আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতেই ভরসা রাখছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এরই ধারাবাহিকতায় ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে।
তথ্যসূত্র বলছে, গত ২৯ অক্টোবর থেকে মাঝে মাঝে দুই একদিনের বিরতি দিয়ে হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। তাদের মূল উদ্দেশ্য নেতাকর্মীদের ‘আত্মগোপন’ অবস্থা থেকে বের করে আনা এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত করতে। সামগ্রিকভাবে নির্বাচন বন্ধ করাই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।
গণমাধ্যমসূত্র বলছে , একদফা আন্দোলনের শরিকদের পক্ষ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপিকে এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল; কিন্তু ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ আন্দোলন পরিচালনা ও কর্মসূচি বাস্তবায়নে জড়িত নেতারা বর্তমান বাস্তবতায় হরতাল-অবরোধের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি কিছুটা হলেও সফল হচ্ছে। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিই অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৭ জানুয়ারি একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচন বয়কট করে আন্দোলনে থাকা বিএনপির লক্ষ্য এখন ভোট ঠেকানো। এ জন্য ভোটের প্রচার শুরুর দিন ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যবর্তী সময়কে আন্দোলনের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করছে দলটি।
তথ্যসূত্রগুলো বলছে, এ সময়ে হরতাল-অবরোধের ফাঁকে ফাঁকে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশের মতো কর্মসূচি চালু থাকবে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত এভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে চায় বিএনপি। এই সময়ের মধ্যে ঢাকায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ঘেরাওয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে বিএনপি ও যুগপতে থাকা মিত্রদের। আর জানুয়ারির শুরু থেকে শক্তভাবে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। ওই সময়ে দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতকে যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত করারও চিন্তা-ভাবনা করছে বিএনপি। সাংগঠনিক শক্তি বিবেচনায় চূড়ান্ত আন্দোলনে জামায়াতকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে পাশে চায় দলটি। বিশেষ করে নির্বাচন ঠেকাতে ২০১৪ সালের মতো জামায়াতের সক্রিয় ভূমিকা আশা করছেন দলটির নীতিনির্ধাকরা। একই সঙ্গে এবার চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকেও সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছে তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোট ঠেকাতে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভোটের পরে মাসব্যাপী কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হতে পারে। তারা মনে করছেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে বাইরে রেখে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন হলেও তা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। কারণ এবার বিদেশিদের চাওয়া, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সুতরাং ভোটের পরে আন্দোলন অব্যাহত রাখলে আন্তর্জাতিক বিশ্বের প্রবল চাপ এবং বিরোধী দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। তবে কেউ কেউ বলছেন, সামগ্রিকভাবে নির্বাচন বন্ধ করাই বিএনপির মূল উদ্দেশ্য।
এদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস ঘিরে গতকাল রোববার ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দীর্ঘ ৪৩ দিন পর প্রকাশ্য এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে রাজপথে নেতাকর্মীদের জমায়েত করেছে দলটি। টানা ১ মাসের বেশি সময় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি বাদ দিয়ে এ দিন সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের ফুটপাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে দাঁড়ায়।
একই দিন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে জামায়াতে ইসলামী, এলডিপিও (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি) একই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। রিজভী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে দেশবাসী ও বিশ্ববাসীকে দেখাচ্ছে যে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা নির্বাচন করি। এই জালিয়াতিকে প্রতিহত করার জন্য আগামীতে আরও কর্মসূচি আসবে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি মানতে এই সরকারকে বাধ্য করা হবে।
একদফার আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির শরীক গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ইতোমধ্যে ৩৬ ঘণ্টার অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসও পালন করা হবে। আগামী কয়েকদিনের পরিস্থিতি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব। এর ওপর নির্ভর করবে ১৭ ডিসেম্বরের পর থেকে আমরা কী ধরনের কর্মসূচি দেব। একটা সর্বাত্মক কর্মসূচি থাকবে, এটা নিশ্চিত। আগামীতে হরতাল থাকবে, অবরোধ থাকবে নাকি হরতাল-অবরোধের সঙ্গে সমাবেশ, বিক্ষোভ সমাবেশ, ঘেরাওয়ের কর্মসূচি থাকবে, সেটা আমাদের বিবেচনার মধ্যে রয়েছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।