হঠাৎ করেই বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের মাথাব্যথা যেন বেড়েছে। গত ১ নভেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার টুর্ক একটি চিঠি লিখেছেন। সেই চিঠিতে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে জরুরি চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। জাতিসংঘ এরকম একটি চিঠি একটি স্বাধীন দেশের সরকার প্রধানকে দিতে পারেন কিনা এ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে এটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার উপর সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ বলেই অনেকে মনে করছেন।
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ এবং এখানে একটি নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার রয়েছে। এ দেশের সংবিধান অনুযায়ী আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং শাসনবিভাগ সম্পূর্ণ আলাদা। বিচার বিভাগ সাংবিধানিকভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। বিচার বিভাগের কাজে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করে না। আর এরকম একটি আইনি পরিকাঠামোর মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ২টি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন, যার মধ্যে একটিতে হাইকোর্ট তার সাজা বহাল রেখেছে। দুটি মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত বেগম খালেদা জিয়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকারের নির্বাহী আদেশে বিশেষ বিবেচনায় জামিনে রয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুকম্পায় তিনি তার নিজ বাসভবনে থেকে চিকিৎসার সুযোগ লাভ করেছেন।
কিন্তু ভলকার টুর্কের চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে খালেদা জিয়া যেন বন্দি। বেগম খালেদা জিয়া এখন বন্দি নন। তিনি জামিনে রয়েছেন। একজন বন্দি ব্যক্তি তার নিজ বাসভবনে থাকতে পারেন না। কাজেই জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান সঠিক তথ্য না জেনে এরকম চিঠি কেন দিচ্ছেন তা প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার। শুধু এটিই নয়, বরং তিনি তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার জন্য আবেদন করেছেন। এই ধরনের বক্তব্য জাতিসংঘ দিতে পারে কিনা, এটি একটি স্বাধীন দেশের স্বাভাবিক কার্যক্রমের হস্তক্ষেপ কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রসঙ্গ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন এবং বিরোধী দলের আন্দোলন ইত্যাদি নিয়েও জাতিসংঘকে তৎপর দেখা যাচ্ছে। এই তৎপরতার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছেনা অনেকের ধারণা। বিশেষ করে যখন হাসপাতালে হামলা হয়েছে বা যখন একজন পুলিশ কনস্টেবলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে, সেসব ব্যাপারে জাতিসংঘ নিরব ছিল। আবার বিরোধী দলের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতিশীল আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এটি বিএনপি এবং জামায়াতের যে লবিস্ট এবং তাদের যে তৎপরতা তার সাফল্য। অন্যদিকে এটি বাংলাদেশে যে জাতিসংঘের স্থায়ী মিশন রয়েছে সেই মিশনের ব্যর্থতা। বাংলাদেশের একটি মিশন রয়েছে নিউইয়র্কে এবং সেখানে একজন স্থায়ী প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা কী কর্মকাণ্ড করছেন সে নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কারণ জাতিসংঘ একটি বিশ্বসভা, যেখানে সকল দেশের ব্যাপারে তাদেরকে নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ অবস্থান রাখতে হয়। জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে যিনি আছেন বা যে সমস্ত কর্মকর্তারা কাজ করেন তারা কতটুকু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিচ্ছেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ জাতিসংঘ একপাক্ষিক বক্তব্য শুনে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয় নিয়ে জাতিসংঘ কথা বলছে। আগামী ১৩ তারিখে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ে বাংলাদেশ নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। আইনমন্ত্রী সেখানে নেতৃত্ব দেবেন বলেও জানা গেছে।
জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান কার্যালয়। জেনেভাতে যিনি বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি আছেন সম্প্রতি তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ধরনের মানবাধিকার প্রসঙ্গে তারা কতটুকু দায়িত্ব পালন করছেন, সেটি এখন প্রশ্ন সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, সঠিক লোকজন না থাকার কারণে বাংলাদেশ জাতিসংঘের কূটনীতিতে পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী লোকজন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে জাতিসংঘে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এ জন্যই জাতিসংঘ এখন বাংলাদেশের ব্যাপারে একধরনের পক্ষপাতপূর্ণ আচরণ করছে।
জাতিসংঘ খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবাধিকার ভলকার টুর্ক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।