নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৫৪ এএম, ০১ জুলাই, ২০১৮
গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার দুই বছর পূর্তি আজ। কিন্তু এই দুই বছরেও দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার এই ঘটনায় চার্জশিট দেওয়া হয়নি। শুধু হলি আর্টিজান নয়, এরপর দেশের অনেক জায়গায় জঙ্গি হামলা হয়েছে কিন্তু তাদের কোনোটারই চার্জশিট এখনও দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি সন্দেহে যাদের গ্রপ্তার করেছে তাঁদের মধ্যে অনেকে আবার জামিন নিয়ে বের হয়ে গেছে। এসব ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের জঙ্গি দমন অভিযানগুলোর সার্থকতা।
অবশ্য হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলার মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এ মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান মিয়া জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালও জানিয়েছেন হামিলার চার্জশিট শেষ পর্যায়ে। এই জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ ২৩ জন নিহত হয়।
হামলার অভিযোগপত্রে ৮ জনের নাম দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অ্যান্ড ট্রান্সলেশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘হামলাটি বাস্তবায়ন, প্রস্তুতি এবং সর্বশেষ হামলা পর্যন্ত আমরা মোট ২১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলেও এই ২১ জনের মধ্যে বিভিন্ন অভিযানে ১৩ জন নিহত হয়েছে। বাকি আটজনের বিরুদ্ধে আমরা পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। যার মধ্যে দুজন পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দিতে যাচ্ছি।’
যে ৮ জঙ্গির নাম চার্জশিটে থাকতে পারে তারা হলো – গ্রেপ্তার হওয়া রাজীব গান্ধী, বড় মিজান, রফিকুল ইসলাম রিগ্যান, সোহেল মাহফুজ, রাশেদুল ইসলাম ওরফে র্যাশ ও হাদিসুর রহমান সাগর এবং পলাতক শহীদুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন।
হলি আর্টিজানের ঘটনায় সম্পৃক্ত ২১ জঙ্গির মধ্যে ৫ জঙ্গি সরাসরি হলি আর্টিজান হামলায় সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্ট অভিযানে মারা গেছে। এরা হলো— রোহান ইমতিয়াজ, নিবরাস ইসলাম, মীর সামি মোবাশ্বের, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জল।
বাকিদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে সিটিটিসির অভিযানে তামিম চৌধুরী, আশুলিয়ায় র্যাবের অভিযানে সারোয়ার জাহান, মোহাম্মদপুরে ডিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারজান, আজিমপুরে সিটিটিসির অভিযানে তানভীর কাদেরী, রূপনগরে সিটিটিসির অভিযানে মেজর (অব.) জাহিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অপারেশনে বাসারুজ্জামান চকলেট ও ছোট মিজান এবং তারেক কল্যাণপুরের জঙ্গি অভিযানে আবু রায়হান নামের ৮ জঙ্গি মারা গেছে ।
আজ গুলশান হামলার ২ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ২টা পর্যন্ত চারঘণ্টা খোলা থাকছে হলি আর্টিজান। গতকাল গণমাধ্যমকে একথা জানান, হলি আর্টিজানের স্বত্বাধিকারীদের একজন সাদাত মেহেদী। নিহতদের স্বজন, শুভানুধ্যায়ী, বিভিন্ন দূতাবাস, ব্যক্তি, সংগঠন ও গণমাধ্যমকর্মীদের শোক প্রকাশ করার জন্য এ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান তিন বাংলাদেশি, এক ভারতীয়, নয় ইতালীয়, সাত জাপানি নাগরিক। ঘটনার প্রথমদিকে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে প্রাণ হারান দুই পুলিশ কর্মকর্তা। দু বছর কেটে গেলেও নিহতদের পরিবারে এখনো শোকের ছায়া কাটেনি। শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় এখনো তাঁরা স্মরণ করেন নিজেদের প্রিয়জনদের।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।