বিএনপি এখন নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করছে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না এবং সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণও করবে না। তবে কূটনৈতিক মহল, সুশীল সমাজ বিএনপির এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি এক ধরনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানাচ্ছে। পাশাপাশি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ এবং সুশীল সমাজের কিছু নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তারা এই চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে বিএনপিকে সমন্বিত করার চেষ্টা করছে। সুশীল সমাজ মনে করছে, বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি, রাজনৈতিক, সাংবিধানিক এবং অর্থনৈতিক, তাতে তিন মাসের জন্য একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যথেষ্ট নয়। একটি দীর্ঘ মেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রয়োজন। আর এই সরকার গঠন করার জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রয়োজন হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে সুশীল সমাজের দু’জন প্রতিনিধি বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা বিএনপিকে বলেছেন, একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে পাঁচ থেকে সাত বছর মেয়াদে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্রের কতগুলো মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করবে। তার মধ্যে রয়েছে-
১. সংবিধান সংশোধন করা, ২. বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন- দুর্নীতি দমন কমিশন, বিচার বিভাগ,সুপ্রিম কোর্ট, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ মুক্ত এবং স্বতন্ত্র, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে রূপান্তর করা। সুশাসন এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্য নীতি কৌশল প্রণয়ন করা। নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করা। এই সমস্ত কর্মতৎপরতা মাত্র তিন মাসে সম্ভব না। এই জন্য দীর্ঘ মেয়াদ দরকার। কাজেই বিএনপিকে প্রথমে রাজি হতে হবে যে, তারা পাঁচ থেকে সাত বছরের জন্য একটি অনির্বাচিত সরকার বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সমর্থন দেবে। কারণ আওয়ামী লীগ এ ধরনের সরকারকে সমর্থন দেবে না, সেটি সাফ জানিয়ে দিয়েছে। কাজেই বিএনপির সমর্থন ছাড়া এই ধরনের সরকার দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।
সুশীলদের অতীত অভিজ্ঞতা হলো, এক/এগারোর সময়, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন দীর্ঘ মেয়াদে যায়, তখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি উভয় দলই তার বিরোধীতা করেছিল। এবার যেন আবার সেই পরিস্থিতি না হয়, এই জন্য আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তারা আলোচনা করে মুচলেকা নিতে চাইছে। তবে বিএনপির মধ্যে এই নিয়ে দুই ধরনের মতামত রয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতা স্বীকার করেছেন, একটি দূতাবাস এবং কয়েকজন সুশীল তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিএনপির মনোভাব জানতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপির মধ্যে অনেক নেতাই আছেন, যারা দীর্ঘমেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না। তারা মনে করে,এই ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা হলে সেটি বিএনপির জন্য বিপর্যয়কর হবে। কারণ এই ধরনের দীর্ঘকালীন অনির্বাচিত সরকারের অতীত অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগ, বিএনপি কারো জন্যে সুখকর নয়।
বিএনপির প্রভাবশালী দু’একজন নেতা বলেছেন, এখন আমরা রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ইত্যাদি করছি। নির্বাচন করলে বিএনপি জয়ী হতে পারে, এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার আসলে আবার বিএনপি নেতাদের উপর হয়রানি, অত্যাচার শুরু হবে না- এমন কোন গ্যারান্টি নেই। তাছাড়া তারেক জিয়ার মামলা, বেগম খালেদা জিয়ার মামলা ইত্যাদি প্রত্যাহার করা হবে- এমন কোনো গ্যারান্টিও অনির্বাচিত সরকার স্বাভাবিক কারণে দেবে না।
বিএনপির নেতাদের অভিজ্ঞতা হলো, ২০০৭ সালে এক/এগারোর সরকার এসেই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলা নতুন করে তদন্ত শুরু করেছিল। তারাই বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দিয়েছিল এবং সেই মামলার কারণে বেগম খালেদা জিয়া এখন কারাগারে রয়েছেন। কাজেই এই ধরনের সরকার দীর্ঘমেয়াদে থাকলে বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যেটা বিএনপির জন্য নেতিবাচক।
তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, এই মুহূর্তে দরকার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানো। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর পর বিএনপি সংগঠন গুছাবে বা অন্য কিছু করবে। তারপর একটি নির্দিষ্ট সময় পর তারা নির্বাচনে যাবে। কিন্তু অনির্বাচিত সরকার যে বিএনপি নিধনও করবে না, তার গ্যারান্টি কে দেবে?- এই প্রশ্ন বিএনপির অনেক নেতার মধ্যেই ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে।
দীর্ঘমেয়াদ অনির্বাচিত সরকার বিএনপি সুশীল সমাজ
মন্তব্য করুন
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের পতনের লক্ষ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ষড়যন্ত্র করছে না। বরং আন্দোলনে একাত্ম। ডান-বাম সবাই তারা প্রকাশ্যে বলছে এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা প্রহসনের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হয়েছে।
শনিবার (৪ মে) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধি জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের নতুন আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন ও বিশেষ মোনাজাত করেন নেতারা।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বিএনপির এই আন্দোলন ক্ষমতায় যেতে নয়, ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তনের জন্য। বিএনপি সেই লক্ষ্যে রাজপথে আছে এবং রাজপথে থাকবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জেড রিয়াজ উদ্দিন খান নসু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, ওলামা দলের সাবেক আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক, ওলামা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট মাওলানা আবুল হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. আলমগীর হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা ক্বারী গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. দেলোয়ার হোসেইনসহ সাবেক কমিটির শতাধিক নেতাকর্মী।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
আবদুল মঈন খান বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নতুন প্রজন্মের মন থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলতে চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের সেই অপচেষ্টা সফল হবে না। কারণ জিয়াউর রহমান এদেশের সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের একটি পরিচিত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ প্রবর্তন করেছিলেন।
তিনি বলেন, আবারও ১৯৭৫ সালে সিপাহী জনতার বিপ্লবে দেশের জনগণ দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি কখনো ক্ষমতার জন্য লড়াই করেননি। আমরা শুধু নই গোটা দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছেন।
মঈন খান বলেন, গত ১৫ বছরে দেশে ফের নতুন বাকশাল কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এখানে গণতন্ত্র নেই, মানুষের বাকস্বাধীনতা ও নারীর স্বাধীনতা নিরাপত্তা নেই। আমরা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ সামনে রেখে এগিয়ে যাব এটাই হোক আমাদের প্রত্যয়।
মন্তব্য করুন
বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে এবং সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী ফের কারাগারে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ কেউ আছেন একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। অনেককে বিভিন্ন মামলায় আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ। সর্বশেষ সোমবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন কেউ কেউ।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎভাবে লাগাতার আন্দোলনে নামে বিএনপি। মূলত ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে একদফা দাবিতে টানা হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে যায় বিএনপিসহ সমমনা দল এবং জোটগুলো। এ আন্দোলনের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি তারা। একপর্যায়ে গত ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ ৬২টি রাজনৈতিক দল। ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন করে বিএনপি। নানামুখী তৎপরতার পরও নির্বাচন ঠেকাতে না পারা বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়ে। সেই থেকে ধীরে চলছে বিএনপি। নেই রাজপথের কঠোর কোনো কর্মসূচি। সম্প্রতি দলীয় কিছু কর্মসূচিতে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাধা দিয়েছে বলে দলটির অভিযোগ। বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজপথে জোরালো কর্মসূচি না থাকা সত্ত্বেও পুরোনো মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও সাজার ঘটনা দলের নীতিনির্ধারকদের ভাবিয়ে তুলছে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, বিরোধী দলকে দমনের জন্য হামলা-মামলা ও গুলিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার। এটা সবাই জানেন যে, গত বছরের ২৮ অক্টোবর সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কীভাবে আমাদের নিরীহ ও নিরস্ত্র নেতাকর্মীদের ওপর টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়েছে। অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সরকার কিন্তু বিরোধী দল দমনসহ বিএনপিকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। মামলা-মোকদ্দমা আজও শেষ হয়নি। এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার নেতাকর্মী দেশের বিভিন্ন কোর্টে হাজিরা দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের কারও বিরুদ্ধে ৩০০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত মামলা আছে। গভীর রাতেও গ্রামে-গঞ্জে তৃণমূল নেতাকর্মীদের বাড়িতে গিয়ে হানা দেয় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা গেছে, গত ২৮ এপ্রিল রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানার মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মকবুল ইসলাম টিপু, ওমর নবি বাবু, মাহবুবুর রহমান টিপু, রফিকুল ইসলাম ময়না, মোহাম্মদ রবিন, মোহাম্মদ সালেহ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে তা নামঞ্জুর ও কারাগারে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান), জেলা বিএনপি নেতা মোহিতুর রহমান হেলাল, মাহমুদুর রহমান, স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরীসহ ১৪ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি রাজধানীর জুরাইন থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মনির মুন্সী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব বাবুসহ গাড়ি চালককে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক আটকের পরও অস্বীকার এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব শাহেদকে গোয়েন্দা পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।
গত ২৪ এপ্রিল খুলনা জেলা বিএনপির ৩০ নেতাকর্মী নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করলে জামিন নামঞ্জুর ও কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবন্দি নেতারা হলেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এসএম মনিরুল হাসান বাপ্পী, বিএনপি নেতা খান জুলফিকার আলী জুলু, রুপসার থানার মোল্লা সাইফুর রহমান, পাইকগাছার এনামুল হক, মো. সাহাবুদ্দিন ইজাদার, মো. সাইফুল ইসলাম পাইক, স্বেচ্ছাসেবক দলের মো. জাকির হোসেন তালুকদার, মো. লায়েকুজ্জামান লাকু, মো. কামাল উদ্দিন, মো. ফরহাদ হোসন, জাসাসের মো. খালিদ লস্কর, ছাত্রদলের জাকারিয়া, মো. তরিকুল ইসলাম রনি, মো. আলমগীর শেখ, যুবদলের ইমরান হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সোহেল গাজী, মো. সোহেল গাজী, মো. ফারুক হোসেন, আমিনুল মল্লিক, মো. শিহাব সরদার, বাদশাহ সরকার, মো. আল আমিন শেখ প্রমুখ।
গত ২১ এপ্রিল দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌর বিএনপির সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ২৭ নেতাকর্মীর জামিন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। কারাবন্দি নেতারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার মিলন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির গোলাম হোসেন, মো. মোরসালিন, আবদুল আজিজ, সাবের হোসেন, কালাম, হান্নান খান, আবু কাউসার ভূঁইয়া, হুমায়ুন, আনিসুর রহমান শিপলু, সানি ও ইয়াসিন, মোস্তাক আহমেদ, মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন সিরাজ, সেন্টু আহমেদ সাকি, সৈয়দ মঞ্জুরুল হক, মোহাম্মদ মঈন, যুবদলের ওমর ফারুক, রাজু বল্লম রাজু, মো. রকি, বিএনপি নেতা মো. বিল্লাল, মো. ফালান, মোহাম্মদ রনি, মামুন, সাগর ও শাওন। ১৭ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য শহিদুল ইসলাম বাবুল, বিএনপি নেতা সেলিম আহম্মেদ সালেম, কুতুব উদ্দিন এবং রেজাউর রহমান রাজুর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তার আগে গত ১৮ এপ্রিল বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবিবসহ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য লতিফুল্লাহ জাফরু, বংশাল থানার মো. মাকসুদ হোসেন এবং মোহাম্মদ আরিফ হাসানের জামিন নামঞ্জুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
গত ১৭ ও ১৮ এপ্রিল দিনাজপুর জেলা বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা এবং কেন্দ্রীয় যুবদল নেতার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন দিনাজপুর জেলা বিএনপির শামীম চৌধুরী, মোজাহারুল ইসলাম, নুর ইসলাম (চেয়ারম্যান), ঘোড়াঘাট উপজেলার আবু সাঈদ মিঞা, জেলা যুবদলের মোন্নাফ মুকুল, বিরল উপজেলার মো. মমিনুল ইসলাম, মো. আরমান আলী, মো. মমিন, মো. হাসিনুর রহমান পায়েল এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আবুল মনছুর খান দিপক। এর আগে গত ১ মার্চ বিএনপির খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির ৫২ নেতাকর্মী আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ১৮ মার্চ তারা ছাড়া পেয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিনা কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের কারাগারে যেতে হচ্ছে। কারাগার যেন তাদের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে গেছে। বিএনপির মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা দীর্ঘ তিন-চার মাস কারাগারে থেকে বেরোলেন। এখনো কয়েক হাজার নেতাকর্মী কারাগারে বন্দি। তাদের জন্য দিনের আলো ও মুক্ত বাতাস গ্রহণ যেন নিষিদ্ধ। এদের প্রায়ই কারাগারের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। এভাবে নেতাকর্মীদের কারাগারে ঢুকানো, গুম ও খুন করা এই কর্মসূচি যেন সরকারের শেষ হচ্ছে না। আমার মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী একটা আতঙ্কের মধ্যে ভুগছেন। কারণ তিনি জানেন তার জনসমর্থন নেই। সরকার যতই বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন করুক না কেন, একদিন এর বিচার হবেই। সব অন্যায়ের রেকর্ড আছে। তাদের শেষ রক্ষা হবে না।
জানা গেছে, ঈদের আগে সাজাপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশিদ হাবিব, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তফা কামাল হৃদয়, এসএ খোকন, উত্তরা থানার আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে আত্মসমর্পণ করেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান আত্মসমর্পণের পর কিছুদিন কারাভোগের পর সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফুজ্জামান বাবর, ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন অপু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আজিজুর রহমান মুসাব্বির, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ইখতিয়ার রহমান কবিরসহ অনেকে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের স্ত্রী শিরিন সুলতানা বলেন, গত বছরের ২৬ অক্টোবর একটি হত্যা মামলায় তার স্বামী খোকনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। একই মামলায় এ পর্যন্ত অনেক আসামির জামিন হলেও খোকনকে জামিন না দিয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ খোকন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, পায়ে পানি ধরাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। অবিলম্বে স্বামী খোকেনর মুক্তি দাবি করেন শিরিন সুলতানা।
সিলেট জেলা বিএনপির শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক তামিম ইয়াহিয়া আহমদ বলেন, মিথ্যা মামলায় পুলিশি হয়রানির কারণে আমি তো ঘরে থাকি না। তবু কেউ কেউ আমার বাসার সামনে ও বিল্ডিংয়ের ছাদে, কেউ আবার ভাঙাড়ি সেজে, মনিটরিং করে। আমি তো চোর বা ডাকাত নই। আমার দল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য এবং জুলুমের বিপক্ষে লড়ছে। আমি সেই দলেরই (বিএনপি) একজন।
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপির কারাবন্দি নেতাকর্মীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে যেসব নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাদের অধিকাংশ মুক্ত হলেও অনেককে নতুনভাবে কারাগারে যেতে হচ্ছে। ঈদুল ফিতরের আগে এবং সম্প্রতি শতাধিক নেতাকর্মী ফের কারাগারে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ কেউ আছেন একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। অনেককে বিভিন্ন মামলায় আটকের পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে বলে বিএনপির অভিযোগ। সর্বশেষ সোমবার জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতা এবং জেলা-উপজেলা পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মী কারাগারে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন কেউ কেউ।
উপজেলা নির্বাচনের দুই ধাপের প্রস্তুতি এবং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই দুই ধাপে আওয়ামী লীগের প্রায় ৫০ জন মন্ত্রী এমপির স্বজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের নিজস্ব ব্যক্তি বা মাইম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে একশরও বেশি। উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করেছেন তখন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।