আওয়ামী লীগের এমপি এবং চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুর কারণে গুলশান-১৭ আসনটি শূন্য ঘোষিত হয়েছে। ইতিমধ্যে আগামী ১২ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। নির্বাচন কমিশন খুব শীঘ্রই এই আসনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর কোনো সংসদ সদস্যের অনাকঙ্খিত মৃত্যু না হলে গুলশান আসনের এই উপনির্বাচনটি জাতীয় সংসদের শেষ উপনির্বাচন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই উপনির্বাচন নানা কারণেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার মাত্র তিন মাস আগে- এই উপনির্বাচনে অনেক কিছুই নির্ভর করছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। চিত্রনায়ক ফারুকের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এই উপনির্বাচনে মনোনয়ন লাভের জন্য আগ্রহী। তারা ইতিমধ্যে ছুটাছুটি এবং দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। কিন্তু গুলশানের উপনির্বাচনকে আওয়ামী লীগ একটি মডেল নির্বাচন করতে চায়। এই নির্বাচনের মাধ্যমে যেন সকল রাজনৈতিক দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ উন্মুক্ত হয়, সেই পথ সুগম করতে চায় আওয়ামী লীগ। জয়-পরাজয় বড় কথা নয়, বরং এই নির্বাচনকে একটি মডেল নির্বাচন হিসেবে উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করাই আওয়ামী লীগের প্রধান লক্ষ্য। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের বাইরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যেন এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, সেজন্যই আওয়ামী লীগ মনোযোগী।
গুলশানের এই আসনটিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ২০ দলীয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আন্দালিব রহমান পার্থ অংশগ্রহণ করেছিলেন। যদিও তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেননি। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর তিনি চুপচাপ বসেও থাকেননি। ঢাকাকেন্দ্রিক একটি কর্মী বাহিনী গড়ে তুলেছেন, সংগঠন গড়ে তুলেছেন। কিছুদিন আগে একটি গণমিছিলের মাধ্যমে আন্দালিব রহমান পার্থ শোডাউনও করেছেন। বেজেপির এই নেতা ২০ দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বতন্ত্র অবস্থা গ্রহণ করেছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ করবেন কি করবেন না- এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণাও দেননি। কাজ করছেন নীরবে, নিভৃতে।
আওয়ামী লীগ এখন আগামী নির্বাচনের জন্য যে দুটি বিকল্প নিয়ে কাজ করছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে বিএনপিকে বাদ দিয়ে অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মাঠে নামানো। আর সেই লক্ষ্যেই একদিকে যেমন ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছে, অন্যদিকে বিভিন্ন ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকেও নির্বাচনমুখী করা চেষ্টা করছে। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবেই আন্দালিব রহমান পার্থ গুলশানের উপনির্বাচনে যেন প্রার্থী হতে পারেন, সেজন্য চেষ্টা চলছে।
পার্থের দল ছোট। কিন্তু পার্থের একটি জাতীয় ইমেজ তৈরি হয়েছে। তিনি বিশেষত তরুণদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যে ক’জন তরুণ নেতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিলেন, তার মধ্যে পার্থই এখন পর্যন্ত টিকে আছেন। একজন ভালো বাগ্মী হিসেবে এবং বিভিন্ন হাস্যরসাত্মক কথার মধ্য দিয়ে তিনি তরুণদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছেন। আর ২০১৮’র পর থেকে নীরবে, নিভৃতে তিনি সংগঠনও গুছিয়ে ফেলেছেন। ঢাকার গুলশানে এখন আওয়ামী লীগের পরপরই পার্থের বিজেপির সংগঠনের শক্তি রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন। এই বিবেচনা থেকে আগামী নির্বাচনে পার্থ গুলশান উপনির্বাচনের প্রার্থী হতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সাথে তার যদি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীতা হয়, সেই প্রতিদ্বন্দ্বীতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে বলেই অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন।
গুলশানের উপনির্বাচনটি নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এবং ঢাকার অভিজাত এলাকায় এই নির্বাচনের দিকে নজর থাকবে আন্তর্জাতিক মহলের। বিশেষত বিদেশি কুটনীতিকরা এই নির্বাচনকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। কাজেই আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ উৎসবমুখর করে ফেলতে চায়। আর সেরকম করার ক্ষেত্রে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে আন্দালিব রহমান পার্থ ভালো একজন প্রার্থী- যিনি এই নির্বাচনকে জমিয়ে ফেলতে পারবেন।
গুলশান উপনির্বাচন আন্দালিব রহমান পার্থ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।