ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের বিশ্বাসঘাতকগণ; ক্ষমতার লোভে এখনও ছড়ায় বিষবাষ্প!


Thumbnail আওয়ামী লীগের বিশ্বাসঘাতকগণ; ক্ষমতার লোভে এখনও ছড়ায় বিষবাষ্প!

মূলধারার রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের উত্থান-পতন হয়েছে। নানান চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে চলতি ২০২৩ সালে টানা প্রায় ১৫ বছর ক্ষমতায় আসীন রয়েছে দেশের অন্যতম প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এর আগে ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছিল, কিন্তু অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের ক্ষমতা হারায় আওয়ামী লীগ।

কিন্তু আওয়ামী লীগ এমন একটি দল, যে আওয়ামী লীগকে কখনো বাইরের শক্তি পরাজিত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে আওয়ামী লীগের কারণেই। অভ্যন্তরীণ দলীয় কোন্দল, রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতা, দলীয় নেতৃত্বের চেইন অফ কমান্ড না মেনে ক্ষমতার লোভে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের কালোছায়া- বার বার আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, আওয়ামী লীগ কখনো লড়াই, সংগ্রাম, আন্দোলনে হারেনি, আওয়ামী লীগ কখনো নির্বাচনে হারেনি। কিন্তু সব সময়ই আওয়ামী লীগ হেরে গেছে, অভ্যন্তরীণ কলহ-কোন্দলের কাছে, আওয়ামী লীগ হেরে গেছে ষড়যন্ত্রের কাছে। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাকের যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছিল, সমসাময়িক সময়েও সেই খন্দকার মোশতাকদের প্রেতাত্মা আওয়ামী লীগের ক্ষতি সাধনে কখনও কখনও তৎপর হয়ে ওঠে, শুরু করে অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র। ৭৫’র ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সে সময়ের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য খন্দকার মোস্তাকের মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েছিলেন, ইতিহাস মনে করিয়ে দেয় দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিদক দল আওয়ামী লীগের সে সময়ের পতনের করুণ কাহিনী।    

জাতির পিতার রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে রাষ্ট্রপতি হয়ে ক্ষমতার মসনদে বসেছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। যিনি বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলেন। তখনো ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ। শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সপরিবারে হত্যার পর ওই দিনই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। ৬ নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র ৮৩ দিন ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন মোশতাক।

ইতিহাসবিদদের মতে, সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক সত্যি হলো- মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যারা পদ পেয়েছিলেন, দু’জন বাদে অন্য সবাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য। খন্দকার মোস্তাক ১২ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে তার মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। ২৩ সদস্যের এই মন্ত্রিসভার ২১ জনই ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাকশালের ক্যাবিনেট সদস্য। তাদের দপ্তরও খুব একটা পরিবর্তন করা হয়নি। প্রায় সবাইকে আগের দপ্তরেই বহাল রাখা হয়। বাকশালের বাইরে খন্দকার মোশতাক কেবল শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় যুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের সময় তিনি ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ।

মোশতাক ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করে রাষ্ট্রপতি পদকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী করা হয়। উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ উল্লাহ। মোশতাককে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ পড়ান এইচ টি ইমাম, যিনি সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। তবে বিভিন্ন সময় এইচ টি ইমাম বিভিন্ন টক শো ও বক্তব্যে এই তথ্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এইচ টি ইমামের মতে, তাকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়েছিল। তিনি শুধু বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আর শপথবাক্য পাঠ করান বিচারপতি আবু সাঈদ।

এইচ টি ইমাম বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের (১৯৭১-১৯৭৫) ক্যাবিনেট সচিব ছিলেন। পরে ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাবিনেট সচিব থাকা এইচ টি ইমামের পরবর্তীতে (পদাবনতি পদে) সচিব হিসেবে ১৯৮৬ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা সচিবের পদে নিযুক্ত ছিলেন।

