দ্বাদশ জাতীয় সংস নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ে জমে উঠেছে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসন। এই আসে প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সরওয়ার হোসেন এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরীর (সোনালী আঁশ)।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়,
টানা তিন দফা সংসদ
সদস্য থাকাকালে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের সঙ্গে দলের অনেক কর্মী-সমর্থকের দূরত্ব তৈরি হয়। কিছু
নেতা-কর্মী তার বিরুদ্ধে এককাট্টা
রয়েছেন। এ কারণেই এবার
তার আসনে ১১ নেতা
দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত নুরুল
ইসলাম মনোনয়ন। তবে, তার বিরোধীরাও প্রভাবশালী।
ভোটাররা গণমাধ্যমকে জানান, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় অনেক ভোটার নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে কেন্দ্রেও যাবেন না। তবে ভোটার কেন্দ্রে টানতে তিন প্রার্থীর পক্ষের কর্মীরা মাঠে সরব। তারা বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম সরাসরি নুরুল ইসলামের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের সভা-সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন।
অন্যদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মঞ্জুর শাফি চৌধুরী ভেতরে-ভেতরে শমসের মুবিনকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাদের বাইরে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী এ দুজনের পক্ষে সরব রয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে।
মঞ্জুর শাফি চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে কোনো সমর্থন দেননি। তবে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজ উদ্দিন এবং গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশিকুর রহমান আসাই জানান, দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নানা কারণে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া নিজেদের উপজেলায় একজন ভালো প্রার্থী থাকায় তারা শমসের মুবিনের পক্ষ নিয়েছেন।
বিয়ানীবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কাশেম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘উপজেলা কিংবা পৌরসভা নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমাকে রাখেননি। আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি। আর নেত্রী (শেখ হাসিনা) যেহেতু নির্বাচন দলের সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, তাই আমিও স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছি।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগের সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে তার সঙ্গে রয়েছেন। দু-চারজন হয়তো অন্য প্রার্থীদের সঙ্গে আছেন। তবে দলে কোনো বিভক্তি নেই। ভোটারেরা তাকে পুনরায় ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গণসংযোগকালে শমসের মুবিন
চৌধুরী বলেন, ‘আমি
আকাশচুম্বী কোনো প্রতিশ্রুতি দেব
না, যা করতে পারব,
তাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
প্রচারণায় গিয়ে সরওয়ার হোসেন বলেন, ‘যেখানেই যাচ্ছি, ভোটারদের সাড়া পাচ্ছি। এখন পর্যন্ত নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। তবে কিছু স্থানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা আমার পোস্টার ছিঁড়ে দিচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এক প্রার্থী টাকা ছড়িয়ে ভোটের পরিবেশ বিনষ্ট করছে। তবে এতে কাজ হবে না। এবারও ভোটারেরা আমাকেই নির্বাচিত করবেন।’
এ তিন প্রার্থীর বাইরে
জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন (লাঙ্গল) আলোচনায় আছেন। অন্য দুই প্রার্থী
হলেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান (ছড়ি) ও ইসলামী
ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান (মিনার)।
নির্বাচন আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী তৃণমূল বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি এভারকেয়ার হাসপাতাল তারেক জিয়া
মন্তব্য করুন
