গাজীপুরে নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততোই চাপে পড়ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আজমত উল্লা। তিনি সৎ, যোগ্য প্রার্থী এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। গাজীপুরের রাজনীতিতে শুধু নয় জাতীয় রাজনীতিতে তার অবদান রয়েছে। একজন ত্যাগী, আদর্শবান নেতা হিসেবে তার সুনাম আছে। কিন্তু রাজনীতির কৌশলে তিনি ক্রমশ কোনঠাসা হয়ে পড়ছেন।
গাজীপুর নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ এবং সরকারের কিছু কিছু পদক্ষেপ জাহাঙ্গীরের মায়ের প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করছে। বিশেষ করে গতকাল জাহাঙ্গীরকে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা নিয়ে গাজীপুরের জনগণের মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তিত মনোভাব তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকার জাহাঙ্গীরের ওপর এক ধরনের বল প্রয়োগ করছে এবং তাকে চাপে রাখার কৌশল নিয়েছে। গাজীপুরের অনেক জনগণ মনে করছেন যে, নির্বাচনের আগে কেন জাহাঙ্গীরকে দুর্নীতি দমন কমিশনে তলব করা হলো? জাহাঙ্গীর যে দুর্নীতিবাজ বা দুর্নীতি করেছে, সেটা অনেকেই জানে। সিটি করপোরেশনের মেয়র হয়ে তার বিপুল বিত্তের কথাও কারো অজানা নয়। কিন্তু সে সময় কোনো কিছু করা হয়নি কেন? কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, তার মা যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী না হতো, তাহলে কি এই দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে ডাকতো?
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয় আজমত উল্লাকে। জাহাঙ্গীরও মনোনয়ন পেয়েছিলেন, ২০১৮ সালে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী। ওই নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। তবে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি বেসামাল হয়ে পড়েন। এমন সব বক্তব্য এবং কথা-বার্তা বলতে শুরু করেন- যা দলের জন্য বিব্রতকর। পাশাপাশি স্বেচ্ছাচারীভাবে সিটি করপোরেশন পারিচালনা করতে থাকেন। তার নিজস্ব সিন্ডিকেট বাহিনী সমস্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেছিল। এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীরকে আপত্তিকর বক্তব্যের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করে এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার প্রেক্ষিতে তাকে সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত করে। কিন্তু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বরখাস্ত করলেও এক বছরের বেশি সময়েও তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেনি। এ সময় দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করলেও তখন তার বিরুদ্ধে কোনো আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং কিছুদিন আগে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয় জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি। আর এর পরেই জাহাঙ্গীর আলম এবং তার সমর্থক গোষ্ঠী নড়েচড়ে বসেন এবং সিটি করপোরেশন মনোনয়নের জন্য তারা বিভিন্ন চেষ্টা তদবীর করেন।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রার্থীতা না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন এবং তার মা’কে-ও প্রার্থী করেছিলেন। ঋণ খেলাপির অভিযোগে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও তার মা এখন নির্বাচনের প্রার্থী। সাধারণ মানুষ তার মা নয় বরং জাহাঙ্গীরকেই প্রার্থী হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন জায়েদা খাতুন আসলে জাহাঙ্গীর। এর ফলে এক ধরনের মেরুকরণ হয়েছে গাজীপুরের রাজনীতিতে। শুধু তাই নয়, জাহাঙ্গীর যে নির্বাচন করছেন না, সেটি এক ধরনের প্রতিক্রিয়ায় ফেলেছে। কৌশলগত দিক থেকে প্রথমে যখন জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হলো, সেটি আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সেখানে যাওয়া এবং তার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করাটাকে অনেকেই ইতিবাচকভাবে দেখেছিল।
কিন্তু এখানে আওয়ামী লীগ কৌশলগত ভুল করেছে। জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কার করা হলেও জাহাঙ্গীরের অনুগত ওয়ার্ড কাউন্সিলররা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন এবং তারা স্থানীয় পর্যায়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যে প্রচারণা করছেন, সে প্রচারণায় জাহাঙ্গীরের মায়ের পক্ষ অবলম্বন করছেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র প্রচারণা করছে আজমত উল্লার জন্য। জাহাঙ্গীর নিয়ন্ত্রিত এই ওয়ার্ড কাউন্সিলররা আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জন্য বড় মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, তিনিটি কারণে আজমত উল্লা’র অবস্থা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে:
১। জাহাঙ্গীরকে দুদকে তলব করার প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সহানুভূতি তৈরি হয়েছে।
২। জাহাঙ্গীরের অনুগত বাহিনীরা মরিয়া হয়েছে। এবং
৩। বিদায়ী ওয়ার্ড কান্সিলররা জাহাঙ্গীরের পক্ষে কাজ করছেন।
এই সমস্ত সমীকরণ মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত আজমত উল্লা নির্বাচনে জয়ী হতে পারবেন কি না, সেটি নিয়েও একটি প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যার ফলাফল পাওয়া যাবে আগামী ২৫শে মে।
আজমত উল্লা জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।