নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ২৫ মে, ২০২০
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা ও তাঁর আশেপাশের নগরী আর চট্টগ্রামে বাংলাদেশের সব চেয়ে বেশী ধনী লোকের বসবাস। আর এখানেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। অবাক করার কথা হল বাংলাদেশের সব চেয়ে ধনীদের অনেকেই এখন করোনায় আক্রান্ত, দুই একজন ধনী মানুষ, পদস্থ কর্মকর্তা, ডাক্তার, মেডিক্যাল স্টাফ, পুলিশ সহ বেশ কিছু মানুষ মারা গেছেন। অনেকে করোনায় আক্রান্ত। আগামীতে যে আরও আক্রান্ত হবেন না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এই ধনী শ্রেণির বাংলাদেশীরা বাংলাদেশ বা ভারত নয় সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চায়না, আমেরিকা ইংল্যান্ডে তাঁদের চিকিৎসা করান।
বাংলা ইনসাইডারের খবরে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়েছে। এখন শুধু ঢাকার মধ্যেই সংক্রমণ সীমাবদ্ধ নেই, চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। লক্ষণীয় ব্যাপার যে, করোনার যে সংক্রমণ হচ্ছে তা গরীব মানুষের চেয়ে ধনীদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, এখন পর্যন্ত যে ৩২ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তাঁর মধ্যে উচ্চবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্তদের সংখ্যাই বেশি। কারণ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি বড় শিল্প-গ্রুপ এবং বড় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল ইসলাম করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন, মারা গেছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক এম পি হাজী মকবুল সাহেব। এছাড়াও আক্রান্ত হয়েছে এই গ্রুপের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন হা-মিম গ্রুপের এ কে আজাদ। এছাড়াও এপেক্স গ্রুপের নজরুল এলাহীর স্ত্রী।
এমতাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে যে, বাংলাদেশে ধনীরা কেন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে কয়েকটি বড় কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে- ১. ব্যবসায়িক কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া, ২. ধনীরা দুশ্চিন্তা বেশি করেন, ৩. বাংলাদেশে ধনীদের চিকিৎসা নিতে অনীহা, ৪. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ধনীদের মধ্যে, ইত্যাদি।
গত ২৮ জুন, ২০১৯ বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে জানায় কেবল ভারতেই প্রতি বছর নব্বই হাজার কোটি টাকা, চিকিৎসা বাবদ ব্যয় করে থাকে বাংলাদেশি গরীব আর মধ্যবিত্ত রোগীরা! এর বাইরেও যারা ধনী তাঁরা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চায়না, আমেরিকা ইংল্যান্ডে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন যার ব্যয় ভারতের চেয়ে ২ বা ৩ গুণ বেশি হবার কথা। আমরা এবার দেখে নিই ভারতেই কোথায় কোথায় বাংলাদেশের গরীব আর মধ্যবিত্তরা চিকিৎসার জন্য যান, কেন যান।
দেবী শেঠির নাম জানেন না এমন শিক্ষিত মানুষ বাংলাদেশে খুব কম আছেন। ব্যাঙ্গালুরুতে দেবী শেঠির নারায়না হেলথ সিটিতে ঢুকতেই যে বিষয়টা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো, একটি ছাদের নিচে চার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষ উপাসনা করে। মুসলমানদের মসজিদ, সনতান (হিন্দু) সম্প্রদায়ের মন্দির, খ্রিষ্টানদের গির্জা ও শিখদের গুরুদুয়ারা! মুসলমানেরা তো শুক্রবারে মসজিদের অংশের বাইরেও ঘাসের উপর নামাজ পরে থাকে। এটাই তাঁদের রোগী বান্ধব পলিসি। দেবী শেঠির এই হসপিটালে অনেক বাংলাদেশি রোগী হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে যা;, সম্ভবত চট্টগ্রামের রোগী বেশি এসে থাকে, চট্টগ্রামের লোকেরা তো নিজেরাই ঠাট্টা করে বলেন, ‘পয়সা, খরচ করে ভারতীয় গরুর মাংস খাইয়া, হার্টে ব্লক বানাই, আবার টাকা খরচা করে ভারতে আসি হার্টের অপারেশন করতে’! নারায়না হেলথ সিটি হওয়ার আগে ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি রোগীরা মনিপাল হসপিটালে হৃদরোগের চিকিৎসা করত। তবে মনিপাল হসপিটালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি।
সাগর তীরের চেন্নাই শহরে রয়েছে চেন্নাই এপোলো, শংঙ্কর নেত্রালয়া, চেন্নাইয়ের ভেলোর জেলায় রয়েছে সিএমসি হসপিটাল। খুব কম খরচে যেখানেও সবচেয়ে বেশি চিকিৎসা সেবা নিতে যায় বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশিদের কাছে সবচেয়ে বেশি পরিচিত ও আস্থার প্রতীক যে হসপিটালটি, তা হচ্ছে ভেলোরের এই সিএমসি হসপিটাল। অনেক পুরনো এ হসপিটাল। বেশির ভাগ স্টাফ ও ডাক্তার রোগী-বান্ধব। আজকাল ভেলোরে সিএমসি হসপিটাল, চেন্নাই এপোলো, শংঙ্কর নেত্রালয়া হাসপাতালের সামনে দোকানগুলোতে বাংলা লেখা দেখলে বুঝা মুশকিল দক্ষিণ ভারতের এই ক্ষুদ্র অংশটুকু কলকাতা, নাকি ঢাকার কোনো মহল্লা।
এর বাইরে কোলকাতাতেও অনেক বাংলাদেশি রোগী ভাষাগত ও অন্যান্য কারণ চিকিৎসা সেবা নিতে যান। আগে এটা অনেক বেশি ছিল এখন অনেক কম বাংলাদেশ রোগী কলকাতায় যান।
সম্প্রতি বাংলাদেশের আরো একটি দৈনিকে, এসেছে, ভারতে চিকিৎসা নেয়া ৪৫ শতাংশ রোগীই বাংলাদেশি! এই কথার প্রমাণ পেতে আপনি যদি উপরের উল্লেখিত হাসপাতালগুলোতে যান, তখন দেখবেন সেখানকার প্রায় অর্ধেকের বেশী বাংলাদেশী রোগী। যদিও দুই লাখ, একুশ হাজার মেডিকেল ভিসা নিয়েছে গত বছর বাংলাদেশিরা! কিন্তু ভ্রমণ ভিসা নিয়েও চিকিৎসা করিয়ে থাকে যা এই রিপোর্টে বা জরিপে আসেনি। তাহলে এর সাথে কমপক্ষে আরো দুই লাখ বাড়বে। গত ছয় বছরে ভারতে চিকিৎসা নেয়া রোগীর সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলছে। ভারতের একটি বিরাট আয়ের উৎস বাংলাদেশের রোগীরা। ভারতীয়রা ব্যবসাটা আমাদের চেয়ে খুব ভালো বুঝে। শুনেছি, রাজীব গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকা কালীন এক প্রখ্যাত প্রবাসী ডাক্তারকে ধরে এনে যথাযোগ্য সম্মান ও বিদেশে থাকার সমপরিমাণ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বলেন, দেশেই চিকিৎসা কর্ম চালিয়ে যান।
আপনারা অনেকেই জেনে থাকবেন যে, ঢাকার এপোলো হাসপাতাল বন্ধ হয়ে অন্য নামে চালছে এখন। এর কারণ ঢাকার এপোলো হাসপাতালে অনেক বেশি খরচ নেন, আর আচরণ রোগী বান্ধব নয়। গত নভেম্বর মাসে চেন্নাই এপোলো হাসপাতালে যাবার আগে একজন রোগী ঢাকার চেন্নাই এপোলো একটা অপারেশনের খরচ জানতে যান। তাঁর কাছে অপারেশন খরচ চাওয়া হয় ২৪ লাখ টাক সেই রোগীর কাছে চেন্নাই এপোলো চায় ১৪ লাখ টাকা। তখনি চেন্নাই এপোলোর একজন কর্মকর্তা জানান যে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই ঢাকার এপোলোর লাইসেন্স বাতিল হবে।
অনেকেই দাবি করেন যে, এশিয়ায় সব চেয়ে ভালো চিকিৎসা ব্যবস্থা জাপানে। আমাদের দেশে এমন অনেক ধনী আছেন যারা জাপানিজ ষ্ট্যাণ্ডার্ডের একাধিক হাসপাতাল বাংলাদেশে তৈরি করেও ভারত, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, চায়না, আমেরিকা ইংল্যান্ডে বাংলাদেশীদের চিকিৎসা নিতে যাওয়া কমিয়ে ফেলতে পারেন। তাঁরা দেশের সবগুলো বিভাগেই এমন একাধিক হাসপাতাল তৈরি করার আর্থিক ক্ষমতা তাঁদের আছে, নেই শুধু মানসিকতা বা রোগী বান্ধব মেডিক্যাল ব্যবসার ইচ্ছার অভাব। আমাদের দেশের ডাক্তারদের মেধা কম নয়, তাঁরা উপযুক্ত পরিবেশ পেলে অনেক উন্নত চিকিৎসা দিতে সক্ষম। প্রয়োজনে বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনেও উন্নত রোগী বান্ধব চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব নয়।
সব ক্ষেত্রেই স্বজন হারানোর ব্যথার রূপ ও কষ্ট এক। সে গরীব আর বড় লোক যেই হউন না কেন। এবারের করোনাভাইরাসের করাল থাবায় আমাদের ম ও মননের পরিবর্তন আনতে বাধ্য। আজ ঈদ। এই ঈদের দিনে আমরা আমাদের দেশের ধনীদের কাছে কী এই প্রত্যাশা করতে পারি না যে তাঁরা এখন চিকিৎসা ব্যবসায় এগিয়ে এসে আমাদের সবাইকে বাঁচাবেন, নিজেরাও চিকিৎসা সেবা নেবেন, আমাদের দেশও আর্থিক ও স্বাস্থ্য সেবা খাতে হবে সমৃদ্ধ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জেলা প্রশাসক সম্মেলন প্রধানমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে একটি চালকলে ধান সিদ্ধ করার সময় বয়লার বিস্ফোরণে এক শ্রমিকে মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও দুই শ্রমিক। শুক্রবার (৩ মে) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মেসার্স আজাহার চালকলে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফজল আলী (২৬) উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার রবিয়াল হোসেনের ছেলে।
আহত শ্রমিকরা হলেন, উপজেলার জামতৈল পশ্চিম পাড়ার মৃত পলান শেখের ছেলে জহুরুল শেখ (২৬) এবং কর্ণসূতি পশ্চিম পাড়ার মৃত সুরুত মন্ডলের ছেলে জিন্নাহ মন্ডল (৩০) ।
আহত শ্রমিক জহুরুল শেখ জানান, ‘ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে ভোর সাড়ে ৪ টার দিকে বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ হয়। এতে আমি সহ ফজল ও জিন্নাহ আহত হই। আমি আর জিন্নাহ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে বাড়িতে চলে এসেছি আর ফজলের অবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।’
জহুরুল আরও জানান, ‘আমি গত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই চালকলে কাজ করছি। এর মধ্যে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হলেও বয়লার পরিবর্তন করা হয়নি।'
মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে নিহত ফজলের ভাই আসলাম হোসেন জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে ধান সিদ্ধ করার এক পর্যায়ে বয়লার বিস্ফোরণে ফজল গুরুতর আহত হয়। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।'
মেসার্স আজাহার চালকলের স্বত্বাধিকারী আজাহার আলী রাজা দাবি করেন, ‘গত ছয় মাস আগে বয়লার ও কয়েক দিন আগে বয়লারের পাইপ পরিবর্তন করা হয়েছে। বয়লার কেন বিস্ফোরণ হলো বুঝতে পারছি না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমনুল হক জানান, ‘বয়লার বিস্ফোরণে আহত তিন জন শ্রমিককে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। দুই জনকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়ে। এদের মধ্যে ফজল নামে একজন শ্রমিকের মুখের অনেকাংশ থেঁতলে গেছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন সুলতানা জানান, ‘মেসার্স আজাহার চালকলে বয়লার বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।'
মন্তব্য করুন
গাজীপুরের জয়দেবপুরে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে তেলবাহী ট্রেনের
মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (০৩ মে) গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
আরও পড়ুন: গাজীপুরে মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ, আহত বহু
আরও পড়ুন: দুই ট্রেনের সংঘর্ষ: উদ্ধারে যোগ দিয়েছে বিজিবি
এদিকে ঘটনার পর থেকে জয়দেবপুর স্টেশন দিয়ে ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম
রুটের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়েছে অন্তত ৬টি ট্রেন।
জয়দেবপুরের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী মিয়া বলেন, ‘আজ পৌনে ১১টার
দিকে টাঙ্গাইল কমিউটার ও তেলবাহী ট্রেনের সংঘর্ষ হয়েছে। রেললাইনের পয়েন্টের ভুলের
কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে তেলবাহী ট্রেনের পাঁচটি এবং যাত্রীবাহী ট্রেনের চারটি
বগি লাইনচ্যুত হয়। কমিউটার ট্রেনটিতে যাত্রী কম থাকায় হতাহতের সংখ্যা কম। কমিউটার ট্রেনের
লোকোমাস্টারসহ চারজন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায়
৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ’।
তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আপঘুন্টি স্টেশন মাস্টার হাশেম ও পয়েন্টসম্যান
সাদ্দাম হোসেনসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের
জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বগি উদ্ধারের জন্য ১২টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রিলিফ ট্রেন
ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুস সামাদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এরই মধ্যে রেলের সব বগি তল্লাশি করা হয়েছে। তবে ভেতরে কেউ আটকা নেই। ট্রেনের চালক ও সহকারী চালকসহ ৪ জন আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল
পরিদর্শন করে বলেন, জয়দেবপুরে ট্রেন দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে
প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তাদের
প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল ভুল, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এ দুর্ঘটনা
ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন স্টেশনে বেশ কয়েকটি ট্রেন যাত্রা বিরতি করা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার
প্রক্রিয়া শুরু করতে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ
করা হয়েছে।
এরআগে, শুক্রবার (০৩ মে) বেলা ১১টার দিকে জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার
সিগনালে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে একটি তেলবাহী ট্রেনের মুখোমুখি
সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তিনি জানান, রেল দুর্ঘটনায় দুই ট্রেনের চালক ও সহকারীরা আহত হয়েছেন।
তাদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া রেল দুর্ঘটনায় ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের
রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এতে কমলাপুর রেলস্টেশনে আটকা পড়েছেন ৪-৫টি ট্রেনের যাত্রী।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি উত্তরবঙ্গ থেকে
ছেড়ে এসে গাজীপুর হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনের আউটার সিগনালে
পৌঁছালে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তবে টাঙ্গাইল
কমিউটারে খুব বেশি যাত্রী ছিল না।
একজন উদ্ধারকর্মী জানান, শুক্রবার টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি বন্ধ থাকে। অন্যান্য দিন ট্রেনটি জয়দেবপুর স্টেশনে থামে। আজ বন্ধ থাকায় এটির থ্রোপাস করার কথা। আর অপরদিকে ঢাকা থেকে আসা তেলবাহী ট্রেনটি স্টেশনে দাঁড়ানো ছিল। এখানে আপলাইন ও ডাউনলাইন আছে, কিন্তু কী কারণে ট্রেন দুটি মুখোমুখি হল সে বিষয়ে তদন্তের পর জানা যাবে।
আরও পড়ুন: রাজবাড়ীতে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক
এর আগে, গতকাল রাজবাড়ীতে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরে ৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। বৃহস্পতিবার (২ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে
উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন এসে লাইনচ্যুত ট্রেনটি উদ্ধার করে। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশনের
মাস্টার তন্ময় কুমার দত্ত বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, খুলনা থেকে ছেড়ে আসা মালবাহী ট্রেনটি সকালে ২ নম্বর
রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন ডিপোতে ঢোকার সময় লাইনচ্যুত হয়। তখন এ রুটে
সব রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধারকারী রিজার্ভ ট্রেন সাড়ে ১০টার দিকে লাইনচ্যুত
ট্রেনটি উদ্ধার করে। বর্তমানে রাজবাড়ীর সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা
রুটে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় ২ নম্বর রেলগেট এলাকার ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন
ডিপোতে ঢোকার সময় মালবাহী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। এতে মেইন লাইন ব্লক হয়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর
সঙ্গে ঢাকা, রাজবাড়ী-দৌলতদিয়া ও রাজবাড়ী-খুলনা রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে তিন ঘণ্টা পর ট্রেনটি উদ্ধার করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রাজবাড়ীর সঙ্গে স্বাভাবিক হয়েছে ট্রেন চলাচল।
দুই ট্রেন সংঘর্ষ স্টেশন মাস্টার তদন্তে কমিটি
মন্তব্য করুন
গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ পরবর্তী উদ্ধার কাজে সহায়তা করতে দুই
প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাকা-জয়দেবপুর রেল সড়কের গাজীপুরের ছোট দেওড়া কাজীবাড়ি
এলাকায় মালবাহী ও যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় উদ্ধার কাজের
সহায়তায় ২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন।
তিনি আরও জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা টাঙ্গাইল
কমিউটার ট্রেনটি আজ (শুক্রবার) বেলা ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে ঢাকার
উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে আউটার সিগন্যালে পৌঁছানোর পর লাইন
ক্রসিং করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা জয়দেবপুর আউটার সিগন্যালের কাজীবাড়ি ছোট দেওড়া
এলাকায় একটি মালবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটে।
এ ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকসহ আহত ৪জনকে উদ্ধার করে গাজীপুর
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আরও আহত
থাকতে পারে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত জানানো যাবে।
মন্তব্য করুন