নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫২ পিএম, ২৭ জুন, ২০১৭
ঈদ শেষ। কর্মব্যস্ততা শুরু হতে কিছুটা সময় লাগবে, কিন্তু রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়াতে সময় লাগবে না। ২৯ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পাশ হবার কথা। বাজেট নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে কিছু কথা যুদ্ধ হবে। তবে, হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও পোড়াও এর মতো রাজনীতির তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের রাজনীতিতে গত ৪ বছরে এটি হলো সবচেয়ে ইতিবাচক ‘সাইন’। রাজনৈতিক দলগুলো সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির ধারা থেকে বেরিয়ে এসেছে। ঈদের পর বাজেট নিয়ে লোক দেখানো কিছু কর্মসূচি ছাড়া আর তেমন কিছুই করবে না বিরোধী দল। বরং, ঈদের পর রাজনীতি আবর্তিত হবে নির্বচনকে কেন্দ্র করেই। এই নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনীতির কেন্দ্রে থাকবে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে চায়। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে। সংলাপের প্রেক্ষাপট তৈরির লক্ষ্যে কমিশন ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছে। এই সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যেমন সবগুলো রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জন করতে চায়, তেমনি ভোটার তালিকা, সীমানা নির্ধারণসহ সকল বিরোধ নিষ্পত্তি করতে চায়।
নির্বাচন কমিশনের এই সংলাপ কার্যত, দেশকে নির্বাচনমুখী করবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল আশা করছে।
আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার পরপরই দেশব্যাপী জনসংযোগ কর্মসূচি গ্রহণ করবে। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের একাধিক এলাকায় সফর করবেন। আওয়ামী লীগ একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত করছে। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও এগিয়ে চলেছে। ঈদের পর আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানোর কাজটি দ্রুত সেরে ফেলতে চায়। দলের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, এটাই হলো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় সমস্যা।
অন্যদিকে, বিএনপির রাজনীতিও ক্রমশ, নির্বাচনমুখী হয়ে পরেছে। ঈদের পরপরই নির্বাচনী কৌশল ও রোডম্যাপ চূড়ান্ত করতে বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডনে যাচ্ছেন। লন্ডন থেকে ফিরেই ‘সহায়ক সরকারে’র রূপরেখা ঘোষণা করবেন বেগম জিয়া। বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বিএনপি তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘ভিশন ২০৩০’ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণার পরপরই ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। বিএনপি চায়, সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ। কিন্তু এরকম সংলাপের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। সরাসরি সংলাপ না হলেও, কূটনিতীকদের মাধ্যমে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে একটি সমাঝোতায় আনার চেষ্টা করা হবে এটা নিশ্চিত। বিএনপি নেতাদের বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের মামলা নির্বাচনের পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।
জাতীয় পার্টি নির্বাচনের প্রস্তুতি ঈদের আগেই শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি জোটেরও ঘোষণা দিয়েছে।
বাম দল, ইসলামী দলসহ সব রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচন ঘিরে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাবে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।