নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৯ পিএম, ২৬ মার্চ, ২০২১
শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২৬শে মার্চ অনুষ্ঠানে তিনি ভাষণও দিলেন। এই ভাষণে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের নতুন বার্তা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন। রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় প্রশ্ন হল যে ঝুঁকি নিয়েও নরেন্দ্র মোদি কেন বাংলাদেশে এলেন। একাধিক ঝুঁকি ছিল তার বাংলাদেশ সফর নিয়ে। প্রথমত, হঠাৎ করেই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই করোনার প্রকোপ বৃদ্ধির কারণেই গত বছর মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নরেন্দ্র মোদির সফর বাতিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর আস্ফালন। এরকম অবস্থার প্রেক্ষিতে নিরাপত্তার অজুহাতে নরেন্দ্র মোদির সফর বাতিল হতেই পারতো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসেছেন এবং এই সফরের মধ্য দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তাঁর আস্থার কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন।
প্রশ্ন হলো যে নরেন্দ্র মোদী কেন শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন এবং আস্থা জানাচ্ছেন। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজন বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) একটি উগ্র মৌলবাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় মেয়াদে নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ববাদ এবং উগ্র জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিচ্ছেন এমন অভিযোগ ভারতের মধ্যেই করা হচ্ছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা উদার গণতান্ত্রিক একজন বিশ্বনেতা। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনায় যেমন বিশ্বাস করেন, তেমনি বহুমত এবং বহু পথের রাজনীতিকে সচল রাখতে চান। আর এ কারণেই নরেন্দ্র মোদি যখন প্রথমবারের মতো ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন বাংলাদেশের অনেকে উল্লসিত হয়েছিল। তারা মনে করেছিল, বিজেপির ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে চাপে পড়বে আওয়ামী লীগ।
কংগ্রেসের সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক সেই সম্পর্কের সূত্র ধরেই ২০১৪ নির্বাচনকে সমর্থন করেছিল ভারত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি এসে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্বিন্যাস করবেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিজেপি সম্পর্ক রাখবে কিনা সেটিও ছিল আলোচনার বিষয়। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনা পাল্টে দিয়ে নরেন্দ্র মোদির সেই সময় শেখ হাসিনার প্রতি তার অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।
গত সাত বছরে শেখ হাসিনার প্রতি নরেন্দ্র মোদির আস্থা এতটুকুও ফাটল ধরেনি। প্রশ্ন হচ্ছে কেন শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, একাধিক কারণে শেখ হাসিনার প্রতি তারা আস্থা।
প্রথমত, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থান। শেখ হাসিনাই ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, যিনি ক্ষমতায় এসে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ করেছেন। কোনভাবেই এইসব বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে না, এটা ভারত সবচেয়ে ভালো জানে।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা যেটি বলে সেটি করেন। শেখ হাসিনার রাজনীতিতে কোন মিথ্যাচার নেই এবং কূটকৌশল নেই। তিনি যেটা বিশ্বাস করেন সেটা বলেন এবং যেটি বলেন সেটি করেন। এর ফলে সবচেয়ে লাভ হয় পাশের প্রতিবেশী ভারতের। কারণ এই রকম একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে মীমাংসা করাটা সহজতর হয়।
তৃতীয়ত, শেখ হাসিনার উদারতা। শেখ হাসিনা সবসময় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উদার। তিনি জটিলতার মধ্যে না গিয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন।
আর এই সমস্ত কারণেই নরেন্দ্র মোদির আস্থা শেখ হাসিনায়। কারণ ভারত খুব ভালো করে জানে যে, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা কোন বিকল্প নেই। আর শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়গুলো সমাধান করা অত্যন্ত জটিল হয়ে পড়বে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাপদাহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।
প্রথম দুই দফা ভোটের যে হার, তাতে বিজেপির মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিজেপির নেতারা ভোটে যে ভূমিধস বিজয় আশা করছিলেন সেটি হবে না। ভারতের কোন কোন গণমাধ্যমগুলো ভোটের ফলাফলে নাটকীয় ঘটনা ঘটারও ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষ করে ২০০৪ সালের নির্বাচনে যেভাবে কংগ্রেস অটলবিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে বিজেপিকে ধরাশায়ী করেছিল সেরকম কোন ঘটনা ঘটতেও পারে বলে মনে আশঙ্কা করছেন অনেকে। অবশ্য এখনও আরও পাঁচ দফা ভোট বাকি আছে এবং বিজেপি আশা করছে যে, পরবর্তী ধাপগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে এবং বিজেপি তাদের জয়ের ধারা অক্ষুণ্ণ রাখবে। নরেন্দ্র মোদি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে দেওয়ার জন্য বারবার আহ্বান জানাচ্ছেন।
ভারতের নির্বাচনের ফলাফল কী হবে তা বোঝা যাবে আগামী ৪ জুন। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে ভোটের হাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি জোটের যে নিরঙ্কুশ বিজয়ের ধারণা করা হয়েছিল, সেটি বাস্তবতা নাও পেতে পারে। আর এ কারণেই মোদী যদি শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন, তাহলে সেটি হবে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বড় ব্যতিক্রমী ঘটনা এবং এটি হবে ভারতের নির্বাচনের সবচেয়ে বড় চমক।
এখন যখন ভারতের নির্বাচনে একটি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা অনিশ্চয়তার ফলাফলের শঙ্কা জেগেছে তখন প্রশ্ন উঠছে যে, বিজেপি যদি এই নির্বাচনে পরাজিত হয় তাহলে বাংলাদেশে কী হবে? গত দুটি নির্বাচনে ভারতের বিজেপি সরকার বাংলাদেশকে নিরঙ্কুশভাবে সমর্থন দিয়েছে। ২০১৮ এবং ২০২৪ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছে বিজেপি সরকার।
বিশেষ করে ২০২৪ এর নির্বাচনে ভারতীয় সরকারের পরিপূর্ণ সমর্থন ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করত এবং এই নির্বাচনকে অস্বীকৃতি জানাত বলেও অনেকে মনে করেন। মার্কিন মনোভাব পাল্টানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আর নির্বাচনের পর বিএনপি থেকে শুরু করে জাতীয় পার্টি প্রত্যেকেই বলছে যে, ভারত বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখেছে। যদিও এরকম অভিযোগকে আওয়ামী লীগ অস্বীকার করে এবং আওয়ামী লীগ মনে করে যে, জনগণের ভোটে তারা নির্বাচিত হয়েছে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি আওয়ামী লীগ বা বিজেপি কেউই অস্বীকার করে না।
এখন প্রশ্ন হল, যদি বিজেপি পরাজিত হয়, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশের সমীকরণ কী হবে? কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বর্তমান সরকারের জন্য সমীকরণের কোন পরিবর্তন হবে না। কারণ ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গেও আওয়ামী লীগ সরকারের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে ইন্ডিয়া জোটের প্রধান দল কংগ্রেস তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বার্তা দিয়েছে।
অনেকে মনে করেন যে, এখন ভারতে কট্টর হিন্দুত্ববাদী মনোভাবের কারণে সীমান্তে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী বক্তব্য রাখা হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশের মধ্যে একটা ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরি হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত যদি নরেন্দ্র মোদি তাহলে এই অবস্থানের পরিবর্তন হবে। দুই দেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভারত লোকসভা নির্বাচন মল্লিকার্জুন খাড়গে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাত ধাপে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোট হয় ১৯ এপ্রিল এবং সেখানে ১০২টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় দফায় ২৬ এপ্রিল ৮৯টি নির্বাচনী এলাকায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভোট হবে ৭ মে। সেখানে ৯৪টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে এবং সপ্তম দফায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে পয়লা জুন। আর ৪ জুন নির্বাচনের ফলাফল জানা যাবে।