গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ১১ দফা অবরোধ-হরতাল চলমান। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলন হিসেবে একদফা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। থেমে থেকে অবরোধ এবং ঝটিকা মিছিলেই সীমাবদ্ধ থাকছে বিএনপি। অন্যদিকে এসব কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করছে দুর্বৃত্তরা। এর বাইরে তাদের আর কোন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও তাই বিএনপির ফল প্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
গত ১০ ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে প্রেসক্লাব এলাকায় মানববন্ধন করেছে বিএনপি ও সমমনারা। অন্যদিকে মামলায় জর্জরিত বিএনপির নেতাকর্মীদের চলছে বিচার। বিএনপির নেতৃবৃন্দ এসব মামলার বিরোধিতা করলেও সাজা দিচ্ছেন আদালত। কিন্তু, যারা বাইরে আছে তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড চোখে পড়ছে না। অবরোধ ডেকেও তাদের খোঁজ নেই। এছাড়াও মানবাধিকার দিবস পেরিয়ে গেলেও মার্কিনিদের নির্লিপ্ত থাকায় সরকার ও সরকারি দল আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই নির্ভার। বিএনপির নেতাকর্মীরা হতাশ।
আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ধানমন্ডি এবং বাংলামোটর এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মিছিল করতে দেখা গেছে। কারাগারের বাইরে থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাই দলটির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাসের মতো নেতাদের কারাবাসের কারণে ভেঙে পড়েছে উচ্চ এবং তৃণমূল পর্যায়ের কার্যক্রম।
একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিএনপি এবং অংগসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও করা হচ্ছে রদবদল। অন্য দলের সমর্থন করায় যেমন দল থেকে বহিষ্কার করা হচ্ছে। আবার, বহিষ্কৃতদের দলে ফেরাতেও পূণর্বিবেচনা করা হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির অবস্থান এখন হ-য-ব-র-ল মনে করছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে একদফার আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে এই মুহূর্তে বিএনপি নতুন করে চাপে পড়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
তবে, বিএনপির একজন নেতা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই সরকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মী, জনগণের ওপর স্টিমরোলার চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী পক্ষের নেতাকর্মীদের ঝটিকা মিছিলে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় থাকে না। যেহেতু আমরা গণতান্ত্রিক দল, আমরা তো সশস্ত্র যুদ্ধ করতে পারি না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটু স্পেস পেলেই নেতাকর্মীরা রাজপথে জমায়েত হচ্ছেন, যেটা সর্বশেষ মানববন্ধনের কর্মসূচিতে দেখা গেছে। নিমিষেই সেখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।’
বিএনপি সমমনা একটি দলের প্রধান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমরা ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য আমাদের সাধ্যমতো লড়াই-সংগ্রাম করছি। তবে সরকার রাজনৈতিক দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে ফের একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এটা সংকটকে সমাধান তো করবেই না, বরং দেশকে নানা ধরনের ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। ফলে চলমান আন্দোলনে আমাদের বিজয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। ১৮ ডিসেম্বর হবে প্রতীক বরাদ্দ। এদিন থেকে ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ থাকবে। আর ৭ জানুয়ারি হবে ভোট। এখন দেখা বিষয়, নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং ভোটের আগে ধাপে ধাপে দেওয়া অবরোধ হরতালের কি ফল পায় বিএনপি?
মন্তব্য করুন
মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।