রাজনৈতিক দলগুলোতে নানারকম বাণিজ্য এখন ‘ওপেন সিক্রেট’। টাকা দিয়ে মনোনয়ন পাওয়া যায়, টাকা দিয়ে কমিটিতে থাকা যায়, টাকা দিয়ে বিভিন্ন পদে আসীন হওয়া যায়। কিন্তু ইদানিং বিএনপি রাজনৈতিক বাণিজ্যের এক নতুন অধ্যায় সূচনা করেছে। টাকা দিলেই বিএনপি থেকে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা যায়।
বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল সময়ে বিএনপিতে প্রায় ৫ হাজার ৪শ জনকে বিভিন্ন অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একটি বড় অংশই ছিলো স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এদের মধ্যে অন্তত দুই হাজার স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকে আবার দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, তাদের অনেকেই টাকা দিয়ে দেন-দরবার করে দলে ফিরে এসেছেন।
বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, বিভিন্ন স্থানে পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, এমন অন্তত ৮ জন নেতা এখন আবার বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন।
কিভাবে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হলো—এ প্রশ্নের জবাবে তারা বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে যে, বহিষ্কারাদেশের পর তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দাম নিয়ে দফারফা করেছেন। এবং কেউ ১০ লাখ, কেউ ২০ লাখসহ সর্বোচ্চ ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে আবার দলের পদ পদবীতে ফিরে এসেছেন।
এবার উপজেলা নির্বাচনে প্রথম পর্বে ৭৩ জনকে দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বহিষ্কারাদেশের পরও তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি।
দ্বিতীয় পর্যায়ের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন ছিল গতকাল। সেখানে দেখা গেছে, বিএনপির ৫৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশগ্রহণ করেছেন। কেন তারা দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন—এর জবাবে একাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান বলেছেন, বহিষ্কার আদেশ নিয়ে তারা আতঙ্কিত নয়। বরং বিএনপির একাধিক প্রার্থী যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। তারা বলছেন যে, আগে নির্বাচন হয়ে যাক, তারপর সবকিছু ম্যানেজ করা যাবে।
এক এগারোর পর থেকে বিএনপিতে ঢালাও বহিষ্কারের রীতি শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার পর তারেক জিয়া নেতৃত্বে আসলে কথায় কথায় বিএনপিতে বহিষ্কারের মত চরম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। কিন্তু বহিষ্কারাদেশ বিএনপিতে এখন একটি বাণিজ্য হয়ে গেছে। যে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করে পরে টাকার বিনিময়ে তাকে আবার দলে নেয়ার এক অদ্ভুত কৌশল বিএনপি চালু করেছে।
শুধুমাত্র নির্বাচনের মনোনয়ন নয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য বিভিন্ন সময়ে যাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তারা অনেকেই আবার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করেছেন এবং নানারকম দেন দরবারের পর একটি নির্দিষ্ট অর্থ ঐ কেন্দ্রীয় নেতার হাতে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতা লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে এই বিষয়টি নিয়ে একটি চূড়ান্ত দফারফা করেছেন। এবং তার প্রেক্ষিতেই শেষ পর্যন্ত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।
বিভিন্ন বিএনপি নেতা স্বীকার করেছেন যে, বহিষ্কার হবার পরও অনেককে বিএনপিতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় টাকার দিয়ে বহিষ্কারাদেশের ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন। তার মতে, কেউ যদি বহিষ্কৃত হয়, তারপর যদি তার অনুশোচনা হয়, আত্ম উপলব্ধি হয় তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আবেদন করেন এবং এই আবেদন যদি গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় তাহলে তাকে ক্ষমা করা হয়। এটি যেকোন রাজনৈতিক দলের রীতি বলে তিনি দাবী করেছেন।