নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১৫ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনের সমাবেশে অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৬টি শর্ত দিয়েছে বিএনপি। সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে এই ৬টি শর্ত তুলে ধরেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আজ শনিবার দুপুর ২টার দিকে বিএনপির দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এসময় সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুজ্জামান আলীম।
সমাপনী বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর বলা ৬টি শর্ত হলো, ‘এক. আমাদের শেষ কথা অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। দুই. সকল রাজবন্দিকে মুক্তি দিতে হবে। তিন. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। চার. জাতীয় সংসদকে ভেঙে দিতে হবে। পাঁচ. নির্বাচনের সময় লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। ছয়. নির্বাচন পরিচালনার জন্য সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।’ সমাবেশে কয়েকবার একই শর্তগুলো বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যেও উচ্চারিত হতে শোনা গেছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমস্ত দেশবাসী ও রাজনৈতিক সংগঠনকে আহ্বান জানাতে চাই আসুন এখন আর কোনো বিভেদ নয়, কালবিলম্ব নয়, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য, বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আসুন বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে এই দুঃশাসনকে এই স্বৈরাচারকে যারা বুকের ওপর চেপে বসে আছে তাদের পরাজিত করি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও আজকের সমাবেশে প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি করেছিল। জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক শূন্যতা দূর করতে বিএনপি গঠন করেছিলেন। আওয়ামী লীগ বাকশাল গঠন করে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছে, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। আওয়ামী লীগ বিএনপিকে ভয় পায়, জিয়া পরিবারকে ভয় পায়।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রের জন্য ২৪ বছর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। আজ আবার যুদ্ধ করছি গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য। এ লড়াইয়ে আমাদের জিততে হবে। এ লড়াই জনগণের ভোটাধিকার ও বাগস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার লড়াই।’
বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভোটারবিহীন বর্তমান সরকার আবারও চায় একটি নীলনকশার নির্বাচন করতে। সে জন্য মিথ্যা মামলা, গুম-খুনের মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এসবে যখন বিএনপিকে দমাতে পারেনি, তখন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেছে সরকার। সেটি হলো, ইভিএম। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচন হবে, তবে সেই নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারে। ইভিএমের মাধ্যমে ডিজিটাল জালিয়াতি করে ভোটাধিকার হরণ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, আজ এ দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। তারা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বধ্য করবে।
বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে ফখরুলের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শেষ হয়। এতে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দলটির নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ডসহ ছোট ছোট মিছিল নিয়ে নয়াপল্টন সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুর ২টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ শুরু হয়।
বাংলা ইনসাইডার/বিপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।