ইনসাইড ইকোনমি

সোনালী পাটে হাসি ফিরছে কৃষকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২:০১ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১


Thumbnail

সোনালী আঁশ খ্যাত পাটে সুদিন ফিরতে শুরু করেছে কৃষকের। বর্তমানে দেশে পাটের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে। বাজারে ভালো দাম আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এর চাষাবাদ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনও ভালো হচ্ছে। পাশাপাশি বাজারে পাটের আশানুরূপ দাম পাওয়ার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা। 

সরকারি পাটকল বন্ধ হয়ে গেলেও পাটের দামে কোন প্রভাব পড়েনি। সরকারি ২৫টি পাটকল বন্ধ থাকলেও পাটের দামে এবার মুখের হাসি আরো চওড়া হয়েছে কৃষকের। করোনা মহামারীর মধ্যে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় পাটের বেশ ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষক। চড়া দামেই বছরের কেনাবেচাও শুরু হয়েছে  বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৩৫০০ টাকায়। কোথাও কোথাও চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা দামেও প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এত দামে পাট বিক্রি হয়নি। ফলে এবার পাটের উৎপাদন ও দামে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, পাটের বাজার ভালো থাকলে আগামীতে আবাদ আরো বাড়বে।

গ্রামীণ জনপদের কৃষকেরা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে পাট ঘরে তোলার কাজে নেমেছেন। বসে নেই কৃষাণীরাও। তারাও এ কাজে কোমর বেঁধে নেমেছেন। হাটবাজারেও জমে উঠেছে পাট বেচাকেনা। ফলে লকডাউনে কার্যত অচল কৃষিনির্ভর গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। গত কয়েক বছর ধরেই পাটের দাম ভাল যাচ্ছে। এর মধ্যে গত বছর ২০২০ সালে অস্বাভাবিক বেড়ে যায় পাটের দাম। পাটকাটা মৌসুমের শুরুতেই প্রতিমণ পাট বিক্রি হয় ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা দরে। পরে এটি ৩ হাজার ৫০০ তে ওঠে এবং মৌসুমের শেষ পর্যায়ে হাটে প্রতিমণ পাটের দাম ৫ হাজার টাকা পৌঁছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর প্রতিমণ পাটের গড় মূল্য হয়েছিল ৩৫শ’ টাকা।

পাট চাষীরা জানান, পাট চাষ করে তিন মাসের মধ্যে পাট ঘরে তোলা যায়। কম সময়ে এবং কম পরিশ্রমের ফসল পাট। প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয় ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয় ১০-১২ মণ। তবে কোন কোন অঞ্চলে প্রতি বিঘায় ১৫ মণ পর্যন্ত এ বছর পাট উৎপাদন হয়েছে। এবার বাজারে পাটের মান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। দু’একটি জেলায় প্রতিমণ পাট সাড়ে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এত দামে বিক্রির কারণে পাট চাষের খরচ বাদ দিলে অভাবনীয় মুনাফা পাচ্ছেন পাট চাষীরা।

ফরিদপুরের প্রায় প্রতিটি হাটেই কম বেশি বিক্রি হয় পাট। তবে কানাইপুর, সালথা বাজার, ময়েনদিয়া ও কৃষ্ণপুর হাটে পাটের সবচেয়ে বড় আড়ৎ। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকার আসেন এখান থেকে পাট কিনতে। স্থানীয় বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩০০০ থেকে ৩২০০০ টাকা দরে। পাটের এ দামে খুশি চাষিরা।

যশোর জেলার কৃষি বিভাগ জানায়, যশোরে এবার লক্ষ্যমাত্রারও বেশি আবাদ হয়েছে পাট। চলতি মৌসুমে আট উপজেলায় পাট আবাদের ২৫ হাজার ৩০০ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এবার মোট ২৬ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে পাটের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে পাটের আবাদ হয়েছিল ২৩ হাজার ৫৬৫ হেক্টর। ফলে তথ্য পরিসংখ্যান বলছে, লাভজনক হয়ে ওঠায় যশোরে পাটের চাষাবাদ ও উৎপাদন ধারাবাহিক বাড়ছে।

নওগাঁয় এ বছর পাটের আবাদ কিছুটা কম হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় ভালো ফলন হয়েছে পাটের। বর্তমানে প্রকারভেদে প্রতি মণ পাট নওগাঁর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায়। বাজারে পাটের ভালো দাম পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন চাষীরা। কৃষকরা পাটের ভালো দাম পাওয়ায় আগামীতে পাটের আবাদ আরো বাড়বে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

দিনাজপুর জেলা সদর ছাড়াও চিরিরবন্দর, বীরগঞ্জ, খানসামা, কাহারোল, ফুলবাড়ী ও বিরামপুর উপজেলায় প্রচুর পরিমাণে পাটের আবাদ হয়। দিনাজপুরের সবচেয়ে বড় পাটের বাজার পাকেরহাট। দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার পাকেরহাট বাজারে গিয়ে পাটের দাম ও চাহিদার ঊর্ধ্বমুখী চিত্র পাওয়া যায়। পাইকাররা ভ্যান থেকে পাট কিনে স্তূপ করে রাখছেন রাস্তার পাশে। পরে ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে পাট চলে যাচ্ছে ব্যবসায়ীর গুদামঘরে।

জানা যায়, দেশে উৎপাদিত পাটের আঁশের প্রায় ৫১ শতাংশ পাটকলগুলোয় ব্যবহৃত হয়। ৪৪ শতাংশের মতো কাঁচা পাট বিদেশে রফতানি হয়। এবং মাত্র ৫ শতাংশের মতো ঘর-গৃহস্থালি আর কুটির শিল্পের কাজে লাগে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে পাট হতো ১২ লাখ হেক্টর জমিতে। মাঝে তা ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টরে নেমে যায়। কিন্তু প্রাকৃতিক আঁশের চাহিদা বাড়ায় ২০১০-১৫ সাল নাগাদ চাষের এলাকা বেড়ে ৭ লাখ হেক্টরে পৌঁছায়। এরপর থেকে তা আরও বাড়ছে। আগে ১২ লাখ হেক্টর এলাকা থেকে যে পরিমাণ পাট পাওয়া যেত, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে এখন ৭-৮ লাখ হেক্টর জমি থেকেই তার চেয়ে বেশি পাওয়া যাচ্ছে।  

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাত লাখ ৪৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়। সেখান থেকে ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার টন পাট উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ছয় লাখ ৯৯ হাজার হেক্টর করা হয়। ধারণা করা হয়েছিল, সেখান থেকে ৮০ লাখ টন পাট পাওয়া যাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ছয় লাখ ৭৯ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। সেখান থেকে ৮০ লাখ টন পাট উৎপাদিত হয়।

পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক কৃষিবিদ ড. মোঃ আইয়ুব খান জানান, দেশে পাটকল বন্ধ হলেও বিশ্বব্যাপী এ প্রাকৃতিক তন্তুর চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে রফতানি বাড়ছে। পাশাপাশি দেশেও পাটপণ্য উৎপাদন হচ্ছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। এবার পাটের সর্বোচ্চ দাম উঠেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এত দাম দীর্ঘসময়ে ছিল না। গত দুই বছর থেকে পাটের দাম খুব ভাল যাচ্ছে। এতে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে পাট আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে উৎপাদনও। সারাদেশে এ বছর পাটের উৎপাদন ৮০ লাখ বেল ছাড়িয়ে যাবে। পাটের উৎপাদনশীলতা বেশ বেড়েছে। যদিও গত বছর ঘূর্ণিঝড় আমফানে পাটের বেশ ক্ষতি হয়। এ বছর প্রথমে খরার কারণে সমস্যা হলেও পরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের উৎপাদন বেড়েছে। এছাড়া প্রতি বছরই নতুন নতুন চাষী যুক্ত হচ্ছেন পাটের সঙ্গে।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এবার পাটের ভাল ফলন হয়েছে। কৃষকরা বর্তমান পাটের বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভাল লাভ পাচ্ছেন। পাটের দাম এ রকম থাকলে আগামী বছর কৃষকরা আরও ব্যাপকভাবে পাট চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন বলেও মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

