মার্কিন গণমাধ্যমে ইমরান খান সম্পর্কিত একটি খবর নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরো সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র একটি কথোপকথন ফাঁস হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এক সংবাদপত্র এই কথোপকথন ফাঁস করেছে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, গত বছর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি, এমন একটি গোপন কূটনৈতিক তারবার্তা তাদের হাতে আছে।
গত বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে যান ইমরান খান। তখন তিনি দাবি করেছিলেন, ওই গোপন বার্তা সম্পর্কে তিনি জানতেন। তিনি অভিযোগ করেন তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইন্টারসেপ্ট তাদের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত খবর প্রকাশ করল এবং দেখা গেল যে ইমরানের অনুমানই সঠিক। ওয়েবসাইটের খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র এ ব্যাপারে বিস্তারিত কথোপকথন হয়েছে। গত বছরের ৭ মার্চ তাদের মধ্যে এই কথাবার্তা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি মস্কো যাওয়ার ২ সপ্তাহ পর মাজিদ ও ডোনাল্ড লু’র মধ্যে এই কথোপকথন হয়। একই দিনে ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরু করেছিল। আর এই তারবার্তা ফাঁস হওয়ার পর এটা স্পষ্ট হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার দেশের স্বার্থে যে কোনো দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করতে পারে, যে কোনো দেশের ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারে। গণতন্ত্র তাদের হাতে আধিপত্যবাদের একটি অস্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। ইমরান খানের সঙ্গে পাকিস্তানের যে পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করেছিল, সে একই পরিস্থিতি বাংলাদেশে সৃষ্টির চেষ্টা চলছে কিনা, এ নিয়ে বিশ্ব রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় কথাবার্তা হচ্ছে। রাশিয়া একাধিকবার বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপ করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন। তাহলে কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইমরান খানের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান?
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বার্তাটি বারবার দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আল জাজিরা, বিবিসি, এবিসি’র সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় না আমি ক্ষমতায় থাকি’। এমনকি জাতীয় সংসদের সংসদ নেতা হিসেবে প্রদত্ত ভাষণেও প্রধানমন্ত্রী একই মন্তব্য করেছেন এবং সেই ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চাইলে ক্ষমতার উলটপালট করা ঘটাতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন, সেন্ট মার্টিন দিলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চুপ থাকবে এবং তখন তাদের তৎপরতাও বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু দেশের জমি আমি বিদেশিদের ব্যবহার করতে দেব না। অবশ্য এর জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, বাংলাদেশের কাছে সেন্ট মার্টিন তারা চায়নি। যদিও দলিলপত্রে দেখা যায়, সেন্টমার্টিন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ দীর্ঘদিনের এবং বিভিন্ন সময়ে তারা এ নিয়ে তৎপরতা চালিয়েছিল। আর এই বাস্তবতায় ইমরান খানের ঘটনার তথ্যাদি যখন সামনে চলে এসেছে, তখন অনেকেই মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি তাহলে শেখ হাসিনাকেও একই কায়দায় ক্ষমতাচ্যুত করতে চান?
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটটা সম্পূর্ণ ভিন্ন বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন। সেখানকার প্রশাসন এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত অনুগত। বাংলাদেশে সেই বাস্তবতা নেই। আর সে কারণেই বাংলাদেশে একের পর এক বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ভয় দেখিয়ে প্রশাসনসহ ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অনুগত করতে চাইছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার ভয়- তার মূল উদ্দেশ্য হলো, সরকারের ভেতরে থাকা প্রভাবশালীদেরকে আওয়ামী লীগের আনুগত্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আনুগত্যে নিয়ে আসা। সেই চেষ্টায় তারা শেষ পর্যন্ত সফল হবে কিনা; সেটাই এখন দেখার বিষয়।
ইমরান খান শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত যুক্তরাষ্ট্র?
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
রাষ্ট্রপতি খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার তারেক জিয়া রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।