গতকাল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গটি আলোচনাই হয়নি। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করে কেবল সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনার জন্য নির্দেশনা দেন। ফলে আওয়ামী লীগের কোন নেতাই আর উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আলোচনায় নিয়ে আসেনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বৈঠকে উপস্থিত অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে, আগামী ২৩ জুন দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কীভাবে জাকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা যায় ও ২১ থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা করা এবং শেষদিনে বড় সমাবেশ করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। এবার আওয়ামী লীগ ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে করবে। সেই প্রসঙ্গটি সামনে নিয়ে আসা হয়।
আর আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইচ্ছে করেই উপজেলা নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আনেননি বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বলে আওয়ামী লীগ সভাপতি যারা উপজেলা নির্বাচনে শৃঙ্খলাভঙ্গ করেছে, দলের নির্দেশনা অমান্য করে আত্মীয় স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন বলে মনে করলে ভুল হবে।
বিএনপিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় হটকারী ভাবে। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদেরকে বহিষ্কার করে সবকিছু শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাজনৈতিক প্রজ্ঞায়, ধীরস্থিরভাবে, আস্তে আস্তে।
জাতীয় সংসদে একবার সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন যে, বাঘে ধরলেও ছাড়ে, কিন্তু শেখ হাসিনা যাকে ধরে তাকে ছাড়ে না। যারা উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন তারা দীর্ঘমেয়াদি প্রায়শ্চিত্ত ভোগ করবেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তারা শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো ডায়েরিতে নাম লেখালে রাজনৈতিক পরিণতি কী হয় তা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়।
এক এগারোর সময় যারা শেখ হাসিনাকে মাইনাস করতে চেয়েছিলেন সেই সমস্ত ডাকসাইটে নেতাদের কাউকেই তিনি দল থেকে বহিষ্কার করেননি। কিন্তু দলে তাদের অকার্য করেছেন, নিষ্ক্রিয় করেছেন। তাদের প্রায়শ্চিত্ত উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছেন। এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশল।
শেখ হাসিনা এক এগারোর পর সংস্কারপন্থিদেরকে দুই ভাগে ভাগ করেছিলেন। যারা কম সংস্কারপন্থী ছিলেন, কম ষড়যন্ত্র করেছেন- তাদেরকে তিনি নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দিয়েছেন। তাদের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে প্রেসিডিয়াম থেকে সরিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শাস্তি দিয়েছেন। এই শাস্তি দল থেকে বহিষ্কারের চেয়েও ভয়ঙ্কর। তিনি রাজনীতিতে নতুন করে বিদ্রোহী এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি করার সুযোগ দেননি। বরং দলে তাদেরকে শাস্তি দিয়ে দলের ঐক্য অটুট রেখেছেন।
আর দ্বিতীয় প্রকার যারা ছিল এক এগারোর সংস্কারপন্থীর মূল হোতা তাদেরকে তিনি মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন না দিয়ে তাদেরকে দলে নিষ্ক্রিয় করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেছে। কিন্তু রাজনীতিতে জীর্ণ শীর্ণ ভিখারীতে পরিণত হয়েছে। এটাই শেখ হাসিনার কৌশল।
কাজেই এবার যারা উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে, তারা আসলে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেনি, তারা শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে। শাস্তি তাদের পেতেই হবে। তবে তারা কবে কীভাবে পাবেন এবং দীর্ঘমেয়াদে তাদের কী হবে সেটি একটি বড় প্রশ্ন।
কারণ যারা আত্মীয়স্বজনদেরকে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী করেছেন তারা অবশ্যই আওয়ামী লীগ সভাপতির কালো খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে কী হয় তা অতীতে অনেক নেতাই উপলব্ধি করেছেন। অনেকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে।
বহিষ্কার হলে একজন রাজনৈতিক নেতা পরিত্রাণ পায়, নির্বাণ লাভ করে। তিনি নতুন সুযোগ পান অন্য কিছু করার। কিন্তু একজন রাজনৈতিক নেতা যখন দলেই উপেক্ষিত হন, অনাহূত হন, পরিত্যক্ত ঘোষিত হন- তখন তার রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে। আর শেখ হাসিনার কালো খাতায় নাম লেখালে রাজনৈতিক জীবন দুর্বিষহ হতে বাধ্য।
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ তৃণমূল উপজেলা নির্বাচন রাজনীতি ড. আব্দুর রাজ্জাক শাজাহান খান জাহিদ মালেক মোস্তফা কামাল
মন্তব্য করুন
এভারকেয়ার হাসপাতাল খালেদা জিয়া বিএনপি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন