ডিসেম্বর
মাস বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে
৩০ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে স্বাধীন হয় আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি
হয় বাংলাদেশ নামক একটি ভূখন্ড। বাংলাইনসাইডার এই বিজয়ের মাসে ধারাবাহিক ভাবে ‘পঞ্চম
পর্বে’ ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র পঞ্চদশ খন্ড’ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুল
হকের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করছে-
১৯৭১ সালের আন্দোলন হঠাৎ করে
হয়নি। এর পেছনে সংগ্রাম ও চেতনার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাসের সাথে সবাই পরিচিত।
তবে আমার বিশ্বাস যে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন এই চেতনা প্রবাহের ধারাকে এগিয়ে নিয়েছে সবচেয়ে
বেশী এবং সাংস্কৃতিক কর্মীরা সবসময়ে এই আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে রাজনৈতিক
কর্মীদের সাথে। নিজেদের বৃত্তে এই আন্দোলন সীমাবদ্ধ থাকেনি এবং এর চরিত্রও কেবলমাত্র
কলা-ক্রিয়ার মধ্যে সীমিত ছিল না।
১৯৬১ সালে রবীন্দ্রশতবার্ষিকী
উপলক্ষে যেসব সভা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তার মূল সুর ছিল বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা।
স্বাভাবিক কারণেই পাকিস্তান সরকার এর বিরোধিতা করে। কিন্তু যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা এই
উৎসাহ উদযাপনে সৃষ্টি হয় তা থামিয়ে রাখার মত শক্তি কারও ছিল না। এই উদ্যাপনের সরাসরি
ফসল হচ্ছে 'ছায়ানট' যা পরে আমাদের গভীরতম বিশ্বাস ও মূল্যবোধ প্রসারের অন্যতম কেন্দ্রস্থলে
পরিণত হয়। অতএব বাঙালীদের রাজনীতি সব সময় তার সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করেছে। হয়ত বা অন্য
যে কোন দেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের চেয়েও।
১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর খবর
আসে যে মহাপ্রলয় হয়েছে তখন প্রথমে খুব একটা কাউকে নাড়া দেয়নি। ঐ সময় আমরা কয়েকজন খবরের
ভাষা থেকে বুঝি যে ওখানটায় একটা কিছু ঘটেছে। তাড়াহুড়ো করে 'দুর্যোগ নিরোধ কমিটি' গঠন
করে নগ্ন পদযাত্রা শুরু করি রাস্তায় "ভিক্ষা দাওগো পুরবাসী" গানটা গেয়ে।
আমরা তখনকার দিনেই প্রায় ৫০ হাজার টাকা উঠাই। এর মধ্যে দুর্যোগের ব্যাপকতার খবর চারিদিকে
ছড়িয়ে পড়ে। দুর্যোগবাসীদের সাহায্য করার জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাতেই কাজ করতাম।
জায়গার নাম ছিল চর কাজল (রায়পুরা)। ৭ই মার্চ সেখানে ছিলাম। পরে ঢাকায় ফিরে এসে দেখি
অবস্থা খুবই খারাপ যদিও কত খারাপ তা ধারণা করিনি।
পঁচিশে রাতে আমি আমার সংবাদপত্র
অফিসেই ছিলাম। সারারাত ধরে শুধু আওয়াজ শুনেছি। ২৬ তারিখে বের হওয়া যায়নি। অতএব ২৭ তারিখে
আমরা অফিস ত্যাগ করতে সমর্থ হই।
মির্জা সামাদ একজন প্রবীণ কমিউনিষ্ট
নেতা। তার সাথে আমার আলাপ হয় পরিস্থিতি নিয়ে। অস্ত্র সংগ্রহ করা এবং প্রয়োজনবোধে ভারতীয়
সাহায্য নিয়ে পাকসেনাদের পরাজিত করা। আমার মনে হয়েছিল রাজনৈতিক কারণেই ভারত আমাদের
পক্ষে থাকবে।
২রা এপ্রিল কামাল সিদ্দিকী,
কাজী ইকবাল এবং আবুল খায়ের লিটুকে নিয়ে গাড়ীতে করে আমরা রওয়ানা এই। পথে সাভার থেকে
আমরা হাসান ইমামকে তুলে নিই। তাঁর পরিবারও সাভারে ছিল দেওয়ান ইদ্রিসের গৃহে।
আরিচা দিয়ে আমরা নৌকাপথে ঝিনাইদহ
যাই এবং আশ্চর্য্য হয়ে লক্ষ্য করি যে নদীর ওপারে 'জয় বাংলায়' পতাকা উড়ছে। সেখানে বাংলাদেশ
স্বাধীন। আমার সাথে থানা পুলিশ অফিসার মাহবুবের আলাপ হয়। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন
তৌফিক এলাহী চৌধুরী, কামাল সিদ্দিকী এবং আরো কয়েকজন। জানতে পারি কামাল সিদ্দিকী প্রায়
১০০ পাকিস্তানী সৈন্যকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছেন।
এরপর কলকাতায় গিয়ে রাজনৈতিক
নেতা অনসুর হাবিবের বাসায় উঠি। দেখা করি ভবানী সেন এবং ইন্দ্রমীয় গুপ্তের সাথে। তাদের
বোঝাবার চেষ্টা করি যে ভারতীয় সেনাবাহিনী যদি যশোর দখল করে নেয় এবং দূর্গ স্থাপন করতে
পারে তবে আমরা নিজেরাই যুদ্ধ করতে পারবো। এর মধ্যে লক্ষ্য করি যে যারা বাংলাদেশ থেকে
এসেছে তারা এখনও একত্রিত হয়নি যদিও 'কিড ষ্ট্রিট'-এর এম, পি হোটেলে অনেকেই জমায়েত হয়েছে।
আমার সাথে আওয়ামী লীগারদের কোন যোগাযোগ ছিল না অতএব আমি হাসান ইমামকে বলি তাদের সাথে
লাগযোগ করতে। অমিতাভ দাশগুপ্ত (ভারতীয় বামপন্থী নেতা) এদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং
তিনি চেষ্টা করেন আমাকে এদের সাথে কাজ করার সুযোগ করে দিতে কিন্তু তা সম্ভব হয়ে ওঠে
না যেহেতু জানা যায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কারও প্রবেশাধিকার নাই।
এরপর মৈত্রী দেবীর সাথে যোগাযোগ
হয়। তিনি এই পর্যায়ে বিরাট ভূমিকা পালন করেন। জানা যায় যে একটি বেতার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার
চেষ্টা চলছে। তাঁরই উদ্যোগে প্যাড ছাপানো হয়। ষ্ট্যাম্প ইত্যাদিও প্রস্তুত করা হয়।
আরও খবর পাওয়া যায় যে বিএসএফ-এর মাধ্যমে একটি বেতার ট্রান্সমিটারও পাওয়া যাবে।
এপ্রিলের শেষের দিকে খবর আসে
যে 'জয় বাংলা' নামে একটা পত্রিকা বার হচ্ছে। এর অফিস বালু হাক-কাক লেনে। এও খবর শুনি
আবদুল মান্নান এই পত্রিকার দায়িত্বে আছেন। জহির রায়হান তাঁর সাথে যোগাযোগ করেছিলেন
কিন্তু তাঁকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। যা হোক বেতার কেন্দ্রের ব্যাপার নিয়ে
আমরা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ি। শামসুল হুদা চৌধুরী, মোস্তফা মনোয়ার, কামরুল হাসান, এম আর
আখতার মুকুল এবং আমি একটি কমিটি গঠন করি।
পশ্চিম বঙ্গ শিল্পী সাহিত্যিক
সহায়ক সমিতি গঠিত হয়েছে। দিপেন বিশ্বাস ছিলেন এর সংগঠক। অর্থও সংগৃহীত হয় এবং প্রায়
সব শিল্পী-সাহিত্যিকের সাথে জড়িয়ে পড়েন। যে সাংস্কৃতিক দল তৈরি হয় তার সভাপতি হন সনজীদা
খাতুন, আদি হই পরিচালক। এর নাম দেয়া হয় 'বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা'।
মে মাসে এটা গঠিত হয়। স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যা ছিল একশজনের মত।
১৪৪, লেলিন সরণীতে পি, পি,
আই অফিসের একটি কক্ষে রিহার্সাল হোত। তিরিশ দিনের প্রতিদিনই রিহার্সাল হয়। ৩রা জুন
প্রথম অনুষ্ঠান হয় রবীন্দ্র সদনে। শাহরিয়ার কবির রচিত 'রূপান্তরের গান' নামে একটি রীতি
আলেখ্য। আলোকসজ্জা ও মঞ্চ সাজাবার দায়িত্বে ছিলেন মোস্তফা মনোয়ার। যদিও আমাদের সামর্থ্য
সীমিত ছিল তবুও অনুষ্ঠান কল্পনাতীতভাবে সফল হয়।
জহির রায়হান ছিলেন একজন খাঁটি
দেশপ্রেমিক। কি প্রচণ্ড পরিশ্রমে সংগঠনের জন্য কাজ করেছেন তা বলা হয় না। একটা বিশেষ
ঘটনার উল্লেখ করা যায়। একদিন হঠাৎ খবর পাওয়া গেল যে 'জীবন থেকে নেওয়া' ছবির একটা প্রিন্ট
কলকাতায় এসেছে। সারাদিন খোঁজার পর পাওয়া গেল সেটি। শেরপুর এলাকার একটি সিনেমা হলের
মালিক সাহস করে নিয়ে এসেছেন। মালিক জানালেন এটা তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং প্রিন্ট
তিনি দেবেন না। তখন মীমাংসায় বসা হলো। জনাব খায়ের (সংসদ সদস্য) এর দায়িত্ব নিলেন। ষাট
হাজার টাকা নগদ দেওয়া হল মালিককে। এরপর ঠিক হল ছবি দেখিয়ে যা আয় হবে তার অর্ধেক পাবে
শিল্পীরা আর বকিটা পাবে এম, সি, এ। জহির রায়হান নিজে কিছুই নিলেন না।
একই মাসে জনাব তাহেরউদ্দিন
ঠাকুর এসে বলেন যে দিল্লীতে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের পক্ষে
আমরা যাবো গান শোনাতে। ৩৫ সদস্যের একটি দল নিয়ে আমরা পৌছাই। আমাদের অনুষ্ঠান অসাধারণভাবে
সফল হয়। মঞ্চ নির্দেশনায় মোস্তফা মনোয়ার আশ্চর্যরকম আবহ সৃষ্টি করেন। সমগ্র অনুষ্ঠান
যে কি রকম সাড়া জাগায় তা বলার নয়। অনুষ্ঠান শেষ হবার পর ভারতীয় গণসঙ্গীতের দুই প্রধান
পুরুষ বিনয় রায় এবং জ্যোতিন্দ্র মিত্র মঞ্চে আসেন এবং গান শোনান। সে অভিজ্ঞতা বলার
নয়।
এভাবে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে
যাচ্ছিলাম বিভিন্ন শিবিরে। একই সাথে চলছিল অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টা। তখন ডিসেম্বর মাস।
আমি গেলাম জহির রায়হানের কাছে এই ব্যাপারে আলাপ করার জন্য। তাকে খুব অনমনা মনে হচ্ছিল।
আমি কথাটা তুলতেই তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, 'ওয়াহিদ ভাই, এসবের প্রয়োজন হবে না। আমি ১৬
তারিখে ঢাকায় যাচ্ছি। আমি এই কথার কোন কিছুই বুঝলাম না। কারণ, দেশ যে মাত্র কদিন পরই
স্বাধীন হবে ভাবিনি। যখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা করা হয় যে দেশ স্বাধীন
তখন আমি নজরুল ইসলাম ও তাজউদ্দিন সাহেবের সাথে ছিলাম। আনন্দে যে কি করেছি তা বলার নয়।
১৬ তারিখেই দেশ স্বাধীন হয়। সেদিনের কথা জহির রায়হান বলেছিলেন দু'সপ্তাহ আগে।
মন্তব্য করুন
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোপন কক্ষে সিল মারা ব্যালটের সঙ্গে ছবি তুলেছেন আশরাফুল ইসলাম নামে এক ইউপি চেয়ারম্যান। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যক্তিগত আইডিতে পোস্ট করেছেন।
এছাড়াও বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর আইডির পোস্টসহ বিভিন্ন আইডিতে কমেন্ট করেছেন তিনি। তবে বৃহস্পতিবার (৯ মে) দুপুরে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্টটি সরিয়ে নেন।
জানা গেছে, আশরাফুল ইসলাম তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, এছাড়াও তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। বুধবার (৮ মে) জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের মাঝিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম আচরণবিধি অমান্য করে মোবাইল নিয়ে ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। পরে ভোট দেওয়ার গোপন বুথে গিয়ে ব্যালটে সিল মেরে সেখানেই ব্যালটসহ ছবি (সেলফি) তুলেন তিনি। বিকেলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ব্যক্তিগত আইডিতে পোস্ট করেন। সেখানে দেখা যায়, তিনি সিল মারা ব্যালট এক হাতে ধরে আরেক হাতে সেলফিটি তুলেছেন এবং সেই ছবি আপলোড দিয়ে লেখেন ‘ভালোবাসা নেতার পেছনে যায় না, যায় ভালোবাসার পেছনে।’
এর
আগেও এই জনপ্রতিনিধি গত ৭ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ভোট
কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে প্রবেশ করে সিল মারা ব্যালটের ছবি তুলে সামাজিকে যোগাযোগমাধ্যমে
পোস্ট করেন। এ বিষয়ে শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের
চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ভোট কেন্দ্রে গোপন বুথে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ছবি তোলা বেআইনি ও কোনো ভোটার মোবাইল ফোন নিয়ে ভোটকক্ষে প্রবেশ ও তা ব্যবহার করা যাবে না। তবে ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রিজাইটিং কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা থাকা অবস্থায় একজন জনপ্রতিনিধি হয়ে কীভাবে এমন আইন ভঙ্গ হলো এ বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে স্থানীয় মানুষেদের মাঝে। একজন ভোটার কর্তৃক এরূপ কর্মকাণ্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা, ২০১৩ এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬ এর পরিপন্থী এবং শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।
এদিকে তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফজলে রাব্বি জানান, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বশীল পদে থাকা অবস্থায় তিনি যে কাজটি করেছেন সেটি ঠিক নয়। বিষয়টি নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেখবেন। তবে, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমি উপজেলা নির্বাচন ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখছেন।
সিল ব্যালট ইউপি চেয়ারম্যান ফেসবুক পোস্ট
মন্তব্য করুন
টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে
শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার (১০ মে) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে
শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের পর তার সম্মানে কিছুক্ষণ
নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর চৌকস সদস্যরা গার্ড অব অনার প্রদান
করে।
এরপর বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে ফাতেহা
পাঠ ও বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী শহীদদের আত্মার
মাগফেরাত এবং দেশ ও জাতির শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়।
মোনাজাতে প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যরা
উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে সড়কপথে গোপালগঞ্জ আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দাড়িয়াকুল
গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে কৃষি ও শিক্ষা
উপকরণ বিতরণ করবেন।
পরে তিনি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র
পরিদর্শন করবেন। বিকেলে সড়ক পথে ঢাকায় ফিরে আসবেন তিনি।
টুঙ্গিপাড়া. বঙ্গবন্ধু. প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা
মন্তব্য করুন
মালয়েশিয়ার প্রবাসীদের সুখবর দিল হাইকমিশন। দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য পেনাং ও জোহরবারু প্রদেশে পোস্ট অফিসের পাশাপাশি ৪ দিন হাতে হাতে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেবে হাইকমিশন। সম্প্রতি পাসপোর্ট ও ভিসা কাউন্সেলর মিয়া মোহাম্মদ কিয়ামউদ্দিন সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
বিজ্ঞপ্তিতে
বলা হয়েছে, আগামী ১৮ ও ১৯
মে সকাল ৯টা থেকে
বিকেল ৪টা পর্যন্ত পেনাং
জর্জ টাউনের বাংলাদেশ অনারারি কনস্যুলেট অফিস থেকে সরাসরি
পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা।
এই জন্য আগামী ১৫
মে’র মধ্যে অনলাইনে
আবেদন করতে হবে।
সেই
সঙ্গে আগামী ২৫ ও ২৬
মে সকাল ৯টা থেকে
বিকেল ৪টা পর্যন্ত জহুর
বারুর অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউস থেকে সরাসরি
পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন বাংলাদেশিরা।
এই জন্য আগামী ২২
মে’র মধ্যে অনলাইনে
আবেদন করতে হবে।
যেসব পাসপোর্ট আবেদনকারীর তথ্য অনলাইনে থাকবে শুধু তারাই সরাসরি উপস্থিত হয়ে হাতে হাতে পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। এ ছাড়াও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট বিতরণের সার্ভিসটিও যথারীতি চালু থাকবে। নির্ধারিত স্থান থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য https://appointment.bdhckl.gov.bd/other ঠিকানায় গিয়ে অনলাইনে অ্যাপয়েনমেন্ট গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য ডাকযোগ সেবাটি চালু থাকবে।
প্রবাসী সুখবর মালয়েশিয়া হাইকমিশন
মন্তব্য করুন
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে হোসেন্দী বহুমুখী
উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালটপেপার ছিনতাইয়ের চেষ্টা, অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা
ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠুকে প্রধান আসামি করে
অজ্ঞাত আরও দুইশো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে।
গজারিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এসআই জাহিদ বাদী হয়ে ১৭ জনের
নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দেড়শো থেকে দুইশো জনকে আসামি করে গজারিয়া থানায় এ মামলা
দায়ের করেন। গতকাল বিকেলে মামলাটি দায়ের করা হয়। এ মামলায় একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার গজারিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে
ভোটগ্রহণের সময় দুপুর দেড়টার দিকে কেন্দ্র দখলে নিয়ে একাধিক ব্যালটপেপারে সিল মারেন
আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিরুল ইসলামের সমর্থকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী
বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যালটে মারার সিল লুট করে নিয়ে যান তারা।
পরে ওই কেন্দ্রে দুপুর ১টা ৫৫ মিনিট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা ভোটগ্রহণ
বন্ধ রাখেন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং অফিসার। বিকাল ৩টা ২৫ মিনিটের দিকে
আবার ভোটগ্রহণ শুরু করা হলে কেন্দ্রের বাইরে থাকা দেড়শো থেকে দুইশো কর্মী সমর্থক জেলার
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যন্ড অপারেশন) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানের ওপর হামলা করেন।
ভাঙচুর করা হয় তার ব্যবহৃত সরকারি গাড়ি। হামলা ঠেকাতে গিয়ে ইট-পাটকেলের আঘাতে আহত হন
পুলিশের দুই সদস্য সাদ্দাম (২৪) ও সোহাগ (২৫)।
ঘটনা শুনে কেন্দ্রের ভেতরে থাকা পুলিশ সদস্যরা বাইরে বেরিয়ে এলে
তাদের ওপর ইট-পাটকেল, লাঠি-সোটা, হাতবোমা নিক্ষেপ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে আবার
কেন্দ্রের দখল নেয়ার চেষ্টা করেন ওই কর্মী-সমর্থকরা। এসব ঘটনার উসকানি ও নেতৃত্ব দেন
হোসেন্দি ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল হক মিঠু।
পুলিশ বারবার তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। একপর্যায়ে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৭৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও বেশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে
পুলিশ।
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিব খান মামলা দায়েরের
বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার এজাহারে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দেড়শো
থেকে দুইশো জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় মাসুম (২৫) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন
চট্টগ্রামে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট অসীম জাওয়াদকে মানিকগঞ্জে দাফন করা হবে। বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে নিহতের পারিবারিক সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
নিহত বৈমানিক অসীম মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর গ্রামের ডা. মোহাম্মদ আমানউল্লার ছেলে। তার মায়ের নাম নিলুফা খানম। নিহত পাইলট মৃত্যুকালে স্ত্রী, ছয় বছর বয়সী কন্যা আইজা ও এক পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। একমাত্র ছেলের মৃত্যুর খবর শোনে কান্না থামছে না মা নিলুফা খানমের। ছেলে হারিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। ছেলের এমন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি।
জানা
গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার
দিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা জহুরুল হক বিমান ঘাঁটির
থেকে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান
উড্ডয়ন করে। এর কিছুক্ষণ
পরই বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় এবং
বিমানটিতে আগুন ধরে যায়।
কর্ণফুলী নদীতে ভূপাতিত হওয়ার আগেই বিমানে থাকা
বৈমানিক উইং কমান্ডার সোহান
ও বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার অসীম জাওয়াদ প্যারাসুট
দিয়ে নদীতে নামলেও দুজন আহত হন।
পরে
তাদের উদ্ধার করে পতেঙ্গা বিএনএস
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিমানের
উইং কমান্ডার সোহান জহুরুল হক ঘাঁটির মেডিকেল
স্কোয়াড্রনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে বিমান বিধ্বস্তর
ঘটনায় বৈমানিক অসীম জাওয়াদ বিএনএস
পতেঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
১৯৯২ সালের ২০ মার্চ আসীম জাওয়াদ জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সাভার ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করেন। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তিনি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে ক্যাডেটদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মান সোর্ড অব অনার প্রাপ্তিসহ জিডি (পি) শাখায় কমিশন লাভ করেন।
চাকরিকালীন
তিনি দেশ-বিদেশে পেশাগত
বিভিন্ন কোর্সে অংশগ্রহণ করে সফলতার সঙ্গে
তা সম্পন্ন করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি
অব প্রফেশনালস থেকে এভিয়েশন ইন্সট্রাক্টর্স
পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি চীন থেকে
ফাইটার পাইলটস ফাউন্ডেশন ট্রেনিং কোর্স, ভারত থেকে অপারেশনাল
ট্রেনিং ইন এভিয়েশন মেডিসিন
ফর ফাইটার পাইলটস কোর্স, বেসিক এয়ার স্টাফ কোর্স
ও কোয়ালিফায়েড ফ্লাইং ইন্সট্রাক্টর্স কোর্স সম্পন্ন করেন।
তিনি
পেশাদারি দক্ষতা ও সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ
‘মফিজ ট্রফি’, ‘বিমানবাহিনী প্রধান ট্রফি’ ও বিমানবাহিনী প্রধানের
প্রশংসাপত্র লাভ করেন। এ
ছাড়া ভারতীয় বিমানবাহিনীতে কোর্সে অংশগ্রহণ করে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ
ইন্ডিয়ান এয়ার অর্জন করেন।
মন্তব্য করুন