নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ এএম, ১০ জুলাই, ২০১৭
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই জনপ্রিয়তার পরীক্ষায় নামছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আগামী বছরের শুরুতেই কয়েকটি সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছে দুদলই।
আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। একে বলা হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ড্রেস রিহার্সেল। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সিটি নির্বাচনের জন্য জনসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা চালাতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিএনপির দখলে থাকা সিটি গুলোতে প্রচারণা শুরু করেছে মেয়ররা।
জানা গেছে, আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রংপুর, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী ও সিলেট এবং গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে এসব নির্বাচন সম্পন্ন করার কথা ভাবছে নির্বাচন কমিশন।
২০১৩ সালের কয়েকটি সিটি নির্বাচনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের নির্বাচনে জয় চায় আওয়ামী লীগ। সিটি নির্বাচনে জয়ের জন্য এরই মধ্যে হিসেব-নিকাশ শুরু করেছে তারা। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনে জয় এনে দিতে পারবেন এমন মেয়র প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করেছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা।
গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে নিজ এলাকায় জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জয়লাভের জন্য জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে হবে। জনগণের কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, বাড়ি বাড়ি যেতে হবে, উঠোন বৈঠক করতে হবে। এছাড়া আর কোনো পথ নেই। শুধু বড় বড় মিছিল, মিটিং করলেই কাজ হবে না। এ করে ভোট বাড়ানো যাবে না।’
২০০৮ সালের সিলেট, রাজশাহী, খুলনা সিটি নিয়ে প্রথম সিটি কর্পোরেশন হয়। ওই নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ, তবে ২০১৩ সালে জয় পায় বিএনপি। তাই এবারের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এই সিটি করপোরেশগুলো বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ একাধিক নেতা সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থীদের বিষয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জনমত জরিপের ভিত্তিতে কোন সিটিতে কাকে মনোনয়ন দিলে ভালো হবে, সে বিষয়ে নির্দেশনাও দিয়েছেন।
রাজশাহী, রংপুর ও সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পুরনো প্রার্থীরাই এবার লড়বেন মেয়র পদে। বাকি তিন সিটিতে নতুন প্রার্থীদের মনোনয়নের পক্ষে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।
এদিকে, বিভিন্ন কারণে গত বছর বরখাস্ত করা হয় অনেক মেয়রকে। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলায় মার্চে বরখাস্ত হয়েছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। অন্যদিকে, নভেম্বরে বরখাস্ত করা হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নানকে। আবার মার্চেই নাশকতাসহ ৯টি মামলায় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসব কারণে সিটি করপোরেশনগুলো নগরপিতা ছাড়াই চলছে। যে কারণে ব্যাহত হচ্ছে অনেক কর্মকাণ্ড।
বাংলা ইনসাইডার/আরএ/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।