিযুক্ত আমির হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে এবং সে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে গোপালগঞ্জের পিবিআই-এর পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন।
মন্তব্য করুন