নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৪ পিএম, ২২ এপ্রিল, ২০১৮
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার যে আর বেশিদিন লন্ডন থাকা হচ্ছে না, তা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে (বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায়) যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের দেওয়া এক সংবর্ধনায় প্রধান অতিথির ভাষণে বেশ স্পষ্ট করেই বলেছেন, যেভাবেই হোক তারেক জিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। তাঁর সাজা কার্যকর করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী এটাও বলেছেন যে, ‘যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর এ নিয়ে কথা হয়েছে।’ যারা শেখ হাসিনাকে বিন্দুমাত্র চেনেন, তাঁরা জানেন, শেখ হাসিনা যা বলেন, তা তিনি করেন। ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটিশ সরকার এই মুহূর্তে নানা অপবাদে কলঙ্কিত তারেক জিয়াকে সেদেশে রাখার ঝুঁকি নেবে না। কিন্তু যুক্তরাজ্য ছাড়লেই যে তারেক জিয়া বাংলাদেশে ফিরবেন বা তাঁকে ফিরতে বাধ্য করা হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ব্রিটিশ প্রত্যর্পণ আইন অনুযায়ী, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্ত কোনো বিদেশির জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় যদি বাতিল করা হয়, তখন তাঁর স্বদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে যাওয়ার অভিপ্রায় আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে ওই আশ্রয় গ্রহণকারীকে যদি তৃতীয় কোনো দেশ নেওয়ার আগ্রহ দেখায় এবং আশ্রয়কারীর যদি তাতে সম্মতি থাকে, তাহলে তাঁকে ওই তৃতীয় দেশেই পাঠানো হয়। জোর করে নিজ দেশে প্রেরণ করা ব্রিটিশ মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী। তারেক জিয়া সম্ভবত আইনের এই সুযোগটি নেবেন। যুক্তরাজ্য সরকার যখন তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করবে, তখন তৃতীয় কোনো দেশ যদি তাঁকে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়, তাহলে তারেক জিয়ার দেশে ফেরা আবার অনিশ্চিত হবে।
একাধিক সূত্র বলছে, যুক্তরাজ্য যদি তারেক জিয়াকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় তবুও তারেক দেশে ফেরার ঝুঁকি নেবে না। প্রশ্ন হলো, কোথায় যাবে ইন্টারপোলের খাতায় ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত তারেক জিয়া?
দুটি মামলায় দণ্ডিত, জঙ্গি তৎপরতাকে উস্কানি ও মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে। তারেক জিয়াকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেবে না, এটা নিশ্চিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাদের কোনোদিন ভিসা দেবেন না, সেই তালিকায় রয়েছেন তারেক জিয়া। এফবিআইয়ের তালিকায় তারেক ভয়ংকর সন্ত্রাসী। দুই মামলায় দণ্ডিত হবার কারণে ইউরোপের কোনো দেশ তাঁকে নিতে পারবে না। যুক্তরাজ্যে তাঁর ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ বাতিল হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত কোনো দেশে তারেক জিয়াকে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়’ দিতে পারবে না। তারেক জিয়ার পছন্দের দেশ সিঙ্গাপুর। কিন্তু সিঙ্গাপুর ইমিগ্রেশন আইন ২০০৮ সালে অনেক কড়াকড়ি হয়েছে। এখন অন্যদেশে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি সিঙ্গাপুরে দীর্ঘমেয়াদি প্রবেশাধিকার পায় না। মালয়েশিয়ায় তারেক জিয়ার বিপুল ব্যবসা এবং সম্পদ রয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি প্রতারণা মামলা রয়েছে। অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ থাকায় প্রয়াত কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমানও মালয়েশিয়ায় থাকতে পারেননি।
তারেক জিয়াকে নিতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী পাকিস্তান। বাংলাদেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানের ‘শেষ প্রতিনিধি’ বলা হয় তারেক জিয়াকে। কিন্তু তারেক জিয়া পাকিস্তানে গেলে তাঁর রাজনৈতিক আদর্শ এবং উদ্দেশ্য পরিষ্কার হয়ে যাবে, সে কারণেই তারেক পাকিস্তান যেতে আগ্রহী হবে না। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবে তারেক জিয়ার বিপুল সম্পদ রয়েছে। সম্পদ আছে কাতারেও। তবে, তারেক জিয়া ব্যক্তিগতভাবে সৌদি আরব যেতে আগ্রহী নন। ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার জিয়া পরিবারকে সৌদি আরব পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তারেকের আপত্তির কারণেই শেষ পর্যন্ত বিমান বন্দর থেকে বেগম জিয়ার ১২২টি স্যুটকেস ফেরত আনতে হয়। এখন তারেক জিয়ার সামনে একটি বিকল্প আছে সেটা হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। ইউএইর দুবাই এবং শারজায় তারেক জিয়ার একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে। দুবাই ট্যাক্স হ্যাভেন হওয়ার কারণে তারেক লন্ডনের চেয়ে এখানেই থাকতে পছন্দ করেন, কিন্তু মেয়ে জাইমার লেখাপড়ার জন্যই মূলত তারেক লন্ডনে ছিলেন। দুবাইতে কালো টাকা, আন্তর্জাতিক চোরাচালানের অবৈধ অর্থ এবং সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্য। দাউদ ইব্রাহিমের মতো বিশ্বের সেরা ডনরা থাকেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ইউএই আইন অনুযায়ী, ওই দেশে কোনো অপরাধ না করলে আপনি যত বড় অপরাধীই হন না কেন, আপনাকে কেউ বাধা দেবে না। তাই তারেক জিয়ার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ‘দুবাই’ স্বর্গরাজ্য। যুক্তরাজ্য থেকে বহিস্কৃত হওয়ার পর তারেকের পরবর্তী ঠিকানা কোথায় হবে, দুবাই নাকি অন্য কোনো দেশ? নাকি শেখ হাসিনার অন্যসব সাহসী সিদ্ধান্তের মতো তারেক জিয়াকেও তিনি দেশে ফেরাতে পারবেন?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।