নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০২ এপ্রিল, ২০১৮
একের পর এক ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়ছেন বিএনপির নেতারা। নেতাদের অসুখে ‘অসুস্থ’ হয়ে পড়েছে দলটি। তবে এসব অসুখ কতটা শারীরিক আর কতটা রাজনৈতিক এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ বিএনপিতেই। একের পর এক অসুস্থতায় বিএনপি একটি দিকভ্রান্ত রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ দলের কাণ্ডারি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও আজ সোমবার অসুস্থ হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে। গত ২৮ মার্চ থেকে তাঁর অসুস্থতার খবরে গণমাধ্যম তোলপাড়। কারাগারে তাঁকে সিভিল সার্জন পরীক্ষা করেছেন। এরপর গত রোববার ডা. মো. শামসুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড পরীক্ষা করে। কিন্তু না জেল কর্তৃপক্ষ, না বেগম জিয়ার পরিবার-কেউই ‘অসুখ’ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলছে না। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে বেগম জিয়ার ‘অসুখ’ রাজনৈতিক। প্যারোল নিয়ে বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যেই অসুখ অসুখ খেলা চলছে। কারণ সিভিল সার্জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা বলছেন, ‘তিনি তেমন অসুস্থ নন।’ বেগম জিয়া গো ধরেছেন তাঁর নিজস্ব চিকিৎসক ছাড়া অন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করবেন না। শেষ পর্যন্ত সরকার হয়তো তাঁকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের সুযোগ দেবে। আর ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেওয়ার সার্টিফিকেট দেবেন- এসব গুঞ্জন এখন সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে।
বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হবার পর তাঁকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তারেক জিয়াও ‘অজ্ঞাত’ অসুখে ১০ বছরের বেশি সময় লন্ডন প্রবাসী। বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, লন্ডনে তারেক জিয়ার চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলেই তিনি দেশে ফিরবেন। বিএনপির এই বক্তব্য শুনে শিশুরাও হাঁসে। তারেক জিয়ার কি অসুখ হয়েছে যে, ১১ বছরেও তাঁর চিকিৎসা হয় না। একটি মানি লন্ডারিং মামলায় তিন বছর এবং জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর, মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত তারেক জিয়া। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হত্যা মামলার বিচারও শেষ পর্যায়ে। এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে, মামলা এবং দণ্ড এড়াতেই তারেক লন্ডনে‘অসুস্থ’ হয়ে আছেন।
বেগম জিয়া কারান্তরীণ হবার পর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের হাল ধরেন। গত প্রায় দুমাসে আলোচিত সমালোচিত মির্জা ফখরুল। সোমবার সকালে অজানা অসুখে তিনি ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ফখরুলের পরিবার কিংবা ইউনাইটেড হাসপাতাল কেউ তাঁর অসুখ সম্পর্কে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি। দলের মধ্যে নানা কোন্দলে চাপে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব। তাঁকে অসহযোগিতা করেছিলেন দলের সিনিয়র নেতারা। এর মধ্যে লন্ডন থেকে আসেন প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। শর্মিলা ঢাকায় আসার পর একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েন মির্জা ফখরুল। বিএনপি আবার জিয়া পরিবারের দখলে চলে যায়। এ অবস্থায় সরে যেতেই কি মির্জা ফখরুল ‘অসুস্থ’ হলেন? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যও অসুস্থতার কারণে দলীয় কার্যক্রমে অনুপস্থিত। এরা হলেন তরিকুল ইসলাম এবং ব্যরিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বেগম জিয়া বাহিরে থাকা অবস্থায় তাও তাঁরা স্থায়ী কমিটির মিটিংগুলোতে যোগ দেননি, এখন এসব বৈঠকেও তাঁরা অনুপস্থিত। বিএনপির প্রথম সারির নেতাদের অসুখে বিএনপিই এখন অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসুস্থ এই দলটি এখন এগুবে কীভাবে, সেটাই দেখার বিষয়।
Read in English- https://bit.ly/2H3EaXu
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।