নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০২১
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক শান্তি বিনষ্টের কারণে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। যে সমস্ত মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করা, আইনের আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা গুলো যেন না ঘটে সে ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করেছেন। সারা দেশে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য মনিটরিং করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, কুমিল্লার ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এ সমস্ত সহিংসতার ঘটনার সর্বশেষ শিকার রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া গ্রামের সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। এই ঘটনা থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়েছে যে, এটি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই সমস্ত ঘটনা থেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও বিভিন্ন মহল মনে করছে। আর এই প্রেক্ষিতে এর মূল উৎস উদঘাটন এবং প্রকৃত ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, সরকার এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে ৫টি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রথমত, যে সমস্ত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেই ব্যাপারে নির্মোহ তদন্ত এবং তদন্ত করে যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। দ্বিতীয়ত, এই ঘটনাগুলোতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের সব ধরনের সহায়তা, শক্তি-সাহস দেওয়া এবং তারা যেন নিরাপদে থাকতে পারে সেটি নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত, আর যেন এ ধরণের ঘটনা কোথাও না ঘটে সে জন্য সারাদেশে গোয়েন্দা নজরদারি এবং সতর্কতা বাড়ানো। চতুর্থত, যে সমস্ত মহল পিছন থেকে এ ধরনের ঘটনার মদদ, ইন্ধন এবং উস্কানি দিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। পঞ্চমত, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা যেন এ ধরনের ঘটনা আর কোথাও না ঘটে।
সরকার মনে করছে যে, এই পাঁচটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে কুমিল্লার ঘটনাটি যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় তা রংপুরের ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে। একটি মহল পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা সৃষ্টি করে দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। আর এই পরিস্থিতি যেন কোনোভাবেই করতে না দেওয়া হয় সেটির ব্যাপারে সরকার সতর্ক রয়েছে। রংপুরের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী নিজে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে সারাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন এবং এই সমস্ত ঘটনাগুলোতে যারা নির্যাতিত হয়েছেন, নিপীড়িত হয়েছেন তারা যেন যথাযথ ন্যায়বিচার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, সাম্প্রতিক সময়ে যে বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে সেই আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করার জন্যই এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে কিনা সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। সেটি যদি হয়, সেক্ষেত্রে সরকার এ ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করে এগুবে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।
বিএনপি এখন হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিতর অবিশ্বাস-কোন্দল প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে। যার ফলে দলটি এখন নতুন আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো অবস্থায় নেই। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো অস্তিত্বের সংকটে আছে। তাদের কর্মী সমর্থক নেই। কাজেই রাজনীতিতে তারা সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোন প্রভাব বিস্তারের সুযোগই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের আগে মনে করা হয়েছিল সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচনের আগে যেভাবে সরকারকে সতর্ক করেছিল, হুঁশিয়ারি দিয়েছিল; অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে নিষেধাজ্ঞার মত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছিল- নির্বাচনের পর সেই অবস্থা পাল্টে গেছে।
বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলা সত্ত্বেও নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার জন্যই বেশি চেষ্টা করছে। অন্যান্য দেশগুলো যেমন- ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য; তারাও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এখন গুরুত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে নির্বাচনের বিষয় তারা তেমন সামনে আনতে রাজি নন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারের জন্য একটি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকার কথা।
কিন্তু বাস্তবতা হল সরকার স্বস্তিতে নেই। বরং আস্তে আস্তে সরকারের উপর চাপ বাড়ছে। আর সরকারের এই চাপের প্রধান কারণ হল অর্থনীতি। বিগত মেয়াদেই অর্থনীতিতে বিবর্ণ চেহারাটা সামনে উঠেছিল। এটি আস্তে আস্তে ক্রমশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে এবং সরকারের জন্য অর্থনৈতিক সংকটগুলো মোকাবেলা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়ছে বলেই অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার বেশ কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করছে। কিন্তু সেই উদ্যোগগুলো নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেমন অর্থনৈতিক সংকটের একটি প্রধান বিষয় হল মুদ্রাস্ফীতি। মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমানোর জন্য সরকার যত ব্যবস্থাই নেক, সেই ব্যবস্থাগুলো এখন পর্যন্ত ফলপ্রসূ বলে বিবেচিত হয়নি।
অর্থনৈতিক সঙ্কটের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল, ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম-বিশৃঙ্খলতা। আর এটি দূর করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কৌশল এখন ব্যাপক সমালোচিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে বিশৃঙ্খল অবস্থারও একটা উন্নতি হয়নি।
ব্যাংকিং সেক্টরের বিশৃঙ্খলার হওয়ার প্রধান কারণ হল খেলাপি ঋণ এবং অর্থপাচার। ঋণ খেলাপিদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে বটে। কিন্তু বাস্তবে এই পরিকল্পনাগুলো কতটুকু বাস্তবায়িত হবে সে নিয়েও বিভিন্ন মহলের সন্দেহ রয়েছে। কারণ অতীতেও দেখা যে, ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর হতে পারছে না।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের সঙ্কট বাড়ছে, বিশেষ করে এখন বাংলাদেশকে ঋণের দায় মেটাতে হচ্ছে। ঋণের দায় মেটানোর চাপ সামলাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় টান পড়ছে। আর বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান যে উৎস প্রবাসী আয় এবং রপ্তানী আয়- সে দুটোতেও কোনওরকম ইতিবাচক ব্যবস্থা নেই। সামনে বাজেট, আর এই বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারকে করতেই হবে। অর্থনৈতিক সংকট যদি সরকার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তাহলে সরকারের জন্য সামনের দিনগুলো আরও কঠিন, চ্যালেঞ্জিং এবং সংকটাপন্ন হবে বলেই মনে করে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অর্থনীতি হাসান মাহমুদ আলী আয়শা খান আওয়ামী লীগ সরকার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সরকার একটা স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল রাজনৈতিক দিক থেকে। রাজনৈতিকভাবে যারা নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছিল, নির্বাচন প্রতিহত করতে বলেছিল তারা ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের পর তারা সঙ্কুচিত, কোণঠাসা এবং হতাশাগ্রস্ত। আওয়ামী লীগের সামনে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। না সংসদে, না রাজপথে।