মোশতাকের মন্ত্রিসভায় এম ইউসুফ আলী পরিকল্পনামন্ত্রী; ফণীভূষণ মজুমদার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী; সোহরাব হোসেন পূর্ত ও গৃহনির্মাণ মন্ত্রী; আব্দুল মান্নান স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনামন্ত্রী; মনোরঞ্জন ধর আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী; আব্দুল মোমিন কৃষি ও খাদ্যমন্ত্রী; আসাদুজ্জামান খান বন্দর ও জাহাজ চলাচল মন্ত্রী; ড. আজিজুর রহমান মল্লিক অর্থমন্ত্রী; ড. মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন বিমান ও পর্যটন; দেওয়ান ফরিদ গাজী বাণিজ্য ও খনিজ সম্পদ; তাহেরউদ্দিন ঠাকুর তথ্য বেতার ও শ্রম; অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী শিল্প; নুরুল ইসলাম মঞ্জুর রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয়; কে এম ওবায়দুর রহমান ডাক ও তার; মসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া পাট মন্ত্রণালয়; ডা. ক্ষিতীশ চন্দ্র মণ্ডল ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতর; রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বন, মৎস্য ও পশুপালন; সৈয়দ আলতাফ হোসেন সড়ক যোগাযোগ; মোমেন উদ্দিন আহমেদ বন্যা পানি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

ওই সময় আর্মি চিফ অব স্টাফ জেনারেল সফিউল্লাহ, এয়ারফোর্স চিফ এ কে খন্দকার, নেভি চিফ অ্যাডমিরাল খান, ফরেন সেক্রেটারি ফখরুদ্দীন এবং পুলিশ প্রধান (আইজিপি) ছিলেন নুরুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আতাউল গনি ওসমানী হন মন্ত্রীর সমমর্যাদায় রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা। মাহবুব আলম চাষী হন মুখ্য সচিব। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন আবদুল মালেক উকিল। তিনি পরবর্তীতে মোশতাকের অধীনে জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে শপথ নেন।

শপথবাক্য পাঠ করানো বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ছেলে আবুল হাসান চৌধুরী ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

এই হলো বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের অবস্থা এবং অবস্থান। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের পতনের ইতিহাস। সেই থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছিল দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র, রাষ্ট্রক্ষমতার লোভ এবং আওয়ামী লীগ বিধ্বংসী আওয়ামী লীগের বিশ্বাসঘাতকরাই আওয়ামী লীগের পতন ডেকে এনেছিল। কিন্তু ১৯৮১ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে ধ্বংসস্তুপে পরিণত আওয়ামী লীগের পুনরায় হাল ধরেন। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগে বিশ্বাসঘাতকতা এবং অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের এখানেই শেষ নয়। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যখন আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা হয়, তখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন কারাগারে। তখনও আওয়ামী লীগের একটি শ্রেণি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে মুচলেকা দিয়ে প্যারোলে মুক্তিলাভের পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কারণে সেই ষড়যন্ত্র সফলতার মুখ দেখেনি। ৭১’র মুক্তিযুদ্ধের সময়ে খুনী মোশতাকরা পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র করেছিল, কিন্তু সেই সময়ে তাজউদ্দীন আহমেদের বিরোচিত ভূমিকার কারণে- সেটিও সম্ভব হয়নি।  ৭৫’র ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনাটি ঘটেছিল আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই। ১৯৮১ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন, তখনও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তার নিকটাত্মীয়দের ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিল। প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে যে বাকশাল করা হয়েছিল, সেটিও ছিল আওয়ামী লীগকে দুর্বল করে তোলার একটি অন্যতম ষড়যন্ত্র।              

সর্বশেষ এক-এগারো। এই এক-এগারো’র একটি অন্যতম লক্ষ্য ছিলো বিরাজনীতিকরণ। বিরাজনীতিকরণের অংশ হিসেবেই মাইনাস-টু ফর্মুলা চালু করা হয়েছিলো ১/১১’র সময়ে। এ সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের চার বয়জেষ্ঠ্য নেতা। এক-এগারো’র সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগের মধ্যে সংস্কারপন্থীদেরকে উষ্কে দেয়া হয়েছিলো। এই সংস্কারপন্থীদের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের ওই নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তারা সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কারের প্রস্তাব তুলেছিলেন। যে কারণে তাদেরকে বলা হয় সংস্কারপন্থি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১/১১ এর অন্যতম আলোচনার বিষয় হলো সংস্কারপন্থিদের ভূমিকা। এই সংস্কারপন্থিদের আওয়ামী লীগের তৃণমূল সে সময়ে সহজভাবে মেনে নেয়নি। তাদেরকে গণদুষমন বা দলের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিলো। যদিও এই সংস্কারপন্থিদের কেউ কেউ এখনও আওয়ামী লীগের সাথেই রয়েছেন। 