ভর্তুকির চাপ সামলাতে বছরে চারবার বাড়বে বিদ্যুতের দাম

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

ভর্তুকির চাপ সামলাতে বছরে চারবার বিদ্যুতের মূল্য সমন্বয় করবে সরকার। আগামী তিন বছর এই প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ খাতে মোট ভর্তুকি কমিয়ে আনা হবে। এই সময়ে মোট ১২ দফায় বিদ্যুতের দাম নিয়ে আসা হবে উৎপাদন খরচের সমান বা কাছাকাছি। সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ ঢাকা সফররত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদলকে এ কথা জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (০২ মে) সচিবালয়ে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে। ভর্তুকি কমাতে বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

অবশ্য বিদ্যুৎ খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। তাই দাম সমন্বয়ের নামে ভর্তুকি কমানোর মানে হলো বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি। তবে খরচ কমিয়েও সরকার ভর্তুকি সমন্বয় করতে পারে। অনিয়ম, দুর্নীতি, অপচয় রোধ করে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর দিকে সরকারের মনোযোগ নেই। বরং চাহিদা না থাকলেও দরপত্র ছাড়া একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে এ খাতের খরচ আরও বাড়াচ্ছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, মনে করি না যে আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী পুরোপুরিভাবে ভর্তুকি কমানো সম্ভব হবে। ভালো দিক যে তেল-গ্যাসে এখন ভর্তুকি নেই। তবে আমাদের মতো দেশে বিদ্যুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিকে বেশিই বলব। তারপরও গ্রামপর্যায়ে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতেই হবে।

আরও পড়ুন:  টানা ৮ দফায় কমল সোনার দাম

গতকাল বৃহস্পতিবার (০২ মে) আইএমএফের প্রতিনিধিদল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সঙ্গেও আলাদা বৈঠক করেছে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পেট্রোবাংলা ও বিপিসি প্রায় একইভাবে আইএমএফকে জানিয়েছে, গ্যাস ও জ্বালানি তেলে নতুন করে ভর্তুকির চাপ নেই। তেলের দাম নিয়ে স্বয়ংক্রিয় যে পদ্ধতি

(আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে কমবে) চালু করার কথা আইএমএফ বলেছিল, তা হয়েছে। প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে জ্বালানি তেলে আর কখনো ভর্তুকি দিতে হবে না। প্রথম দুই দফায় দাম কিছুটা কমানো হলেও শেষ দফায় দাম বেড়েছে। তিন মাস ধরে এ চর্চা করা হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করে। এ সময় অন্য অনেক শর্তের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনা, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে অন্যতম। ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি বাংলাদেশ পেয়েছে। তৃতীয় কিস্তিতে ৭০ কোটি ডলার পাওয়ার কথা চলতি মে মাসে। আইএমএফের বর্তমান দলটি ২৪ এপ্রিল থেকে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছে, যা শেষ হবে ৮ মে।

তেলের দাম নিয়ে স্বয়ংক্রিয় যে পদ্ধতি (আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়লে দেশে বাড়বে, কমলে কমবে) চালু করার কথা আইএমএফ বলেছিল, তা হয়েছে। প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। এতে জ্বালানি তেলে আর কখনো ভর্তুকি দিতে হবে না।

বিদ্যুতের ভর্তুকি কমাতে দাম সমন্বয়

বৃহস্পতিবার (০২ মে) সচিবালয়ে বৈঠকে বিদ্যুৎ বিভাগের নেতৃত্ব দেন বিদ্যুৎ–সচিব মো. হাবিবুর রহমান। আইএমএফের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির গবেষণা বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি শাখার প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে যে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয়, তার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইএমএফ। প্রসংগত, বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন করুক বা না করুক, চুক্তি অনুসারে প্রতিটি কেন্দ্রকে ক্যাপাসিটি চার্জ (বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া) দিতে হয়। গত বছর ৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অলস বসে ছিল। তার মানে অলস বসিয়ে রেখে কেন্দ্র ভাড়া দেওয়া হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ আইএমএফকে জানিয়েছে, চুক্তি থাকায় ক্যাপাসিটি চার্জ দিতেই হবে। তবে সরকার ইতিমধ্যে ‘বিদ্যুৎ নেই, বিলও নেই’ পদ্ধতি চালু করেছে। নতুন করে চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দেওয়ার সুযোগ আছে।

বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বেশি হারে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া, বিপরীতে প্রান্তিক বা স্বল্প আয়ের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কম হারে বিল নেওয়া হচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়েছিল আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, বহু বছর ধরেই এ পদ্ধতি চলমান।

বৈঠক সূত্র আরও জানায়, দেশে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি বৈঠকে এসেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক ও বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যাবে আগামী বছরের মার্চের দিকে। এ ক্ষেত্রে আইএমএফের প্রশ্ন ছিল, এরপর বিদ্যুতে ভর্তুকি আরও বাড়বে কি না। বিদ্যুৎ–সচিব তাঁদের জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ভর্তুকি বাড়বে না। কারণ, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ প্রচলিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম হবে।

বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে বেশি হারে বিদ্যুৎ বিল নেওয়া, বিপরীতে প্রান্তিক বা স্বল্প আয়ের বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে কম হারে বিল নেওয়া হচ্ছে কি না, তা জানতে চেয়েছিল আইএমএফের প্রতিনিধিদল। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, বহু বছর ধরেই এ পদ্ধতি চলমান।

ধাপে ধাপে দাম বাড়বে

আইএমএফের প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছিল এই পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ খাতে সরকার কীভাবে এবং কতটা ভর্তুকি কমাবে কিনা। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, বিদ্যুতের দাম প্রতিবছর চার দফা সমন্বয় করা হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ফেব্রুয়ারিতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করা হয়। ঘাটতি মেটাতে দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। আগামী তিন বছর ধরে ধাপে ধাপে দাম সমন্বয় করা হবে। এর অংশ হিসেবে গত মার্চ মাসে বিদ্যুতের দাম সরকার একবার বাড়ায়।

পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান হয়েছে ৪৩ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা। সরকারকে ওই অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ রাখতে হয়। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পাইকারি দাম গড়ে ৭ টাকা ৪ পয়সা। তবে আইএমএফের পরামর্শ মেনে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা হলে এ দর ১২ টাকার ওপরে নিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে গড়ে বিদ্যুতের দাম হবে প্রায় ১৫ টাকা, যা এখন ৮ টাকা ৯৫ পয়সা।

এর আগে গত বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। গত দেড় দশকে পাইকারি পর্যায়ে ১২ বার ও খুচরায় ১৪ দফা বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম।

এ বছরও ঢাকার বাইরে দিনে গড়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। এতে দেশের কোনো কোনো গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া কাটাতে হচ্ছে মানুষকে।

গরমে বিদ্যুৎ পাচ্ছে না মানুষ

দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়লেও তিন বছর ধরে গরমে মানুষকে লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয়েছে। কারণ, উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালিত হয়নি। এতে করে ২০২২ সালে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিত লোডশেডিং শুরু করে সরকার।

এরপর গত বছর ঘোষণা না দিলেও গ্রীষ্মের সময় দিনে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করা হয়েছে। এ বছরও ঢাকার বাইরে দিনে গড়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। এতে দেশের কোনো কোনো গ্রামাঞ্চলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছাড়া কাটাতে হচ্ছে মানুষকে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘বিদ্যুতের ক্ষেত্রে যখন সমন্বয়ের কথা বলা হয়, তখন তা হচ্ছে মূল্যবৃদ্ধি। কল্পিত উচ্চ চাহিদা দেখিয়ে কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। আর ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে গিয়েই সরকার বারবার দাম বাড়াচ্ছে বিদ্যুতের’।

২০২২–২৩ অর্থবছরে পিডিবি ২৬ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া পরিশোধে। সিপিডি বলছে, গত বছর বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪১ শতাংশ সক্ষমতা অলস বসে ছিল। মানুষ লোডশেডিংয়ে ভুগেছে। ব্যাহত হয়েছে শিল্পকারখানার উৎপাদনও।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর ভালো বিকল্প হচ্ছে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ কমিয়ে ভর্তুকি কমানো’।

বাড়তি দামের চাপ নিতে পারবে না ভোক্তা

দাম না বাড়িয়ে বরং মেয়াদ শেষে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নবায়ন না করা, ‘বিদ্যুৎ নেই, বিল নেই’ শর্তে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি করা, পুরোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রকে চুক্তি সংশোধন করে একই শর্তে আনা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়ে খরচ কমানোর উপায় আছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানিকে কৌশলগত পণ্য হিসেবে দেখেন অর্থনীতিবিদেরা। তারা বলছেন, এর সামাজিক প্রভাব বিচার করে দাম নির্ধারণ করতে হয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়লে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। তাই এটি বছরে কয়েকবার বাড়ানো হলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম নাগালের বাইরে চলে যাবে। এমনিতেই সাধারণ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এত চাপ ভোক্তা নিতে পারবে না। বিদ্যুৎ খাতে মূল্যবৃদ্ধি করে পুরো ভর্তুকি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী।

বৈঠক সূত্রে পাওয়া তথ্যের কথা উল্লেখ করে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ম. তামিম বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর ভালো বিকল্প হচ্ছে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন খরচ কমিয়ে ভর্তুকি কমানো।

তিনি আরও বলেন, ‘মনে করি না যে আইএমএফের চাওয়া অনুযায়ী পুরোপুরিভাবে ভর্তুকি কমানো সম্ভব হবে। ভালো দিক যে তেল-গ্যাসে এখন ভর্তুকি নেই। তবে আমাদের মতো দেশে বিদ্যুতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকিকে বেশিই বলব। তারপরও গ্রাম পর্যায়ে বিদ্যুতে ভর্তুকি দিতেই হবে।’


আইএমএফ   বিদ্যুত   সচিবালয়  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

টানা ৮ দফায় কমল সোনার দাম

প্রকাশ: ০৮:০১ পিএম, ০২ মে, ২০২৪


Thumbnail

দুই দিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে আবারও কমল সোনার দাম। সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮৭৮ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ৯ হাজার ১৬৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২ মে) বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবী সোনার দাম কমেছে। তাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশন সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করেছে, যা শুক্রবার থেকে কার্যকর হবে।

নতুন মূল্য অনুযায়ী, সব থেকে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮৭৮ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৬৩ টাকা। ২১ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮০৭ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ৪ হাজার ১৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৮ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫৫২ টাকা কমিয়ে ৮৯ হাজার ৩১১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা কমিয়ে ৭৪ হাজার ২৭৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এর আগে ৩০ এপ্রিল, ২৯ এপ্রিল, ২৮ এপ্রিল, ২৭ এপ্রিল, ২৫ এপ্রিল, ২৪ এপ্রিল ও ২৩ এপ্রিল ৭ দফা সোনার দাম কমানো হয়। ৩০ এপ্রিল ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম ৪২০ টাকা কমিয়ে নতুন দাম ১ লাখ ১১ হাজার ৪১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। 

গত ২৯ এপ্রিল ১ হাজার ১১৫ টাকা, ২৮ এপ্রিল ৩১৫ টাকা, ২৭ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৫ এপ্রিল ৬৩০ টাকা, ২৪ এপ্রিল ২ হাজার ৯৯ টাকা এবং ২৩ এপ্রিল ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমানো হয়। এখন আবার দাম কমানোর মাধ্যমে ৮ দফায় ভালো মানের সোনার দাম ভরিতে ১০ হাজার ২৬৫ টাকা কমল।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন   বাজুস  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

এবার ঈদে প্রবাসী আয় কমেছে

প্রকাশ: ০৬:৫৯ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশে প্রবাসী আয়ের মৌসুম ধরা হয় দুই ঈদে। ঈদকে সামনে রেখে এ সময় প্রবাসীরা দেশে থাকা তাদের আত্নীয় স্বজনদের কাছে টাকা পাঠায়। তবে গেলো ঈদের মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে প্রবাসী আয় কমেছে। এ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে  ১৯০ কোটি ৮০ মার্কিন ডলার। এ মাসের প্রথম ১৯ দিনে এসেছিল ১২৮ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সে হিসাবে পরের ১০ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ৬২ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। প্রতিদিন গড়ে ছয় কোটি ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। 

বুধবার (১ মে) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে প্রবাসী আয়ের এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে মার্চ মাসে সব মিলিয়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ মার্কিন ডলার। বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ২১০ কোটি ডলার ও ফেব্রুয়ারিতে ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল।

বেশির ভাগ ব্যাংক এখন ১১৫ থেকে ১১৬ টাকা দরে প্রবাসী আয় কিনছে। তবে সংকটে থাকা কিছু ব্যাংক বেশি দামেও ডলার কিনছে বলে জানা গেছে। যদিও ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ১১০ টাকা। ফলে আমদানিকারকদেরকে অতিরিক্ত দামে ডলার কিনে আমদানি দায় মেটাতে হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে ভোক্তার ওপর। দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার এখনো উচ্চ রয়ে গেছে।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় আসে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয় আসে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ডলার, যা এখন পর্যন্ত এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়।

ঈদ   প্রবাসী আয়   বাংলাদেশ ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনগুলো

প্রকাশ: ০৪:২৪ পিএম, ০১ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী তালিকায় যে ১০টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে, তারা সবাই বড় ও গুরুত্বপূর্ণ দেশের অর্থনীতি পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। তাদের যেকোনো কর্মকাণ্ড বৈশ্বিক আর্থিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে।
দেখা নেওয়া যাক, বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ১০টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনগুলো। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

১. ফেডারেল রিজার্ভ

তালিকার একেবারে ওপরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফেডারেল রিজার্ভের মোট সম্পদের আর্থিক মূল্য ৭ লাখ ৫৪ হাজার কোটি ডলার। আর্থিক খাতের মানুষজন এই ব্যাংককে ডাকেন ‘ফেড’ নামে। ১৯১৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশটির ব্যাংকিং ব্যবস্থা নজরদারি ও মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যে কত বড়, ফেডারেল রিজার্ভের হাতে থাকা বিশাল সম্পদ সেটাই প্রমাণ করে। একই সঙ্গে এটাও দেখায় যে মার্কিন অর্থনীতি বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

২. ব্যাংক অব জাপান

এটি জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, জাপান বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এই ব্যাংকের হাতে থাকা সম্পদের আর্থিক মূল্য ৫ লাখ ২১ হাজার কোটি ডলার। ব্যাংক অব জাপানের প্রতিষ্ঠা ১৮৮২ সালে। বাজারে মুদ্রা ছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ব্যবস্থাপনা ও মুদ্রানীতি পরিচালনা করা এই ব্যাংকের মূল কাজ।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক অব জাপানের সম্পদের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে জাপানের অর্থনীতি দুর্বল থাকার কারণে যে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে, সেই অর্থের ব্যবস্থাপনার দিকটি বাস্তবায়ন করছে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে ব্যাংক অব জাপানকে বিপুল পরিমাণ অর্থ সরবরাহ করতে হচ্ছে। সে কারণে তাদের সম্পদ বেড়েছে।

৩. পিপলস ব্যাংক অব চায়না

গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি। এর মোট সম্পদের পরিমাণ ৫ লাখ ১৪ হাজার কোটি ডলার। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৪৮ সালে। মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা, বাজারে মুদ্রা ছাড়া এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের ব্যবস্থাপনা চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানতম কাজ।

সাম্প্রতিক দশকগুলোয় পিপলস ব্যাংক অব চায়নার সম্পদ বিপুলভাবে বেড়েছে। এর কারণ হলো, একটি ছোট অর্থনীতির দেশ থেকে চীন এখন বিশাল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। দেশটি এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।

৪. ডয়েশে বুন্ডেসব্যাংক

ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ জার্মানির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডয়েশে বুন্ডেসব্যাংক। ফোর্বসের তালিকায় জার্মানি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। সব মিলিয়ে ২ লাখ ৭২ হাজার কোটি ডলার সম্পদের মালিক জার্মানির এই ব্যাংক। এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৫৭ সালে। ইউরোপের একক মুদ্রা ইউরো চালু করার পেছনে এই ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

জার্মানির জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা বুন্ডেসব্যাংকের মূল দায়িত্ব। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যখন মুদ্রানীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তখন তাতে অংশগ্রহণ করে বুন্ডেসব্যাংক।

৫. ব্যাংক অব ফ্রান্স

ইউরোপের আরেক বড় অর্থনীতির দেশ ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি। এর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ৭২ হাজার কোটি ডলার। ব্যাংক অব ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠা হয় ১৮০০ সালে। বিশ্বে যত কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে, তাদের মধ্যে প্রাচীনতম ব্যাংকগুলোর একটি ব্যাংক অব ফ্রান্স।

ফ্রান্সের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা ব্যাংক অব ফ্রান্সের মূল দায়িত্ব। ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যখন মুদ্রানীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, তখন তাতে অংশগ্রহণ করে এই ব্যাংক।

৬. ব্যাংক অব ইতালি

ইতালির কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি। এর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি ডলার। ব্যাংক অব ইতালির প্রতিষ্ঠা ১৮৯৩ সালে। ইতালির জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা ছাড়া ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতিসংক্রান্ত সিদ্ধান্তেও অংশগ্রহণ করে এই ব্যাংক।

৭. ব্যাংক অব স্পেন

স্পেনের এই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ১৭৮২ সালে। অনেক পুরোনো এই ব্যাংকের সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি ডলার। এটি স্পেনের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে। পাশাপাশি ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি প্রণয়নসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডেও অংশ নেয়।

৮. ব্যাংক অব ইংল্যান্ড

বিশ্বে যতগুলো পুরোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক রয়েছে, তাদের অন্যতম ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এটির প্রতিষ্ঠা ১৬৯৪ সালে। নামে ইংল্যান্ডের ব্যাংক হলেও এটি মূলত যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মোট সম্পদের পরিমাণ ১ লাখ ২৯ হাজার কোটি ডলার।

যুক্তরাজ্যের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। বাজারে মুদ্রাও ছাড়ে এই কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

৯. সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক

এটি সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের হাতে যে সম্পদ আছে, তার আর্থিক মূল্য ১ লাখ ৩ হাজার কোটি ডলার। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯০৭ সালে। সুইজারল্যান্ডের মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ব্যবস্থাপনা এই ব্যাংকের মূল দায়িত্ব।

