নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৬ মার্চ, ২০২১
ওয়ান ইলেভেন। সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আক্রমণের শিকার হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করা হলো। সেই সময়ে সেনাবাহিনী এবং ওয়ান ইলেভেন সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি পরিচিতি পান, তিনি হলেন নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। সে সময় সমঝোতা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক প্রতিনিধিদের সাথে মিলিত হয়েছিলেন কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা। ঐ সেনা কর্মকর্তাদের রিসিভ করা থেকে শুরু করে তাদের প্রটোকল দেয়ার কাজটি করেছিলেন ঐ ব্যক্তি। এজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে ধিকৃত এবং সমালোচিত হয়েছিলেন নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আশা করেছিল, ওয়ান ইলেভেনের সময় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছিল, আওয়ামী লীগ সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ব্যবস্থা না নিক তাদের থেকে দুরে থাকবে। কিন্তু কি আশ্চর্য, গত এক যুগে এইসব গণতন্ত্র বিরোধী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাই ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছে। তারা এত ক্ষমতাবান যে, এদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। দেশে বোধহয় উপাচার্য হবার মতো শিক্ষকের আকাল পরেছে। এরা এত ক্ষমতাবান যে, উপাচার্য হয়ে এরা তার প্রতিষ্ঠানে থাকার প্রয়োজন মনে করেন না। নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ মোট ১২৬৩ দিন উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত বেগম রোকেয়া ক্যাম্পাসে ছিলেন মাত্র ১২৬ দিন। তারপরও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এতই ক্ষমতাবান যে, তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তিনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন, শিক্ষামন্ত্রীকে সরাসরি আক্রমণ করেন। একজন উপাচার্যের এধরনের কর্মকাণ্ড শিষ্টাচার বিরোধী কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে পারে কিনা, সেটিও দেখার বিষয়। অবশ্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহদের জন্য আইন, নীতি-নৈতিকতা প্রযোজ্য নয়। সব আমলেই এরা ক্ষমতাবান থাকেন। সব সরকার এদের খুঁজে নেয়। সরকাররা এদের ভয়ে যেন তটস্থ থাকে। এরা হলো ম্যান অব অল সিজন। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন তারা সেই দলের বুদ্ধিজীবী।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।