এছাড়াও, বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সময়কাল পর্যন্ত ক্ষমতার লোভে অথবা নিজস্ব ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছেন এবং করছেন, কেউ কেউ আবার দল থেকে বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। কিন্তু সকল ষড়যন্ত্র, বাধা-বিপত্তি আর ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজ ৭৫ বছরে পা রেখেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ, এগিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ।  


আওয়ামী লীগ   বিশ্বাসঘাতক   ক্ষমতা   বিষবাষ্প  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গীরাও তারেকের ওপর বিরক্ত

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জনের জন্য বিএনপি কমবেশি অন্তত ৫০ টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিভিন্ন দফায় বৈঠক করেছিল। এই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনেরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। 

২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বিএনপি তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আন্দোলন ভালোই জমিয়ে তুলেছিল। এই সময় এই দলগুলোকে নিয়ে একটি জোটবদ্ধ আন্দোলন করার কথাও ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত জোটবদ্ধ আন্দোলন হয়নি। বরং সবাই তাদের নিজ নিজ প্ল্যাটফর্ম থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৮ অক্টোবর বিএনপির হঠকারিতা এবং ভুল রাজনীতির কারণে আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। 

নির্বাচনের পর শরিকদের পক্ষ থেকে আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং একটি ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছিল। এ নিয়ে নির্বাচনের পরও বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছিলেন শরিকরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আন্দোলনের সঙ্গীদের বিশ্বাস করতে পারেননি। আর এই অবিশ্বাসের কারণে এখন শরিক দলগুলো মোটামুটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। বিএনপির সাথে তাদের যোগাযোগ আলগা হয়ে গেছে। আর সে কারণেই এখন বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে তাদের উৎসাহ নেই। অনেকেই এখন ঘরে উঠেছেন এবং তারেক জিয়ার নেতৃত্বে তারা বিরক্ত হয়েছেন। এবং বিএনপির সঙ্গে নতুন করে যুগপৎ আন্দোলনের ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সেই আন্দোলনের অন্যতম অংশী ছিলেন নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি অত্যন্ত সরব ছিলেন এবং এই আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তিনি বিএনপির অন্যতম পরামর্শক হিসেবে বিবেচিত হতেন। কিন্তু এখন তিনি লাপাত্তা। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যে, মাহমুদুর রহমান মান্না তারেক জিয়ার ওপর অত্যন্ত বিরক্ত এবং বিএনপির কৌশল নিয়েও তিনি হতাশ। আর এ কারণেই নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। একই অবস্থা জেএসডির নেতা আ স ম আবদুর রবের। আবদুর রব মনে করছেন যে, বিএনপির রাজনীতির কৌশলই ভুল ছিল এবং এখন এই কৌশলের মাসুল দিতে হচ্ছে গোটা দেশকে। বিএনপি একদিকে যেমন সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না, অন্যদিকে শরিকদেরকেও বিশ্বাস করছে না। আর এ কারণে বিএনপির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এই নেতা।

শরিকদের মধ্যে অন্যতম ছিল ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ। তারাও এখন নিজের আলাদা অবস্থান থেকে রাজনীতি করছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তারা নেই। সাম্প্রতিক সময়ে নুর বলেছেন যে, উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি। 

শরিকদের যারা বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করেছিল তাদের মধ্যে একমাত্র জোনায়েদ সাকি ছাড়া কেউই বিএনপির প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছেন না। বরং বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন। 

অন্যদিকে বিএনপির আদর্শিক জোট জামায়াত মাঝখানে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছিল। কিন্তু আবার ঘনিষ্ঠতায় ছেদ ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান অভিযোগ হলো তারেকের উদ্ভদ বিভ্রান্তিমূলক এবং অরাজনৈতিক সূলভ সিদ্ধান্ত। শরিকদের মধ্য থেকে একাধিক নেতা বলেছেন, তারেক জিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক পরিপক্কতার অভাব রয়েছে। হুটহাট তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরিণতি এবং সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া চিন্তা না করেই সিদ্ধান্ত নেন। একজন রাজনৈতিক নেতার যে গুণাবলি থাকা উচিত তা কিছুই তার মধ্যে নেই। আর এ কারণেই শরিকরা এখন বিএনপি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন বিএনপির দলের মধ্যে হতাশা অন্যদিকে শরিকরাও এখন বিএনপির প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছে না।


বিএনপি   তারেক জিয়া   মাহমুদুর রহমান মান্না  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির সরব নেতারাও এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যাচ্ছেন

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপির আন্দোলন এখন হতাশার চাদরে ঢাকা পড়ে গেছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা। আর এই হতাশা এখন সংক্রমিত হয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা স্থায়ী কমিটিতে। স্থায়ী কমিটির নেতারা এখন নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়েছেন এবং হতাশায় তারা আস্তে আস্তে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন;

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সৌদি আরবে যাচ্ছেন ওমরাহ পালন করতেন। তিনি দুদিন আগেই পয়লা মে জনসভায় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন মে দিবসের জনসভায়। আর সেই ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সৌদি আরবে চলে গেলেন। দলের মূল চালিকাশক্তি যখন বিদেশে চলে যান তখন দলে এক ধরনের অনিশ্চয়তা এবং হতাশা তৈরি হয় এটাই স্বাভাবিক। 

বিএনপির বিভিন্ন নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তারা স্বীকার করেছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন মানসিক ভাবে দলের নেতৃত্ব এগিয়ে নিতে প্রস্তুত নন। তিনি বারবার নেতাকর্মীদের কাছে বলছেন, আমি থাকতে চাচ্ছি না। আমাকে জোর করে রাখা হচ্ছে। অনীহা সত্ত্বেও বিকল্প কোন মহাসচিব না করার কারণেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এখনও রাখা হয়েছে। আর তিনি দলে যতটা না সময় দিচ্ছেন তার চেয়ে বেশি সময় দিচ্ছেন নিজের ব্যক্তিগত বিষয়ে।

বিএনপির বিভিন্ন নেতা মনে করেন যে, আন্দোলনের ব্যর্থতা এবং ভুল নেতৃত্ব, তারেক জিয়ার বাড়াবাড়ি ইত্যাদি কারণে মির্জা ফখরুল ইসলাম হতাশ এবং এ কারণেই তিনি আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগেও ২৮ অক্টোবর আগ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে যেভাবে সরব এবং সক্রিয় দেখা গিয়েছিল এখন তার ছিঁটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না এবং এটি বিএনপির মধ্যে একটি বড় আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী: কারাগার থেকে বের হওয়ার পরে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে অনেকটা নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। বিভিন্ন দূতাবাসের অনুষ্ঠানে যোগদান ছাড়া আনুষ্ঠানিক বিভিন্ন কর্মসূচি ছাড়া তাকে খুব একটা দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে চলে গেছেন। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, তিনি দলের কার্যক্রমে বিরক্ত হতাশ। এ কারণে তিনি তার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। তিনি কারাগার থেকে বেরোনোর পর খুব একটা সক্রিয় ছিলেন না। 

নজরুল ইসলাম খান: নজরুল ইসলাম খান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং একজন ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই সময় নজরুল ইসলাম খানকেও খুব একটা পাদপ্রদীপে দেখা যাচ্ছে না। বিভিন্ন কর্মসূচিতেও তিনি থাকছেন না। নজরুল ইসলাম খান অবশ্য বলছেন, শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ। যতটুকু তার পক্ষে সম্ভব ততটুকু চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিএনপির নেতারাই বলছেন, নজরুল ইসলাম খানকে তারা যে অবস্থায় দেখেছেন অতীতে তার ধারেকাছেও এখন তিনি নেই। 

