আওয়ামী লীগ
মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের একাধিক নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘটনায় সমস্যায়
পড়েছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
নির্বাচনের
বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। একদিকে
দল মনোনীত প্রার্থী আছে, অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতারাই
দাঁড়িয়েছেন। কাকে ছেড়ে কার কাছে যাবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তারা। এই অবস্থায় তৃণমূলের
বেশির ভাগ নেতা-কর্মী দ্বিধাবিভক্তিতে ভুগছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে
জানা যায়, দেশের ১২টি জেলার ৩২টি সংসদীয় আসনের ২০টিতে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই আওয়ামী
লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। ১০টি আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন পাননি। তাদের মধ্যে ৭
জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বাকি দুটি আসনের একটিতে বর্তমানে জাতীয় পার্টি (জাপা)
ও আরেকটিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সংসদ সদস্য রয়েছেন।
তথ্য বিশ্লেষণ
করে দেখা যায়, এই ৩২ আসনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমান সংসদ সদস্য ছাড়াও সাবেক
সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ
দলের মাঠপর্যায়ের শীর্ষ নেতারা প্রার্থী হয়েছেন।
পিরোজপুর জেলা
আওয়ামী লীগে দুটি পক্ষ। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল
করিম। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল ও তাঁর
পরিবারের সদস্যরা। রেজাউল করিম এবার পিরোজপুর-১ (সদর-নাজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
পেয়েছেন। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে এম এ আউয়াল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বর্তমান সংসদ সদস্য দলের ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় দলের
নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
দলীয় মনোনয়ন
না পাওয়ায় কুমিল্লার ১১টি আসনের মধ্যে ৮টি আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী
হয়েছেন। এর মধ্যে দুজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন। কুমিল্লা-২ (হোমনা ও মেঘনা) আসনে দলের মনোনয়ন
পেয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মজিদ।
নওগাঁর ছয়টি
আসনের প্রতিটিতেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিপক্ষে দলটির এক বা একাধিক নেতা স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়েছেন। তবে নওগাঁ-৩ ও নওগাঁ-৪ আসনে এবার বর্তমান সংসদ সদস্যরা মনোনয়ন পাননি।
তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে অপেক্ষাকৃত নতুন দুই
প্রার্থী বিপাকে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম-১৫
(সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিনের বিরুদ্ধে
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব। চট্টগ্রাম-১২
(পটিয়া) নৌকার প্রার্থী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম
চৌধুরী। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ
সামশুল হক চৌধুরী।
ওয়ার্কার্স
পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশালের দুটি আসনে আকস্মিক প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয়
১৪–দলীয় জোটের রাজনীতিতে বেশ টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছে। রাশেদ
খান মেননের পৈতৃক বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় হলেও তিনি জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয়।
এবার তিনি বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মনোনয়নপত্র
জমা দেওয়ায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা
বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে পুলিশ ও প্রশাসনের গুরুত্ব বেশি ছিল। এবার দলীয়
প্রধান শেখ হাসিনার ঘোষণায় দলীয় নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব অনেকটাই বেড়ে গেছে। তবে দলীয়
প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের লোকজনই প্রার্থী হবেন—এমন কৌশলের জন্য তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা
প্রস্তুত ছিলেন না।
আওয়ামী লীগ বিএনপি রাজনীতি নির্বাচন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
বিএনপি ধর্মঘট রাজনীতির খবর তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন কার্যনির্বাহী কমিটি ওবায়দুল কাদের রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
বিএনপি এখন দিশেহারা দিগ্বিদিকহীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি কী করছে, কী বলছে সে সম্পর্কে তাদের নিজেদেরই যেন কোন হিসেব নেই। গত ২ দিন ধরে বিএনপির নেতারা এক নৈব্যক্তিক অবস্থায় আছেন। তারা কেউই কোন কথা বলছেন না। দলের রুটিন কার্যক্রম অর্থাৎ সভা সমাবেশ ছাড়া দলের নেতাদেরকে আগ্রহ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে না।
মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয় স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবে না- এই অবস্থান থেকে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ পিছু হঠেছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অর্থাৎ নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করেছেন তাদের আপাতত কিছু হচ্ছে না। অথচ ক’দিন আগেও দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বারবার নির্দেশনা দিচ্ছিলেন এবং যারা এই দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আজ আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও তাদের ব্যাপারে নমনীয় মনে হয়েছে।