নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৩২ পিএম, ১৯ অগাস্ট, ২০১৯
একটু আগে মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে যে, কোরবানির পশুর চামড়ার নজিরবিহীন দর বিপর্যয়ের পর কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও শেষ পর্যন্ত ঐ সিদ্ধান্তে অনড় থাকা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ট্যানারি মালিকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করলে দেশীয় শিল্পের স্বার্থে ঐ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম।
সচিব মহোদয় যিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও একাউন্টিং চীফ তিনি বলেন, নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রি হলে আমরা হয়তো রপ্তানি করতে দিবো না। অন্যথায় কেস টু কেস ভিত্তিতে ওয়েট ব্লু (কাঁচা চামড়ার পশম ও ঝিল্লি ছাড়ানোর পর যে অংশ থাকে) রপ্তানির সিদ্ধান্ত থাকতে পারে। অবশ্য অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কাঁচা চামড়ার বাজারে ভারসাম্য আনতে ও সিন্ডিকেটের কবল থেকে রক্ষা করতে চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত হবে না। কেননা ট্যানারি মালিকদের হিসাবেই এখনো অর্ধেক চামড়া অবিক্রীত রয়ে গেছে। ফলে চাহিদার চাইতে যোগান বেশি হওয়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বিক্রির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা কঠিন।
এদিকে আজ থেকে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনতে শুরু করছেন ট্যানারি মালিকরা। রপ্তানির সিদ্ধান্ত দেওয়ায় অতীতের মতো যেনতেন মূল্যে চামড়া কেনার পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে তাদের। এ পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও ট্যানারি মালিকরা চামড়া রপ্তানির বিপক্ষে। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) ট্রেজারার মিজানুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্তে লাভবান হবে আড়তদাররা। তারা কিনেছে নামমাত্র দামে। এখন বিক্রি করবে অনেক বেশি দামে। ইতিমধ্যে তারা শক্ত অবস্থানে চলে গেছে। বলেছে, শতভাগ নগদ টাকা ছাড়া কোন চামড়া বিক্রি করবে না। রপ্তানির সিদ্ধান্তে একটি বিশেষ গোষ্ঠী সুবিধা পাবে। গতবারের অর্ধেক চামড়া অবিক্রীত থাকা সত্ত্বেও এবার বাড়তি চামড়া রপ্তানিতে আপত্তি কেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, অবিক্রীত থাকা চামড়ার একটি অংশের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে।
অন্যদিকে মন্ত্রণালয়ের ঠুঁটো জগন্নাথ বা রিপোর্টিং অফিসারের মন্ত্রী মহোদয়ের মুখ দিয়ে আবার আবোল তাবোল বাক্য বেরুচ্ছে। পুরাতন ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডের সময়ও তাঁর মুখে বেফাঁস কথা এসেছে। একজন সিনিয়র উকিল ও রাজনীতিবিদের এই অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যে, মন্ত্রী মহোদয় নীল কণ্ঠ হয়ে চামড়া কেলেঙ্কারির সমস্ত দায়ভার নিজ কাঁধে নিতে চান। কিন্তু কেন? তাতে কী তাঁর নিজের লাভ না দলের লাভ না সরকারের লাভ না জনগণের লাভ! লাভ একটা থাকতেই হবে, তা না হলে কাজ হবে কেন? সরকারী দলের কর্মী সমর্থকদের সবাই প্রশ্ন করছেন-
সরকার বেঁধে দেওয়া মূল্য অগ্রাহ্য করে বা আদেশ অমান্য করে যারা ‘ছিনতাইকারী হয়ে’ এতিমের হক কোরবানির প্রায় ৫ শ’ কোটি টাকার চামড়া বিনা পয়সায় ছিনিয়ে নিলো তাদের কি বিচার হবে?
চামড়া রপ্তানি করতে না দিলে ট্যানারি মালিকদের হাতে আবার চামড়ার আড়তদার নামক ‘গরীবের হক কোরবানির চামড়া ছিনতাইকারীরা’ আবার ব্র্যাকেট বন্দি বা জিম্মি হবে টাকা পাওনায়, তাঁর কি হবে?
যারা চামড়ার আড়তদারদের চামাড়া সরবরাহের জন্য পাওনা ন্যায্য টাকা বাকী রেখে এতিমের হক মারার সুযোগ করে দিলো তাঁদের কী বিচার হবে?
দেশের মানুষের আর্থিক উন্নতির কারণে গত ৪/৫ বছর ধরে বেশি পশু কোরবানি হচ্ছে। এটা কোন হঠাৎ হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। এটা কয়েক বছরের ষড়যন্ত্রের সফল বাস্তবায়ন। যার নমুনা কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছিলো। যে পরিমাণ কোরবানির চামড়া উৎপাদিত হচ্ছে, তা হজম মানে ব্যবহার করার ক্ষমতা কি আমাদের দেশের সাকুল্য ট্যানারি মালিকদের আছে?
গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজার নিয়ে সমস্যা। তাহলে কোরবানির আগে কেন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হল না, এর জন্য দায়ী কে বা কারা? তাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বা হবে তা কি দেশের মানুষ জানতে পারবেন?
সচিব মহোদয় যিনি মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও একাউন্টিং চীফ তিনি পরিষ্কার করে কোন কথা বলেন না কেন! কেন মন্ত্রীকে দিয়ে কথা বলিয়ে এটাকে প্রশাসনের রাজনৈতিক অংশের ব্যর্থতা বলে চালানো চেষ্টা হয়। এর দায়ভার কেন সরকার বা সরকারী দল নেবে?
কয়েক শ’ কোটি টাকার চামড়া কেলেঙ্কারি করে যারা সরকারী দল তথা রাজনীতিবিদগণের কোটি কোটি টাকার ইমেজ নষ্ট করলেন তাঁদের কী হবে?
বাংলাদেশে চামড়া শিল্প লাভজনকভাবে চলে না, অন্য দিকে পাশের দেশ ভারত, যেখানে গরু জবেহ নিষিদ্ধ প্রায় দেই দেশে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে ট্যানারি শিল্প (হাব) এত দ্রুত উন্নতি লাভ করছে বা বেড়ে উঠছে, এর মাজেজা কী?
এমন শত প্রশ্ন বাংলাদেশের মানুষের মনে তার জবাব কে দেবেন? দায়িত্ব কি শুধু একা প্রধানমন্ত্রীর না আরও কারো আছে? কাঁচা চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্তের পরে আবার চামড়া রপ্তানিতে দোদুল্যমানতার পিছনে কারো সম্ভাব্য আর্থিক লাভ জড়িত আছে কি? নাকি ব্যালান্স করার জন্য করা? এসবের মীমাংসা জরুরী।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।