মির্জা আব্বাস: মির্জা আব্বাস বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা এবং ঢাকা মহানগরীর অন্যতম চালিকাশক্তি মনে করা হয় মির্জা আব্বাসকে। কিন্তু মির্জা আব্বাসও এখন নিষ্ক্রিয়। কারাগার থেকে বেরোনোর পর তার কর্মসূচি তিনি সীমিত করেছেন। এখন দলের কার্যক্রমে তাকে উদ্যোগী দেখা যায় না। উদ্যোগ নিয়ে তিনি কোন কিছু করেনও না। দলের যে সমস্ত কর্মসূচি গুলো ঘোষিত হয় সেখানে রুটিন উপস্থিতির মাধ্যমে তিনি তার দায়িত্ব সম্পন্ন করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক জন সদস্য। কিছু দিন আগ পর্যন্ত তাকে অত্যন্ত সরব দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি আস্তে আস্তে যেন পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছেন। তাকে কোন আগ বাড়িয়ে কর্মসূচি পালনের জন্য দেখা যাচ্ছে না। কোন বিবৃতি দিতেও তিনি আগ্রহী নন। এক ধরনের হতাশা থেকে তিনি আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন।

স্থায়ী কমিটির পাঁচ জন সদস্য অনুপস্থিতি। আর পাঁচ জনের অবস্থা এ রকম। কয়েকজন একেবারেই অসুস্থ। এই অবস্থায় বিএনপি এখন স্থায়ী কমিটি শূন্য হয়ে পড়ছে। 

বিএনপি   মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলায় বেপরোয়া মন্ত্রী-এমপিরা

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

আগামী ৮ মে যে ১৫০ উপজেলায় নির্বাচন হবে সেখানে প্রায় ৭০ টিতেই মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব পছন্দের ব্যক্তি রয়েছেন। সেই পছন্দের ব্যক্তিদেরকে জেতাতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। নির্বাচন কমিশনও এদের নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং নির্বাচন কমিশন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব ঠেকানোর জন্য করণীয় নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করছে। 

একাধিক উপজেলার খবর নিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মন্ত্রী-এমপিরা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে জেতানোর জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছেন। যেমন, তারা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষ করে নির্বাচনে যারা প্রতিপক্ষ রয়েছে তাদেরকে নানা রকম হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কোথাও কোথাও ভোটারদের ভীতি দেখানোর জন্য সহিংস ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এই সমস্ত প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্র-এমপিদের স্বজন এবং তাদের পছন্দের প্রার্থীদেরকে জেতানোর জন্য নির্বাচনের উৎসবমুখর আমেজ ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলেও বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে একটি নমনীয় এবং সহনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি থাইল্যান্ড সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, আওয়ামী লীগের বহু মন্ত্রী-এমপির আত্মীয় স্বজনরা আগে থেকেই রাজনৈতিক দল করে এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন কমিটিতে আছে। তাদেরকে আমরা কীভাবে নির্বাচন করতে বাধা দেব। তার এই বক্তব্যের পর চাপে থাকা মন্ত্রী-এমপিরা এখন যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। 

তারা মনে করছেন যে, যেহেতু প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আপাতত কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না, সেহেতু এখন তাদেরকে জিতিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা যেতে পারে। আর এই কারণেই তারা একের পর এক উপজেলাগুলোতে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। নিজস্ব প্রভাব বিস্তারের জন্য তারা এলাকায় নানারকম কৌশল গ্রহণ করছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে তাদের পক্ষে আনার জন্য প্রলুদ্ধ করছেন। যা তাদের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে উপজেলা নির্বাচন এখন কার্যত আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। 

তবে আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বলছেন, এটা আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ নেতার লড়াই না। উপজেলা নির্বাচন এখন আসলে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপির পছন্দের প্রার্থীর সাথে তৃণমূলের পছন্দের প্রার্থীর লড়াইয়ের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে তৃণমূল শক্তিশালী সেখানে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবোধ করতে পারছেন। যেখানে তারা শক্তিশালী নন সেখানে মন্ত্রী-এমপিদের কাছে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন।

উপজেলা নির্বাচন   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার বিদেশে চিকিৎসা: পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে?

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়া একদিনের জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে তাকে আবার বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যায়। বাড়িতে ফেরার পর বিএনপি পন্থী চিকিৎসক এবং ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ দাবি করেছেন যে, খালেদা জিয়াকে এখন লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে এবং এর জন্য তাকে বিদেশ নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

এর আগে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি থেকে কয়েকজন চিকিৎসককে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল এবং তারা একটি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থাকে স্থিতিশীল করেছিলেন। এবার অবশ্য বিএনপির নেতারা সে পথে হাঁটছে না। বরং তারা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়াই উত্তম এবং বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুরোধ বা দাবিটি আবার সামনে চলে আসছে। 

তবে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া নিয়ে বিএনপি এবং বেগম জিয়ার ভাই বোনের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন যে, সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দেওয়াই আসল কৌশল। সরকারের ওপর যদি চাপ সৃষ্টি করা যায় তাহলে সরকার শেষ পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেবে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, এই চাপের মধ্যে শুধু রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, কূটনৈতিক অঙ্গনে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে সঠিক ভাবে জানানো এবং আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তোলার জন্য তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন মত পোষণ করেন। তিনি মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে এই মুহূর্তে যদি বিদেশ না নেওয়া যায় তাহলে তার অবস্থা সংকটাপন্ন। আর এ কারণেই তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারটাকে রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত। আর এ ক্ষেত্রে যে কোন শর্তে বেগম জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার পক্ষে তিনি অবস্থান নিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

শামীম ইস্কান্দার নিজে এবং কয়েকদফা সরকারের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এবং যে কোনো শর্তে তিনি তার বোনকে বিদেশ নিয়ে যেতে চান চান বলেও আশ্বস্ত করেছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য যদি সরকারকে অনুমতি দেওয়া হয় তা হলে সেখানে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করতে হবে। এ নিয়ে শামীম ইস্কান্দার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গেও দেখা করেছেন বলে জানা গেছে। আজ ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বেগম খালেদা জিয়াকে কোনো এক সময় দেখা করতে যেতে পারেন বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছেন। 

বেগম খালেদা জিয়া এখন আগের অবস্থানে নেই। তিনি যে কোন প্রকারে বিদেশ যেতে চান। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে, রাজনীতিতে তার এখন কোন আগ্রহ নেই এবং তিনি নিজেও মনে করেন যে, তার চিকিত্সাটাই উত্তম। তবে এটি আসলে কোন রাজনৈতিক কৌশল নাকি সত্যি সত্যি বেগম জিয়া অসুস্থ সেটি নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। 

চিকিৎসক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেগম খালেদা জিয়ার যে অস্ত্রোপচার হয়েছে তাতে তার এক থেকে দেড় বছর স্থিতিশীল থাকার কথা। আর বেগম খালেদা জিয়ার যে বয়স এবং তার যে অন্যান্য শারীরিক অবস্থা তাতে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার মতো পরিস্থিতি তার নাই। লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করার একটা বয়স লাগে। অন্যান্য রোগ শোক থেকেও মুক্ত থাকতে হয়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া একাধিক রোগে আক্রান্ত। তার কিডনির অবস্থা ভালো না। তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এছাড়াও তিনি ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত। এ রকম পরিস্থিতিকে একজন রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এটি একটি রাজনৈতিক বাহানা কি না সেটি নিয়েও কেউ কেউ সংশয় প্রকাশ করেছেন। তবে শামীম ইস্কান্দার সরকারের কাছে বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে শারীরিক অবস্থা তাতে তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেটার জন্য তারা সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা সৌদি আরবে যেতে চান।

খালেদা জিয়া   এভারকেয়ার হাসপাতাল   বিএনপি   শামীম ইস্কান্দার   ডা. জাহিদ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভা শনিবার

প্রকাশ: ০৪:৪০ পিএম, ০৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা শনিবার (৪ মে) সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

শুক্রবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট সায়েম খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শনিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলের সভাপতি ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সভায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।


আওয়ামী লীগ   মনোনয়ন বোর্ড   সভাপতি   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন