বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন তাদের আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভারত। বিএনপি যে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সফল হতে পারছেন না, এর প্রধান কারণ হল ভারতের ভূমিকা। ভারত বিএনপির উপর অসন্তুষ্ট। আর এ কারণেই রাজনীতিতে বিএনপি কোনও রকম ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারছে না, সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারছে না।
গত দুই বছর ধরে বিএনপির নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বিএনপির এই আন্দোলনের অনেকগুলো ইতিবাচক দিক ছিল বলে বিএনপি নেতারা মনে করেন। তাদের মতে, এই আন্দোলনের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সরকারের বিরুদ্ধে একটি অবস্থান গ্রহণ করেছিল এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চাপও সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু, ভারতের ভূমিকার কারণে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।
ভারত বিএনপিকে বিশ্বাস করে না, বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না। আর একারণেই তারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো বিকল্প এখন ভাবছে না ৷ আর এই জন্যই তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থানে অনড় থেকেছে এবং, এই অবস্থানের পক্ষে তারা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দূতওয়ালী করেছে।
কূটনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে যে, কেন ভারত বিএনপিকে পছন্দ করে না? বিএনপির প্রতি কেন তাদের আস্থা নেই?
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে যে, ২০০১ সালে বিএনপি এবং জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর থেকে যে কাণ্ডগুলো করেছিল, সেই কাণ্ডের কারণে ভারত বিএনপির প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে এবং এই আস্থাহীনতার সঙ্কট এখন তীব্র।
ভারত মনে করে যে, বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এর সম্পর্ক রয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের লালন করে এবং ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদেরকে মদদ দেওয়া হয় আইএস এর পরিকল্পনা অনুযায়ী। আর যার প্রমাণ হলো, ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা, চট্টগ্রামে দশ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনা ইত্যাদি। এসব ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে, বিএনপি বিশেষত কার্যত ভারতের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কাজ করে।
ভারতের পররাষ্ট্র নীতির মূল বিষয় হল যে, ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী কোনও রাজনৈতিক সংগঠন যদি কাজ করে, তারা যে দেশেই অবস্থান করুক না কেন তাদেরকে ভারতের আস্থায় নেই এবং তাদেরকে ভারত কোনওভাবেই সমর্থন করে না। আর এ কারণেই ভারতের সাথে বিএনপির প্রধান বৈরিতা। ভারত বাংলাদেশে চায় একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ, একটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সম্প্রসারণ যেখানে সকল দল মত এবং ধর্মাবলম্বীরা স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এক ধরনের গোপন এবং প্রকাশ্য সম্পর্ক রয়েছে, যে সম্পর্কের সূত্র ধরে বিএনপিও জামায়াতের মতো মৌলবাদী চিন্তাভাবনাকে ধারণ করে এবং সাম্প্রদায়িক ধারায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চায়। এটি ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ নির্বাচনের আগে ভারতের থিঙ্কট্যাঙ্কের সঙ্গে বিএনপির কয়েকজন নেতা সাক্ষাৎ করেছিল এবং সেখানে ভারত বিএনপিকে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেছিল। তার মধ্যে একটি ছিল যে, তারেকের নেতৃত্ব যেন না থাকে ৷ দ্বিতীয়ত, ভারত চেয়েছিল জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ত্যাগ করা। তৃতীয়ত, ভারতের প্রত্যাশা ছিল যে, বিএনপিতে যে সমস্ত সাম্প্রদায়িক এবং পাকিস্তানপন্থী ব্যক্তিরা রয়েছেন তাদেরকে দল থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে দেওয়া। চতুর্থত, ভারতের বিএনপির প্রতি প্রত্যাশা ছিল যে, তারা যেন কোনওভাবেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে মদদ না দেয়। কিন্তু মুখে মুখে বললেও বিএনপি পরবর্তী কোনও সময়েই এগুলো বাস্তবায়ন করেনি। যে কারণে ভারত বিএনপিকে আস্থায় নিতে পারে না, বিশ্বাস করতে পারে না।
বিএনপি নেতারাও স্বীকার করেন যে, ভারতের কারণেই বিএনপি বারবার ব্যর্থ হচ্ছে এবং ভারতের কারণেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে।
বাংলাদেশ ভারত আওয়ামী লীগ বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের যোগাযোগ হচ্ছে। একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন। অনেকেই উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের পক্ষে কাজ করার জন্য কর্মীদেরকে টেলিফোনেও বার্তা দিচ্ছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে একটি স্ববিরোধী অবস্থান লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। ওই বৈঠকেই আরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে এবং সেই ধারাবাহিকতায় ৭৩ জন বিএনপি নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ তৃণমূলের নেতা যারা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তারা শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।
প্রথম ধাপে ধাপে বিএনপির ৬৭ জন উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র আটজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এখনও ৫৯ জন বিএনপির প্রার্থী ১৫০টি উপজেলার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যে সমস্ত প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছেন তাদের এলাকার কেন্দ্রীয় নেতারা সাবেক এমপি বা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সমস্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন এবং তাদের জন্য ভিন্ন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
প্রচারণার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতারা অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করছেন। উপজেলা নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা দলের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মীদেরকে একত্রিত করছেন কর্মীসভার আদলে এবং সেই কর্মীসভায় বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হচ্ছেন। তারা বক্তব্য রাখছেন এবং শুধু বক্তব্য রেখেই ক্ষান্ত হননি, তারা উপজেলায় স্বতন্ত্র ওই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা দলের ঐক্য বজায় রাখার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছেন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়ামী লীগকে মোকাবিলার জন্য বার্তা দিচ্ছেন।
উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অংশ গ্রহণ করছে না। সেখানে তাদের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। প্রায় অধিকাংশ উপজেলা আওয়ামী লীগের গড়ে তিন জন করে প্রার্থী রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন, তারা মনে করছেন যে, এটি তাদের জন্য একটি অনবদ্য সুযোগ। কারণ এর ফলে উপজেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের কোন্দলের ফসল তারা ঘরে তুলতে পারবে। আর এ কারণেই উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিদ্ধান্ত অনেকে মানছেন না। আর বাস্তবতা অনুধাবন করে যারা এলাকার এমপি তারাও উপজেলায় একটা ভিত্তি রাখার জন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করছেন।
বিএনপি আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন মির্জা ফখরুল ড. মঈন খান নজরুল ইসলাম খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে
নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। তবে অনুমতি না
থাকায় পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয় মিছিলটিকে।
পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলটির নেতারা
অভিযোগ করে বলেন, সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোকে গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে।
রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল ১১টার পরে রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের
নেতাকর্মীরা জড় হন নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
রুহুল কবীর রিজভীর নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন৷
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারের নির্দেশেই পুলিশ বারবার বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে। বিরোধী দল দমন করে ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন কায়েম করার অপচেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশে পুলিশ বারবার বিএনপির মিছিলে বাধা
দিচ্ছে, বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পণ্ড করছে। দুর্নীতি দমন, আর জনকল্যাণ রেখে
ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে দমনে ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, যত প্রতিকূল পরিবেশ হোক না কেন, আওয়ামী লীগকে বিদায় না করা পর্যন্ত রাজপথে বিএনপির কর্মসূচি চলবে। একদলীয় শাসন কায়েম করতেই বেগম জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার।
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে যে সমস্ত বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়েছেন, সেই সমস্ত প্রার্থীদেরকে ইতোমধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, তারা যদি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন তাহলে তাদেরকে দলে ফিরিয়ে আনা হবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল যে, বিএনপিতে বহিষ্কৃত এই সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।