২৮ অক্টোবরের পর থেকে মাঝে দুই-একদিনের বিরতি দিয়ে ১১ দফা অবরোধ-হরতাল পালন করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। সমমনা দলগুলোও আসছে বিএনপির সঙ্গে। আগামীকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ১২ দফায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঘোষণা করেছে দলটি। সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলন হিসেবে শুধু অবরোধ-হরতালেই দলটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তবে কি অবরোধ-হরতালেই আটকে গেল বিএনপির রাজনীতি?
তথ্যসূত্রগুলো
বলছে, বিএনপি ১১ দফায় ২২
দিন অবরোধ এবং ৩ দফায়
চার দিন হরতাল কর্মসূচি
পালন করে। সর্বশেষ বিএনপির
ডাকা ৩৬ ঘণ্টার অবরোধ
কর্মসূচি শেষ হয় ১৩
ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায়। এরপর গত শনিবার (১৬
ডিসেম্বর) এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একদিনের
হরতাল ঘোষণা করেন। কুয়েতের আমির শেখ নাওয়াফ
আল-আহমদ আল-সাবাহ
মারা যাওয়ায় রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা
হয়। এই কারণে আগামীকাল
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর)
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো
হরতাল কর্মসূচি পালন করবে।
জানা
যায়, সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিরোধী দলগুলোর চলমান একদফা আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে মাঠে নামছে এলডিপি,
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সমমনা দলগুলো। এবার বিএনপির সঙ্গে
আসছে নিবন্ধন বাতিল হওয়া দল জামায়াতে
ইসলামী। তবে, বিষয়টি নিয়ে
সংশ্লিষ্টদের মধ্যে এখনো আলাপ-আলোচনা
চলছে। তবে, বিএনপি এবং
সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকায়
আন্দোলনে সারা মিলছে না।
অন্যদিকে নির্বাচনের অংশ নিতে যাওয়া
দলগুলো এ আন্দোলনকে ভ্রুক্ষেপ
করছে না।
একদফা
দাবি আদায়ের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২৮ অক্টোবর
সহিংসতায় পুলিশের প্রাণহানি, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, হাসপাতাল ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এতে রাজধানীতে পৃথক মামলা হয়।
সেই মামলায় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী এখনো জেলে। তাদের
বিচার চলমান। বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী রাজনৈতিক ময়দানে না থাকায় বিএনপির
আন্দোলনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে বলেও
মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে
নেতাকর্মী না থাকায় বিএনপির
আন্দোলন গতি পাচ্ছে না।
তথ্যসূত্রে
জানা যায়, এবারের নির্বাচনে
জামায়াত প্রসঙ্গে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে দলটির নীতিনির্ধারকদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। উভয়
দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এরই মধ্যে বৈঠকের
মাধ্যমে একসঙ্গে আন্দোলন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এর আগে বেশ
কয়েক দফা অবরোধ-হরতালে
জামায়াতে ইসলামী পক্ষে থাকলেও রাজপথে তাদের কার্যক্রম দেখা যায়নি। অবরোধ-হরতাল-মানববন্ধন ব্যাতিত বিএনপিকেও অন্য কার্যক্রম নিতে
দেখা যায়নি।
জামায়াতের
একজন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির একটি গণমাধ্যমকে
বলেছেন, যে কোনো দিন
একই মঞ্চে আসার ঘোষণা আসবে।
এরই মধ্যে বিএনপির সঙ্গে ঢাকা মহানগরসহ সারা
দেশে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গেও কয়েক দফা মতবিনিময়
হয়েছে। আন্দোলন সমন্বয় করার জন্য সারা
দেশে বিএনপি-জামায়াতের একাধিক টিমও করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিএনপির কোনো দায়িত্বশীল নেতা
প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি।
নির্ভরযোগ্য
সূত্রগুলো বলছে, ২০১৮ সালে একাদশ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর
থেকেই জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হয়, যা
বিচ্ছেদের পর্যায়ে গড়ায়। ২০২২ সালের ২৪
ডিসেম্বর থেকে বিএনপির নেতৃত্বে
বিরোধী দলগুলোর যে যুগপৎ আন্দোলন
কর্মসূচি চলছে, তাতে শুরুর দিকের
দুটি কর্মসূচিতে জামায়াতের অংশগ্রহণ ছিল। এরপর আর
কোনো কর্মসূচিতে অংশ না নিয়ে
একই কর্মসূচি নিজেদের মতো করে পালন
করে আসছে দলটি। এছাড়াও
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা
দিয়ে গত বছরের ২৪
ও ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে
অংশ নেয় জামায়াত। এর
আগে ১২ ডিসেম্বর রাতে
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানকে
গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০
ডিসেম্বর যুগপতের গণমিছিল করতে গিয়ে মালিবাগে
জামায়াতের শতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার ও আহত হন।
এ নিয়ে বিএনপি কোনো
বক্তব্য বা বিবৃতি দেয়নি।
এমনকি যুগপতের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে
কোনো আলোচনাও করেনি। এর পরই জামায়াত
যুগপৎ আন্দোলন থেকে সরে যায়।
রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে অংশ না নিয়ে
বিএনপি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। কিন্তু, মাঠে নেতাকর্মীর ঘাটতি
এবং সহিংস কার্যক্রমে বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়েছে। তাই
প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, অবরোধ-হরতালেই কি সীমাবদ্ধ থাকবে
বিএনপির রাজনীতি?
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।