সুইজারল্যান্ডের মুদ্রা ফ্রাঙ্কের মূল্যমান যাতে না বেড়ে যায়, সেটা নিশ্চিত করতে মাঝেমধ্যেই বাজারে হস্তক্ষেপ করে সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে সে কারণে তাদের একটি বিশেষ পরিচিতি রয়েছে।

১০. রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি। তাদের হাতে থাকা সম্পদের পরিমাণ ৮১ হাজার কোটি ডলার। ১৯৩৫ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো রিজার্ভ ব্যাংক  অব ইন্ডিয়াও নিজের দেশের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে এবং বাজারে মুদ্রা ছাড়ে।

চীনের মতো ভারতের অর্থনীতিও এখন অনেক বড় হয়েছে। পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এখন ভারত। ফলে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্পদও সাম্প্রতিক সময়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।


বিশ্ব   ধনী   ১০টি   কেন্দ্রীয় ব্যাংক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

ডলার স্বল্পতায় তিন সংকট বাড়ছে

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ৩০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে। ডলার সংকটের কারণে অনেকগুলো বিষয় সংকট আসছে। ডলার যে বাড়বে সে দিকেও কোন আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরে এ কারণ ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে। চাপ বাড়ছে আমদানি ব্যয় মেটানোর। আর অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আসার পথগুলোতেও এখন স্বস্তির খবর দেখা যাচ্ছে না। 

বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুটি প্রধান ক্ষেত্র রয়েছে। একটি হল অভিবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স পাঠানো। আর দ্বিতীয়টি হল রপ্তানি আয়। রপ্তানি আয়েও তেমন স্বস্তি নেই। তার চেয়েও বড় কথা হল রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে বাস্তবতার সাথে প্রকৃত আয়ের মিল নেই। আবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ক্ষেত্রেও যে পরিমাণ শ্রমিক বিদেশে গেছেন সেই হারে বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিটেন্স আসছে না। ফলে বাংলাদেশে ডলারের স্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। আর এই স্বল্পতার কারণে এখন কিছু কিছু সংকট দানা বেঁধে উঠেছে, প্রবল আকার ধারণ করেছে। 

যে সমস্ত সংকটগুলো বৈদেশিক মুদ্রা বা রিজার্ভ স্বল্পতার কারণে দেখা দিচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোতে আরও বড় আকারে দেখা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. রপ্তানি পণ্যের কাঁচামাল আমদানি: বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান খাত হলো গার্মেন্টস। আর গার্মেন্টস উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানি নির্ভর। বেশীরভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ডলার সংকটের কারণে এই আমদানির ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। আমদানির জন্য এলসি খুলতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা নানা রকম জটিলতার মধ্যে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। 

২. জ্বালানি সংকট: রপ্তানি আয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজন হল পর্যাপ্ত জ্বালানি। কিন্তু এই জ্বালানির সংকট এখন বেশ বড় ভাবেই দেখা দিচ্ছে এবং জ্বালানি সংকটের কারণে কেবল রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে এমনটি নয়, জ্বালানি সংকটের কারণে এখন বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং জনজীবনে এক দূর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের সংকট আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। 

৩. বাজার অস্থিতিশীলতা: ডলার স্বল্পতার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় আমদানি পণ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং এর ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা রাখা দুরূহ হয়ে পড়ছে। বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর এক ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা চেষ্টা করে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। কারণ যেভাবে পণ্য আমদানি হওয়া উচিত ছিল সেভাবে পণ্য আমদানি হচ্ছে না। এ সমস্ত বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশে এখন অর্থনীতিতে একটি সংকট কাল চলছে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সংকট নিরসনের জন্য নানা রকম পদক্ষেপ নিয়েছিল কিন্তু সে সমস্ত পদক্ষেপ গুলো কোনটাই এখন পর্যন্ত বাস্তবে আলোর মুখ দেখে নি বা কার্যকর হয়নি।


ডলার সংকট   রপ্তানি আয়   প্রবাসী আয়  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন