নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৩ পিএম, ২৪ মে, ২০২০
বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বেনাপোলে দুই মাসআমদানি-রপ্তানি বন্ধ: অবাধ রেলকার্গো আমদানির ত্রিপক্ষীয় সুপারিশ। গত ২ মাস ধরে বেনাপোল বন্ধর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বন্ধ। কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরী নির্দেশনা সত্তে¡ও বাণিজ্য শুরু করা যায়নি। আমদানিরপ্তানি বন্ধ থাকলেও বেনাপোল কাস্টমসহাউস ও বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রয়েছে। ভারতের বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেট বাণিজ্য চালু করতে দিচ্ছেনা। ক্ষতি পোষাতে কাস্টমস কমিশনার অবাধে সাইডডোর ওএফসিএলসহ সব ধরণের রেলকার্গো বেনাপোল দিয়ে আমদানি ওখালাসের অনুমতি চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে জরুরী চিঠি দিয়েছে। এর আগে কাস্টমস, স্থলবন্দর ও ব্যবসাবান্ধব রেলকার্গো চালুর জন্যে ত্রিপক্ষীয় সুপারিশ পেশ করেছে।
বাংলাদেশ ভারতীয় পণ্য, কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি চাহিদা ক্রমশ: বাড়ছে। আমদানিকারকগণ চীন ও ইউরোপের পরিবর্তে ভারত থেকেপণ্য ও কাঁচামাল আনতে আগ্রহী। বিলম্ব ও হয়রানির কারণে তারা বেনাপোল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রকৃতি ভারতীয় পণ্যের চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে বেনাপোলে রেলকার্গো চালু অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ রেলকার্গো হ্যান্ডলিংয়ের সকল প্রস্তুতি গ্রহণকরেছে। ট্রাকে বাহিত পণ্য বেনাপোল আসতে যেখানে ৫থেকে ৭ দিন লাগে সেখানে রেল কার্গো পৌঁছাতে লাগে মাত্র ৩ঘন্টা। বাকী কয়েক ঘন্টায় শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। গতকাল চাল বীজের ৭৭৫মে.টনের চালান মাত্র ৩০মিনিটে শুল্কায়ন শেষ করা হয়। ১২ঘন্টারও কম সময়ে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ট্রেন গন্তব্যে চলে যায়। এক পণ্যের ভাড়াও ট্রাকের তুলনায় ভাড়া প্রায় অর্ধেকেরও কম।
ট্রাকে ভাড়া বেশী, পার্কিং সিন্ডিকেটের ট্রাক আটক রাখা, ড্রাইভারসংকট, কভিড১৯ পরিস্থিতির জন্য খরচ বাড়ে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে। এ পরিস্থিতিতে পুরোদমে রেলকার্গো চালু হলে আমাদানি দ্বিগুন হবে বলেবিশেজ্ঞরা মনে করেন। বনগাঁর পার্কিং সিন্ডিকেটের প্রভাবে বেনাপোলে রেলকার্গো আগমনের সিদ্ধান্তও বিলম্বিত হচ্ছে।
অন্যদিকে, গত দু’মাস এর বেশি বেনাপোলে ট্টাক ঢুকছে না। গত ৩০ এপ্রিলদিল্লির নির্দেশে বাণিজ্য চালও হয়েও আবার বন্ধ হয়ে গেছে। বনগাঁর নেতাদের চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যেকার দ্বন্দ্বই এ অচলাবস্থার মূল কারণ বলে জানা গেছে। সর্বশেষ বাংলাদেশে রপ্তানিকৃত ১৫টি ট্রাক খালাস করার বিনিময়ে আদায় করা টাকার ভাগ তৃণমূলের ও সিন্ডিকেটের সকল নেতা পায়নি বলে পরের অচলাবস্থা তৈরি করা হয়েছে। অচলাবস্থা ধরে রাখতে সিন্ডিকেট বেনাপোলে শতশত করোনা রোগী মারা যাবার ভুয়া গুজব বনগাঁতে রটিয়ে সাধারণমানুষকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে।
পার্কিং সিন্ডিকেটের তৈরি সংকটজনিত অচলাবস্থায় সীমান্তে আটকা পড়ে ৫০০০ট্রাক। কালীতলাসহ এ সকল পার্কিংয়ে অপেক্ষমান পণ্যেরমধ্যে আরো রয়েছে অক্সিজেন, ওষুধের কাঁচামাল, পাট, ধান, ভুট্টাবীজ, শিশুখাদ্য, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মসলা, ফলমুল, শিল্পের কাঁচামাল । রোদ বৃষ্টি ঝড়ে খোলা আকাশের নিচে। নষ্ট হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও পঁচনশীল পণ্য।
বোনপোলের একাধিক সূত্র বলেছে, দিল্লি-ঢাকা যৌথভাবে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য সতর্কতা বজায় রেখে বাণিজ্য চলবে। প্রতিদিন বেনাপোল কাস্টমসও স্থলবন্দর থেকে পেট্রাপোলে যোগাযোগ করা হয়েছে। দফায় দফায় সভা হয়েছে। সেই ২৩মার্চ থেকে ট্রাকে বোঝাই জরুরী পঁচনশীল পণ্য আনার জন্য বারবার চেষ্টা করা হচ্ছে । ট্রাকে অপেক্ষমান বিভিন্ন প্রকারবীজ নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশে বীজতলার সিজন চলে যাচ্ছে। দেব, দিচ্ছিকরে, বনগাঁর নেতারা পণ্য দেয়নি। উভয় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যায়নি।
ভারতীয় পণ্য ট্রাকে উঠলেই বাংলাদেশী আমদানিকারককে মূল্যপরিশোধ করতে হয়। এলসিতে প্রাপকের মূল্য পরিশোধের শর্তেই এটা বলা থাকে। আমাদানিকারকদের অন্যদেশের আমদানি পণ্য সমুদ্রপথে সময়মতো চলে আসছে। অথচ দুই মাসেও আসেনি ভারতীয় পণ্য।ফলে, লোকসানের সাথে বাজারে কৃত্রিম সংকটের সম্ভাবনা থাকলেও বাংলাদেশের আমাদের নীতিনির্ধারকদের পরিণামদর্শিতায় সেটা হয়নি।
ভুক্তভোগীর জানান, বনগাঁতে সকল প্রতিবাদের পরিণতি ট্রাক বন্ধে।বলা নেই কওয়া নেই, একজন নেতা বললো, বাংলাদেশে ট্রাক ঢুকবে না। আর বন্ধ হয়ে গেল। বিনা নোটিশে কৃত্রিম সংকটে ট্রাক বন্ধের যতো অজুহাত। কর্মচারী, ড্রাইভারের ঝগড়া, দুই সংগঠনের বিরোধ, শ্রমিক কর্মচারী ড্রাইভার ধর্মঘট, নতুন টীমের যোগদান, যাই নতুন ঘটুক এসব তুচ্ছ কারণে ট্রাক ঢোকা বন্ধ করা হয়! আর্থিক ক্ষতি গুনছে বাংলাদেশের নির্দোষ আমাদানিকারক ও ভোক্তারা।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বনগাঁ উত্তরের সাবেকএমএলএ গোপাল শেঠ ওবনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু পণ্য রপ্তানিতে বিরোধিতা করে কালীতলা পার্কিং থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক আসতে বাধা দেয়। এসব ট্রাকের প্রতিদেনের ভাড়ার টাকা ছাড়াও বনগাঁ পৌরসভা চাঁদা নিচ্ছে। প্রতিদিন ছোট গাড়ি ৫০ টাকা, ৬ চাকা ৮০ টাকা, ১০ চাকা ১২০ টাকাওট্রেলার ১৬০ টাকা হারে পার্কিং চার্জ আদায় করে থাকে। সিরিয়াল ভেঙ্গে আগে গাড়ি বের করে দেয়ার জন্যও বড় অংকের টাকা নিচ্ছে।
বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট স্টাফ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, সরকারিভাবে বা কাস্টমসের পক্ষ থেকে আমদানি রপ্তানি বন্ধ করা হয়নি। ট্রাক ড্রাইভারদের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে, এমন অজুহাতে তৃণমূল কংগ্রেসেরবনগাঁ উত্তরের সাবেক এমএলএ গোপাল শেঠ ও পৌর মেয়র শংকর আঢ্য ডাকু গুজব ছড়িয়ে জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আন্দোলন করে বাংলাদেশে পণ্য রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার বলেন, ভারত থেকে দুই দিনে ১৫ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়েছে। নো-ম্যানসল্যান্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিধিবিধান মেনেই পণ্য ট্রান্সশিপমেন্ট করা হয়েছে। ভারতের বনগাঁ এলাকার জনগণের আন্দোলনের জন্য পণ্য আমদানি হয়নি। পেট্রাপোল বন্দর থেকেপণ্য আসলে বেনাপোল বন্দরের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সবধরণের সহযোগিতা করা হবে।
কোলকাতা থেকে বেনাপোলে সকল আইটেমের রেলকার্গো অবিলম্বে চালুকরা যেতে পারে। এ সংক্রান্ত স্থলবন্ধর কমিটি তদন্ত করে স্থলবন্দরেররেলকার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের সক্ষমতা রয়েছে দেখতে পায়। সাইডডোর ও এফসিএন কন্টেনার ও হ্যান্ডলিং করা সম্ভব বলে কমিটি সুপারিশ করেন। এখন সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া ট্রাক প্রবেশ বন্ধ না করার বিষয়ে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি নিয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। অচলাবস্থার যাতে স্থায়ী না হয় সমাধান হওয়া দরকার আমদানিকারকের সামনে মুক্তবাজার অর্থনীতি, বিকল্প পণ্য, বিকল্পদেশ উন্মুক্ত। বহু আমাদানিকারক বেনাপোল থেকে চট্টগ্রাম, মোংলা ও অন্যান্য বন্দরে চলে গেছে।
ভারত বাংলাদেশের প্রধান স্থলবাণিজ্য বন্দর বনগাঁর নেতাদের ইচ্ছা অনিচ্ছার হাতিয়ার হয়ে পড়েছে । স্বেচ্ছারিতার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ৩৫হাজারথকোটি টাকা আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য কিছু লোভী ও দুবৃত্ত ব্যক্তির খামখেয়ালের ওপর নির্ভরশীল হয়ে চলতে পারে না। অবিলম্বেএদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দু দেশের নীতি নির্ধারকদেরকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে মাফিয়ামুক্ত সুষম বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরি করতেহবে।
দুই সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সিন্ডকেটমুক্ত সহজ সুষমবাণিজ্য নিশ্চিত করতে হলে কমলাপুর আইসিডির মতো শর্তহীন অবাধে সবরকম পণ্য রেলকার্কগো ও কন্টেনারে আমদানির বিকল্প নেই। কোনপ্রকার দেরী না করে বেনাপোল কাস্টম হাউস ও স্থলবন্দরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এ নিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করছে বলে সূত্র জানায়।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জেলা প্রশাসক সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে একটি চালকলে ধান সিদ্ধ করার সময় বয়লার বিস্ফোরণে এক শ্রমিকে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুই শ্রমিক। শুক্রবার (৩ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মেসার্স আজাহার চালকলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফজল আলী (২৬) উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার রবিয়াল হোসেনের ছেলে।
আহত শ্রমিকরা হলেন, উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মৃত পলান শেখের ছেলে জহুরুল শেখ (২৬) এবং কর্ণসূতি পশ্চিম পাড়ার মৃত সুরুত মন্ডলের ছেলে জিন্নাহ মন্ডল (৩০) ।
আহত শ্রমিক জহুরুল শেখ জানান, ‘ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এতে আমি সহ ফজল ও জিন্নাহ আহত হই। আমি আর জিন্নাহ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে চলে এসেছি আর ফজলের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।’
জহুরুল আরও জানান, ‘আমি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই চালকলে কাজ করছি। এর মধ্যে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হলেও বয়লার পরিবর্তন করা হয়নি।'
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত ফজলের ভাই আসলাম হোসেন জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে বয়লার বিস্ফোরণে ফজল গুরুতর আহত হয়। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
মেসার্স আজাহার চালকলের স্বত্বাধিকারী আজাহার আলী রাজা দাবি করেন, ‘গত ছয় মাস আগে বয়লার ও কয়েক দিন আগে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হয়েছে। বয়লার কেন বিস্ফোরণ হলো বুঝতে পারছি না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমনুল হক জানান, ‘বয়লার বিস্ফোরণে আহত তিন জন শ্রমিককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। দুই জনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়ে। এদের মধ্যে ফজল নামে একজন শ্রমিকের মুখের অনেকাংশ থেঁতলে গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।'
মন্তব্য করুন
গাজীপুরের জয়দেবপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে তেলবাহী ট্রেনের
মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (০৩ মে) গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত বহু
আরও পড়ুন: দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: উদ্ধারে যোগ দিয়েছে বিজিবি
এদিকে ঘটনার পর থেকে জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম
রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে অন্তত ৬টি ট্রেন।
জয়দেবপুরের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী মিয়া বলেন, ‘আজ পৌনে ১১টার
দিকে টাঙ্গাইল কমিউটার ও তেলবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। রেললাইনের পয়েন্টের ভুলের
কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি
বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনটিতে যাত্রী কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। কমিউটার ট্রেনের
লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায়
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ’।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার হাশেম ও পয়েন্টসম্যান
সাদ্দাম হোসেনসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের
জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধারের জন্য ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন
ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এরই মধ্যে রেলের সব বগি তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভেতরে কেউ আটকা নেই। ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করে বলেন, জয়দেবপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে
প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের
প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা
ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার
প্রক্রিয়া শুরু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ
করা হয়েছে।
এরআগে, শুক্রবার (০৩ মে) বেলা ১১টার দিকে জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার
সিগনালে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে একটি তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, রেল দুর্ঘটনায় দুই ট্রেনের চালক ও সহকারীরা আহত হয়েছেন।
তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রেল দুর্ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের
রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে কমলাপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়েছেন ৪-৫টি ট্রেনের যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি উত্তরবঙ্গ থেকে
ছেড়ে এসে গাজীপুর হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগনালে
পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তবে টাঙ্গাইল
কমিউটারে খুব বেশি যাত্রী ছিল না।
একজন উদ্ধারকর্মী জানান, শুক্রবার টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনে থামে। আজ বন্ধ থাকায় এটির থ্রোপাস করার কথা। আর অপরদিকে ঢাকা থেকে আসা তেলবাহী ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়ানো ছিল। এখানে আপলাইন ও ডাউনলাইন আছে, কিন্তু কী কারণে ট্রেন দুটি মুখোমুখি হল সে বিষয়ে তদন্তের পর জানা যাবে।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
এর আগে, গতকাল রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে
উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করে। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের
মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি সকালে ২ নম্বর
রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোতে ঢোকার সময় লাইনচ্যুত হয়। তখন এ রুটে
সব রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন সাড়ে ১০টার দিকে লাইনচ্যুত
ট্রেনটি উদ্ধার করে। বর্তমানে রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা
রুটে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ২ নম্বর রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন
ডিপোতে ঢোকার সময় মালবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে মেইন লাইন ব্লক হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর
সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে তিন ঘণ্টা পর ট্রেনটি উদ্ধার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজবাড়ীর সঙ্গে স্বাভাবিক হয়েছে ট্রেন চলাচল।
দুই ট্রেন সংঘর্ষ স্টেশন মাস্টার তদন্তে কমিটি
মন্তব্য করুন